ভালোবাসার উল্টো পিঠে পর্ব-২২+২৩

0
404

#ভালোবাসার_উল্টো_পিঠে
#বাইশ
প্রজ্ঞা জামান দৃঢ়তা

রাতের আঁধারে লুকিয়ে থাকা সূর্যের কিরণ একটু একটু করে পৃথিবীকে আলোকিত করছে। ভোরে শীতের আগমনের মিষ্টি অনুভূতি শরীর মনকে সতেজ করে তুলে। রিদ্ধিমা নামাজ শেষ করে বারান্দায় এসে একটু একটু করে সূর্য মামার উদিত হওয়া দেখছে।

সারারাত এতটুকু ঘুম হয়নি। ভেতরটা কেমন ভারি হয়ে রইল। এত ভারি তার আর কোনোদিন লাগেনি। যেদিন রাতে মাহিদ তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল সেদিনও না।

সে ভাবল শাহানেওয়াজ শেখের সাথে কথা বলা দরকার। অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।

জীবন, সম্পর্ক সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। না কোনো অনুভূতি মনের দরজায় উঁকি দেয়।

ডায়েরিটা নিয়ে আবার পড়া শুরু করল।

“সুস্থ হওয়ার পর আমার আর্মিতে জয়েন সিলেক্ট হওয়ার লেটার চলে এলো। ট্রেনিংয়ের জন্য যেতে হলো। যদি একটা বার বুঝতে পারতাম রিদ্ধিমাকে আমি অনেক বড় বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে যাচ্ছি। আমি কখনো যেতাম না। আমার স্বপ্নের জব ছেড়ে দিতাম। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছে অন্যকিছু ছিল। যার জন্য আমি চলে গেলাম।

আর রিদ্ধিমা মাহিদের জালে ফেঁসে গেল। মাহিদ বিবাহিত ছিল আমি জানতাম। তাই কখনো এটা ভাবিনি তার দ্বারা রিদ্ধিমার কোনো ক্ষতি হতে পারে।

কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিল। আমি নিজে হাতে শেষ করে দিলাম আমার দশ বছর ধরে অপেক্ষা করা ভালোবাসার মানুষের জীবন। রিদ্ধিমা আমার না হোক এতে আমার সমস্যা ছিল না। কিন্তু ও অসুখী হোক এ আমি কোনোদিন চাইনি।

আর্মি ট্রেনিং এমন একটা বিষয় যেখানে কোনো ভাবে কারো সাথে দেখা বা যোগাযোগ করার তেমন সুযোগ নেই। তাছাড়া আমি নিশ্চিন্তে ছিলাম। রিদ্ধিমা মাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ওর বাবা ওকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবে না। তাই এত ভাবনারও কিছু ছিল না। নিশ্চিন্তে নিজের কাজ করছিলাম।

কিন্তু, কে জানতো আমার ভাগ্য রেখায় কখনো রিদ্ধিমা হায়দারের নাম লেখাই ছিল না। নয়তো এতগুলো বছর অপেক্ষা করার পর আমি তাকে পেলাম না কেন!

ভেবেছিলাম বিয়ের দিন রাতে আমার এক, এক দিনের অপেক্ষার, আমার তাকে দেয়া চিঠি সবকিছু বলব। সব শুনে ও কী করবে সেটা ভাবতেই সুখে মন ভরে যাচ্ছিল।

ট্রেনিং শেষে যখন বাসায় ফিরলাম। বাবা নাস্তার টেবিলে বসে জানালেন রিদ্ধিমা নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে নিয়েছে। আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। মনে হলো কেউ আমার বুকে এলোপাথাড়ি ছুরি চালিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিচ্ছে।

তখন দশ পেরিয়ে এগারো বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। এগারো বছর রিদ্ধিমা হায়দার! তোমার কোনো আইডিয়া আছে এগারো বছরে কত মিনিট, কত সেকেন্ড হয়! আর অপেক্ষা করা কতটা কঠিন হয়!

রাগ হয়েছিল খুব। রাগের সাথে কষ্ট মিশে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। তাই তো রিদ্ধিমাকে অপরিচিত নম্বর থেকে কল দিলাম ফুল পাঠালাম। কিন্তু কলেজে তাকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। সেদিন কলেজের ছাত্রদের অনুরোধে যেতে হলো। কিন্তু রিদ্ধিমাকে দেখে মনে হলো ও ভালো নেই। চেহেরা শুকিয়ে গেছে। আগের সেই হাসিখুশি ভাবটা নেই।

ডক্টরের কাছে গিয়ে জানতে পারলাম। ও মা হবে। জানি না কেন আমি অখুশি হতে পারিনি। রিদ্ধিমার সন্তান আমার কাছে আমার সন্তানের চেয়ে কম নয়।

সেদিন ওকে ওর বান্ধবীর বাড়ি পাঠিয়ে। নিজেও পিছুপিছু গেলাম। অদ্ভুতভাবে দেখলাম রিতির সাথে মাহিদ ও-ই বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। বিষয়টা আমার কাছে কেমন যেন লাগল। তাই তো সব খবর নিয়ে জানতে পারলাম। সব শেষ। এখন আর আমার হাতে কিছু নেও।

আমি যদি রিদ্ধিমাকে সব সত্যি বলি। সে কোনোদিন বিশ্বাস করবে না। কিন্তু আমি এক মিনিটের জন্য শান্তি পাচ্ছিলাম না। বুঝতে পারলাম ভুলটা আমারই। আমার জন্যই মাহিদ সুযোগ পেয়েছে।

মাহিদ সম্পর্কে লোক লাগিয়ে খবর নিয়ে জানতে পারলাম মানুষ হিসেবে ভালো না সে। আমার যন্ত্রণা বেড়ে গেল। আরও জনলাম রিতি তার স্ত্রী। এক স্ত্রী থাকতে কীভাবে সে আবার বিয়ে করতে পারে!

রিদ্ধিমার পেছনে নজরদারি শুরু করলাম। কোথায় যাচ্ছে কী করছে সব খবরাখবর নিতে লাগলাম। কাজের জন্য নিজে সবসময় যেতে পারতাম না। তাই লোক লাগিয়ে দিলাম। জানতে পারলাম ও ভালো নেই।

আমার চিন্তা আরও বেড়ে গেল। নিজেকে অনেক চেয়েও ক্ষমা করতে পারছিলাম না। আমি চাইলেই মাহিদকে শাস্তি দিতে পারতাম। কিন্তু রিদ্ধিমা এতে কষ্ট পাবে। আর রিদ্ধিমা কষ্ট পায় এমন কোনো কাজ আমার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।

একদিন রাতে দেখলাম বৃষ্টিতে রিদ্ধিমা দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে ওঠেছে। এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে আছে।

তারপর দেখলাম ওর বাসার কাজের মেয়েটা এদিকে আসছে। তাকে গাড়িতে উঠালাম। রিদ্ধিমাকে সে পেছনের সিটে নিয়ে বসেছে। আর একের পর এক কী ঘটেছে সব বলেছে। এতে জানতে পারলাম মাহিদ উদ্দেশ্য ছিল টাকা।

রিদ্ধিমাকে বাসায় নিয়ে আসলাম। জরিনাকে বাসা পাল্টে নিরাপদ জায়গায় রেখে আসলাম। কারণ আমি জানতাম মাহিদ তাকে খুঁজে বের করতে চাইবে। সবচেয়ে বড় কথা আমি আর তাকে কোনো ক্ষতি করতে দেব না।

অনেক কষ্ট দিয়েছে সে রিদ্ধিমাকে। আর নয়। আর কোনোদিন কাউকে রিদ্ধিমার কোনো ক্ষতি করতে দেব না। আমার একটা ভুল রিদ্ধিমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। আর সেই সুযোগ কেউ পাবে না।

রিদ্ধিমা হায়দার কোনোদিন জানবে না আমি কে। আমি তাকে কতটা ভালোবাসি। আমি চাইও না এমনটা হোক। আমার জন্য ওর মনে খারাপ যে ইম্প্রেশন আছে। তাই থাকুক। তাও ও ভালো থাকুক। নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলুক। ও ভালো থাকবে এর চেয়ে বেশি আমি কী চাইতে পারি।

এটুকু পড়ে ডায়েরিটা বন্ধ করে রিদ্ধিমা চোখ বুজল। চোখের কোল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ভাবছে, “যে মানুষটাকে আমি ভালোবেসেছিলাম সে মাহিদ ছিল না। যার চিঠি পড়ে প্রেমে পড়েছিলাম সে মাহিদ ছিল না। সবকিছু ভুল। আমার জীবনটাই ভুল।

★★★

বিকেলে রিদ্ধিমা নিজের রুমে শুয়ে আছে। সারাদিন মন বিষন্ন হয়ে আছে। দুপুরে শাহানেওয়াজ রিহানের সব প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এসেছে।

রিহান এখন তার কাছে একটুপর নাকি বেরিয়ে পড়বে। নিচ থেকে গেট খোলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। রিদ্ধিমা উঠে বারান্দায় গেল। গাড়ির সামনে নাফিসা দাঁড়িয়ে আছে। রিহানকে কোলে নিয়ে আদর করছে শাহানেওয়াজ। নাফিসাকে কী কী যেন বলছে। আজ প্রথম সে এই লোকটাকে নিজ থেকে দেখছে।

রিহানকে নাফিসার কোলে দিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়েও থেমে আবার পেছনে রিদ্ধিমার রুমের বারান্দার দিকে তাকিয়েছে। হয়তো তাকে দেখার জন্য। হয়তো সবসময় এমন করে দেখে। কিন্তু রিদ্ধিমা তা জানে না।

আজ প্রথম শাহানেওয়াজ রিদ্ধিমাকে বারান্দায় দেখল। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে চলে গেল।

রিদ্ধিমার মনে হলো এ-ই প্রথম একে ভালোভাবে দেখছে। হয়তো এই শেষ।

চলবে।

#ভালোবাসার_উল্টো_পিঠে
#তেইশ
প্রজ্ঞা জামান দৃঢ়তা

এক মাসের কথা বলে গেলেও, দুই মাস হতে চলল শাহানেওয়াজের কোনো খবর নেই। যাওয়ার আগে বলে গেছে সে যেখানে যাচ্ছে, সেখান থেকে কল করা সম্ভব নয়। তবে তাদেরই দেখাশোনা করার জন্য, এবং তাদের উপর নজর রাখার জন্য লোক রেখে গেছে।

রিদ্ধিমা এক মাস পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু ভাবেনি। কারণ সে জানে মিঃ শেখ দেশের বাইরে যায়নি। কোনো স্পেশাল আর্মি অপারেশনে গিয়েছে। ছোট বেলা থেকে এই দেখে দেখে সে অভ্যস্ত। বাবা হুটহাট আসতেন, আবার চলে যেতেন। কখনো সন্ধ্যায় আসতেন। আর মাঝ রাতে আবার কল পেয়ে চলে যেতেন। কত দিন, কত মাস মা বাবার পথ চেয়ে অপেক্ষা করে বসে থাকতেন। কিন্তু না তো বাবার কল আসতো। না তিনি আসতেন।

রিদ্ধি প্রায় গাল ফুলিয়ে বসে থাকত। কিন্তু মাকে সবসময় শক্ত দেখেছে। বাবার জন্য ভেতর থেকে যতই খারাপ লাগত মুখে তা স্বীকার করতেন না।

রিদ্ধি কাঁদলে বলতেন, “তোমার বাবা দেশের জন্য কাজ করছেন। আর এ কাজ করার ভাগ্য সবার হয় না।

জানো রিদ্ধি যেদিন তোমার বাবা আমাকে দেখতে গিয়েছিল, সেদিন আমি মাকে বলেছিলাম কিছুতেই ডিফেন্সের ছেলেকে আমি বিয়ে করব না। সারাজীবন তোমাকে দেখেছি বাবার পথ চেয়ে থাকতে। ছোট ভাই-বোন গুলোর জন্মের সময়ও কাছে থাকতে পারেননি। এটাকে জীবন বলে না মা।

ছোট্ট একটা জীবন। প্রিয় মানুষটাকে বিপদে-আপদে কাছে না পেলে এটা কিসের জীবন মা? সারাজীবন একটা আতঙ্ক। সবসময় হারানোর ভয়। যেখানে ঘর থেকে যাওয়ার সময় ফিরে আসবে কিনা, এ-ই নিশ্চয়তাটুকু পর্যন্ত নেই।

তুমি বুঝাও না বলে যে, আমি বুঝি না তা নয়। রাতের পর রাত তুমি বাবার জন্য নামাজে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকো। শুধু তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন এই দোয়া করো। এমন একটা জীবন আমি কীভাবে কাটাবো বলো তো মা? আমি জানি জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণা থাকে অপেক্ষায়। আর এই অপেক্ষা, পথ চেয়ে বসে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

সেদিন মা আমার গালে জোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ” আমার স্বামী দেশের জন্য কাজ করছে এতে যদি সে শহীদও হয়ে যায়। আমি আফসোস করব না। একজন দেশপ্রেমীর মেয়ে হওয়ার যোগ্য তুই না।”

মা রুম থেকে চলে গেলেন। আমি চুপচাপ তার চলে যাওয়া দেখলাম। তোর বাবা আমায় দেখতে এসে বললেন, “আমার জীবন সাধারণ নয়। এখানে আমাকে প্রয়োজনে মরতে হবে আবার মারতেও হয়। তাই আমার জীবন সঙ্গীকে আগে থেকে নিজেকে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। একজন আর্মির স্ত্রী হওয়া অনেক কঠিন কাজ। আবেগ, মনের চাওয়াকে দমিয়ে রাখতে হয়। স্বামী স্ত্রী একান্ত সময় কাটানোর সময়ও যদি একটা কল আসে চলে যেতে হয়। অথাৎ সবরকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। আপনি একজন আর্মি অফিসারের মেয়ে। আপনি আশাকরি সব বুঝবেন।”

তোর বাবার দিকে তাকিয়ে আমি হেসেছিলাম। কোনো জবাব দেইনি। সেও হাসল। আমি তাকে বলিনি আমার বিয়েতে মত আছে। তাও সে বুঝে গিয়েছিল।

তোর নানা আমার কাছে জানতে চাইলেন আমি রাজি কিনা। আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়েছিলাম। তোর নানু আড়াল থেকে চোখের জল ফেলেছিলেন। আমি জানি তিনি আমায় কেন মেরেছেন। এ-ও জানি আমার চামড়ার আঘাতের চেয়ে, তার হৃদয়ের আঘাত হাজার গুন বেশি ছিল।

তাই রিদ্ধি তোকে শক্ত হতে হবে। বাবা সবসময় তোর পাশে থাকলে এ দেশটাকে কে দেখবে? বাবা নিজের সুখ, পরিবার বিসর্জন দিয়ে দেশের জন্য কাজ করে ন বলেই দেশের ষোলো কোটি মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে। তাই আমি চাই না কখনো তোর চোখে জল না আসুক।

রিদ্ধিমা তাও নিজেকে আটকাতে পারেনি। একদিন তার বাবা ছুটিতে আসলেন। চলে যাওয়ার সময় সে-কি কান্না। বাবা বলেছিলেন, “আমার বাহাদুর মেয়ে এভাবে কাঁদতে নেই। তোমার বাবার মতো সৈনিকরা যদি ঘরে বসে থাকে। তবে দেশের কী হবে। তোমাদের নতুন প্রজন্মকে একটা সুন্দর দেশ উপহার দেয়ার জন্যই তো এই ত্যাগ।”

বাবা-মায়ের সেই কথাগুলো আজও রিদ্ধির কানে বাজে। সে ভাবছে মিঃ শেখ ঠিক আছেন তো? এক মাসের জায়গায় দু’মাস কেন লাগছে!

অন্তত একটা কল তো দেবেন। ধুর আমি কেন খামোখা লোকটার কথা ভাবছি! কিন্তু যে উপকার তিনি আমার করেছেন। তার জন্য চিন্তা করাই যায়। যেন নিজেই নিজেকে বুঝ দিতে চাইল।

বিছানায় ঘুমন্ত রিহানের দিকে তাকিয়ে ভাবল, “রিহানকে ছাড়া উনার কষ্ট হচ্ছে না থাকতে?”

তারপর নামাজে দাঁড়িয়ে তার জন্য দোয়া করতে লাগল।

★★★

বিকেলে ঘুমিয়ে ছিল রিদ্ধিমা। নাফিসার ডাকে ঘুম ভাঙে। নাফিসা জানাল আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।

রিদ্ধি অবাক হলো ডক্টর হুমায়রা ছাড়া আর কেউ তো দেখা করার মতো নেই। তবে কে এলো। সে বলল, “নাম কী বলেছে?”

“রিয়ন।”

নামটা শুনেই রিদ্ধিমা যেন থমকে গেল। মিনিট খানেক কোনো কথা মুখ থেকে বের হলো না। সে চায়নি কখনো তার হেরে যাওয়া মুখ নিয়ে পরিবারের সামনে দাঁড়াতে। কিন্তু এখন? এমন সময় রিয়ন তার রুমে ঢুকল।

রিদ্ধিমা ঠাঁয় বসে রইল বিছানায়। যেন নড়তে পারছে না। রিয়ন তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।

রিয়ন তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, “ইউ নো? ইউ আর আ সেলফিশ। ফর দিস রিজন, আই হেইট ইউ।”

রিদ্ধি জানে এই কথার অর্থ কী তাই সে মুচকি হেসে বলল, “ফর দিস রিজন, আই লাভ ইউ মোর এন্ড মোর।”

রিয়ন বোনের চুল টেনে দিল। দুজনের চোখে জল। ঠোঁটের কোণে হাসি। রিদ্ধি দাঁড়িয়ে বলল, “উইল ইউ হাগ মি ওয়ান্স?”

রিয়ন ঠোঁট কামড়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে বলল, “নেভার।”

রিদ্ধি হাসতে হাসতে ভাইকে জড়িয়ে ধরল।
দুজনেই কাঁদছে।

নাফিসার চোখেও জল। ভাই-বোনের এত সুন্দর বন্ডিং সে আগে দেখেনি।

রিদ্ধি ভেবেছিল রিয়ন তাকে অনেক প্রশ্ন করবে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে তেমন কিছুই হলো না। রিহানকে কোলে নিয়ে সে মেতে উঠেছে। এমন দৃশ্য দেখে বারবার তার চোখ জলে ভরে আসছে। এত সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবে সে তো ভাবেনি কখনো।

রিয়ন বলল, “সব গুছিয়ে নে। সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।”

রিদ্ধিমা অনেকবার চেষ্টা করল শাহানেওয়াজের কথা। কিন্তু পারল না। এত এত ভুল করার পর আর কিছু বলার সাহস হলো না। নাফিসা যেন সবটা বুঝতে পারল। সে বলল, “আপনি যান ম্যাম। সবাই আপনার জন্য কত আশা করে বসে আছে।”

রিদ্ধির গাড়িতে উঠে মনে হলো ভেতরটা খালি হয়ে আসছে। এ বাড়িটার সাথে কত স্মৃতি মিশে আছে। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়টা সে এখানে আশ্রয় পেয়েছে। জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা এখান থেকে পেয়েছে। নিজেকে শক্ত করার শক্তি এখান থেকে পেয়েছে। কিন্তু এসব তার কিছুই ছিল না।

জীবন আজব এক সূত্রের নাম। আপন পর হয়ে যায়। আর পর গাছ হয়ে ছায়া দেয়। যার আগলে রাখার কথা। সে ছুড়ে ফেলে দেয়। যার ফিরে তাকানোর কথা না। সে অনায়াসে সব আপন করে নেয়।

নাফিসা দাঁড়িয়ে কাঁদছে। রিদ্ধির চোখেও জল গড়িয়ে পড়ছে।

চলবে