ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব-০৭

0
326

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৭

—“দেখেছো ইসফাক মেয়েটা ভীষণ দুষ্টু।কেমন নিজের বরকে দেখতে চলে এসেছে।আমার ওর এই দুষ্টুমিগুলো ভালো লাগে।ছোটবেলার কথা মনে পরে যায়”

—“মেয়ে তো মাশাআল্লাহ ভীষণ সুন্দরী।আমার ছেলেকেও টাইট দিতে পারবে।তুমি একেবারে পারফেক্ট মেয়েকেই সিলেক্ট করেছো”

—“আমি জানি আমার রাগচটা বদমেজাজি ছেলের জন্য অর্ষারই বেস্ট।”

আয়রা ইসফাক নিজেদের ভেতরে কথা বলছিলো।ইয়াদ ফোনে কথা বলছিলো যখন সবাই অর্ষাকে দেখেছিলো।সে শুধু একটা মেয়েকে দৌড়ে যেতে দেখেছে।ইয়াদ ইরহামকে বলল,,,

—“মেয়েটা কে ছিলো দা ভাই”

ইয়াদের কথায় ইরহাম কিছু বলবে তার আগেই ইলমা বলে উঠলো,,,
—“এটা আমাদের ভাবি ছোট ভাইয়া।ইরহাম ভাইয়ের একমাত্র হবু বউ।”

কথার মাঝেই ইসফাক চৌধুরী তাড়া দিলেন ভেতরে ঢোকার জন্য।আসফি আহমেদ আর আহিন আহমেদ ওদের আপ্যায়ন করে ছাদে নিয়ে আসলো।ছাদটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।সাদা গোলাপ লাল গোলাপ দিয়ে।ইরহাম একটা জিনিস দেখে ভীষন অবাক হয়।
কারণ ছাদের এক পাশে সুন্দর করে সাজানো।দুইপাশে বসার জন্য জায়গা আর মাঝখানে ফুলের পর্দা দেওয়া।

ইসফাক চৌধুরী ইরহামের কাছে এসে বলল,,,
—“ইরহাম আমার সাথে একটু আসো।”

ইসফাক চৌধুরীর পিছনে পিছনে একটা রুমে আসলো ইরহাম।আয়রা আগে থেকেই বসে ছিলো।ইসফাক চৌধুরী বলেন,,
—“ইরহাম তোমাকে কিছু কথা বলতে চাইছি এখন”

—“জি বাবা বলো কি বলবে।”

—“তোমার মামনি আমি এবং সবাই চাইছি আজকেই তোমার আর অর্ষার বিয়েটা হয়ে যাক।অর্ষাকে আমরা এখন নিয়ে যাাবো না ওর ফাইনাল এক্সামের পরে বড় করে অনুষ্ঠান করে নিয়ে যাবো।”

—“হোয়াট!কি বলছো কি বাবা তুমি।মানলাম আজকে এনগেজমেন্ট করতে চেয়েছি তাই বলে বিয়েও।অসম্ভব আমি আজকে বিয়ে করতে পারবো না”

আয়রা কিছুটা রেগে বলেন,,,

—“কেনো বিয়ে করতে পারবে না,কিছুদিন পরে বিয়ে করাা আর এখন করা তো একি কথা তাহলে সমস্যা কোথায়”
ইরহাম নিজেকে শান্ত করে বলল,,,
—“অর্ষা কি রাজি বিয়েটা করতে।”

—“হ্যা ও তো রাজি।ও কি তোমার মতো নাকি।নিজের বাবা মায়ের কথার গুরুত্ব আছে ওর কাছ।”
—“আমি এই মুহুর্তে অর্ষার সাথে কথা বলতে চাই।”

—“ঠিক আছে আমি তোমার সাথে অর্ষার কথা বলানোর ব্যবস্হা করছি।”

ইসফাক আয়রা বেরিয়ে যায় রুম থেকে।ইরহাম চুল টেনে বসে পরে।আজকেই বিয়ে,সে তো তার হৃদহরনীকে ভুলতেই পারছে না।চোখ বন্ধ করলেই সেই মাতাল করা চোখ দুটো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।এই ক’দিন ঘুমাতেও পারেনি ঠিকমতো।

১৪.

আরিশার উপর দিয়ে সব ঝামেলা যাচ্ছে।আপুর বিয়ে বলে কথা আম্মু বলছে এই করো ছোট আম্মু বলছে ওই কর।এতেই আরিশার অবস্হা খারাপ।সব কিছু ভাবতে ভাবতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যায়।

—“আউচ আম্মু মরে গেলাম গো আমার কোমড় ভেঙে দিলো।”
আরিশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে কেউ মিষ্টি কন্ঠে বলল,,,
—“আম সরি মিস। একদমই খেয়াল করিনি দুঃখিত তার জন্য।উঠে আসুন”

আরিশার সামনে একটা সুদর্শন পুরুষ তার দিকে হালকা ঝুঁকে হাত বাড়ি দিয়ে কথাটা বলল।আরিশা মুগ্ধ দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা আরিশার মুখের সামনে তুড়ি মেরে বলল,,,

—“কি হলো মিস আপনার।আপনি কি এভাবেই বসে থাকার চিন্তা করেছেন”

অর্ষা লোকটার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো।অর্ষা ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,,,
—“খুবই দুঃখিত আসলে অনেক ঝামেলার মাঝ দিয়ে যাচ্ছি তাই হয়তো খেয়াল করিনি আপনায়।সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।”

লোকটা আবারও হাসলো।আরিশা আবারও মুগ্ধ হয়।এই বয়সটাই যাকে দেখবে তাকেই ভালো লাগবে।আরিশা ১০ম শ্রেনীতে পরা কিশোরী মেয়ে।আর এই বয়সেই মানুষ ভুল করে,ভুল মানুষর প্রেমে পরে।নিজের অস্তিত্বকে হারায়।আরিশার মনে পরলো তার আপুই এর কথা।তাই সে এইসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফলল।আরিশার ভাবনার মাঝেই লোকটা বলল,,,

—“আমি ইয়াদ চৌধুরী পাত্রের ছোট ভাই।আপনি কি হন পাত্রীর”[লেখিকা ইশা আহমেদ]

—“ওহ আপনি ইরহাম ভাইয়ার ভাই।আমি অর্ষা আপু মানে আপনার ভাবির ছোট বোন”

ইয়াদ হেসে বলল,,,গ্রেট!আপনি তো আমার বেয়াইন লাগেন তাহলে।তা বেয়াইন কি খবর,কোন ক্লাসে পরছেন”

—“উমম আমি আরিশা দশম শ্রেনীর ছাত্র আর পড়ালেখা যেটাতে আমি ভীষণ খারাপ।আপুর একদম উল্টো বলতে পারেন।”

ইয়াদ হেসে ফেললো আরিশার কথায়।মেয়েটার প্রথম কথাগুলো শুনে মনে হয়েছিলো কলেজে পড়ে হয়তো এখন তো দেখছে মাত্র ১০ম শ্রেনীতে পড়া বাচ্চা মেয়ে।ইয়াদ আরিশার দিকে ঝুঁকে ওর ছোট ছোট চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল,,

—“পড়াশোনায় মন দাও মেয়ে।দেখবে একদিন ভালো কিছু করতে পারবে।পড়াশোনা না করলে কিন্তু ভুগতে তোমাকেই হবে।”

ইয়াদ চলে যায়।আরিশা ইয়াদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।লোকটা হুট করে এসে আরিশার কিশোরী মনে ঝড় তুলে চলে গেলো।এ ঝড় কি আদেও থামবে নাকি থামাতে হলে ইয়াদ চৌধুরী নামক লোককে লাগবে।

১৫.

রুশান তখনকার জন্য অর্ষাকে তাড়া করছে সারা রুম জুড়ে।বেচারি অর্ষা ভারি লেহেঙ্গা নিয়ে সেইভাবে দৌড়াতেও পারছে না।কোনো মতে রুশানের ভয়ে লেহেঙ্গা উঁচু করে দৌড়াচ্ছে।আর সব বন্ধুরা মিলে বসে বসে মজা নিচ্ছে।

—“অর্ষার বাচ্চা দাড়া বলছি তোর জন্য আমার সবার সামনে মান সম্মান শেষ।ওই মেয়েটা আমাকে দেখে হাসছিলো কি করে”

অর্ষা দাঁত কেলাতে কেলাতে বলল,,,

—“ঠিক হয়েছে একেবারে জানু তুই আমার মজা নিচ্ছিলি সকালে মনে আছে।তোমার লেগেছে বুঝি জানটুস ইলমাকে হাসতে দেখে।”

কথাটা বলেই খিলখিল করে হেসে দেয় অর্ষা।রুশান তো রেগে ফায়ার।তখনই রুমে ইরহাম প্রবেশ করে।ইরহামকে দেখে মুহিব নাইম উশা দাঁড়িয়ে পরে।ইরহাম হাতের ইশারা করে সবাইকে বের হয়ে যেতে বলে।রুশান অর্ষার দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
অর্ষা বেলকনিতে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিয়েছে।অর্ষা সারা শব্দ না পেয়ে দরজা খুলে মাথাটা হালকা উঁচিয়ে দেখে রুশান আছে কিনা।রুশানকে না দেখে খুশি মনে বের হতে হতে বলে,,,

—“যাক এ যাত্রায় রুশাইন্নার হাত থেকে বেঁচে গেলাম।কিন্তু কাহিনী কি ওতো এতো সহজে যাওয়ার লোক না।”

ইরহাম অর্ষাকে টেনে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।ইরহামের চোখগুলো অসম্ভব লাল।মনে হচ্ছে রেগে আছে ভীষণ।কিন্তু অর্ষা বুঝতে পারলো না ইরহাম রেগে কেনো আছে।ইরহাম দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলে,,,

—“তুমি বিয়েতে কেনো রাজি হয়েছো হ্যা।আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।তোমার মতো মেয়ের সাথে এক মুহুর্ত থাকা সম্ভব না”

অর্ষা চেচিয়ে বলল,,,

—“বিয়ে কিসের বিয়ে! আপনার মতো অসভ্য লুচ্চা ব্যাডার লগে আমিও বিয়ে করতে চাই না।খালি আব্বু বলছে তাই।আর আমার সাথে না আপনার মতো লোকের সাথে এক সেকেন্ড ও থাকা সম্ভব না”

অর্ষা নিজেকে ইরহামের কাছ থেকে ছাড়াতে চায়।ইরহাম অর্ষাকে ছেড়ে দেয়।অর্ষা অবাক হয়।এতো সহজে ছেড়ে দিলো।ইরহাম নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।ইরহাম অর্ষার কাছে এসে বলে,,

—“প্লিজ তুমি বিয়েটা করো না।না করে দাও।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি”

অর্ষা অবাক হয়।সে তো ভাবতেও পারছে না এই লোকটা নাকি কাউকে ভালোবাসে।জীবনে কল্পনাও করেনি এই বদমেজাজি লোক কাউকে ভালোবাসবে।অর্ষা ভীষণ খুশি হয়।তাহলে হয়তো ইরহাম তাকে বিয়ে করবে না এই ভেবে পরক্ষণেই মনে পরে ইরহাম তো তাকেই বিয়ে ভাঙতে বলছে।

—“শুনুন আমি কিভাবে বিয়েটা ভাঙবো বলুন আপনিই ভেঙে দিন বিয়েটা কারণ আমি না আপনিই কাউকে ভালোবাসেন।”

—“আমি যদি বিয়েটা ভাঙতে পারতাম তাহলে কি তোমাকে বলতাম আর আমি আমার হৃদহ…..”

ইরহাম থেমে যায়।অর্ষা শেষের কথাটুকু ঠিকমতো শুনতে পারিনি।অর্ষা ধপ করে বিছানায় বসে বলে,,,

—“স্যার সমস্যা নেই এখন তো এনগেজমেন্ট হচ্ছে আপনি না হয় বিয়ের আগে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে পালিয়ে যাইয়েন।তাহলে সমস্যা নেই”

—“আমাদের বিয়েটা একটু পর অর্ষা তুমি কি জানো না।তোমার আব্বু সবাই বলেছে তুমি রাজি তাহলে নাটক কেনো করছো।হুয়াই!”

অর্ষা কেঁপে ওঠে।স্তব্দ হয়ে যায় অর্ষা।আজকে ওর বিয়ে তাহলে সকাল থেকে হওয়া সন্দেহটাই ঠিক।অর্ষা মনটা খারাপ হয়ে যায়।তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখে।আসিফ আহমেদকে ইরহামের কাছে ছোট হতে না দেওয়ার জন্য বলে,,,

—“সরি ভুলে গিয়েছিলাম।আর হ্যা আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।আমার এতে কোনো সমস্যা নেই।আপনার সমস্যা থাকলে আপনি বিয়ে ভাঙেন”

ইরহাম রাগে দিক বেদিক হারিয়ে ফেলে।অর্ষার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে।ইরহামকে আজকে কেমন অন্যরকম লাগছে অর্ষার।অসম্ভব রেগে থাকাটাও ভালো লাগছে অর্ষার কাছে।চোখগুলো লাল টকটকে মেয়েদের মতো নাকও লাল হয়ে আছে রাগের কারণে।

—“ঠিক আছে বিয়ে করছো না আমিও তোমাকে দেখে নিবো মিস অর্ষা।”

—“দেখেন না দেখেন কত সুন্দর করে সেজেছি।ভালো করে দেখেন একটু পর আপনারই বউ হয়ে যাবো।সারাজীবন দেখতে পারবেন আর সাথে তো জ্বালানো ফ্রি”

ইরহামের রাগের থেকে বিরক্তিকর লাগছে এই মেয়েকে।কথা বলছে রেগে আর এই মেয়ে সেইগুলোকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে।যেনো তার কিছুই যায় আসে না।গায়ে কিছুই মাখে না।ইরহাম অর্ষাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে হনহন করে বেরিয়ে যায়।অর্ষার এবার কান্না পায় তার বাবাই তাকে আজকেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।তখনই রুমে আসিফ আহমেদ ঢোকেন।

আসিফ আহমেদ মেয়ের পাশে এসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।অর্ষা টলমল চোখে তাকালো আসিফের দিকে।আসিফ আহমেদ হালকা হেসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

—“মা আমি তোর খারাপ চাই না।ইরহামের সাথে খুব ভালো থাকবি তুই।আজকে বিয়েটা হয়ে যাক মা তুই না করিস না”

—“আমি রাজি বাবা।আমার কোনো সমস্যা নেই বিয়েটা করতে”

—“তুই মন থেকে রাজি তো মা বিয়েটা করতে।”

অর্ষা বাবার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে চোখ মুছে বলে,,,

—“হ্যা আব্বু আমি রাজি। তোমার জামাইয়ের যে আমি কি অবস্থা করি সেটা শুধু দেখতে থাকো।”

চলবে~