ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব-০৮

0
340

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৮

—“এটা কেমন কথা অর্ষা।কিছুক্ষণ পর ইরহাম তোমার স্বামী হবে তাকে তুমি জব্দ করার কথা ভাবছো,মোটেও এইসব উল্টাপাল্টা জিনিস মাথায় আনবে না”

—“উফ আব্বু উনি একজন ঘ্যাড়ত্যাড়া লোক।কথায় কথায় আমায় অপমান করে তাকে আমি কিভাবে ছেড় দেবো”

আসিফ আহমেদ কিছু বলেন না।আহিন আহমেদ ডাক দিতেই তিনি চলে যায়।অর্ষা এখন রুশানের রুমে আছে।কিছুক্ষণ আগেই তাকে এই রুমে পাঠানো হয়েছে।সবার প্রতি বেশ বিরক্ত হয় অর্ষা নিজের রুম ছেড়ে কেনো তাকে রুশানের রুমে থাকতে হবে।
অর্ষার ভাবনার মাঝেই রুশান মুহিব উশা নাইম ভেতরে প্রবেশ করে।অর্ষার অথৈয়ের কথা মনে মাথায় আসে।সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

—“অথৈ কোথায় রে ও আসলো না কেনো?”

অথৈয়ের কথা শুনে বেশ বিরক্ত হয় সবাই।অথৈয়ের ব্যবহার বেশ কিছুদিন ধরে সবাই লক্ষ করছে।অদ্ভুত আচরণ করা ধরেছে ক’দিন যাবত।নাইম সকালে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলে বলে সে অসুস্থ তাই আসবে না।

কিন্তু নাইম অর্ষাদের বাড়ি আসার সময় দেখলো বোনের সাথে ঘুরে বেড়াতে।এতে নাইমের মেজাজটা বিগড়ে যায় তবুও কিছু বলে না।
নাইম বিরক্ত হয়ে বলে,,

—“চুপ কর তুই ওই মাইয়ার কথা বলবি না।সকালে ফোন দিয়ে বললাম যাবি না বলে অসুস্থ পরে দেখি বোনের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।তোরে বলছিলাম না মাইয়া সুবিধার না তাও ফ্রেন্ডশিপ করলি”

—“উফ নাইম থামবি তুই হয়তো কোনো প্রবলেম হয়েছে তাই আসেনি।”

উশার এবার মেজাজ কিছুটা খারাপ হয়ে যায়।সে রাগি কন্ঠে বলে,,

—“অর্ষা নিজের বিয়েতে ফোকাস দে।ওকে আমরা কেউই পছন্দ করি না তুই বেশ ভালো করেই তা জানিস।সত্যি বলতে আমি অনেক খুশি হয়েছি ও আসেনি বলে।”

অর্ষা তর্কে জড়ায় না আর।অথৈয়ের সাথে তাদের ফ্রেন্ডশিপ মাত্র ৬ মাসের।আর বাকি সবাই ছোটবেলা থেকেই বন্ধু।মুহিব নাইম রুশান সব সময় আগলে রেখেছে অর্ষা উশাকে।অর্ষা মুহিব নাইমকে রুশানের মতোই নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসে।

উশা রুশান আর মুহিবকে ভাইয়ের নজরে দেখলেও গত চার বছর ধরে নাইমকে ভালোবাসে।কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হওয়ার ভয়ে কখনো বলে উঠতে পারিনি।

কিছুক্ষের ভেতরেই ডাক পরলো অর্ষাকে নিয়ে যাওয়ার।রুশান অর্ষাকে নিয়ে যেতে লাগলো সাথে আরিশা উশা নাইম মুহিব তো আছেই।দুজনকে ফুলের পর্দার দুপাশে বসানো হলো।অর্ষার এখন কেনো জানি লজ্জা লাগছে ভীষণ।সেও কিছুক্ষণের মধ্যে ইরহাম নামক মানুষটার ব্যক্তিগত সম্পদ হয়ে যাবে।

অর্ষা ভবিষ্যতের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এই বিয়ে আদেও টিকবে কিনা সন্দেহ। তার উপর ইরহাম অন্য কাউকে ভালোবাসে।অর্ষা মাথা নিচু করে আছে।কাজি বিয়ে পরাতে শুরু করে।কবুল বলার সময় গলা ধরে আসছিলো তার।কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলে ফেলে।

ইরহাম তাড়াতাড়ি বলে দেয়।সবাই তো ওহো বলে ওঠে।কিন্তু অর্ষা তো জানে ইরহাম বিরক্ত হয়ে দ্রুত কবুল বলেছে।সেও আজকে থেকে কারো বউ ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে অর্ষার।তার সামনে বসে থাকা সুদর্শন পুরুষটা তার বর,একান্তই তার ব্যক্তিগত সম্পদ।

ইরহাম অর্ষাকে পাশাপাশি বসানো হয়।বিয়ের রীতি অনুযায়ী কারুকার্য করা আয়নায় তাদের দুজনের মুখ দেখতে হবে।অর্ষার লম্বা ঘোমটার ভেতরে ইরহামকে ঢুকিয়ে দেয় উশা আর আরিশা মিলে।ইরহাম প্রচন্ড বিরক্ত হয়।

সবাই ইরহামকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
—“ভাইয়া আয়নার দিকে তাকান।আর কি দেখছেন আপনি আয়নায় তাই বলুন”

ইরহাম আয়নার দিকে তাকায় অর্ষা তার দিকেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।বিরক্ত হয় ইরহাম।আয়নায় মুখ দেখে এখন কি বলবে সে।সে তো দেখতে পাচ্ছে এক আটা ময়দা মাখা রমনীকে যাকে চেনাটাও কষ্টসাধ্য।তাও বাবার সম্মান রক্ষার জন্য হেসে বলল,,,

—“আমি আমার ভবিষ্যতেকে দেখতে পাচ্ছি আয়নায় যা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

সবাই ওহহহো বলে চেচিয়ে ওঠে।রুশান বলে ওঠে,,,

—“তা স্যার আই মিন ইরহাম ভাইয়া আপনি আয়নায় নিজের কেমন ভবিষ্যতে দেখতে পাচ্ছেন।”

কথাটা বলেই রুশান সহ সবাই হাসিতে ফেটে পরে।ইরহাম পরে যায় অস্বস্তিতে।অর্ষা বুঝতে পারে তাই সবাইকে ধমক দিয়ে বলে,,,

—“চুপ করবি তোরা।আমার সুন্দর বুইড়া বরটাকে আর পচানি দিস না”

ইরহাম রেগে যায় ভীষণ।পেছন থেকে অর্ষার কোমড় চেপে ধরে অনেক জোরে।অর্ষাও কম কিসে বাম হাত দিয়ে হাত খামচে ধরে সবার আড়ালে।ইরহাম ব্যথা পায়।অর্ষার নখগুলো অনেকটাই বড় বড় তাই ইরহামের ব্যাথা লাগছে অর্ষারও বেশ ব্যাথা করছে কিন্তু কেউই ছাড়চছেও না টু শব্দ ও করছে না।

—“অর্ষা তুই আয়নাতে কি দেখতে পারছিস”

মুহিবের কথায় অর্ষা হাসে।তারপর আয়নার ভেতর দিয়ে ইরহামের চার চোখা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

—“আমি ওই চোখে আমার সর্বনাশ দেখতে পারছি”

সবাই অনেক সময় ধরে মজা নেয় ইরহাম অর্ষার।অর্ষাও কম না কোনো অংশে সেও সবার সাথে কথার ছলে জিতে যায়।ইয়াদ এতো সময় তার আম্মুর অর্ডার করা রিং আনতে গিয়েছিলো।তাই বিয়ে বা বউ কাউকেই দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

রিংটা মায়ের কাছে দিয়েই ছাদে চলে আসে ইয়াদ।সামনে তাকিয়ে ইয়াদ স্তব্ধ হয়ে যায়।চোখে পানি চলে আসে।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে তার।নিজের ভালোবাসার মানুষকে তারই ভাইয়ের সাথে দেখতে হচ্ছে।ইয়াদ এলোমেলো পায়ে বেরিয়ে যায় অর্ষাদের বাড়ি থেকে।

১৬.

ফুলে সজ্জিত রুমে বসে আছে অর্ষা।রুমে সাদা লাল গোলাপের সমাহার।বিছানায় বসে আছে।আজকে নাকি ইরহাম তার সাথে থাকবে কথাটি শোনা মাত্রই অর্ষা মনে মনে কিছু একটা প্লান করে ফেলেছে।বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যায় অর্ষা।

উঠে দাঁড়িয়ে কাবার্ড থেকে প্লাজু আর টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশে হয়ে এসে দেখে ইরহাম এখনো আসেনি।অর্ষা চকলেট এনে বসে বসে খেতে লাগে।ইরহাম ১২ টার দিকে রুমে প্রবেশ করে।

কোনো দিকে না তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ওয়াশরুমে আসতেই মনে পরে তার তো এখানে কোনো জামা নেই।তাই অগত্যা তাকে খালি গায়ে বের হতে হয়।অর্ষা আপন মনে বসে সেলফি তুলছিলো।

ইরহাম বিরক্ত হয় অর্ষার কাজে।অর্ষার কাছে এসে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,,,

—“আমার টিশার্ট লাগবে এনে দাও”

অর্ষা ইরহামের দিকে তাকাতেই চোখ ঢেকে চেঁচিয়ে ওঠে।ইরহাম হকচকিয়ে যায় অর্ষার এমন আকস্মিক কাজে।সে দ্রুত অর্ষার মুখ চেপে ধরে।

—“ইডিয়ট কোথাকার এভাবে কেউ চেচামেচি করে।চেঁচালে কেনো তুমি হঠাৎ”

অর্ষা উমম উমম করে যাচ্ছে।ইরহামের বোধগম্য হতেই ছেড়ে দেয় অর্ষার মুখ।অর্ষা জোরে জোরে কিছুক্ষণ শ্বাস নিয়ে বলে,,,

—“অসভ্য নিলর্জ্জ লোক কোথাকার।মেয়ে মানুষের সামনে খালি গায়ে আসে।”

অর্ষার কথায় ইরহামের বিরক্তিরসীমা পেরিয়ে যায়।মুড এমনিতেও ভালো না।
—“পুরুষ মানুষের লজ্জা এমনিতেও কম থাকে।আর লজ্জা নারীর ভূষণ পুরুষের নয়।”

অর্ষা ইরহামের কথা শুনে ভেংচি কেটে রুশানের রুমের দিকে পা বাড়ায়।রুশান আর ইরহাম দুজনই প্রায়ই একি লম্বা।ইরহাম একটু বেশি হতে পারে রুশানের থেকে।

—“আরে আরে নতুন বউ যে তা বাসর ফেলে আমার রুমে কি আপনার,নাকি বর লাথি মেরে বের করে দিয়েছে।”

—“কি বললি তুই দাড়া সয়তান পোলা তোর একূিন কি আমার একদিন!

রুশানের রুমে রুশান মুহিব তিনজন থাকবে আর উশা আরিশার সঙ্গে।রুশানের রুমে আসতেই রুশান অর্ষাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে।অর্ষা বালিশ তুলে দিলো কয়েকটা।রুশানও দিলো।এরপর আর কি মারামারি শুরু।মুহিব নাইম দুই ভাই বোনের মারামারিতে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে গিয়েছে।ওরা হা করে দেখছে।

ক্লান্ত হয়ে দুজনেই ধপাস করে বসে পরে।কিছুক্ষণ বাদেই অর্ষার মনে পরে সে এই রুমে কি করতে এসেছিলো।দ্রুত উঠে কাবার্ড থেকে ট্রাউজার টিশার্ট নিয়ে ছুট লাগালো।তিনজন বসে হা করে সব দেখলো।বোঝার পরে তিনজনই হাসলো বেশ।

১৭.

অন্ধকার রুমে নিজেকে বন্ধি করে রেখেছে ইয়াদ।অর্ষার প্রতিটা ছবি ছিঁড়ে ফেলছে ইয়াদ।নিজের নিজের প্রতি রাগ লাগছে কেনো সে আগে মামনি বাবাকে বলেনি অর্ষার কথা।তাহলে আজকে তার দা ভাইয়ের জায়গায় সে থাকতো।

—“আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি অর্ষা।জানি এখন তোমায় ভালোবাসাটা জায়েজ না।তুমি অন্যকারো বউ,কি করবো বলো মনকে এখনো বোঝাতে পারছি না তুমি অন্যকারো।”

ইয়াদ অর্ষার একটা ছবি রেখে সবগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিলো।গত তিনটা বছর ধরে যাকে ভালোবেসেছে সেই আজ অন্যকারো।ভালোবাসার মানুষকে নিজের চোখের সামনে অন্যকারো হয়ে যাওয়া দেখাটা এতো কষ্টের কেনো!সে তো কম ভালোবাসিনি অর্ষাকে তাহলে আল্লাহ কেনো তার ভাগ্যে অর্ষাকে রাখলো না।

ইয়াদের পরমুহূর্তেই মনে পরলো আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।এমন অনুভূতি যেনো কারো না হয়।ইয়াদ বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।আফসোস করছে কেনো সে অর্ষাকে মনের কথাটা জানালো না।

১৮.

অর্ষা দরজার খুলে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো ইরহাম কোথায়।খুঁজে পেলো না।দরজা খুলে আরেকটু দেখতে যাবে তখনই ইরহাম টেনে সামনে নিয়ে আসে তাকে।অর্ষা অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে থাকে।

—“তোমাকে আমি কখন টিশার্ট আনতে পাঠিয়েছিলাম হ্যা।আধা ঘন্টা যাবত আমি এভাবে দাঁড়িয়ে আছি।তোমার কি কমনসেন্সের অভাব,ইডিয়ট গার্ল”

ইরহাম রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কথাগুলো বলে।অর্ষার মেজাজ বিগড়ে যায়।কিন্তু নিজেই অপরাধ করেছে তাই রাগটাকে কন্ট্রোল করলো।তারপর বলল,,,

—“সরি আমি আসলে রুশানের সাথে….”

অর্ষার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইরহাম অর্ষার হাত থেকে টিশার্ট ট্রাউজার নিয়ে চলে যায়।অর্ষা রাগে ফুঁসতে থাকে।বিড়বিড় করে বলে,,,

—“নিজেকে কি মনে করে কি এই লোক।অসভ্য বদমাশ লোক কোথাকার।হতেই পারে একটু লেট তাই বলে এই ধরনের কথা বলবে।আমার কমনসেন্স নেই নাকি আপনার নেই অসভ্য স্যার”

চলবে~