ভালোবাসার রঙিন প্রজাপতি পর্ব-৫০ এবং শেষ পর্ব

0
1516

#ভালোবাসার_রঙিন_প্রজাপতি
#লেখনীতে:সারা মেহেক

শেষ পর্ব

ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রেখে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছেন আদ্রিশ। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে উনাকে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। হয়তো কালো রঙয়ের শার্ট পরেছেন বলে।
আমি উনার পিছনের দিকে বিছানায় বসে আছি। চুপচাপ বসে থেকে উনার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে চলছি। আজ হঠাৎ করে চোখেমুখে এতো হাসিখুশি ভাব এঁটে, কালো রঙয়ের শার্ট পরে হসপিটালে যাওয়াটা কেমন যেনো সন্দেহজনক মনে হলো আমার কাছে। যদিও আমি জানি যে, আমি মনে মনে যেটা ভাবছি সেটা মোটেও ঠিক না৷ তবুও গোয়ান্দা টাইপ একটা মন নিয়ে চলি তো…এজন্য এসব বিষয়ে সন্দেহ হয়।

আমি ধীরেসুস্থে হেঁটে আদ্রিশের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মাত্রই শার্টের বোতাম লাগানো শেষ হলে উনি কলার ঠিক করতে নিলেন। উনার শার্টের কলারে হাত দেওয়ার আগেই আমি সেখানে হাত দিয়ে ঠিক করতে লাগলাম। কলার ঠিক করার শেষ পর্যায়ে আমি জিজ্ঞাস করলাম,
” আজকে কোনো স্পেশাল ডে?”

আদ্রিশ আমার কথার দিক বুঝতে না পেরে বললেন,
” না তো। আজকে কিসের স্পেশাল ডে হবে?”

আমি এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উনার কলার পুরোপুরি ঠিক করে দিয়ে বললাম,
” তাহলে এতো সাজগোজ যে?”

আদ্রিশ স্বাভাবিকভাবে বললেন,
” কিসের সাজগোজ? নরমালি যেভাবে যাই সেভাবেই তো যাচ্ছি। ”

আমি এবার উনার সামনে ড্রেসিং টেবিলের উপর বসে পরলাম। বুকে দু’হাত গুঁজে বললাম,
” মোটেও না। নরমালি এভাবে যান না আপনি। নরমালি যেনতেন রঙয়ের শার্ট পরে গেলেও আজ কালো রঙয়ের শার্ট পরছেন। ”

” তো? কালো রঙয়ে কি সমস্যা?”

আমি এবার ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,
” সমস্যা আছে। অনেক সমস্যা। কালো রঙয়ে য আপনাকে অনেক হ্যান্ডসাম দেখায় তা আপনি জানেন না? তারপর এর উপর যখন এপ্রোন পরবেন তখন তো মেয়েরা আপনাকে চোখ দিয়ে গপগপ করে গিলে খাবে। সেটা কি খুব ভালো হবে?”

আদ্রিশ আমার কথা শুনে বাঁকা হেসে আমার উপর একটু ঝুঁকে পরে বললেন,
” ফিলিং জেলাস? হা?”

আমি চট করে উনার শার্টের কলার ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম,
” ইয়াহ। ফিলিং জেলাস। আর এ জেলাস হওয়ার অধিকার আমার আছে। কালো শার্টে পরিহিত অবস্থায় আপনাকে বাইরের মেয়েরা কেনো দেখবে হুম? দেখবো শুধু আমি। স্পেশাল স্পেশাল রঙয়ের শার্টগুলো পরে আমার সামনে বসে থাকবেন সবসময়। ওসব মেয়েদের দেখাতে যাবেন কোন দুঃখে? আমি আমার সৌন্দর্য শুধু আপনার জন্য রেখেছি আর আপনি আপনার সৌন্দর্য বাইরের মেয়েগুলোকে দেখিয়ে বেড়াবেন? সাহস তো কম না আপনার! আজ থেকে এতো রঙঢঙ, ভাবসাব নিয়ে হসপিটালে গেলে নাক-মুখ ফাটিয়ে দিবো একদম। বলে রাখলাম। মাইন্ড ইট মিস্টার আদ্রিশ।”

এই বলে আমি চোখ কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অদ্ভুত! আমার এ চাহনি উনার উপর কোনো প্রভাবই ফেললো না। উনি উল্টো মুখ লুকিয়ে হেসে নিলেন। এরপর আমার ডান গালে হাত রেখে বাম গালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললেন,
” আমার মিশমিশ যে এতো জেলাস হতে পারে তা এই কালো শার্ট না পরলে জানতে পারতাম না। ”
এই বলে উনি আমার হাতের বাঁধন হতে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,
” রাগী অবস্থায় তোমাকে দেখতে বেশ কিউট লাগে। উফ, জেলাসি জেলাসি রাগ৷ কি রূপ!”

” রাখুন আমার রূপ। আগে আপনার রূপ ঢাকুন।”

আদ্রিশ আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললেন,
” কিভাবে আমার রূপ ঢাকবো?”

” মাস্ক পরে। অলটাইম মাস্ক পরে থাকবেন। খুললেই খবর আছে।”

” ওকে ডার্লিং। এটাই হবে।”

আদ্রিশের সম্বোধন শুনে আমি চোখজোড়া বড় বড় করে বললাম,
” কি বললেন আমাকে!”

আদ্রিশ এক হাত দিয়ে আমার গাল টেনে শব্দ করে হেসে বললেন,
” ডার্লিং বলেছি। তুমি তো আমার ডার্লিং, সুইটহার্ট….. ”

আদ্রিশকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে উনার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললাম,
” এসব নাম মুখে নিবেন না একদম। ফালতু শোনায় এসব। মিশমিশ, মাধবীলতা এই দুটো নামে ডাকবেন আমাকে। ”

আদ্রিশ ভ্রুজোড়া নাচিয়ে বললেন,
” না ডাকলে?”

” খুন করে দিবো আপনাকে।”

” এটা কি থ্রেট?”

” হুম। বড়সড় রকমের, ভয়ানক ধরণের একটা থ্রেট এটা।”

আদ্রিশ আমার কথায় শব্দ করে হেসে বললেন,
” উফ…মিশমিশ, তোমার দেওয়া থ্রেটগুলো শুনতে খুব ভালো লাগে৷ এসব থ্রেট মোটেও ভয় জাগায় না মনে। উল্টো মনকে উথাল-পাথাল করে দেয়। ”

আমি উনার কথা শুনে আমতাআমতা করে বললাম,
” দেখুন… এটা কিন্তু সিরিয়াস রকমের থ্রেট। আমার কথা না মানলে সত্যিই আপানকে খুন করে দিবো আমি। ”

আদ্রিশ আমার কথা শুনে বুকে দু হাত চেপে ধরে বললেন,
” সে তো বহু আগেই করেছো মাধবীলতা। তোমার চাহনি, রূপ রঙ সবকিছুতেই আমায় খুন করেছো তুমি। একজন মানুষকে আর কতবার মারতে চাও তুমি? বলো?”

আমি আদ্রিশের কথায় আর কিছু বলার মত পেলাম না। এজন্য মাথা নিচু করে বসে রইলাম। আদ্রিশ বিছানার উপর থেকে ব্যাগ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
” আজই এ শার্ট পরে বাইরে যাচ্ছি। নেক্সট যাবো না। চেঞ্জ করার টাইম নেই বলে এটাতেই রওনা হতে হচ্ছে। ” এই বলে উনি আমার কপালে গভীর এক চুমু এঁকে দিলেন।

আদ্রিশ বাসার বাইরে বের হতেই আমি জিজ্ঞাস করলাম,
” কখন আসবেন?”

আদ্রিশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
” এখন দুটো বাজে। ৯/১০ টার মধ্যেই চলে আসবো। কারণ আজকে ডিউটির চাপ নেই বেশি।”

আমি হাসিমুখে বললাম,
” আচ্ছা। অপেক্ষায় থাকবো আমি।”

আদ্রিশ আমাকে ফিরতি হাসি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলেন। উনি চলে যেতেই দরজা আটকে রুমে এসে পরলাম আমি। এখন বই হাতে নিয়ে পেন্ডিং পড়াগুলো শেষ করতে হবে আমাকে।

.

রাত এগারোটা বাজে। আদ্রিশের বাসায় পৌঁছানোর কথা রাত নয়টায়। সেখানে টেনেটুনে এক ঘণ্টা গিয়ে দশটা বাজলো। তারপরও উনি এলেন না। আবারো টেনেটুনে এগারোটা বাজলো। এ নিয়ে তিনবার উনাকে ম্যাসেজ করেছি এই জিজ্ঞাস করে, ‘কখন আসবেন?’ উনি প্রতিবারই রিপ্লাই দিচ্ছিলো, ‘এই তো আর এক ঘণ্টা।’ কিন্তু উনার এ ঘণ্টা আজ শেষই হচ্ছে না।

কোনো এক অজানা কারণে আজ খুব অস্থিরতা অনুভব করছি আমি। এ মূহুর্তেই আদ্রিশকে দেখার জন্য হৃদয়ে উথাল-পাতাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। যেনো হৃদয়ে জোয়ার এসেছে। আর এ জোয়ারকে ভাটায় পরিণত করতে পারবে আদ্রিশের উপস্থিতি। অথচ উনিই নেই এখন।

অপেক্ষার প্রহরের আরো এক ঘণ্টা চলে গেলো। রাত বারোটার সময় উনার ফোনে ম্যাসেজ না দিয়ে কল দিলাম। একবার রিং হলো, উনি ফোন ধরলেন না। দ্বিতীয়াবার রিং হতেই উনি ফোন ধরলেন। ব্যস্ত কণ্ঠে বললেন,
” মিশমিশ….আমার আরো সময় লাগবে। তুমি খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পরো।” এই বলে উনি ফোন কেটে দিলেন। সাথে সাথেই আমার মনের কোনে একরাশ অভিমানের মেঘ এসে জমা হতে লাগলো। ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে লাইট অফ করে শুয়ে পরলাম আমি। পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও ভাত খেতে মন চাইলো না আমার।

.

একদিকে কলিংবেলের আওয়াজ, অপরদিকে ফোনের রিংটোনের আওয়াজ। দুইয়ে মিলে আমার ঘুমটা নষ্ট করে দিলো। প্রচণ্ড বিরক্তি আর খিটখিটে মেজাজ নিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, আদ্রিশ কল করেছে। এ মূহুর্তে রিংটোনের আওয়াজ বিরক্ত লাগায় ঝট করে উনার কল কেটে দিলাম আমি। এরপর ধীরেসুস্থে শোয়া থেকে উঠে ফোনে সময় দেখলাম। সকাল ছয়টা বাজে। অবশেষে আদ্রিশের সেই এক ঘণ্টা শেষ হলো নয় ঘণ্টায় এসে। আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের এক হাসি দিয়ে দরজা খুলতে চলে গেলাম।

স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দরজা খুলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। আদ্রিশ আমাকে দেখে ক্লান্তিমাখা এক হাসি দিয়ে বললেন,
” সরি মিশমিশ। এতোটা ব্যস্ত হয়ে পরবো বুঝতেও পারিনি। হঠাৎ করে এক সিনিয়রের ডিউটি আমাকে শিফট করে দেয়। এজন্য….” এই বলে আদ্রিশ আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলেন। কিন্তু আমি হাত দিয়ে উনাকে থামিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললাম,
” মাত্রই হসপিটাল থেকে ফিরেছেন। ফ্রেশ হয়ে আসুন। খাবার গরম করে দিচ্ছি। ” এই বলে উনাকে পাশ কাটিয়ে দরজা আটকে দিলাম আমি। আর এক মূহুর্তও সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে চলে এলাম আমি৷

দশ মিনিটের মধ্যে আদ্রিশ ফ্রেশ হয়ে চলে এলেন। ততক্ষণে আমার খাবার গরম করা শেষ। আমি বিনাবাক্য ব্যয়ে উনাকে সব খাবার দিয়ে রুমে চলে এলাম। ওদিকে আদ্রিশ কোনো কথাবার্তা ছাড়াই খাবার খেতে লাগলেন।

আমি রুমে এসে ক্লাসের বাকি পড়াগুলো শেষ করছি। আদ্রিশ খাওয়াদাওয়া শেষে রুমে এসে বললেন,
” রাগ করেছো আমার উপর?”

আমি বইয়ের উপর দৃষ্টি রেখেই বললাম,
” আর কিছুক্ষণ পর আমার ক্লাস আছে। একজন মানুষের জন্য ওয়েট করতে করতে গতকাল রাতে পড়া শেষ করতে পারিনি। তাই এখন সে পড়া শেষ করছি। এ মূহুর্তে ডিস্টার্ব না করলে খুশি হবো।”

আমার কথার প্রত্যুত্তরে আদ্রিশ কিছুই বলেন না। বরং চুপচাপ বিছানায় এসে শুয়ে পরলেন। উনার শোয়ার সাথে সাথে আমি বইখাতা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলাম। এ মূহুর্তে আদ্রিশের পাশে থাকতে একটুও ইচ্ছা করছে না আমার। এজন্য রুম থেকে বেরিয়ে এলাম আমি।

.

বিকেলের দিকে বইখাতা নিয়ে বিছানার উপর পড়তে বসলাম আমি। সেই সকাল থেকে এখন অব্দি আদ্রিশের সাথে কোনরূপ কথাবার্তা হয়নি আমার। এমন নয় যে, আদ্রিশ আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেননি। উনি চেষ্টা করেছেন৷ তবে আমি সেসবে গুরুত্ব দেয়নি। উনার উপর খুব রাগ আর অভিমান জমে আছে আমার। এতো সহজে উনাকে ছাড় দেই কিভাবে!

হঠাৎ বারান্দা থেকে আদ্রিশের গিটারের টুংটাং আওয়াজ ভেসে এলো। পরক্ষণেই উনি গলা ছেড়ে গান ধরলেন,
“আমার কাছে, তুমি এমন একজন
এতো ভালোবাসি, তবু ভরেনা তো মন।

ভালোবাসার শুরু তুমি, শেষ হবে কি জানিনা
আমি বলতে তোমায় বুঝি, অন্য কিছু বুঝিনা।
এভাবেই মিশে থেকো, মায়াতে বেঁধে রেখো
ভালো থাকার, তুমি কারণ।

আমার কাছে, তুমি এমন একজন
এতো ভালোবাসি, তবু ভরেনা তো মন।

চোখের আড়াল হয়োনা, যেওনা দূরে সরে
জীবনের যতো সময়, রেখো তোমার করে।

আমার কাছে, তুমি এমন একজন
এতো ভালোবাসি, তবু ভরেনা তো মন।”

গান শেষ হতেই আদ্রিশ চুপ হয়ে এলেন৷ উনার এ গান গাওয়া যে আমার রাগ ভাঙানোর একটা অংশ তা আর বুঝতে বাকি রইলো না আমার। তবে আমিও কম না। এতো সহজে উনার কথা গলবো না আমি।
গানের গলা খুব একটা ভালো না বলে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এর গানটা ফোনে ছেড়ে দিয়ে বসে রইলাম আমি। এদিকে ফোনে গান বাজছে, অপরদিকে আমি ফোনের তালে তালে ঠোঁট মিলাচ্ছি…..

আমি তার ছলনায় ভুলবো না…
কাজ নেই আর আমার ভালোবেসে
কাজ নেই আর আমার ভালোবেসে
চোখে জল নিয়ে দিন গুনবো না
কাজ নেই আর আমার ভালোবেসে
কাজ নেই আর আমার ভালোবেসে
পোড়া মন জ্বালাতন করে যা করুক
পোড়া মন জ্বালাতন করে যা করুক
লোক লাজ ভয়ে টলবো না
ক্ষমা করো বলে সাধে যে সাধুক
ক্ষমা করো বলে সাধে যে সাধুক
আমি মিষ্টি কথায় গলবো না
অজুহাত কোনো আর শুনবো না
কাজ নেই আর আমার ভালোবেসে
কাজ নেই আর আমার ভালোবেসে।”

গান সম্পূর্ণ শেষ হতে না হতেই আমার ফোনে কল এলো। তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম আম্মু ফোন করেছে। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।
প্রায় আধ ঘণ্টার কথাবার্তা শেষে ফোন কেটে দিলাম আমি। কথা শেষে রুমে আসার আগেই আদ্রিশ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেন। উনার এমন হুটহাট কাজে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
” ছাড়ুন আমাকে। বিরক্ত লাগছে খুব। ”

আদ্রিশ আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বললেন,
” কিন্তু আমার কষ্ট লাগছে। ”

উনার স্পর্শে আমি শিওরে উঠলেও স্বাভাবিক থেকে বললাম,
” কারোর কষ্টতে আমার কোনো যায়আসেনা। যে মানুষটা আমাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখতে পারে তার কষ্টে আমার যায়আসে না।”

” এই মিশমিশ….এতো অভিমানী কেনো তুমি? তোমার এ আদ্রিশ যে তোমার অভিমানে ভার বহন করতে পারছে না তা বুঝতে পারছো না?”

” না বুঝতে পারছি না। আর বুঝতে চাইছিও না।”

আমার কথা শেষ হওয় মাত্র আদ্রিশ আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন,
” এই যে সরি। আর কখনও এমন হবে না৷ এক ঘণ্টা বলে এভাবে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করাবো না আর। এবারের মত সরি….”

আমি উনার কথার গুরুত্ব না দিয়ে পাশে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। উনি এবার আমার থুতনি ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে দু হাত দু কান ধরে বললেন,
” এই যে, কান ধরছি। কখনও এমন হবে না। এবারের মত সরি প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”

আদ্রিশের এই ‘ প্লিজ প্লিজ প্লিজ ‘ বলার ধরণটা আমার কাছে এতো হাস্যকর লাগলো যে আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। সাথে সাথে আদ্রিশের চোখেমুখে দেখা গেলো উচ্ছ্বাস ভাব।

.

ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শব্দটা উপভোগ করতে আমি আর আদ্রিশ বারান্দায় এসে বসেছি বেশ কিছুক্ষণ আগে। দুজনের মধ্যেই টুকটাক কথাবার্তা হচ্ছে।

হঠাৎ আমাদের সামনে একটা প্রজাপতি উড়াউড়ি করতে লাগলো। ডানা ঝাপটে এদিক ওদিক উড়ছে সে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে সঙ্গ দিতে আরেকটা প্রজাপতি চলে এলো।
আদ্রিশ তা দেখে হাসিমুখে বললেন,
” এর মধ্যে একটা প্রজাপতি তুমি, আরেকটা আমি। ”
এই বলে উনি হেসে দিলেন। আবারও বললেন,
” একটা কবিতা শুনবে?”

” হুম শুনবো।”

আমার অনুমতি পেয়ে আদ্রিশ আমার হাতে হাত রেখে বলা শুরু করলেন,
” তুমি আমার হৃদয় আকাশে
এক ফালি চাঁদ,
তোমায় দেখে কাটাতে পারি
শত সহস্র রাত,
তোমায় ঘিরে মনের মাঝে
স্মৃতির আনাগোনা,
তোমায় নিয়ে দুচোখ ভরে
হাজার স্বপ্ন বোনা,
তুমি আমার এ জীবনের
পথ চলার সাথী
তুমি আমার ভালোবাসার রঙিন প্রজাপতি (কবিতাটি লিখেছেন Aysha Anjum Rusha আপি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপি এতো সুন্দর কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য)

❤️ সমাপ্ত ❤️