ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-১৫+১৬

0
599

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১৫
সবাই আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুকুরে গোসল করবে।এখানে পাশাপাশি দুটো পুকুর একটাতে ছেলেরা গোসল করবে আর একটায় মেয়েরা।তো যথারিতি তারা সবাই নেমে পড়লো পুকুরে। এখানে সবাই সাতার জানে তাই ডুবে যাওয়ার ভয় নেই।

নূর পানি সাদুর মুখে ছিটিয়ে দিয়ে জোড়ে বলে উঠলো,

–” এই ফকিন্নি আমার ভাইয়ের সাথে রাত্রে রোমান্স করে আসলি তা কি রোমান্স বলবি নাহ?”

সাদু চোখ রাঙিয়ে তাকালো নূরের দিক,

–” ছিঃ লজ্জা করে তোর।বড় ভাই আর ভাবির নিজস্ব মুহুর্তের কথা শুনতে চাস।”

নূর মুখ বাকিয়ে বলে,

–” এহহ আসছে ভাবি মারাইতে তুই আমার বান্ধবি সেই হিসেবে ভাইয়া আমার জিজু আর বান্ধবি আর জিজুর রোমান্টিক মুহুর্তের বিশ্লেষন তো আমি শুনতেই পারি।”

–” তুই চুপ থাক লুইচ্চা মাইয়া।”

মিম আলিশার কানে ফিসফিসিয়ে বললো,

–” এই নূর আর সাদু সকাল থেকে কি ফিসফাস করছে আল্লাহ্ জানে আমাদের বলছেও নাহ!”

আলিশা কতোক্ষন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো নূর আর সাদুর দিক তারপর বলে,

–” চল এরা কি বলে শুনে আসি।যদি না বলে তো আজকে এগ্লারে একশটা করে চুবানি দিমু।”

আলিশা, আলিফা আর মিম নূর আর সাদুর কাছে গিয়ে দাড়ালো সবগুলো ডেবিল চাহনী নিয়ে তাকিয়ে।
ওদের তিনজনকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাদু শুকনো ঢোক গিলে বলে,

–” কিচ্ছে এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”

আলিশা তীক্ষ্ম গলায় বললো,

–” আগে বল তোরা দুটো কি ফাসুরফুসুর করছিস?”

–” এহেহেহে কিছুই না! ”

সাদু জোড়পূর্বক হেসে কথাটা বললো।এদিকে নূর শয়তানি হাসি দিলো সাদুর দিকে তাকিয়ে তারপর ফট করে বলে ফেলে,

–” কালকে সাদু ভাইয়ার সাথে রোমান্টিক টাইম স্পেন্ড করেছে সেটাই বলছিলো।”

ওরা সবাই চোখ বড়বড় করে তাকালো সাদুর দিকে।এদিকে সাদু নূরের দিকে খেয়ে ফেলবো চাহনী নিক্ষেপ করাতে নূর সুরসুর করে লুকালো আলিশার দিকে।

–” কিরে শাকচুন্নি আমাকে তো বলতি আমি লুচ্চা আলু।তো তুই দেখি আমার থেকেও বড় লুচ্চা।রাইতে বেলা পলাইয়া পলাইয়া প্রেম করোস।”

আলু রাগে ফুসতে ফুসতে বলে।সাদু নূরের দিকে এগিয়ে যেতে বলে,

–” ডাইনি মাইয়া তোর পেটে কোন কথা থাকে নাহ।গড়গড় করে সব বলে দিস সবার কাছে তোরে আজকে।”

বলতে বলতে সাদু নূরকে দিলো এক চুবানি।এদিকে নূর চুবানি খেয়ে ক্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে আছে সে ভাবতে পারেনি সাদু তাকে সত্যি সত্যি চুবানি দিবে।নূর এইবার বাকিদের উদ্দেশ্য করে বললো,

–” কিরে ও যে আমাকে হুদ্দাই চুবাইলো তার কি হবে? আমি উচিত কথা বলায় কি শাস্তি।”

আলিশা নূরকে চুপ করতে বলে এইবার সাদুকে আস্তে করে নিজের দিক ঘুরালো তারপর আদুড়ে কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

–” আজ আর লুকাস না সত্যি করে বল ভালোবাসিস মনির ভাইয়াকে?”

সাদু চুপ করে রইলো।আলিশা হালকা হেসে আবারো বলে,

–” তুই যে মনির ভাইয়াকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসিস তা আমি জানি।শুধু আর লুকিয়ে লাভ নেই।তুই এটা ভালো করেই জানিস আমি তোদের চারজনের শিরায় উপশিরাসহ সব জানি।তোদের মুখ ফুটে কিছু বলতে হয়না আমি এইভাবেই বুজে যাই। সো এইবার বল!”

সাদুর মাজে মাজে মন চায় পৃথিবীর সবচেয়ে দানবীয় চুমুটা আলিশাকে দিতে।এই মেয়েটা এতো ভালো কেন? কিভাবে যে মনের কথা মুখে না বললেও ও বুজে যায়।আর ছোট থেকে আমাদের সামলিয়ে আসছে সব বিপদ থেকে।ঠিক বড় বোনের মতো আগলে রাখে।সাদু আলিশাকে জড়িয়ে ধরে তারপর মৃদ্যু কন্ঠে বলে,

–” হুহ্ ভালোবাসি।”

আলিফা দুষ্টু হেসে বলে,

–” ভালোবাসিস তাও লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের কে বলিস ও নাই কোনদিন!”

মিম ঠোঁট উলটে বললো,

–” আরে দেখা যাবে কয়দিন পর বাসর করে বাচ্চা পয়দা করে ফেলবে আমাদের না জানিয়ে এই ছেম্রি বহুত চালাক।”

–” ঠূন্ডা কাইছার বারি না খাইতে চুপ থাক।”

মিম মুখ বাকিয়ে বলে,

–” আজ কোন ডায়লগ দিতে পারি না বলে কিছু বললাম নাহ!”

সবাই হেসে দিলো মিমের কথায়।সাদু একপলক সবার দিকে তাকিয়ে গভীর এক শ্বাস টেনে নিলো।
পাশের পুকুর থেকে মনিরের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।এই লোকটার সবকিছু সাদুর কাছে ভয়ানক লাগে।অন্যের চোখে মনির সুন্দর হোক বা না হোক।কিন্তু সাদুর কাছে মনে হয় মনির ছাড়া এই দুনিয়ায় ও কাউকে এতোটা সুন্দর দেখে।সাদুর চোখে সে সুন্দর।ভালোবাসার মানুষটি নিজের কাছে সুন্দর হলেই তো হয়।অন্যের পছন্দ হলো বা না হলো তাতে কি যায় আসে।

সাদু মুচকি হাসলো,,

–” কখন?কিভাবে?কি কারনে ভালোবেসেছি জানি নাহ।তবে ভালোবেসি।এতোটাই ভালোবাসি যে তাকে এখন একনজর চোখের সামনে না দেখলে ভীতরটা শূন্যতায় ছেয়ে যায়।মরুভূমির মতো রুক্ষ হয়ে পড়ে শুধু চায় ‘মনির’ নামক একপশলা বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ুক।’ ভালোবাসা ‘ এটা এমন একটা জিনিস যা বাইরের রুপ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কোনো কিছু দেখে হয় না। এটা হয় মন থেকে।মন যাকে চাইবে তাকে দেখলেই মন এক অজানা খুসিতে নেচে উঠবে শিরশিরি দিয়ে উঠবে সারা শরীর। একেই হয়তো ভালোবাসা বলে।আমিও ভালোবাসি তাকে। সে ছাড়া এখন আমি নিঃস্ব একেবারেই নিঃস্ব।আমার পুরোটা অস্তিত্ব এখন তার উপর নির্ভর করে আছে।’ সে আমার ‘ এটাই আমার আমার অস্তিত্বে মিশে গেছে গভীরভাবে।”

সবাইবাক রুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।সাদু যে মনিরকে এতোটা ভালোবাসে তারা ভাবতেই পারেনি।এই মেয়েটা এতোদিন মনের ভীতর এতোটা ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছিলো। এদিকে সাদু কথাটা বলে সামনে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে যায়।পুকুরপাড়ের উপরে মনির,আফরান,নিবিড়,আরিফ আর মেরাজ দাড়িয়ে।সবার ঠোঁটেই হাসি।কিন্তু মনির স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সাদুর দিকে।সে কখনো কল্পনাও করেনি যে তার মনের রাণি তাকে এতোটা ভালোবাসে।অতি আনন্দে সে বাকরুদ্ধ।আফরান মুচকি হেসে মনিরের কাধে হাত দিয়ে বলে,

–” কিরে ভাই আমার বোনকে এতো পাগল করলি কিভাবে?”

মনিরের এতোক্ষনে হুশ আসলো তাও সে ড্যাবড্যাব করে সাদুর দিক তাকিয়ে।
এদিকে সাদু পারেনা লজ্জায় মরে যেতে ইসস! তার তো খেয়ালই ছিলো না কিছু।মনের কথাগুলো বলতে এতোটাই বিভোর ছিলো যে আশেপাশের খেয়াল ছিলো নাহ।সাদু সুরসুর করে আলিফার পিছনে লুকিয়ে গেলো।তবুও বারবার উঁকি দিয়ে মনিরের দিকে তাকিয়ে।যে আপাততো তার পূর্ণ দৃষ্টি সাদুর উপর নিবদ্ধ করে রেখেছে।

————

এদিকে আকাশে হাওয়ার সাথে দুলছে যুবরাজ মেহমাদ।তাকে দেখতে অনেকটা উন্মাদ রাক্ষসের মতো লাগছে।যে পারলে এক্ষুনি সব ধ্বংস করে দেয়।তার মুখমন্ডল অনেকটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে।হাতগুলো মুষ্টিবদ্ধ।চোখের মণি গুলো লাল হয়ে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। সে কিছুতেই নিজের রাগ দমন করতে পারছে নাহ।সে কতোক্ষন সাদুর দিকে তো একবার মনিরের দিকে তাকাচ্ছে।

মেহমাদ দাঁতেদাঁত চেপে বলে উঠে,

–” এটা হতে পারেনা।তু..তুমি তো আ..আমাকে ভা…ভালোবাসতে ফেরিহা তাইনাহ?ত..তবে আজ আজ এই কিসের বাক্যগুলো আমাকে শ্রবণ করালে ফেরিহা?তোমার তিক্ত বাক্যগলো শ্রবণের আগে আমি ধ্বংস হয়ে গেলাম নাহ কেন?আমি মরে গিয়েও তিলে তিলে কষ্ট পেয়েছি।তবুও তোমার অপেক্ষা করে এই অস্তিত্ব নিয়ে পাড় করেছি পর বছর।যাতে এতো অপেক্ষার ফল আমার তোমাকে পেয়ে তা ভালোবাসাময় মধুর আলিঙ্গনে মেখে যাক।কিন্তু তুমি এটা কি করলে?আমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে অন্য আরেকজনকে নিজের মনে জায়গা করে দিলে ?
এই বিষাক্ত বাক্যগুলো আমাকে চুরির ন্যায় খন্ডবিখন্ড করে দিলো ফেরিহা।তবে আমি তোমাকে অন্য কারো হতে দিবো নাহ।তুমি আমারই হবে ফেরিহা।আমার এতো বছরের অপেক্ষা আমি বিফলে যেতে দিবো নাহ!কিছুতেই নাহ!”

মেহমাদ কথাগুলো শেষ করে সাদুরা যেই পুকুরে সেই পুকুরের মাজে প্রবেশ করলো মুখে তার শয়তানি হাসি।
———–

–” ইসস লজ্জায় গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে আছে।আপেল দেখাচ্ছে।আমরা সামনে নাহলে নির্ঘাত মনির ভাইয়া তোর গালগুলো কামড়ে আরো লাল করে দিতো।”

আলিফার কথায় কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো সবাই।এদিকে সাদু লজ্জায় একেবারে ছোট্ট বিড়ালছানার মতো হয়ে এখনো আলিফার পিছনে লুকিয়ে।সে এখন কারো দিকেই চোখ তুলে তাকাতে পারছে নাহ।
ওদের সবার হাসি ঠাট্টার মাজে সাদু অনুভব করলো পানির নিচে কিছু তার পা চেপে ধরেছে।সাদু দু-তিনবার পা টান দিলো কিন্তু ছাড়াতে অক্ষম হলো।অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে না পেরে সকলের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলে,

–” আরে কেউ ধর আমাকে আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা আমার পা চেপে ধরে রেখেছে।আর আমাকে পানি নিচে টানছে।”

সাদুর কথা শেষ হতেই মনির আতকে উঠে দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলো সাথে আফরান আর বাকিরা।আলিফা,নূর ওরা সাদুর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। কিন্তু তবুও পারছে না।মনির এসে সাদুর হাত ধরতে যাবে তার আগেই সেই জিনিসটি সাদুকে এতো জোড়ে টানদিলো যে সাদু আলিফা আর নূরের হাত ধরা ছিলো তাদের হাত থেকে ছিটকে গিয়ে একেবারে পানি নিচে চলে গেলো।পানি নিচে পাকা সিড়ি সেখানে কপালে বাড়ি খেয়ে কপালটাও ফেটে গেলো।সাদু অনেক চেষ্টা করেও উপরে উঠতে পারছে নাহ।এদিকে সবাই ‘ সাদু ‘ বলে চিৎকার দিলো।
মনির তৎক্ষনাৎ পানির মাজে ঝাপ দিলো।তার ভীতরটা অদ্ভুত যন্ত্রনায় দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।

#চলবে,,,,,,

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
।।পার্টঃ১৬।।
সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে।এমন একটা ভয়ানক ঘটনা ঘটবে কেউ ভাবতেও পারেনি।সাদু পানিতে ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে মনির তাকে ডুবে যাওয়ার থেকে বাচিঁয়ে আনে।বাড়িতে এনে ডাক্তার দেখে গেছেন।বেশি কিছু হয়নি।ভাজ্ঞিস মনির সময় মতো ওকে বাচিঁয়েছে নাহলে যে কি হতো কে জানে?মনির সেই যে সাদুর হাত ধরে বসে আছে একদন্ডও কেউ ওকে নাড়াতে পারেনি।

আলম সিকদারের চিন্তায় বিপি হাই হয়ে গেছে।উনাকে সবাই বুজিয়ে শুনিয়ে শান্ত করে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।আফরানের চোখ লাল হয়ে আছে।বোনের কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছে।তবুও কাঁদতে পারছে না কারন ছেলেরা না-কি সহজে কাঁদে নাহ।নিবিড় তো সেই কখন থেকে জিজ্ঞাসা করেই যাচ্ছে একের পর এক প্রশ্ন তার।

–” ভাই পিকু চোখ খুলছে না কেন এখনো?আএ কতোক্ষন লাগবে ভাই?আমার পিকুকে এতো চুপ-চাপ মানায় না ভাই।”

আফরান নিজের ভাইকে বার বার শান্তনা দিচ্ছে।ভীতরে ভীতরে কিন্তু সেও ভালো নেই।নূর আফরানের অবস্থাটা বুজতে পেরে। ধীর পায়ে আফরানের কাছে এসে বললো,

–” চিন্তা করিয়েন না সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আফরান শুধু করুন দৃষ্টিতে তাকালো নূরের দিকে।ঠিক এই মুহূর্তে ওর মন চাচ্ছে নূরকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে নিজের মনের ব্যাথাগুলো হালকা করতে।কিন্তু সময় এবং পরিস্থিতি কোনটাই এখন সঠিক না তাই আফরান নিজের মনে জাগা ইচ্ছেটাকে ধামা-চাপা দিয়ে দিলো।

আলিশা হালকা আওয়াজে বললো,

–” আমি দেখি আসি উপরে কি অবস্থা?”

নিবিড় ও বাকিরা মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালো।
আলিশা ধীর পায়ে সাদুর রুমের দিক আগালো।

——–

সাদূর হাত ধরে বসে আছে মনির।ঠিক এই মুহূর্তে নিজেকে কতোটা অসহায় লাগছে তা সে বলে বুজাতে পারবে নাহ।কেইবা নিজের প্রিয় মানুষটির কষ্ট সয্য করতে পারে।উহু কেউ নাহ! মনিরও পারছে নাহ! মনে হচ্ছে ওর হৃৎপিন্ডটা কেউ চিপ দিয়ে ধরে রেখেছে।ও যদি সময় মতো না আসতো তবে কি হতো?ভাবতেই যেন মনিরের শরীর অসাড় হয়ে আসছে।মনির তাকায় সাদুর দিকে।মেয়েটা কি সুন্দর ঘুমোচ্ছে।হ্যা মানছে মনিরের সাদুর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে অনেক ভালোলাগে।কিন্তু এইভাবে না! এইভাবে নিজের প্রিয়তমাকে দেখলে সে তো মরেই যাবে।সে চায় না এমনটা।ও চায় ওর পিচ্চিটা যেন সবসময় প্রাণবন্ত হাসিখুশি ভাবে নিজের লাইফ লিড করুক।এটলিস্ট ওর চোখে যেন দুঃখের অস্রু না আসে।ও নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবে নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে সব বিপদ থেকে দূরে রাখার।মনির সুখে দুঃখে ওর পাশে থাকবে।এইযে হাতটা ধরে আছে এখন সে,এই হাত সে কোনদিন ছাড়তে চায়না কিছুতেই নাহ।

আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় সাদু।সাদুকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে মনির অস্থির হয়ে ওর গালে হালকা চাপড়ে জিজ্ঞেস করে,

–” উম্মি! তুমি ঠিক আছো?এখন কেমন লাগছে?”

সাদু আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় মনিরের দিকে।ধীর আওয়াকে বললো,

–” হুহ্! আমি ঠিক আছি!”

সাদু উঠে বসতে চাইলে।মনির ওকে ধরে উঠিয়ে বসিয়ে দেয় সাথে পিঠে বালিশ দিয়ে দেয়।যাতে ও আরামে হেলাম দিয়ে বসতে পারে।

–” খিদে পেয়েছে কিছু আনবো?”

মনিরের প্রশ্নে সাদু হালকা হাসে।লোকটা বড্ড পাগল।বিগত কয়েক ঘন্টার মাজেই নিজের কি অবস্থা করে ফেলেছে।চোখ গুলো লাল হয়ে আছে,চুল উষ্কখুষ্ক তবুও সাদুর কাছে মনিরকে দেখতে ভীষন ভালোলাগছে।সাদু হালকা হেসে আস্তে করে মনিরের চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।মনির অবাক হয়ে তাকালো।বললো,

–” কি হয়েছে?”

–” আপনাকে এলোমেলো অবস্থায় বড্ড কিউট লাগছে।”

কথাটা মুখ ফোস্কে বলে নিজেই আহাম্মক হয়ে যায় সাদু।ইসস!! কি বলদ সরি বলদি সে একটা কিভাবে বলে ফেললো কথাটা? সাদু অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।এদিকে মনির কতোক্ষন বিষ্ময় ভরা চোখে চেয়ে থেকে পরক্ষনেই হালকা হাসলো।পিচ্চিটা তার লজ্জা পাচ্ছে।বাকা হেসে মনির আলতো করে সাদুকে নিজের দিকে ঘুরালো।সাদু নিজের চোখ নামিয়ে রেখেছে।

মনির হালকা আওয়াজে বলে,

–” তাকাও আমার দিকে।”

সাদু আস্তে আস্তে চোখ তুলে তাকায়।

–” আমি তোমার স্বামি আর নিজের স্বামিকে তোমার দেখতে ভালোলাগে এটা বলতে এতো লজ্জার কি আছে?”

সাদু তার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ নিয়েই আলতো স্বরে বলে,

–” ইসস!! আমি কি আপনার মতো না-কি?আমার বুজি লজ্জা নেই।”

–” ইসস গো লজ্জা বতী আমার।”

–” যাহ!! কি শুরু করলেন?”

মনির হেসে দিয়ে বললো,

–” কোথায় যাবো?এখন থেকে তোমার সাথে চুইংগামের মতো চিপকে থাকবো।”

সাদু মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বললো,

–” আপনি..আপনি একটা বাজে লোক।”

–” হ্যা! আর তুমি তাকেই ভালবাসো।”

সাদু জবাব দিলো নাহ।মনির মুচকি হেসে বললো,

–” এখনো লুকাবে?আমি তো পুকুরপাড়ে সব শুনে ফেলেছি!”

‘পুকুরপাড়’ শব্দটা কানে আসতেই সাদু দ্রুত মনিরের হাত খামছে ধরলো।তার আবছা মনে আছে।সে দেখেছে পানির নিচে কারো অবয়ব সে দেখেছে।সাদুর শরীর হালকা কাপঁছে ওর ভীতু চাহনী দেখে মনির বুজলো সাদু ভয় পাচ্ছে।মনির দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদুকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।সাদুও বাধ্য মেয়ের মতো মনিরের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো।

–” লুক,উম্মি,ইউ ডোন্ট হেভ টু বি এফ্রেইড এনিমোর।হুয়াট হেপেন্ড টুডে ইজ আনএক্সেপ্টেড।আই রিইসিউর্ড ইউ দ্যেট ইট উইল নট হেপেন এগেইন।আই উইল প্রোটেক্ট ইউ ফ্রোম ওল ড্যাঞ্জার্স।”

সাদু মনিরের বুকে মুখ গুজে দিলো।ধীরে বললো,

–” আ..আমি দে..দেখেছি পানির নিচে স্পষ্ট কেউ ছিলো কি..কিন্তু তার চে..চেহারাটা আমার মনে নেই।ওই অবয়বটাই আ..আমাকে পানির নিচে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।”

সাদুর কথায় মনির চিন্তিত নজরে তাকায়।মেয়েটা কি বলছে এসব পানি নিচে কেউ ছিলো?কে থাকবে?আর এতোটা গভীর পানির নিচে ওকেই বা কেন টেনে নিয়ে যাবে?না এমনটা হবে নাহ?নিশ্চয়ই মেয়েটা ভয় পেয়েছে।তাই এসব বলছে।ভয় থেকেই ওর এসব হেলুসিনেসন হচ্ছে।নাহ! মেয়েটাকে স্বাভাবিক করতে হবে।এভাবে ভয় পেলে ও ম্যান্টালি আর ফিজিক্যালি দুই দিক দিয়েই অসুস্থ হয়ে যাবে।

মনির সাদুকে আরো একটু নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

–” দেখো ভয় পেও নাহ।তুমি অনেক ভয় পেয়েছো আর ভয় থেকেই তোমার এসব মনে হচ্ছে চিন্তা করো নাহ!”

তারপর আবারো সাদুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর গাল স্পর্শ করে বলে,

–” আর আমি আমার হাসিখুশি উম্মিকে দেখতে চাই।এই মনমরা উম্মিকে আমার দেখতে একদম ভালো লাগে নাহ।কি বুজেছো?”

সাদু মাথা নাড়ালো।তারপর বললো,

–” বাকিরা কোথায়?আফরান ভাইয়া আর নিবিড় ভাইয়ার কি অবস্থা?”

–” চিন্তা করো না সবাই ঠিক আছে। শুধু একটু চিন্তায় আছে।আর থাকবেই বা না কেন?তার কলিজার টুকরো যে অসুস্থ তাহলে কি তারা ঠিক থাকতে পারে।”

–” আমি নিচে যাবো!”

সাদুর কথায় মনির ভ্রু-কুচকে ফেললো।বলে কি এই মেয়ে।মনির চাপা ধমকে বলে,

–” হেভ ইউ গোন্না ম্যেড?তুমি অসুস্থ এই শরীর নিয়ে নিচে যাওয়া লাগবে নাহ?”

সাদু ঠোঁট উলটে মুখ ফুলিয়ে রাখলো।মনির দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এই মেয়েটাকে বকেও শান্তি নেই ওর।এভাবে মুখ ফুলিয়ে রাখলে যে কি পরিমান কিউট লাগে বলে বুজাতে পারবে নাহ।
মনির হুট করে সাদু উলটানো ঠোঁট জোড়ায় শব্দ করে চুমু খেলো।সাদু বিষ্মিত হয়ে মনিরের দিক তাকাতেই আবারো ওর গালে চুমু খেলো মনির।এইবার সাদু দ্বিগুণ বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে গালে হাত দিয়ে রইলো।মনির সেদিকে উপেক্ষা না করে হুট করে সাদুকে কোলে তুলে নিলো।
আকস্মিক এমন হওয়ায় সাদু চেচিঁয়ে বললো,

–” আরে করছেন কি?”

মনির গম্ভীর স্বরে বললো,

–” কেন তুমিই তো বললে তুমি নিচে যাবে!”

–” তো! আমার পা আছে আমি নিজেই যেতে পারবো।নামান আমাকে।”

মনির চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলে,

–” বেশি কথা বললে এখন রুমে লক করে রাখবো।চুপ-চাপ থাকো।”

সাদু মিনমিনে গলায় বলে উঠে,

–” আমি অসুস্থ তাও মনে মায়া দয়া নেই।অসভ্য একটা।আমাকে ধমকে আবার আমাকেই চুমু খায়।আবার আসুক এইবার ঠোঁট কেটে হাতে ধরিয়ে দিবো।”

মনির সাদুকে নিয়ে হাটতে হাটতে সামনে তাকিয়েই বলে,

–” চুমু খেতে আমার কারো পার্মিশন লাগবে নাহ।আমার বউ সো আমি চুমু খাবো না আরো কিছু করবো সেটা আমার ব্যাপার।আমাকে যে বাধা দিতে আসতে তার হাত-পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো।”

মনিরের এরূপ কথাবার্তায় সাদু শুকনো একঢোক গিলে চুপ করে রইলো।

———

আলিশাকে কতোক্ষন ধরে অদ্ভুত ব্যবহার করতে দেখে মিম আর আলিফা একে-অপরের দিকে তাকিয়ে আবারো ওর আলিশার দিকে তাকাচ্ছে।
মিম চাপা আওয়াজে বলে,

–” এই আলিশার কি হয়েছে রে?এটায় এমন করছে কেন?”

আলিফা ঠোঁট উল্টো করে এদিক সেদিক মাথা নাড়িয়ে বলে,

–” কি জানি?সাদুর রুম থেকে আসার পর থেকে এমন করছে?এসে বললও না সাদুর জ্ঞান ফিরেছে কি না?”

–” চল জিজ্ঞেস করি।”

মিম আর আলিফা,আলিশাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই দেখে মনির সাদুকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে নামছে।আলিফা চেচিঁয়ে উঠে,

–” ওইতো সাদু আর মনির ভাইয়া আসছে।”

আলিফার চেচাঁনোতে সবাই উপরে তাকায়।নিবিড় ওদের দেখতে পেয়েই ছুটে গিয়ে একনাগাড়ে বলতে লাগলো,

–” পিকু বোন আমার এখন কেমন লাগছে?কোথায় কি কোন কষ্ট হচ্ছে?খারাপ লাগছে?নিচে আসলি কেন?রেস্ট নিতি?”

আফরান এগিয়ে এসে ভাইয়ের কাধে হাত দিয়ে হালকা হেসে বলে,

–” পাগল রিলেক্স এতো হাইপার হোসনা।মনির তো ওকে বুজে শুনেই নিচে নিয়ে এসেছে তাই নাহ? ওকে বসতে দে আগে!”

মনির সাদুকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।নিবিড় ওর পাশে গিয়ে বসলো।

সাদু সবার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,

–” আমি ঠিক আছি টেন্সন করার কিছু নেই।”

সবাই সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।আফরান গিয়ে বোনকে একপাশ থেকে জড়িয়ে নিলো বোনটাকে বুকে নিয়ে এখন শান্তি লাগছে।এতোক্ষন বুকটায় বড্ড অশান্তি লাগছিলো।নিবিড় ও দুহাতে ওর দু ভাই বোনকে জড়িয়ে ধরলো।
সবাই ভাই বোনের ভালোবাসা দেখছে চোখ জুড়িয়ে।নূর ও গিয়ে মনিরকে একসাইডে জড়িয়ে ধরলো।মনির বোনের মাথায় চুমু খেয়ে একহাতে ওকে ধরে তাকিয়ে রইলো সাদুর দিকে।

#চলবে,,,,,,

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।