ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-১৯

0
689

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১৯
বাগানের দোলনায় বসে আছে আলিফা আর আরিফ।আরিফ আলিফাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আছে আর ওর কাঁধে মাথা দিয়ে আছে আলিফা।সকাল হয়ে আসছে পূর্ব আকাশে স হালকা রক্তিমক আলো জানান দিচ্ছে একটু পরেই সূর্য্যি মামা তার প্রখর উত্তাপ নিয়ে উদয় হবেন।সেদিকেই তাকিয়ে আছে এই দুটি ভালোবাসার মানুষ।আরিফ চোখ সরিয়ে তাকালো আলিফার দিকে।মেয়েটাকে ছাড়া ও একদম নিজেকে কল্পনাও করতে পারে নাহ।স্বপ্নেও বিচ্ছেদের কথা ভাবলে বুকের বা -পাশ টায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়।আরিফ মুচকি হেসে দু-হাতে আলিফাকে জড়িয়ে ধরে নিজের দিক ফিরালো।হঠাৎ এমন করায় আলিফা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায় আরিফের দিকে।আরিফ দুষ্টু একটা হাসি দিলো পরক্ষনেই আলিফার নাকে কুট্টুস করে একটা কামড় দিয়ে দিলো।আলিফা ব্যাথাতুর আওয়াজ করে জলদি নিজের নাকে হাত বুলাতে লাগলো।তারপর রাগি দৃষ্টিতে আরিফের দিকে তাকালো।আরিফ আবারো আলিফার গালে কামড়ে দিলো।এইবার আলিফা গেলো ভয়ানক রেগে।সে আরিফকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাড়ালো তারপর অভিমানে চোখে আরিফের দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।নিজের নাকে আর গালে হাত বুলাতে লাগলো।আরিফ অতোটাও জোড়ে দেয় নি।তবে হালকা ব্যাথা লেগেছে।আরিফ মুচকি হাসলো।মেয়েটা বড্ড বাচ্চা কিভাবে মুখ ফুলিয়ে অভিমানে চোখে ওর দিকে তাকালো।এতে আরিফের ওকে আরো কামড় দিতে ইচ্ছে করেছিলো।তবে না এই দুটো কামড়েই যা রেগেছে বেগমসাহেবা।আরো কামড় দিলে দেখা যাবে আর ওর সাথে কথাই বলবে নাহ।আরিফ দোলনা থেকে উঠে আলতো পায়ে আলিফার পিছনে গিয়ে দাড়ালো।আলিফা বুজতে পেরেও চুপ করে রইলো।তাকালোও না আরিফের দিকে।আরিফ ও কম যায় না সেও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।এক মিনিট,দু মিনিট,তিন মিনিট,পাঁচ মিনিট,সাত মিনিট,দশ মিনিট।অসয্য হয়ে উঠলো আলিফা দশ মিনিট ধরে এভাবে সং সেজে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে আছে?দেখযে যে ও রেগে আছে কোথায় ওর রাগ ভাঙ্গাবে তা না করে ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে।আলিফা এইবার সইতে না পেরে রাগি দৃষ্টিতে তাকায় আরিফের দিকে।

–” কি সমস্যা…..!”

পুরো কথা শেষ করতে পারেনি আলিফা কারন তার আগেই আরিফ ওকে ঝাপ্টে নিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। আলিফা বিষ্মিত হয়ে কয়েকবার চোখ পিটপিট করলো।তারপর আলতো করে আরিফের পিঠে হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বললো,

–” কি হয়েছে আপনার?”

আরিফ নিজের মুখটা আলিফার চুলে গুজে দিলো চোখ বুজে লম্বা এক শ্বাস টেনে নিলো।আলিফা সয্য করতে না পেরে খামছে ধরে আরিফের পিঠ। ওর সারা শরীর মৃদ্যু কাঁপছে।লোকটা এমন কেন?এইযে হুটহাট এইসব কার্য করে বসে এতে যে আলিফার সমস্যা হয় তা কি সে জানে না?এইযে এখন আলিফার হৃদয় নামক যন্ত্রটা প্রচন্ড জোড়ে শব্দ তুলে লাফিয়ে চলেছে।ধক ধক ধক ধক আর তা হচ্ছে খুব দ্রুত…দ্রুত..আরো দ্রুত….!

–” আলিফা আ’ম জাস্ট গোয়িং টু ক্রেজি আবউট ইউ।তুমি কেন এতোটা মোহময়ী? কেন এতোটা মায়াময়ী?কেন এতোটা আবেদন ময়ী?কেন এতোটা নেশায় মোড়ানো?মন চায় তোমার এই নেশাময় ভালোবাসায় নিজেকে নিঃস্ব করে দেই।”

আলিফা কাঁপছে। দ্রুততর সহিত কাঁপছে।এই কাঁপন থামবে না।যতোদিন এই লোকটা তাকে ভালোবাসার এই বেড়াজালে আটকে রাখবে ততোদিন সে কেঁপেই যাবে।কাঁপতে কাঁপতেই একদিন এই লোকটার প্রস্বস্ত বুকে লেপ্টে থাকবে।

————-
মন আর মস্তিষ্কের একত্রে থাকার নাম একাগ্রতা। আর একাগ্রতার একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে ভালোবাসা। ভালোবাসলে যেমন ভালো সময় কাটাতে পপারে তেমনই হাজারো খারাপ সময়ের মাঝে দিয়ে যাবে।সেই সময়ে সবার মাঝে কাজ করবে তাকে পাওয়ার একাগ্রতা। যাতে সে শিখে কিভাবে রাগকে সামাল দিতে হয়, কিভাব মন খারাপের লাগাম টানতে হয়, কিভাবে ভালোবাসার মানুষের মনের মতো হতে হয়

লোহা পুড়ে যেমন সোনা হয় তেমনই মানুষ পুড়ে হয় খাঁটি। ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে দিতে মন পুড়ে হয় অন্যের। মন থেকে চাওয়া কোনোকিছু হাজার কঠিন সময়ের মাঝে দিয়ে গিয়েও শেষপর্যন্ত পাওয়া যায়। মন থেকে আসা ভালোবাসা তার গন্তব্য এবং পথ ঠিক বেছে নেয়। ভালোবাসার ক্ষেত্রে একটি মত কিংবা একটি দিক এখন পর্যন্ত কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি। তা হচ্ছে একজন প্রেমিক বেশি ভালোবাসে না একজন প্রেমিকা।

ভালোবাসার ক্ষেত্রে বলা হয় মেয়েরা অল্পতেই দুর্বল হয়ে যায় আর ছেলেদের একটি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এরপরে হাজার চেষ্টাতেও নিজেকে আটকে রাখা যায় না। আর মন থেকে যখন ভালোবাসা আসে তখন পৃথিবীর কোনো শক্তি তাকে আটকে রাখতে পারেনা। ছেলেদের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমন। মন থেকে যখন তাদের মাঝে এই ভালোবাসা নামক ফুল ফোটে তখন তার কাছ থেকে তার প্রেয়সীকে কেউ আলাদা করতে পারেনা।তেমনই নিবিড় ও নিজের মনের অনুভূতিগুলোর বহিঃপ্রকাশ করে করেছে আলিশার কাছে।যেহেতু সে উপলব্ধি করতে পেরছে যে সে আলিশাকে ভালোবাসে তবে এতো ভণিতা কেন করবে সে?ভালোবাসা তো কোন অন্যায় নয়।সে ভালোবেসে ফেলেছে।এখানে তো আর মনকে সে বেঁধে রাখতে পারবে না তাই নাহ?মনের মাজে যাকে নিয়ে ভালোবাসার এই পবিত্র অনুভূতি সৃষ্টি হবে তাকেই তো কাছে পেতে চাইবে।

–” আলিশা!! ” মৃদ্যু আওয়াজে ডাকলো নিবিড়।

আলিশা হালকা কেঁপে উঠে নিস্তেজ গলায় জবাব দেয়,

–“হুঁ!!”

আলিশাকে নিজের সাথে আর একটু চেপে ধরে নেশা ধরানো গলায় নিবিড় বলে,

–” ভালোবাসি মায়াময়ী!”

আলিশা দ্রুত নিজের চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো।তার নিঃশ্বাস আটকে আছে। এই কি শোনালো নিবিড় তাকে! আলিশা নিবিড়ের বুকের কাছের টি-শার্ট খামছে ধরে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।মস্তিষ্কটা কেমন শূন্য শূন্য লাগছে।চোখে সব ঝাপসা দেখছে ও।আলিশা নিজের মন বুজালো। না এটা হবার নয়!এটা হবে না।আলিশা দ্রুত নিবিড়কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে অন্য দিকে ফিরে বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে দু-তিনটা শ্বাস ফেলে।পিছন ফিরে নিবিড়ের দিকে তাকায়।যে আপাততো তার দিকে কেমন যেন করে তাকিয়ে আছে।এই দৃষ্টির প্রখারতা আলিশা জানে না।আর জানতেও চায়না! জেনে কি হবে?আদৌ কি তার আর নিবিড়ের মাজে কিছু বিদ্যমান?নিবিড় কি সত্যি ওকে ভালোবাসে?কিন্তু কেন?কোথায় ও আর কোথায় নিবিড়!

আলিশা কাপা গলায় মৃদ্যু আওয়াজে বললো,

–” দেখুন আপনি…..।আপনি যেটা… আসলে…!”

হঠাৎই নিবিড় হো হো করে হাসতে শুরু করলো।হাসির ঝংকার এতোটা তীব্র যে আলিশার কান ঝালাপালা হয়ে যাবে এমন।নিবিড় হেসেই যাচ্ছে হেসেই যাচ্ছে।হাসতে হাসতে প্রায় ওর চোখে পানি চলে এসে পড়েছে।আলিশা বিরক্ত হয়ে বললো,

–” সমস্যা কি?এভাবে হাসছেন কেন?”

নিবিড় কোনমতে নিজের হাসি চেপে রেখেই বললো,

–” লাইক সিরিয়াসলি তুমি ভেবেছ যে আ..আমি তোমাকে ভালোবাসি!হা হা হা! আমি তো জাস্ট তোমাকে ভয় দেখাচ্ছিলাম।আর দেখো তুমি সত্যি ভেবে নিলে!হা হা হা হা!”

আলিশা বিষ্মিত হয়ে তাকায় নিবিড়ের দিকে।তারমানে নিবিড় এতোক্ষন যা করছিলো আর বলছিলো সবটা মিথ্যে ছিলো।অভিনয় ছিলো!
তবে আলিশার কেন মনে হলো যে নিবিড় নিজের মনের গভীরতা থেকে কথাগুলো বলেছিলো।আলিশা নিজেকে সামলে নেয়।তারপর ভ্রু-কুচকে বললো,

–“দেখুন আপনি হাসি থামান।আর আমি এমনটা কিছুই মনে করিনি।সো এইসব ফালতু কথা বলা বন্ধ করুন।আমি জাস্ট একটু চমকে গিয়েছিলাম হঠাৎ আপনি এমন করেছেন তাই।এছাড়া কিছু না ওকে।”

কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলেই ধুপ-ধাপ পা ফেলে আলিশা চলে গেলো।
এদিকে নিবিড় ঠোঁটের কোনে বেদনাময় এক হাসি নিয়ে তাকিয়ে রইলো আলিশার যাওয়ার দিকে।মেয়েটা কি সত্যি বুজলো না তার মনের কথা?একটু বুজলো না যে নিবিড় যা বলেছে সব তার মন থেকে বলেছে।সে সত্যি ভালোবাসে ওকে।
থাক সে বা বুজলে নেই।নিবিড় ও আর অহেতুক এইসব কথা বলবে না।এখন থেকে সে এড়িয়ে যাবে আলিশাকে।সে আর যাবে না আলিশার কাছে।যে ওর চোখের ভাষা বুজতে পারে না।তার কাছে গিয়ে শুধু আর ভালোবাসি বাড়ানোর দরকার নেই।এতে ওই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে।নিবিড় বেদনাসিক্ত ছলছল নয়নে আর বুকে এক অসয়িসষ্ণনু ব্যাথা নিয়েই নিজের ভালোবাসাগুলো থামাচাপা দিয়ে দিলো।

#চলবে,,,

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।