#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২০
–” তোমার সমস্যা কি সজীব?তুমি আমাকে এতোটা বিরক্ত কেন করছো?ইউ ডোন্ট আন্ডার্স্টান্ট হুয়াই দ্যাট ইউ আর মাই কাজিন।আর তুমি যেটা ভাবছো সেটা সম্ভব নাহ।”
অপাশ থেকে সজীব নামের ছেলেটি হয়তো কিছু বললো তা শুনে মিম রাগে দুঃখে নিজের ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙে দিলো।
রেগে গিয়ে বললো,
–” ড্যাম ইট! মা তুমি এটা কি শুরু করলে?আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না।আজ যদি আমি মিনি (মিমের ছোট বোন) থেকে না জানতাম তাহলে তুমি কতো দূর অব্দি যেতে আমি ভেবেই অবাক।”
মিমের কান্না পাচ্ছে দু-হাতে ও মুখ ডেকে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো।
এতোক্ষন এই সবকিছুই মেরাজ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলো।মেরাজ এইবার আস্তে আস্তে মিমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ওর মাথায় হাত রাখে।মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চট করে নিজের চোখের জল গুলো মুছে মুখ উপরে তুলে তাকায়।দেখে মেরাজ স্নিগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে।মেরাজ মুচকি হাসলো।বললো,
–” এতো কাঁদলে হবে?কোন কিছুতেই দূর্বল হতে নেই।নিজেকে শক্ত রাখবে সব পরিস্থিতিতে।”
মিম এদিক ওদিক তাকানোর মতো ভণিতা করে বললো,
–” আ..আমি কাঁদছিলাম না তো?”
মেরাজ দুষ্টু হেসে বললো,
–” আমি দেখেছি সব।”
মিমের রাগটা এইবার মাথা চড়া দিয়ে উঠলো এতোক্ষন সজীব আর ওর মায়েত কির্তীকালাপ এখন না-কি মেরাজ চুপিচুপি ওর কথা শুনেছে।
রেগে গিয়ে বললো,
–” এটা কোন ধরনের ম্যানার্সের মধ্যে পড়ে চুপিচুপি অন্যের কথা শোনা।”
মেরাজ হালকা হাসলো মিমের রাগ করা দেখে।কান্নার কারনে চোখগুলো হালকা লাল সাথে নাকটাও।এখন রাগের কারনে মুখটাও হালকা লাল হয়ে এসেছে।মিম মেরাজকে হাসতে দেখে বিরক্ত হয়ে বললো,
–” কি সমস্যা হাসছেন কেন?আমি কি হাসার কিছু বলেছি?”
–” রাগলে তোমাকে কিউট লাগে।”
মেরাজের কথায় মিম থমকে গেলো।বিষ্ময়ে ওর চোয়াল খুলে ঝুলে পড়ার উপক্রম।এইগুলো কি শুরু করলো আর কি বলছে?লোকটার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো?
–” নিজেকে প্রাধন্য দেও। তোমার মা আই মিন আন্টিকে বুজাও যে তুমি এখনো বিয়ে করতে চাও না।শুনো রাগারাগি করলে কোন জিনিস মিটমাট হয় না।উলটো পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যায়।
তাই পরিস্থিতি বুজে নিজের উপর নিয়ন্ত্রন আনবে।অহেতুক কতোক্ষন চিল্লাপাল্লা করলেই সমস্যার সমাধান হয় না বুজেছো?”
মিম ডাগরডাগর চোখে তাকিয়ে আছে মেরাজের দিকে।এই লোকটাও যে এতোটা সুন্দর করে কথা বলতে পারে ও তো জানতই না।এমন হাদারাম আর ভীতু ছেলেটাও এতোটা ম্যাচুরিটি নিয়ে কাউকে জ্ঞান দিতে পারে তা ভাবনার বাহিরে ছিলো মিমের।
মেরাজ আলতো স্পর্শ করলো মিমের গালে।মিম ভালোলাগার এক অদ্ভুত শীর্ষে পৌছে গেলো।নিজের চোখজোড়া চেপে বন্ধ করে নিলো।
মেরাজ নিজের বুড়ো আঙুল দিয়ে মিমের গালে লেপ্টে থাকা এক ফোটা চোখের পানি মুছে দিলো।
মোহময় গলায় বললো,
–” কারো কথায় কষ্ট পাবে না।
নিজের কোন ক্ষতি করবে না।
ইউ নো সবার আগে নিজেকে ভালোবাসতে শিখতে হয়।আগে নিজেকে ভালোবাসো দেখবে সবকিছুই ভালো লাগবে তোমার কাছে।অহেতুক এই কান্নাকাটি করে কেন নিজের চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করো।
ইউ নো সাদু BTS এর গান গুলো শুনে এইসব গানের অর্থ অনেক সুন্দর।
যেমন ওদের Idol গানে বলেছে ‘You can’t stop me loving myself’. তাই তুমি আগে নিজেকে ভালোবাসো।ডোন্ট স্টোপ লাভিং ইউরসেল্ফ ওকে।”
মেরাজ দুতিনবার মিমের গালে হাত বুলিয়ে চলে গেলো।এদিকে সেতো জানলোই না যে সে কি একটা অপরাধ করেছে।ঘোর অপরাধ এইযে মিমের হার্ট বিট ফাস্ট হয়ে গিয়েছে।কেমন যেন লাগছে সবকিছু।আশে পাশে কি হচ্ছে তা কিছুই দেখতে পারছে না সে।শুধু একটু আগের মুহূর্তটাই ওর চোখের সামনে ভাসছে।তার স্পর্শ যে ওর সারা শরীরটাকে মৃদ্যু কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে গেছে সেটাও জানলো না।এতো এতো অনুভূতির বেড়াজালে মিম আটকে গিয়েছে সে কিভাবে বের হবে তার পথ খুজেও পাচ্ছে না ও।
————–
নূর আলিশাকে খুজতে খুজতে হয়রান হয়ে গিয়েছে।বিরক্তিতে ওর মাথা ধরে আসছে। অসয্য হয়ে উঠেছে।রাগের চোটে বিরবির করে গালি দিচ্ছে।
–” শালিরা।দুটা নাহয় রোমান্সে ব্যস্ত।তোর কোন মরা মরলো রে।সেইযে গেলি আর খবর নাই।একটা তো মাজা ভাইঙ্গা বইসা আছে।সাদ্দুনি আর আলুনির কথা বাদ দিলাম দুইটা তো লুইচ্চা নাম্বার ওয়ান।আমিই মরা সিঙ্গেল না করতে পারলাম জীবনে একটা প্রেম আর না করতে পারলাম এখনো বিয়া।আলিশার বাচ্চা তুইও তো সিংগেল কোথায় আমারা একে-অপরের সাথে গলা জড়িয়ে ধরা এই দুঃখ কমাবো।তা না ওয় তো হাওয়া হয়ে গিয়েছে।কোথায় গেছে আল্লাহ্ মালুম না তুফানে ওরে উড়াই নিয়া গেলো।ধ্যাৎ তুফান আবার আসবে কোত্থেকে?”
আপন মনেই সে বির বির করছে।এদিকে যে একজন ওকে দেখছে গভীর সেই দৃষ্টি।তার নয়নজোড়ায় আছে একরাশ মুগ্ধময় ভালোবাসার জোয়ার,প্রেমাসিক্ত সেই নয়ন ভালোবাসার মানুষটিকে দুচোখ ভরে দেখার আকুলতা।তাকে কাছে, একান্ত কাছে নিজের করে পাওয়ার তীব্র আকুলতা।
.
নূর খুজতে খুজতে স্টোররুমের কাছে আসতেই একজোড়া হাত ওকে টেনে স্টোররুমের ভীতরে নিয়ে আসলো।নূর চেঁচাতে গিয়েও পারলো না কারন কেউ ওর মুখ চেপে ধরে আছে।নূর এখনো ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।ও এখনো দস্তাদস্তিতে ব্যস্ত।দুহাতে লোকটার বুকে ধাক্কা দিয়ে চলেছে সমানে।
নূরকে এমন করত দেখে আফরান মৃদ্যু হাসলো।
তারপর নূরের কোমড়টা আর একটু শক্ত করে চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।কোমড়ে কারো হাতের এতো তীব্র স্পর্শ নূর স্তব্দ হয়ে গিয়েছে।সারাশরীর কাঁপছে।আফরান নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেলো নূরের কানের কাছে।
আফরানের গরম নিশ্বাস নূরের কাঁধে গলায় স্পর্শ করছে।নূর শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে রইলো।এদিকে আফরান নিজেত ঠোঁটটা নূরের কানে ছুঁয়েই ফিসফিস করে বললো,
–” এতো লাফালাফি কেন করো?একদন্ড স্থির থাকতে পারো না?”
নূর আফরানের এমন ঠান্ডা আর ফিস্ফিসানো গলার আওয়াজে প্রায় জমে বরফ।
নূর নিজের চোখ জোড়া আরো শক্ত করে চেপে বন্ধ করে রইলো।
আফরান এইবার সরে এসে একহাতে নূরের ছোটছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে হালকা আওয়াজে বলে উঠে,
–” কি জানি বলছিলে?ও হ্যা! ‘ তোমার কপালেই প্রেম নাই সাথে বিয়েইও নেই ‘ তাই না?”
নূর কিছুই বলছে না।আসলে ও বলতে চাইছে কিন্তু ওর গলা কাঁপছে কথা গুলো কন্ঠেনালিতে এসেই আটকে আছে।
আফরান আমারো বলে,
–” কি হলো বলছো না কেন?”
নূর কোনরকমে বহুকষ্টে কাঁপা গলায় বললো,
–” গ..গলা কা.. কাঁপছে।”
–” কেন?”
–” আ..আপনি….!”
–” হ্যা আমি কি?”
নূর আবারো শক্ত হয়ে রইলো সে টের পাচ্ছে আফরানের মুখটা ওর মুখের অনেক কাছে এতোটাই কাছে যে আফরানের নিশ্বাসের সাথে ওর নিশ্বাস বারি কাচ্ছে।
আফরান আর একটু চেপে ধরলো নূরকে।
–” হ্যা বলো না আমি কি?”
নূর মাথা নিচু করে রইলো কথা আর বলা হবে না ওর।লোকটা যেসব ভয়ানক কাজকারবার করা শুরু করেছে।একমুহূর্তে সেটা না থামালে নূরের নিশ্চিত এখানে মৃত্যু হবে।
আফরানের নূরের মুখে ফু দিলো।নূর খামছে ধরলো দুহাতে আফরানের বুকের কাছের শার্ট।
–” তুমি চাইলে আমার সাথে প্রেম করতে পারো।আই ডোন্ট মাইন্ড।আর প্রমিস প্রেমও করবো সাথে সময় মতো বিয়েও করবো।
আর প্রেম না করলেও ইট্স ওকে।বাট বিয়ে তো আমাকেই করতে হবে।বিয়ের আগে প্রেম করতে চাইলেও আমার সাথে করতে হবে।বাট অন্যকারো কথা মাথায় আনলেও তোমার এই ছোট্ট মাথা আমি গুল্লি করে উড়িয়ে দিবো।”
নূর ভয় পাচ্ছে।আজব! এতোক্ষনে সে তো আফরানকে এইসব কথা বলার কারনে বকে দিয়ে আফরানের মাথা খুল্লি উড়িয়ে দিতো কিন্তু আজ আফরান ওকে গুল্লি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছে তাও সে কিছু বলতে পারছে কেন?একটা শব্দও গলা দিয়ে বের হচ্ছে না।
নূর নূরের গালে স্লাইড করছে।চোখে তার অদ্ভূত নেশা,তীব্র ভালোবাসার নেশা।প্রেয়সীকে এতোটা কাছে পাওয়ার পর ওর ভীতরটা যে কতোটা অস্থির হয়ে আছে শুধু প্রিয়তমার ওই অধরজোড়ার স্পর্শ পাওয়ার জন্যে তা বলে বুজাতে পারবে না।কিন্তু এখনো সময় হয়নি।এসবের।আফরান এইবার হাত বুলালো নূরের কাঁপা ঠোঁটজোড়ায়।
নূরের মাথা ঘুরছে সয্য হচ্ছে না এসব কি করছে কি আফরান।ও কি চাইছে নূর মরে যাক।তাহলে একেবারে মেরে ফেলুক না।এইভাবে এমন মারাত্মক অনুভূতিতে ওকে ডুবিয়ে তিলে তিলে কেন মারছে।আফরান এইবার নিজের চোখজোড়া বুজে নূরের কপালে ঠোঁট ছোয়ায়।
এইবার নূর আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।ও ঢলে পড়লো আফরানের বুকে।আফরানও পরম যত্নে আগলে নিলো নূরকে। আফরান জানে নূরের কিছুই হয়নি।শুধু অনুভূতিগুলোকে নিজের আয়ত্তে আনতে না পেরে নেতিয়ে গিয়েছে।
আফরান নূরকে পাঁজাকোলে করে নিয়ে স্টোররুম থেকে বের হলো।নূরকে সাবধানে সোফায় সুইয়ে দিলো।মেয়েটার সারাশরীর ঘেমে গেছে।আফরান নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে নূরের চেহারা,গলা মুছে দিলো।তারপর নূরকে উঠিয়ে নূরের মাথাটা নিজের বুকে নিয়েই আস্তে আস্তে ওকে একগ্লাস পানি খাইয়ে দিলো।পানি পান করায় নূরের এখন ভালো লাগছে।
কতোক্ষন চোখ বুজে ওইভাবেই আফরানের বুকে সুয়ে রইলো।আফরান আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
নূরের একটু ভালোলাগায় সে আফরান থেকে সরে আছে।আফরানও নিজেকে নূর থেকে অনেক দূরে সরিয়ে আনে।নূর আমতা আমতা করছে।এদিক ওদিক খানিক তকিয়ে আবার আফরানের দিকে একবার তাকালো।আফরান তার দিকেই তাকিয়ে আছে।নূর এইবার আর একমুহূর্ত দেরি করলো না।চোখ মুখ খিচে দে দৌড়।
এদিকে আফরান হঠাৎ নূরকে এমন করতে দেখে ভয় পেয়ে দ্রুত চেচিয়ে উঠলো,
–” আরে আস্তে পরে যাবে তো।”
খানিক স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকেই শব্দ করে হাসতে লাগলো।হাসতে হাসতেই বলে উঠে
–” পাগলি একটা।
আমার আনন্দিতা!”
#চলবে________
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।