ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-২৭

0
749

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২৭

মনিরের অধরজোড়া সাদুর ঘাড় ছুঁয়ে দিচ্ছে।আর সাদু সে তো মনিরের এমন পাগল করা স্পর্শে থরথর করে কাঁপছে।এই লোকটার এমন কাঁপন ধরা স্পর্শ সাদু সয্য করতে পারে না।তীব্র শীহরণে শরীর মন দুটোই নেতিয়ে পড়ে তার।সাদু একহাতে মনিরের ঘাড় অন্যহাতে মনিরের বুকের কাছের শার্ট আকড়ে ধরে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে।কি করছে কি লোকটা। এই তীব্র ভালোবাসায় ছোঁয়ায় যে সাদু শেষ হয়ে যাচ্ছে লোকটা কি বুজতে পারছে না।মনির তো অন্য ঘোরে চলে গেছে।ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের ভালোবাসার তীব্র স্পর্শে ভরিয়ে তুলছে সে।সাদু সয্য করতে না পেরে উঠে চলে যেতে নেয়।কিন্তু এতো সহজে কি আর পারবে নাকি মনিরের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সে।মনির সাদুর উড়না টেনে ধরে।হাতে উড়না পেঁচাতে পেঁচাতে সাদুকে কাছে নিয়ে আসে মনির।
তারপর নিজেকে উঠে দাঁড়িয়ে সাদুর পিছনে গিয়ে ওর পিঠ গেসে দাঁড়ায়।সাদু বুকে হাত দিয়ে জোড়েজোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।আর নিজের বুকের এই ধ্বুকপাকানি কমানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু এই লোকটা ওর কাছে থাকলে কি সেটা কমানো সম্ভব। উহু একদম না।মনির আলতো হাতে সাদুর খোলা চুলগুলো একপাশে সরিয়ে আনে।মনিরের হাতের এই ঠান্ডা স্পর্শে কেঁপে উঠে।মনির আস্তে করে নিজের মুখ সাদুর ঘাড়ে গুজে দিয়ে।সেখানে ছোট্ট ছোট্ট আঁবেশ দিতে শুরু করে।সাদু চোখ বটে বন্ধ করে নিলো।নাহ! আর সম্ভব না সয্য করা সাদুর পক্ষে।সাদু দ্রুত ঘুরে মনিরকে ঝাপ্টে ধরে।মনির ও নিজের প্রাণপ্রিয়াকে নিজের সাথে আকড়ে ধরে।বললো,

–” কিরে বউ এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন?এতো লজ্জা পেলে যে আমার নিজেকে কন্ট্রোল করা কষ্ট হয়ে যায়। ইসস! আরো অপেক্ষা করা লাগবে আমাকে।মন চায় তো একদম তোকে শেষ করে দেই।কিন্তু পরে চিন্তা করি। না থাক আমার বউটা অনেক ছোট আর একটু বড় হোক।”

কি বলছে মনির এসব?সাদুকে কে কি মেরে ফেলবে না-কি এই লোক লজ্জায়।সাদু মনিরকে চিমটি মেরে দেয়।

–” উফফ! কিরে বউ চিমটি দিচ্ছিস কেন?পরে আমি কিন্তু কামড়ে দিবো তোকে।”

সাদু ধমকে উঠলো,

–” কিসব বলছেন?লজ্জা সরম নেই?”

–” তোকে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে নারে।আমি কি করবো।”

সাদু লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।

–” চুপ করুন নয়তো খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।”

মনির হু হা করে হেসে দিলো।সাদুও মুচকি হেসে প্রিয় স্বামির বুকে আস্র‍য় নিলো।

——————-

নূর মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর ওর সামনে দাঁড়ানো আফরান।নূর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কিভাবে পালানো যায় আফরানের কাছ থেকে।তা দেখে আফরান মৃদ্যু হেসে নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলো।নূর ভয় পেয়ে মুখ সরিয়ে নিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। আফরান মিহি কন্ঠে বলে,

–” আমার কাছ থেকে পালানোর উপায় নেই।তুমি যে আষ্টেপৃষ্টে আমার সাথে জড়িয়ে গিয়েছো।এখন চাইলেও আমার কাছ থেকে যেতে পারবে না।”

নূর কাঁপছে আফরানের প্রতিটা বাক্যে।আফরান আবারো বলে,

–” উফফ! তুমি বলো না আমি এতোটা পাগল হলাম কি করে?তোমাকে তো ছোট থেকেই আমি চিনি,জানি,দেখি।কিন্তু এখন?এখন কেন আমি তোমার প্রতি এতোটা ডেস্পারেট। উত্তর আছে তোমার কাছে?”

নূর চুপ।কি বলবে ওর যে কথা বলা কষ্ট হয়ে গিয়েছে।ও নিজেও কি করে বলবে ওরও যে আফরানকে নিয়ে একই অনুভূতি হয়।একই যন্ত্রনা হয় বুকের মাঝে।আফরান নূরকে নিজের সাথে আঁকড়ে ধরে নিলো।নূর প্রথমে অবাক হলেও পরে চোখ বুজে নিজেও আফরানের বুকে মুখ গুজে দিলো।ঢিপঢিপ একটা একটা মধুর ধ্বনি ওর কানে বাজছে।যেটা সব সুরালা মধুর কাছেও তুচ্ছ।আফরান মৃদ্যু হাসলো।

–” ভালোবাসি! অনেক বেশি ভালোবাসি আমার আনন্দিতা।”

নূরের সারা শরীরে ভালোলাগার তীব্র শিহরণ বয়ে গেলো।মুখে লেপ্টে আছে লজ্জামাখা মিষ্টি হাসি।নূর দুহাতে আফরানের পিঠে খামছে ধরে আরো গভীরে মুখ লুকালো আফরানের বুকে।

—————–

আলিশাকে চেপে ধরে বসিয়ে রেখেছে নিবিড়।আর একাধারে তার এক বাক্য,

–” ও আলিশা,আলিশা,ভালোবাসি।”

এই একটা কথা বলেই যাচ্ছে বলেই যাচ্ছে থামার নাম নেই।অবশ্য আলিশার ভীষন ভালো লাগছে নিবিড়ের মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনে।ইসস এতো সুখ লাগে কেন প্রিয় মানুষটির মুখে এই ‘ ভালোবাসি’ কথাটা শুনতে।ভালোলাগা নিজের মনের মাঝে চেপে রেখেই চাপা ধমকে বলে,

–” কি সমস্যা কি?কি শুরু করলেন?আমাকে যেতে দিন।সাদু আর নূরের কাছে যাবো।”

নিবিড় আলিশার উড়না নিয়ে টানাটানি করছে।এক পর্যায়ে উড়না খুলে নিবিড়ের হাতে এসে পড়ে।আলিশা দ্রুত উড়না টেনে পড়ে নিয়ে রাগী লুকে তাকায় নিবিড়ের দিকে।আর নিবিড় তার মন মাতানো মিষ্টি হাসি ছুড়ে মারে আলিশার দিকে।
আলিশা কি আর রাগ করে থাকতে পারে এই লোকটার উপর।এতো কিউট কেনো ও?আলিশা বললো,

–” চোখ বন্ধ করুন!”

নিবিড় হাসি থামিয়ে ভ্রুকুটি করে বললো,

–“কেন?”

–” আহা করুন না!”

নিবিড় চোখ বুজলো।আলিশা নিবিড়ের কাছে গেলো অনেক কাছে।নিবিড় সেটা উপলব্ধি করতে পারছে।নিবিড়ের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।আলিশা আলতো করে ওর অধরজোড়া দিয়ে ছুঁইয়ে দিলো নিবিড়ের ঠোঁট। আর এক মুহুর্ত দেরি না করে দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলো।আর নিবিড়?সে তো চোখ খুলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে হলো টা কি তার সাথে?পরক্ষণে বিষয়টা খেয়াল আসতেই মুচঁকি হেসে।নিজের বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বাগানের দোলনায় সুয়ে পড়লো।

——————

গেস্টরুমে আলিফাকে বসিয়ে রেখে আর ওকে ড্যাবড্যাব করে দেখছে আরিফ।আর আলিফা রাগী চোখে চেয়ে আছে।আরিফ ওকে সবার সামনে থেলে এভাবে তুলে আনায় ওর মেজাজ প্রচন্ড চটে আছে।

–” এটা কি করলেন?”

–” কি করলাম?”

–” আপনি বলেন কি করলেন?”

আরিফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

–” আমার বউকে আমি কোলে করে নিয়ে এসেছি তাতে কার কি?”

আলিফা নিজের হাত উঠিয়ে আঙুল দিয়ে শাষিয়ে বলে,

–” আপনি একটা চরম নির্লজ্জ,লুচু ছেলে।”

আরিফ কুট্টুস করে আলিফার সেই আঙুলে কামড়ে দিলো।অনেক জোড়েই দিয়েছে কামড়টা। আলিশা আঙুল চেপে ধরে করুণ চোখে তাকালো আরিফের দিকে।আরিফ আবারো আলিশার হাতটা টেনে নিয়ে ওর ঠোঁটের সামনে আনলো।আর একদৃষ্টিতে আলিফার দিকে তাকিয়ে থেকেই ওই আঙুলটায় নিজের ঠোঁটের ছোঁয়া দিতে লাগলো।আলিফা চোখ বন্ধ করে নিলো আবেশে।
আরিফ আস্তে আস্তে চুমু খেতে খেতে আলিফার হাতের অনেকটা উপড়ে এসে পড়ছে আর আলিফা থরথর করে কাঁপছে।সয্য করতে না পেরে আলিফা আরিফকে ঝাপ্টে ধরে ওর বুকে মুখ গুজে দিলো আরিফ ও নিজের প্রিয়তমাকে বুকের মাজে আগলে নিলো।
—————–

মিম ওর মায়ের সাথে রাগারাগি করছে।অতিরিক্ত রাগে ওর মাথা ব্যাথা করছে।মা এমন কেন? কেন বুজতে চাইছে না ওর কথা।মিম এইবার রেগে চিৎকার করে বলে,

–” সজীবকে বুজিয়ে বলে দিও মা।ও যদি আর একবার আমাকে ফোন করে ডিস্টার্ব করে তো খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।”

মিমের মাও সমান তালে বলে,

–” আমি যা বলবো তাই হবে।তোর বিয়ে সজীবের সাথেই হবে।”

মিম কাছে থাকা ঘড়িটা উঠিয়ে এক আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে বলে,

–” আমি মরে গেলেও ওকে বিয়ে করবো না।এতোটা খারাপ,নির্লজ্জ, আর চরিত্রহীনা ছেলেকে তো কখনোই না।”

মেয়ের কথায় মিমের মা ঠাস করে একটা চড় মেরে দিলো মিমের গালে।মিম গালে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে মার দিকে তাকালো।বুজদার বয়স হওয়ার পর থেকে ওর মা ওকে কবে মেরেছে তা ওর মনে নেই।আজ এতোদিন পর মায়ের হাতে মার খেয়ে রাগ,জেদ,অভীমান সব ঝেকে ধরলো মিমকে।ও ক্র এক মুহূর্ত দেরি না করে হনহন করে রেগে বেড়িয়ে যায় মায়ের ঘর থেকে।সামনেই কড়িডোর দিয়ে যাচ্ছিলো।সেখানে মনির আফরান আর বাকিরা যেই রুমে থাকে সেই রুমের দরজা খোলা।মিম দেখলো মেরাজ ল্যাপটপে কি যেন করছে।ও ঠাসঠুস করে পা ফেলে একদম মেরাজের সামনে গিয়ে দাড়ালো।মেরাজ মুখ তুলে তাকানোর আগেই মিম মেরাজের শার্টের কলার ধরে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে মেরাজের চোখে চোখ রেখে শক্ত কন্ঠে বললো,

–” বিয়ে করবেন আমাকে! আর সেটা আজকেই এই মুহুর্তে। আর এটা রিকুয়েষ্ট করি নি আমি।জাস্ট জানিয়ে দিলাম।আর যদি আন্সার আপনার ‘না ‘ হয়।তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।প্রথমে আপনাকে খুন করবো তার পর নিজে নিজেকে শেষ করে দিবো।

#চলবে________

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।