ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-৩০

0
802

ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ৩০
অন্ধকারচ্ছন্ন রুমে ক্ষীন আলোর ড্রিম লাইট জ্বলছে।বেলি,গোলাপ,রজনীগন্ধা,গন্ধরাজ ফুলে সজ্জিত রুমটি ড্রিম লাইটের নীলচে আলোয় অপরূপ সুন্দর দেখাচ্ছে।ফুলের ঘ্রাণে পুরো রুমটা মৌ মৌ করছে। বিছানার এক কোণায় বসে একধ্যানে তাকিয়ে আছে মিমের দিকে।কি সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। খাটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছে মিম।মেরাজের ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে বুকের মাজে ঝাপ্টে ধরতে।ইসস! মেয়েটাকে বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।কিন্তু আর কষ্ট দিবে না সে।সব বলে দিবে।কিন্তু কিভাবে ও তো ঘুমোচ্ছে।ঘুম থেকে ডেকে তুলতেও মন চাচ্ছে না।মেয়েটা বড্ড ক্লান্ত।মেরাজ বিছানায় গিয়ে সাবধানে মিমকে সুইয়ে দিলো তারপর নিজে সুয়ে মিমকে নিজের বুকের মাঝে আবদ্ধ করে নিলো। একধ্যানে কতোক্ষন তাকিয়ে থাকলো তারপর আলতো করে ওর কপালে চুমু খেলো।চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টায় লেগে পড়লো কিছুক্ষনের মাজে ঘুমিয়েই পড়লো।ও

——————

আলিশা আর আলিফার গায়ে হাত পা ছড়িয়ে হা করে ঘুমোচ্ছে সাদু।দিন দুনিয়ার কোন হুশ নেই এই চারজনের। এদিকে নূর কতোক্ষন এদিকে ফিরে তো ওদিকে ফিরে।একসময় লাট্টিমের মতো ঘুরে আলিফার গায়ের উপর দিয়ে সাদুর বুকের উপর উঠে সুয়ে পড়লো।নূর সাদুর বুকের উপর সোয়ার কারনে ভার অনুভূত হয় সাদুর।শ্বাস নিতে না পারায় দ্রুত চোখজোড়া খুলে তাকায় সে।তাকিয়ে দেখে নূর সুয়ে আছে ওর বুকের উপর।চোখ মুখ কুচকে নূরকে ধাক্কা দিয়ে পাশে থাকা আলিশার গায়ে ফেলে দিলো।এদিকে ঘুমের মাজে আচমকা নিজের শরীরের উপর কিছু পরায় একলাফে উঠে বসে আলিশা ফলে নূর ধরাম করে একেবারে পড়লো খাটের নিচে।ব্যাথা পেয়ে নূর কঁকিয়ে উঠে।আলিশা ব্যস্ত হাতে পাশে থাকা টেবিল লাম্পটা জ্বালিয়ে নেয়।দেখে সাদু ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে বসে আছে।অপর পাশে তাকিয়ে দেখে নূর কোমড়ে হাত দিয়ে কাঁদো মুখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।আলিশাকে তাকাতে দেখে নূর বলে উঠলো,

” বান্দরনী কোনহানের এমনে ফালাইলি কেন আমারে?”

আলিশা নিজেও রেগে গিয়ে বললো,

” ধুন্দলের মতো শরীর লইয়া যে গড়াগড়ি খাস। আর আমার গায়ের উপর পরোস আইয়া। আমি কি তোর ভার সয্য করতে পারি?”

নূর কোমড়ে হাত দিয়ে উঠে দাড়ালো ঝাঝালো গলায় বললো,

” নিবিড় ভাই তো জাইত্তা ধরলেও হেইডা দোষ হইবো না।আমি একটু গায়ে আইসা শুইছি ওমনি সব আমার দোষ।”

ওদের চেঁচামেচিতে ঘুম চোখে একবার তাকালো সাদু।আবারো চোখ বুজে বলে,

” মাঝরাইতে যদি তোগো ঝগরা করবার মন চায় তাহলে ওইযে দরজা বেড়িয়ে যা ঘর থেকে। নাহলে লাইত্থাইয়া এক একটারে ঘর থাইকা বাইর করমু।ঘুমাইয়াও শান্তি নাই তোদের জন্যে।”

কথাটা বলেই চট করে চোখ খুলে তাকালো সাদু।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দিলো এক চিৎকার।ওর চিৎকারে আলিফা লাফ দিয়ে উঠে বসে হাত পা ছুড়তে ছুড়তেই বললো,

” কে? কে এসেছে?কোন চোর সালা আসলো?সামনে আয় লাইত্থাইয়া উগান্ডা পাঠায় দিমু।”

সাদু এক থাপ্পর দিলো ওর মাথায় রাগি কন্ঠে বলে,

” চোখ খুলে চারপাশ থাকা বলদ।আমি চোর না সাদু।হারামজাদি আমার মতো একটা মাসুম বাচ্চারে চোর বানায় দিলো।চোর হইবো তোর জামাই।”

আলিফা মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদো মুখ করেই বললো,

” খবরদার আমার জামাইরে কিছু বলবি না!”

” এহহ জামাইয়ের জন্যে দরদ উতরিয়ে পড়ছে।দারা আরিফ ভাইয়াকে অন্য মেয়ের সাথে ভাগিয়ে দিবো আমি।”

আলিফা গাল ফুলিয়ে বলে,

” সালি ঠাডা পরবো তোর উপর বজ্জাতের বজ্জাত।”

সাদু ওর মাথায় আর একটা গাট্টা মেরে দিলো।এইবার আলিশা বলে,

” এই কুত্তি চিল্লান দিলি কেন?”

সাদুর এইবার টনক পড়লো।দ্রুত উড়না গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে রুমের লাইট অন করলো।সকলে উদ্দেশ্যে বলে,

” আমরা তো ছিলাম মিম আর মেরাজ ভাইয়ার বাসর ঘরে এইখানে কি করে আসলাম?”

ওর কথায় আলিফা,নূর,আলিশা চমকে তাকালো।এতোক্ষন তো এই কথা ভুলেই গিয়েছে।আশে পাশে তাকালো সত্যি তো এখানে আসলো কিভাবে ওরা।আলিফা কাঁদো মুখ করে বললো,

” সাদ্দুনি রে আমাদের আবার জ্বিন ভূতে নিয়ে আসলো না তো?”

নূর দিলো এক ধমক,

” ফ্লাইং জুতা মারমু তোরে চুপ থাক।”

আলিশা বললো,

” কিন্তু এখানে আমাদের আনলো কে?”

সাদু গলা খাকারি দিয়ে বলে,

” সেটা বড় কথা না পরেও জানা যাবে। আপাততো আমাদের মিশন সাকসেস্ফুল হয় নি।বাসর ঘরে ডুকতেও দেওয়ার আগে টাকা দেওয়া লাগবে।আমাদের হক মারা হয়েছে অনেকগুলো গেট ধরার টাকা,বউ সাজানোর টাকা,জুতা চুরি করবো সেই টাকা,বরের হাত ধোয়ানোর টাকা সব তো ভেস্তে গেলো।এখন এই লাস্ট এইটা কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারবো না!”

আলিশা কপাল কুচকে বলে,

” কিন্তু এখন আমরা কি করবো?ওদের তো এতোক্ষনে তিন চার বার বাসর হয়ে গিয়েছে।”

আলিফা মুখ কুচকে বললো,

” ছি! লুইচ্চা কোনহানকার।”

সাদু চোখ ছোটছোট করে তাকালো।বললো,

” তুই বড় ভালো?আরিফ ভাইয়ার সাথে বুজি বাসর না করে ওইদিন নাক ডেকে ঘুমাবি?”

আলিফা আর কিছু বললো না চুপসানো মুখ নিয়ে বসে রইলো।সাদু আবার বলে,

” নূর ক’টা বাজে রে?”

নূর জলদি টেবিলে রাখা ঘড়িতে সময় দেখে নিলো।তারপর বললো,

” তিনটা বেজে তেইশ মিনিট।কিন্তু এখন কি করবি?”

সাদু শুনলো তারপর গালে হাত দিয়ে ভাবলো কিছুক্ষন।হঠাৎ মুখে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বলে,

” লেট্স গো লেডিস।হামলা করবো।বিশাল বড় হামলা! ওদের বাসর রাতের গুষ্টির তুষ্টি উড়িয়ে দিবো।”

নূর, আলিশা,আলিফা সাথে সাদুও কোমড়ে উড়না বেধে নিলো।তারপর দরজা খুলে লাইন লাগিয়ে হাটতে লাগলো আর বলছে, ” লেফট্, রাইট, লেফট্! লেফট্, রাইট,লেফট্। ”

ধুপ ধাপ পা ফেলে হাটছে।তারপর সোজা এসে দাড়ালো মেরাজ আর মিমের রুমের সামনে।নূর বলে,

” গাইস! রেডি, ওয়ান, টু থ্রী।”

বলতে দেরি চারজনের একসাথে দরজায় বারি মারতে দেরি নেই।ঠাস ঠাস করে দরজায় বারি মারতে লাগলো আর স্লোগান করছে,

” মানি না মানবো না।আমাদের হক পূরণ করতে হবে।আমাদের দাবি মানতে হবে।”

একসাথে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছে আর ঠাস ঠাস করে দরজায় বারি মারছে।

মেরাজের বাহু বন্ধনে আরামসে ঘুমাচ্ছিলো মিম।এদিকে মেরাজ দেরিতে ঘুমিয়েছে তাই ওর ঘুমটা অনেক গভীর এতো আওয়াজেও ভাঙ্গছে না।মিম তো বহু আগে ঘুমিয়েছে তাই এতো আওয়াজে ঘুম থেকে জেগে গেলো।পিটপিট চোখ খুলে তাকালো।এতো আওয়াজে ওর চোখ মুখ কুচকে আসছে।ঝাপসা চোখে দেখলো ওকে কেউ জড়িয়ে ধরে আছে তাও শক্তভাবে। আসলে মিম ঘুমের ঠ্যালায় ভুলেই গেছে যে আজ ওর বিয়ে হয়েছে।তাই সে তো ভয়ে শেষ।মেরাজের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত উঠে বসলো।বলে,

” এটা আবার কে?আমি কোথায়?সাদু,নূর,আলিফা,আলিশা কোথায়?এই বেডা কইত্তে আইলো?আম্মা!!!!! আমি এইখানে কেন?”

ভয়ে ভয়ে আর একবার মেরাজে দিকে তাকিয়ে এক চিৎকার দিলো।ওর আচমকা চিৎকারে মেরাজের ঘুম ভেংগে গেলো।মিমকে উঠে বসে থাকতে দেখে।ওর কাছে গিয়ে দেখে মিম চোখ বন্ধ করে আছে আর কি যেন বির বির করছে।মেরাজ ওর বাহু ধরে বললো,

” কি হয়েছে?এমন করছো কেন?”

তারপর বাহিরে এমন চেঁচামেচি শুনে আবার বলে,

” আর বাহিরে বা কি হয়েছে?”

মেরাজের কথায় মিম এমন ভয় পেলো।যে ওর গলা শুকিয়ে কাঠ।আসলে সে সবসময় ওর ছোট বোনের সাথে নয়তো সাদুদের সাথে ঘুমিয়েছে। আজ এই প্রথম কোন ছেলের সাথে একঘরে থাকা ওর।তারপর ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি।আর ভুলেই গিয়েছে যে এখন ও বিবাহিতা।মিম চোখ বন্ধ করেই মেরাজের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে বলে,

” এ ভাই আপনি কে?”

মেরাজ তো অবাক বলে কি এই মেয়ে?সে কে?এটা কোন কথা?একটু আগে না ওদের বিয়ে হলো?আর এখনি ভুলে গেছে।মেরাজ গেলো রেগে ফাইযলামি হচ্ছে তার সাথে।মেরাজ মিমকে ধরতে গেলেই।মিম চোখ বড়বড় করে বিছানা থেকে নেমে

” আম্মাগো এই বেডা কেডা?আমারে কিডন্যাপ কইরা লইয়া গেলো বাচাও আমারে।”

বলেই সে দৌড়।এদিকে বাহিরে সাদু রা মিমের চিৎকার শুনে থতমত খেয়ে গেছে।ততোক্ষন মনির,আফরান,আরিফ আর নিবিড় এসে ওদের পিছনে দাড়িয়েছে সবে।আর এমন সময় মিম ধরাম করে দরজা খুলে একেবারে হুরমুরিয়ে পড়লো ওদের গায়ের উপর ওরাও টালসামলাতে না পেরে মিমকে নিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মনিরদের গায়ের উপর পড়লো।তারাও আকস্মিক ঘটনা সামলে উঠতে না পেরে ধরাম করে নিচে পড়ে গেলো।বড়রাও রিতিমতো এখানে হাজির আর মেরাজও রুম থেকে বের হয়ে এসেছে।ওদের সবাইকে এমন নিচে পরে থাকতে দেখে কতোক্ষন হা করে তাকিয়ে রইলো।পরক্ষনে সবাই হু হা করে হেসে দিলো।মিমের মাও না হেসে পারলো না।চারদিকে হাসির শব্দ গুলো দেয়ালে দেয়ালে বারি খেয় ঝংকার তুলতে লাগলো ক্রমাগতো।

#চলবে______