ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-৩১

0
756

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ৩১

বসার ঘরে চারদিকে পিনপতন নিরবতা।বয়স্করা অনেক আগেই চলে গেছে যার যার রুমে কারন তারা জানে এই ছেলেমেয়ে গুলো সুধরাবার না।আর এদের এইসব উট্ভব কান্ড যে নতুন কিছু না তাও তারা জানে।তাই আপাততো ঘুমোনোটাই ভালো মনে করেছেন তারা।
এদিকে মেরাজ মিমের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে,মেরাজের এই প্রখর দৃষ্টিতে মিম কাচুমাচু হয়ে বসে আছে আর কিছুক্ষন পরপর আঁড়চোখে তাকাচ্ছে।আর বাকিরা মিটমিটি হাসছে।

মেরাজ রাগি কন্ঠে বলে উঠলো,

” আমাকে বিয়ের জন্য জোর করেছিলো কেন?”

প্রশ্নটা শুনে মিম মাথা নিচু করে রাখলো।মেরাজ এইবার ধমক দিয়ে বলে, ” বলো? আমার প্রশ্নের উত্তর দেও?”

মিম মেরাজের ভয়ে কেঁপে উঠে। কাঁপা গলায় বলে,

” আমি করেছি।”

মেরাজ দাঁতেদাঁত খিচে বললো,

” তাহলে বাসর ঘরে মাজরাতে ফাইযলামি পাইছো?আমাকে বলো ‘ কেন ভাই আপনি?’ লাইক সিরিয়াসলি আমাকে বিয়ে করে আবার আমাকেই এইসব কথা কি করে বলো?”

সাদু অনেক কষ্ট হাসি থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারলো না হু হা করে হেসে দিলো।ওর দেখাদেখি বাকিরাও হেসে কুটিকুটি।সবাইকে এইভাবে হাসতে দেখে মেরাজ আবারও মিমের দিকে রাগি চোখে তাকালো।

” দেখোছো ওরাও হাসছে আমার উপর।”

মিম কাঁদো মুখ করে তাকালো।কিউট করে বলে,

” সরি! আসলে আমি আমার বোন আর সাদুদের ছাড়া আর কারো সাথে ঘুমাই নি কখনো।ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ আপনাকে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।সরি তো!”

মেরাজ তো একদম গলে গেলো।এইভাবে কিউট করে কেউ বললে কি আর রাগ করে থাকা যায়?উহু কখনোই না।তাই মেরাজ গম্ভীর মুখ করেই বলে,

” চলো রুমে ঘুমোবো।আর হ্যা তোরাও চলে যা ঘুমোতে।”

মিম উঠতে নিলেই ‘ আহ ‘ করে শব্দ করে উঠলো।তখন ওইভাবে পরে যাওয়ায় মিম পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলো।তাই এখন হাটতে নিয়ে সেখানেই ব্যাথা পেয়েছে।মেরাজ ধুপধাপ পা ফেলে মিমকে কোলে তুলে নিয়ে সোজা রুমের দিকে হাটা শুরু করলো।এইদিকে মিম মেরাজের গলা জড়িয়ে ধরে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মেরাজ যে ওকে এইভাবে কোলে তুলে নিবে ও ভাবেইনি।আসলে বিয়েটা তো আর মেরাজ মন থেকে করেনি।মিমের একঘেয়েমির কারনে মেরাজকে করতে হয়েছে।যার কারনে মিমের অনেক অনুশোচনাবোধ হচ্ছে।আচ্ছা মেরাজ যদি অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকে তাহলে?মিম কি মেরাজকে কষ্ট দিয়ে ফেললো?কিন্তু এখন কি করবে মিম?উফ! আর ভাবলো না মিম সবটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলো।যা হবার হবে।এতোকিছু ভেবে লাভ নেই।

এইদিকে সাদু মুচকি হেসে মেরাজ আর মিমের দিকে তাকিয়ে আছে।আনমনেই বলে,

” মাশা-আল্লাহ পার্ফেক্ট জুটি।কি সুন্দর দেখাচ্ছে মেরাজ ভাইয়ার কোলে মিম ডিম আন্ডাটাকে।”

মনির সাদুর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো।সাদুর কথায় মনির হালকা ঝুকে সাদুর কানেকানে বললো,

” আমাদের জুটিটাও আল্লাহ্ বানিয়ে দিয়েছেন।কিন্তু তোমাকে তো আমার দিকে একটু ভালোভাবে তাকাতেও দেখি না।”

সাদু খিলখিল করে হাসলো।চমৎকার সেই হাসি। মনির মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে প্রিয়তমার ঠোঁটের হাসিটাকে হৃদয়ে ক্যামেরাবন্ধি করে রাখলো।

আলিফা আরিফের দিকে তাকিয়ে আছে, ইস! একদিন এই লোকটাও ওর স্বামি হবে।ও আর আরিফের ছোট্ট একটা সংসার হবে।এই লোকটার প্রসস্থ বুকে ও নিশ্চিন্তে ঘুমোবে।আর লোকটার আদর, সোহাগে হারিয়ে যাবে অন্য জগতে সেখানে শুধু ও আর আরিফ থাকবে।কল্পনা করেই আলিফার গাল গুলো লাল হয়ে উঠলো লজ্জায়।আরিফের চোখ আলিফার দিকে পড়তেই।সেখানে ওর দৃষ্টি থমকে যায়, ওর প্রিয়তমা ওর দিকেই গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সে কি মায়াভরা সেই দৃষ্টি।আরিফ বুকের বা-পাশে হাত রাখলো আস্তে করে নেশা মাখানো কন্ঠে বললো,

” এইভাবে আমাকে দেখো না তো! এইখানটায়(বুকের বা পাশ দেখিয়ে) বড্ড ব্যাথা উঠে যায় তোমার সেই প্রখর দৃষ্টিতে।”

আলিফা চোখ সরায় ঠোঁট জোড়া প্রসস্থ করে হাসে।পূর্ণতা আর লাজুকতা ভরপুর সেই হাসি।

মনির সাদুর কোমড়ে হাত রাখলো।আচমকা এমন হওয়ায় সাদু ঘাবড়ে গিয়ে মনিরের দিকে তাকায় দেখে সবাই যার যার প্রেয়সীকে নিয়ে ব্যস্ত।সাদু মিহি কন্ঠে বললো,

” কি করছেন আপনি?”

মনির মুচকি হাসলো।বললো,

” কি করলাম?”

” এখানে সবাই আছে! ”

” তো?”

সাদু অসহায় হয়ে বললো,

” আপনি এইভাবে আমাকে ধরে রেখেছেন কেন?এখানে ভাইয়ারা আছে।কিসব ভাববে তারা?”

মনির তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় সাদুর দিক।হালকা ধমকে বলে,

” কি সমস্যা?আমি অন্য কাউকে ধরেছি আমি আমার বউকে ধরেছি।আর এখন চুপচাপ আমার সাথে চলো। ”

সাদু ঠোঁট উলটে বলে,

” ঘুমাবো না?”

মনির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

” নাহ! আর ঘুমানো লাগবে না।দু একদিন না ঘুমোলে কিছু হয় না।”

বলেই মনির বাড়ির বাহিরে যাওয়ার জন্যে হাটা ধরলো।সাদু আর কি করবে?এই লোকটা যেই ঘারতেড়া এর কথা না শুনে উপায় নেই।তাই সাদুও আর কিছু না বলে মনিরকে অনুসরণ করে যেতে লাগলো।
.
নিবিড় কতোক্ষন যাবত আলিশাকে খোচাচ্ছে ছাদে যাবার জন্যে।কিন্তু আলিশার সেইদিকে কোন ধ্যানই নেই।নিবিড় এইবার সবার আড়ালে আলিশার কোমড়ে চিমটি কেটে দিলো।আলিশা ব্যাথা পেয়ে আওয়াজ করতে নিয়েও করলো না।সবাই আছে এখানে তাই।আলিশা ব্যাথাটা দাঁতেদাঁত চেপে সয্য করে নিলো তারপর রাগি গলায় বলে,

” এইটা কি হলো?”

নিবিড় ফিসফিস করে বললো,

” তোমাকে কতোক্ষন যাবত বলছি ছাদে যাবার জন্যে তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছোই না।”

আলিশা নিজেকে শান্ত করলো চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,

” চলুন ছাদে দেখি কি বলেন আপনি!”

নিবিড় ঢোগ গিললো এই মেয়ে যে ওর সাথে ভয়ানক কিছু করবে তা ওর জানা হয়ে গিয়েছে।তাই হালকা হাসার চেষ্টা করে বললো,

” না থাক যাওয়া লাগবে না।”

আলিশা শক্ত মুখেই হাসলো নিবিড় হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,

” আরে চলুন না অনেক দরকারি কথা আছে।আসুন।”

নিবিড় অসহায় হয়ে আলিশার সাথে সাথেই ছাদের দিকে চলে গেলো।

এইদিকে নিবিড় আর আলিশাকে চলে যেতে দেখে আরিফ ও আলিফাকে টেনে নিয়ে চলে গেলো।সবাইকে এইভাবে চলে যেতে দেখে নূর ঠোঁট উলটে বলে,

” সবাই যার যার প্রেমিকদের সাথে চলে যাচ্ছে।এইদিকে আমি জন্ম হতেই সিংগেল সালা মরবোও সিংগেল আমি। আমার কপালে জামাই নাই।”

নূরের কথায় আফরান চোখ ছোট ছোট করে তাকায় নূরের দিকে।নূরের দৃষ্টি সেদিকে পড়তেই নূর বলে,

” কি? এভাবে তাকানোর কি হলো?”

আফরান বললো,

” কি মানে?তুমি সিংগেল?তোমার কপালে জামাই নাই?”

নূর আফসুসের স্বরে বলে,

” নাইই তো!”

আফরান চাপা রাগ নিয়ে বললো,

” তো আমি কে?”

” আব আপনি ভাইয়া!”

আফরান অবাক নূর যে তাকে ভাইয়া বলে দিবে ও ভাবতেই পারেনি।আফরান এইবার নূরের হাত খোপ করে ধরে বলে,

” চলো আজ তোমাকে দেখাবো আমি ভাইয়া না অন্য কিছু চলো?”

নূর ভয় পেয়ে গেলো আফরানের হাতে চিমটি মেরে দিলো।আফরান ব্যাথা পেয়ে নূরের হাত ছেড়ে দিতেই নূর দৌড় দেয় কিন্তু বেশি দূর যেতে পারে না তার আগে আফরান আবারো ওর হাত ধরে ফেলে নূর এইবার উপায় না পেয়ে সোফার হাতল শক্ত করে ধরে রাখলো।আফরান রাগি গলায় বলে,

” নূর সোফার হাতল ছাড়ো বলছি চলো আমার সাথে।”

নূর আফরানের হাতে থাকা ওর হাত মোচড়াচ্ছে তারপর বলে,

” ছেড়ে দিন ছেড়ে দিন আমায় শয়তান আপনি আমার দেহ পাবেন আমার মন পাবেন না।”

আফরান কতোক্ষন হা করে তাকিয়ে থাকলো নূরের দিক তারপর নূরকে হেচকা টান মেরে একেবারে কোলে তুলে নিলো।নূরের বিষ্ময়ে চোয়াল ঝুলে পরার উপক্রম।নূর চেঁচিয়ে উঠলো,

” আরে কি করছেন আপনি?কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? নামান আমাকে নামান।”

আফরান সামনের দিক দৃষ্টি স্থির রেখেই বলে,

” আচ্ছা! ছেড়ে দিলাম।”

কথাটা বলতে দেরি আফরান নিজের হাতের বাঁধন হালকা করে দিলো যার ফলে নূর প্রায় পড়েই যাচ্ছিলো দ্রুত আফরানের গলা জড়িয়ে ধরলো কান্না মাখা গলায় বলে,

” আমি পরে যাবো ধরুন আমাকে।,”

আফরান নূরকে আগের মতো শক্ত করে ধরলো।তারপর সোজা নূরকে নিয়ে গেস্টরুমে ডুকে নূরকে নামিয়ে দিলো।তারপর দরজা আটকে দিয়ে এক মিনিট দেরি না করে নূরকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।নূর ভড়কে গেলো।জড়ানো গলায় বলে,

” কি করছেন আপনি?”

আফরান প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিক বলে,

” আমি ভাইয়া না কি হই তোমার তা বুজানো লাগবে না?”

” না লাগবে না।”

” আমি তো বুজাবোই।”

আফরান নিজের মুখ টা নূরের কানের কাছে আনলো মুহূর্তেই নূরের নিশ্বাস আটকে গেলো।লোকটা করছে টা কি?ওকে কি মেরে ফেলবে? লোকটা জানে না নূর এইসব সয্য করতে পারে না।”

” প্লি..প্লিজ সরুন না।”

আফরান সেরকম ভাবেই বলে,

” উহু! সরবো না।”

আফরানের প্রতিটা কথার সাথে ওর নিশ্বাস গুলো নূরের গলায় বারি খাচ্ছে নূর কেঁপে উঠলো। আফরান আবার বলে,

” এখন বলো আমি কি?”

নূর তখনও চুপ কি বলবে?ওর গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।আফরান এইবার হাত দিয়ে নূরের ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে দিলো আফরানের হাতেত স্পর্শে নূর শেষ।কি করবে কি লোকটা?যখন আফরান নূরের গলায় মুখ গুজলো নূর চেঁচানো আওয়াজেই বললো,

” আপনি আমার ভালোবাসা।”

আফরান থামলো।ওর শরীরটা ঝাকুনি দিয়ে উঠলো।মুখ উঠিয়ে তাকালো নূরের দিক।শুধু তাকিয়েই থাকলো এই দেখার নেই যে কোন শেষ।আফরানকে দেখছে নিজের ভালোবাসাকে।সেই দেখায় কি কোন বিরক্তবোধ হতে পারে?উঁহু কখনোই না।

#চলবে______

ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।