ভালোবাসার সন্ধিক্ষণ পর্ব-৯+১০

0
195

#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi
#পর্ব_০৯

শান্তিতে ঘুম হবে আজ ওর,প্রতিভার প্রথমে অস্বস্তি হলেও সে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।এতকাল একা কাটিয়েছে,এই প্রথম কোনো ছেলের পাশে ঘুমাবে তাও তার বুকে,এমন অস্বস্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক।


সকাল ৭ঃ৩০
ঘুম ভাঙার পর প্রতিভা নিজেকে ইয়ামিনের বুকে আবিস্কার করলো,ইয়ামিন এক দৃষ্টিতে প্রতিভার দিকে তাকিয়ে আছে,ব্যপারটা খেয়াল করতেই কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো প্রতিভা,লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো সে।ইয়ামিন মুচকি হেসে প্রতিভার কপালে চুমু দিয়ে উঠে বসলো।

–এতো লজ্জা পেওনা প্রকৃতি কন্যা,আমার হৃদয়েশ্বরী,লজ্জা পেলে তোমাকে অনেক মায়াবী দেখায়,পুরো ক্যান্ডি,ঘুম থেকে উঠার পর তোমাকে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে সেটা কি জানো তুমি,কবে যেন হার্ট ফেইল করে মারা যাই আমি,এতটা পাগল করোনা আমার প্রাণেস্বরী,এতে যে আমার প্রাণ যায়।

মৃত্যুর কথা শুনে প্রতিভা দ্রুত ইয়ামিনের মুখে হাত দিলো।

–আলাইবালাই কাতি কালাই,ছু
একদম আজেবাজে কথা বলবেননা আপনি,সকাল সকাল কিসব অশুভ কথা শুরু করেছেন।

–ফাইন,সরি বউ আর বলবোনা।
যদি কখনো কিছু হয়,তুমি আছোতো,আমাকে বাচিয়ে নিও তুমি (প্রতিভা কে নিজের বাহুডোরে নিয়ে)
শান্তি লাগছে,এবুকের মরুভূমিতে অবশেষে তুমি নামক বৃষ্টি নামলো বলো,আমি পরিপূর্ণ তোমাকে পেয়ে,পরিপূর্ণ আমার হৃদয়,ইহকালে আল্লাহ আমাকে যতটুকু দিয়েছেন সবটা নিয়েই আমি সন্তুষ্ট,আর কিছু চাইনা আমার।ভালোবাসি প্রতিভা।

–আমিও আপনাকে ভালোবাসি (লজ্জায় মাথা নুইয়ে)

–ওহে প্রিয়তমা,এভাবে লজ্জা পেওনা।আমিতো এখনও কিছুই করিনি,এতো লজ্জা পেলে কি হবে বলো

–ইশশ

–যাও ফ্রেশ হয়ে নাও,আমারতো কেউ নেই তুমি ছাড়া।আজ নাহয় আমিই তোমাকে ব্রেকফাস্ট করে খাওয়াই

–নাহ্ না,আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।আমি আছিতো,আমি রান্না করবো

–অবশ্যই করবে,কিন্তু আজ নয়,কাল থেকে।আমি তোমাকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করবো।জানোতো স্ত্রীর প্রতিটি কাজে স্বামীর সাহায্য করা সুন্নত,যাও এখন ফ্রেশ হয়ে নাও।

–হুম

প্রতিভা ওয়াসরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো,ইয়ামিন পাশের রুমের ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে গেলো।ডিম্পোচ আর আলু পরোটা বানিয়ে নিয়ে রুমে আসলো সে।প্রতিভা ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে,কতটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে ওকে,ইয়ামিন খাবারের প্লেট টা বিছানার উপরে রেখে প্রতিভার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

–প্রিয়তমা,আমার মন যে ছটফট করছে তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য,তুমি কেন এত দূরে বলোতো

–ইশশ,সবসময় বাজে কথা,চলুন ক্ষুধা পেয়েছে

–বাজে কথা নয়,এটা ভালোবাসা।
এসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিব

–কি?

–হুম,আমি তোমাকে তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে,এতে ভালোবাসা বাড়ে

–এতো ভালোবাসা কোই রাখেন হুম।

–মনের গহীন রাখি,শুধু তোমার জন্য।
একটা গান আছে জানো,খুব মিলে যায়,বলি?

–কি

–বুকের ভেতরে,মনের গহীনে তুমি ছাড়া আর কেহ নাই,না-ই গো,তুমি ছাড়া আর কেহ নাই

–হয়েছে হয়েছে,চলুন এবার (মুচকি হেসে)

এরপর ইয়ামিন বিছানায় বসে প্রতিভাকেও ইশারায় ওর পাশে বসতো বললো।

–বিছানায় বসে খাবার খেতে হয়না বুঝলেন,এতে সংসারের আয় কমে যায়

–কে বলেছে এসব কথা হুম,এটা কুসংস্কার

–কিছু কিছু কুসংস্কার না মানলেই নয়,মেঝেতে বসুন।মেঝেতে বসে খাওয়ার আনন্দটাই অন্যরকম।

ইয়ামিন আর কথা বাড়ালোনা,ফ্লোরে এসে বসলো সে।স্বামীস্ত্রী একে-অপরকে খাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ব্রেকফাস্ট শেষ করলো।


দু’দিন পরে…
ব্যাগপত্র গোছাচ্ছে প্রতিভার মা ফাতেমা বেগম,ইয়ামিনের অনুরোধ তিনি ফেলতে পারেননি ছেলেটা বারবার মা বলে ডেকে,মা-ছেলের দোহাই দিয়ে বলেছে তিনি যেন তার ছেলের বাড়িতে থাকেন।মানে ফাতেমা বেগমকে নিজেদের সঙ্গে ফ্ল্যাটে রাখতে চায় ইয়ামিন,ফাতেমা বেগম এতে আপত্তি জানালেও শেষ অবধি ইয়ামিনের কথা আর ফেলতে পারেননি।তবে তারও একটা শর্ত,সেটা হলো বসেবসে মেয়েজামাইয়ের টাকায় তিনি চলবেননা,আগে যেমন দরজির কাজ করে আয় করতেন,এখন এখানে থেকেও সেটা করবেন।ফাতেমা বেগমের ঘোর আত্মসম্মানবোধের কাছে হার মেনে ইয়ামিনও আর আপত্তি করেনি।ফেরনিতে প্রতিভাকে নিয়ে এবাড়িতে এসে তার মাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে ইয়ামিন।


বিয়ের পরে কেটে গেছে ১বছর..
আজ ইয়ামিন আর প্রতিভার বিবাহবার্ষিকী,আর্ট স্কুলে জাঁকজমক আয়োজন করেছে ইয়ামিন।বেলুন,কৃত্রিম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে সবটা,বিয়েতে যেহেতু অনুষ্ঠান হয়নি তাই ১ম বিবাহবার্ষিকী তে ছোট্ট করে একটা অনুষ্ঠান হবে,আর সেটা এই আর্টস্কুলে,এটা যে প্রতিভার প্রাণভোমরা।প্রতিভার চাচা,চাচিদেরকেও ইনভাইট করা হয়েছে যাতে ওনারা আসেন আর দেখেন প্রতিভার মতো মেয়েরাও সুখী থাকতে পারে,বিয়ে করে সংসার করতে পারে,হোকনা সেটা ক্ষনস্থায়ী,পৃথিবীতে কেউই অবহেলা লাঞ্ছনার পাত্রি না।
ফাতেমা বেগমও অনেক খুশি,মেয়েকে একজন সঠিক ছেলের হাতে তুলে দিয়ে,বিগত একবছরে ছেলেটা প্রতিভার যত্নআত্তি তে কোনো ত্রুটি রাখেনি,একজন কাজের লোকও রেখেছে যাতে প্রতিভার কষ্ট না হয়।প্রতি দেড়মাস অন্তর ইয়ামিন নিজে প্রতিভা কে মেডিক্যালে নিয়ে যায়,নিজে ৩মাস পরপর রক্ত দেয়,আর মাঝের মাস টাতে ইয়ামিনের এক কলিগ রক্ত দেয়,যার জন্য রক্ত নিয়ে এখন কোনো অসুবিধা হয়না প্রতিভার।প্রতিভা ইয়ামিনের সম্পর্কটাও আর পাঁচটা দম্পতির মতোই স্বাভাবিক,তবে ইয়ামিন এখন অবধি বাচ্চা নেওয়ার কথা মুখেও আনেনি কারণ সে চায়না প্রতিভার কিছু হোক,সে প্রতিভাকে কিছুতেই হারাতে চায়না।

স্কুলের সমস্ত বাচ্চাদের গার্জিয়ানরাও এসেছে,কেক কাটা,খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে ইয়ামিন বাচ্চাদের সঙ্গে মেতে উঠলো,ইয়ামিন যে বাচ্চা প্রেমী সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে প্রতিভা,নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে ওর।আজ ওর জন্য ইয়ামিন বাবা হওয়ার সুখ আনন্দ থেকে বঞ্চিত,সে-তো বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখে,সে ক্ষমতাও তার রয়েছে,অক্ষম তো প্রতিভা নিজে।এমন নয় যে সে বাচ্চা জন্ম দিতে পারবেনা,কিন্তু বাচ্চাটাও যদি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেয় তখন কি হবে,সেই যন্ত্রণা গুলো যে অনেক কষ্টকর,কোনো মা’ই চায় না তার সন্তানরা কষ্ট পাক,এইজন্যই প্রতিভা বাচ্চা নিতে চায়না।

–(না,আমাকেই কিছু একটা করতে হবে,আমিতো বেশিদিন বাচবোনা,হয়তো সাড়ে নয় বছর বাচবো আর,এরপর ইয়ামিনের কি হবে,তাকে আমি কখনোই সন্তানসুখ থেকে বঞ্চিত করতে পারবোনা,তার অধিকার আছে বাবা হওয়ার,ও তো অক্ষম নয়।))

রিমের জড়িয়ে ধরায় ভাবনার জগত থেকে বের হলো প্রতিভা,মুচকি হেসে রিমকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু দিলো।

–মামনি,রাক্ষস আঙ্কেল কে দেখো এতগুলো বাচ্চা পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে,ঝিমটাও ওদের দলে যোগ দিয়েছে,এখন আমি কি করবো হুম।ইশ আমার যদি একটা ভাইবোন থাকতো,দুজন মিলে ঝিম আর রাক্ষস আঙ্কেলকে মজা দেখাতাম।

–তাই,তোমার আরও ভাইবোন চাই বুঝি সোনা

–হুম এত্তগুলো

রিম ঝিমের মা রাজিয়া এগিয়ে এসে দাঁড়ালো,

–কি হয়েছে প্রতিভা,পাজিটা আবার কি করছে?

–কিছুনা ভাবি,ও ভাইবোন নিয়ে আফসোস করছে,বেবিতো নিতেই পারেন

–নাগো,দু’টো হয়ে গেছে আর চাইনা,আর তাছাড়াও ঝিমের বেলার সিজার করার সময় লাইব্রেশন করে নিয়েছি,আর বেবি হবে না

–ওও

–মামনি,তুমি আমাকে ভাইবোন এনে দাও,তাহলেই হবে,আমি ওর সঙ্গে সারাদিন খেলবো (রিম)

রিমের মুখে এই কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো প্রতিভা,প্রতিভার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে রাজিয়া ঝিমকে খেলতে পাঠিয়ে দিলো।

–কিছু মনে করোনা প্রতিভা,রিম বাচ্চা মানুষ,ও তো কিছু বুঝেনা।
আমাদের ইয়ামিনটাকে দেখো,বাচ্চা পেলে একদম মাথা ঠিক থাকেনা,কি করে বাচ্চাদের সাথে খেলছে দেখো,শিং ভেঙে বাছুরের দলে যোগ দিয়েছে হাহাহা

–আপনার দেবর খুব বাচ্চা পছন্দ করে তাইনা ভাবি?

–হুম খুব,রিম যখন হলো,ইয়ামিনতো রিমকে কারোর কাছেই দেয়না,অফিসের কাজ শেষে রাত ১১টা ১২টার দিকে হলেও আমাদের বাড়িতে আসতো রিমকে আদর করার জন্য,ঝিমের বেলায়ও তাই।পাগল একটা

–ওও

প্রতিভা আর কথা না বাড়িয়ে সেখানে থেকে সরে এসে একসাইডে চেয়ারে বসলো,নিজেকে কেমন অপরাধী অপরাধী লাগছে ওর।ইয়ামিন যতোই বিয়ের জন্য পাগলামি করুক,ওর একদম রাজি হওয়া উচিত হয়নি।প্রতিভা চুপচাপ বসে আছে আর চোখের পানি মুছছে,হঠাৎ ওর সামনে লেবুপানির গ্লাস ধরলো কেউ,প্রতিভা মাথা তুলে দেখে একজন অপরিচিত মেয়ে।

–আপনিই??

–আমি তোমার হসজবেন্ডের কলিগ,ইয়ামিন এটা পাঠালো,খেয়ে নাও।

মেয়েটির কথা শুনে প্রতিভা সাইডে তাকাতেই ইয়ামিন ইশারায় খেতো বলে আবার বাচ্চাদের সঙ্গে মস্তিতে যোগ দিলো।প্রতিভা মেয়েটির থেকে গ্লাস নিয়ে খেয়ে নিলো লেবুপানি।

–তোমার নামতো প্রতিভা তাইনা?

–জ্বী আপু

–আমি লামিয়া,কেমন আছো

–এইতো আলহামদুলিল্লাহ

–ভাগ্য করে বর পেয়েছোগো,জানো আমি কতগুলো বছর ধরে ইয়ামিনকে পটানোর চেষ্টা করেছি,কিন্তু ও বারবার আমাকে রিজেক্ট করেছে,ওর নাকি কোনো মেয়েকেই মনে ধরেনা,অবশেষে তোমাকে মনে ধরলো,আবার বিয়েও করলো।
আর আমি চিরকুমারী থেকে গেলাম হাহাহা

–ভালোবাসেন ইয়ামিনকে??

–ভালোবাসি মানে,খুব ভালোবাসি গো,কিন্তু আল্লাহ তো সবার কপালে সবাইকে রাখেনা,ইয়ামিন আমার ভাগ্যে ছিলোনা তাই ওকে পাইনি,তুমি পেয়েছো।আমি দূর থেকেই দেখি,ভালোবাসলে যে পেতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।

–ভাগ্য তো সহায় হতেও পারে আপু,হতে পারে আপনি ইয়ামিনকে পেয়ে গেলেন

–মানে,কি বলতে চাচ্ছো তুমি…….

To be continue…..#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi
#পর্ব_১০

–মানে কি বলতে চাচ্ছো তুমি?

–বাচ্চা দিতে পারবেন ইয়ামিনকে?

–হোয়াট?

–আপু,আমি চাই ইয়ামিন সুখে থাকুক।
আমার মতো মেয়েকে নিয়ে ও কখনো সুখি হবে না।

–কে বলেছে তোমাকে,ইয়ামিন সুখি নয়,আমার মতে তোমাকে পেয়ে ইয়ামিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখি ব্যক্তি।ও তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে সেটা তোমার ধারণারও বাইরে প্রতিভা।

–আমাদের #ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ ক্ষনস্থায়ী ছিল আপু,আর কতদিনই বা বাঁচবো বলুন।আমার আমাকে নিয়ে কোনে আফসোস নেই বিশ্বাস করুন,আমি জানি ইয়ামিন আমাকে অনেক ভালোবাসে,আমি সত্যিই লাকি ওনার মতো একজন মানুষকে স্বামীরূপে পেয়ে,ওনাকে পেয়ে আমার জীবন সুন্দর হলেও ওনার জীবন যে থমকে গেছে আপু।উনি কতটা বাচ্চা প্রেমি দেখেছেন,আর আমি তো ওনাকে বাবা হওয়া থেকে বঞ্চিত করেছি।

–কি যা-তা বলছো প্রতিভা,ইয়ামিনের বাচ্চাকাচ্চার কোনো প্রয়োজন নেই,সে তোমাকে নিয়েই সুখি।

–এ পৃথিবীতে আমি ছাড়া ওনার আপন বলতে কেউ নেই,আমিও আর কয়বছর পর মারা যাব,তারপর ওনার কি হবে ভেবল দেখেছেন।
আমি হীনা কাকে আঁকড়ে থাকবেন তিনি,একটা বাচ্চা হলে তাকে আঁকড়ে অন্তত বাচতো।আমি ইয়ামিনকে খুব ভালোবাসি আপু,ওনার মতো মানুষ আজকালকার যুগে সহজে পাওয়া যায়না,আমি ওনাকে সুখি দেখতে চাই।
উনি সুখী আছে বললেও আমি জানি,ভেতরে ভেতরে বাচ্চার জন্য ঠিকই হাহাকার করেন উনি,যেমনটা আমিও করি কিন্তু আমি যে নিরুপায়।
তাই নিজের বুকে পাথর রেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইয়ামিনকে আমি ২য় বিয়ে দেব,ইসলামে তো ২য় বিয়ের বিধান আছে বলুন,১ম স্ত্রী অনুমতি দিলে সেই বিয়ে ন্যায্য।সেখানে আমি ওনার স্ত্রী হয়ে নিজেই ওনার ২য় বিয়ে দিতে চাচ্ছি,

–প্রতিভা কি আজেবাজে কথা বলছো,এসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো,ইয়ামিন এসব শুনলে কতটা কষ্ট পাবে জানো তুমি

–আপনিওতো কষ্ট পান,ওনাকে না পেয়ে।আপনিকি ওনাকে ভালোবাসেননা বলুন

–ভালোবাসি,কিন্তু…

প্রতিভা লামিয়া নামের মেয়েটির হাত ধরে অনুনয় করে বললো…

–আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি আপু,প্লিজ আমাকে ফেরাবেননা।আপনি ইয়ামিনকে বিয়ে করুন,আমি জানি আপনি ওনাকে সর্বত্তম সুখি রাখবেন,আপু আমার অনুরোধ টা রাখুন,আপনার কাছে ভিক্ষা চাইছি আমি।

লামিয়া প্রতিভাকে জড়িয়ে ধরলো,,

–কাদেনা পাগলি,অনেক সহজসরল তুমি প্রতিভা,এভাবে কেউ নিজের স্বামীর ২য় বিয়ে দিতে চায়,পাগলি মেয়ে

–আপু প্লিজ

–আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে,পরে দেখা যাবে এসব।


কেটে গেলো ৩মাস
এই কয়মাসে লামিয়াকে নিয়ে প্রতিভা যে ইয়ামিনের কাছে কতকত কথা যে বলেছে হিসেব ছাড়া।প্রতিভার উদ্দেশ্য লামিয়ার নানান সুখ্যাতি করে দেয় ইয়ামিনের মনে লামিয়ার জন্য জায়গা তৈরি করা,হলোও তাই,ইয়ামিন এখন লামিয়াকে নিয়ে অনেক সিরিয়াস।মাঝেমধ্যেই লামিয়া প্রতিভাদের বাড়িতে আসে,নিজে হাতে রান্না করে ইয়ামিনকে খাওয়ায়,লামিয়ার রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইয়ামিন।ঘুরতে গেলে,প্রতিটি অনুষ্ঠানে,বাড়ির ছোটছোট আয়োজনে লামিয়া সমানতালে পাশে থাকে।ইয়ামিন এখন যেটাই করুকনা কেন লামিয়ার সঙ্গে সবটা ডিসকাস করে তবেই সেটা করে।
প্রতিভা ভেতরে ভেতরে কষ্ট আর সুখ দুটোই পাচ্ছে,যাক অবশেষে ইয়ামিনের মনে লামিয়ার জন্য জায়গা তৈরি হয়েছে।
এদিকে লামিয়া আর ইয়ামিনের এতো ঘনিষ্ঠতা দেখে বেশ চিন্তিত প্রতিভার মা মিসেসঃ ফাতেমা বেগম।এমন নয় যে ইয়ামিন প্রতিভার প্রতি কেয়ারলেস ল,ইয়ামিন আগের মতোই প্রতিভাকে কেয়ার করে,যত্নআত্তির কোনো ত্রুটি রাখেনি সে।
কিন্তু লামিয়ার সঙ্গে এতো ঘেঁষাঘেঁষি ওনার পছন্দ না,মায়ের মন,কিছুতে আঁচ করতে পারছেনই,মেয়ের সংসার নিয়ে উনি চিন্তিত,কারন সংসারের ছোটখাটো সব বিষয়ই লামিয়ার কথামতে,ওর ইচ্ছেমতো চলে।না জেনে যেকেউ বলবে সংসারটা প্রতিভার নয়,লামিয়ার।মিসেসঃফাতেমা বেগম এই বিষয়ে বহুবার প্রতিভার সাথে কথা বলেছে,কিন্তু প্রতিভা বারবার এড়িয়ে গেছে,কারণ প্রতিভা নিজেইতো এসব করাচ্ছে।

*আজ ইয়ামিনের জন্মদিন
মুক্তা মঞ্চের পাশের বিজেপি ক্যাম্পের সামনে যে সুন্দর মাঠ রয়েছে,সেখানে বসার জন্য সিঁড়ি বানানো রয়েছে ৩-৪টা।সেগুলোর মধ্যেই একটিতে চোখে কালো কাপড় বেধে বসে আছে ইয়ামিন,মূলত প্রতিভাই একাজ করেছে।

–প্রতিভা,তুমি কি করছো বলোতো,সারপ্রাইজ দিতে এতো সময় লাগে,আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো,চোখ জ্বালা করছেতো।

–১মিনিট প্লিজ
আজকে আপনার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ ওয়েট করছে,আজ আমি আপনাকে এমন কিছু দিতে চলেছি আপনি ভাবতেও পারবেননা

–আমার জীবনকে সবটাই পেয়ে গেছি আমি,আর কি পাওয়া বাকি আছে বলো,কি এমন সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছো তুমি।

–এখনই দেব সারপ্রাইজ,আমি চোখের বাধন খুলে দিচ্ছি ওয়েট,আমি না বলা অবধি কিন্তু চোখ খুলবেননা,প্রমিস করুন

–ঠিক আছে,তাড়াতাড়ি করো

–উফফ,তর সইছেনা তাইনা,সবুরে মেওয়া ফলে মশাই

–এটা ঠিক বলেছো,যেমন আমি তোমাকে পেয়েছি (মুচকি হেসে)

প্রতিভা ইয়ামিনের চোখের কালোকাপড় টা খুলে দিলো,প্রতিভার কথামতো ইয়ামিন চোখ বুজেই আছে,হঠাৎ নিজের হাতের ওপর কারো হাতের ছোঁয়া পেলো ইয়ামিন।

–এবার চোখ খুলুন

ইয়ামিন চোখ খুলে দেখে প্রতিভা লামিয়ার হাত ওর হাতের উপর রেখে দাঁড়িয়ে আছে,প্রতিভার মুখে আনন্দের প্রতিচ্ছবি কিন্তু চোখে কেমন হারানোর ব্যথা।
লামিয়ার পড়নে লাল শাড়ি,হাত ভর্তি লাল চুড়ি,হালকা মেকআপ,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া,অসম্ভব সুন্দর লাগছে লামিয়াকে।

–আমি নিজে লামিয়া আপুকে আপনার হাতে তুলে দিলাম ইয়ামিন,আপনি খুশিতো?

–এসবের মানে কি প্রতিভা(নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে)

–আপনিতো লামিয়া আপুকে ভালেবাসেন তাইনা,নিশ্চয়ই তাকে জীবনসঙ্গী রূপে কামনা করেন,তাই আজ আপনার জন্মদিনে আমি আপনাকে উপহার স্বরূপ লামিয়া আপুকে আপনার হাতে তুলে দিলাম।
আমি রেজিস্ট্রার পেপারও নিয়েসেছি,সিগনেচার করে আজকেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবেন আপনারা।
আমি আজ অনেক খুশি আপনাকে সুখি করতে পারব বলে,আমার মৃত্যুর পর লামিয়া আপু ও আপনাদের অনাগত সন্তানদের নিয়ে সুখি থাকবেন,আমিতো আর আপনাকে সন্তানসুখ দিতে পারিনি,তবে লামিয়া আপুতো দিতে পারবে।আমি জানি লামিয়া আপু আর আপনি একে-অপরকে ভালোবাসেন,আপনার সংসড় করবেন আমাকে বাড়িতে থাকতে দিলেই হবে,যদি না চান তাহলে আপনাদের মাঝে কখনো থার্ড পারসন হবোনা,এমনিতেও খুব বেশিদিন বাচবনা আমি,মৃত্যুর আগে আপনাকে সুখি দেখতে চেয়েছিলাম,আশা করি দেখে যেতে পারবো।
আমি জানি ভেতরে ভেতরে একটা বাচ্চার জন্য আপনিও হাহাকার করতেন,এখন আর কোনো বাঁধা নেই,আপনি এখন অবশ্যই বাবা হতে পারবেন,আমি নিজেই আপনাদের বিয়ের পুরোপুরি ব্যবস্থা করেছি।

প্রতিভার চোখ থেকে অঝোরে পানি ঝরছে,সে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে রেজিস্ট্রার পেপার আর কলম ব্যাগ থেকে বের করলো

–এই দেখুন চোখ থেকে কেমন পানি পরছে,এটা কিন্তু মোটেও কষ্টের কান্না নয়,সুখের কান্না,আজ আমি অনেক খুশি
এই নিন,সিগনেচার করুন রেজিস্ট্রার পেপারে

ইয়ামিন এতক্ষণ নিজেকে সংযত রাখলেও আর পারলোনা,সে প্রতিভার হাত থেকে রেজিস্ট্রার পেপার নিয়ে একটানে ছিড়ে ৪টুকরো করে ছুড়ে ফেলে দিলো,তারপর ঠাস করে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো প্রতিভার গালে।

–আমি তোমার থেকে এসব আশা করিনি প্রতিভা,তোমাকে আমি একজন স্ট্রং পারসোনালিটির মেয়ে ভেবেছিলাম আর তুমি এসব কি করছো,ছিছিছি।
আমি কি কখনও বলেছি আমি বাচ্চা চাই,আমি তোমাকে নিয়ে খুশি নই,সুখি নই?আমি কি বলেছি আমি লামিয়াকে ভালোবাসি,ওকে জীবনসঙ্গী করতে চাই??

–ইয়ামিন,আ…

–ব্যাস প্রতিভা,এনাফ ইজ এনাফ
এখন আমি বলবো তুমি শুনবে।হ্যাঁ আমি লামিয়া কে ভালোবাসি,ওর কেয়ার করি,কিন্তু অন্য মাইন্ডে নয়,আমি ওকে নিজের ছোট বোন ও বেস্ট ফ্রেন্ড মনে করি,এর বেশি কিছু না।ও আমার কলিগ,বেস্টফ্রেন্ড তাই অফিসের যেকোনো কাজ নিয়ে ওর সাথে ডিসকাস করি।তুমিওতো লামিয়ার সাথে অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছো,লামিয়া আমার বোনের মতো তাই কোথাও গেলে,কোনো প্রয়োজনে ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই।
আর আমাদের এই সম্পর্ক টাকে কোথায় এনে নামিয়েছো তুমি প্রতিভা,ছিহ্,আমি ভাবতেও পারছিনা আমার অগচরে এতকিছু হয়ে যাচ্ছে।
আর লামিয়া তুমি,তোমার থেকে আমি এমনটা এক্সপেক্ট করিনি,শেষে তুমিও ছিহ্

–ইয়ামিন বিশ্বাস করো,আমি প্রতিভাকে অনেকবার বুঝিয়েছিলাম,কিন্তু ও বারবার আমার কাছে অনুরোধ করে কান্নাকাটি করেছে,শেষঅবধি আমি আর না..

–শেষ অবধি ওকে আর না করতে পারোনি তাইতো,আমাকে জানাতে পারতে এসব কথা।কিন্তু নাহ্,সেসব না করে তুমিও ওর সাথে যোগ দিলে,ওয়াও গ্রেট।
আমাকে কি দুজন খেলার পুতুল পেয়েছো তোমরা,নিজেদের যা মন চাইবে সেটাই করবে।
তোমাকে আমি ভালোবাসি প্রতিভা,এই প্রতিদান দিলে তুমি????

To be continue….

(আর খুব বেশি পর্ব হবেনা,কেমন হচ্ছে জানাবেন,গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি)