ভালোবাসা অবিরাম পর্ব-১+২

0
960

#ভালোবাসা_অবিরাম

পর্ব ০১

কলেজ থেকে মাত্র বাসায় ঠুকলাম। এসেই দেখি বাসা ভর্তি মানুষ সাজানো গুছানো বাড়ির উঠানে পেন্টেল করা। বাড়ির একসাইটে রান্নার বড় আয়োজন। দেখে মনে হচ্ছে এ যেনো বিরাট বিয়ের আয়োজন। কিন্তু আমার প্রশ্ন বিয়ে টা কার আর এইসব কিসের আয়োজন। আর বাড়ির মানুষ কোথায়। আমি আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পাললাম না। দিলাম এক ভৌ দূর এক দৌড়ে আমার ঘরে চলে আসলাম। এসেই মাকে ডাকতে শুরু করলাম বললাম,
মা ও মা কোথায় তুমি মাগো ও মা সারা দেওনা কেন??

মা কোথা থেকে যেনো এলো এসেই বলতে শুরু করো,

কিরে কি সমস‍্যা এত ডাকাডাকি করছিস কেন??

আমি বললাম মা এইসব কিসের আয়োজন শুনি!

মার কোনো ভাবাবেগ নেই। সে শান্তভাবে উত্তর দিলো,

তোর বিয়ে।

আমি বল্লাম,
কিহ।
মা বল্লো,
এতো অবাক হওয়ার কি আছে?

অবাক হবো না মানে কি আমার বিয়ে আর আমি জানি না। দেখো মা আমি মাত্র কলেজে ভর্তি হলাম এর মধ‍্যেই তোমরা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললে তাও আবার আমাকে না জানিয়ে। এইসব কি মা। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো আমি আরো পড়তে চাই। প্লিজ মা আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না।

পারবি না মানে। একশ বার পারবি। দেখ নিলু তুই যদি বেশি বাড়াবাড়ি করছিস তো আমার একদিন কি তোর একদিন।

তুমি যাই বলো আমি বিয়ে করতে পারবো না। একটা উটকো মানুষকে। দরকার পরলে আমি পালিয়ে যাবো। এখনি বাসা থেকে বাহির হয়ে যাবো।

নিলু ঐখানেই দাড়া ঐখান থেকে এক পাও নরবি না। তই বিয়ে না করলে অন্ন স্পর্শ করবো না বলে দিলাম। আমি না খেয়ে মরে যাবো। তোর কাছে যদি আমার গুরুত্ব থাকে তাহলে আমার কথা তুই শুনবি ব‍্যাস। এটাই আমার শেষ কথা…

মা প্লিজ আমার কথাটাতো শুনো মাহ..

এরপর নিলু ধপাস করে মেঝেতে বসে পরলো। কারণ ওকে বিয়েটা করতে হবে। এর পিছনে বড় কারণ হচ্ছে নিলিমা অরুফে নিলুর মা নীলা বেগম। কারণ নিলুর বাবা মারা গেছে ২ বছর। আপন বলতে তার এই মাই আছে। তাই সে তার মাকে হারাতে চাই না। এই কারণেই সে বিয়েতে রাজি হয়ে যাই।

একটু পর নিলুর রুমে নিলুর কাজিনরা ডুকে হাতে সারি গহনা আরো অনেক কিছু। তাদের মধ‍্যে থেকে একজন বলে উঠলো…

একি নিলু এখনো শাওয়ার নিসনি। এইসব কি যা তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিয়ে আয়। কাকিমা বলে দিয়েছে তোকে কিছুক্ষণের মধ‍্যে সাজিয়ে তৈরি করে নিতে। বড় পক্ষ রওনা দিছে যে। যা নিলু এখনি শাওয়ার নিয়ে আয়।

নিলু কিছুক্ষণ ধম মেরে বসে থেকে বলতে লাগলো

যাচ্ছি বুবু।

চলবে।

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ০২
#আইরাত_বিনতে_হিমি

সানাইয়ের শব্দে পুরো বাড়ি মুখরিত। বাড়ির উঠানের একপাশে মেহেমানদের খাওয়ানো হচ্ছে। একপাশে বাচ্চারা খেলাধুলা করছে। কেউ মেহেমান খাওয়ানে ব‍্যস্ত, কেউ আবার নিজের সাজগোজ নিয়ে ব‍্যস্ত, কেউ বা হাসি ঠাট্টা গল্প গুজবে ব‍্যস্ত। ব‍্যস্ত থাকবেই বা না কেন বলুন তো। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। একটু হট্টগোল হাসাহাসি মাতামাতি হবেই। আর বাঙ্গালির বিয়ে মানে তো অনেক কিছু…

বাড়ির এক কোনার ঘরে বসে আছে নিলু। তাকে সাজাতে ব‍্যস্ত ভারা করে আনা পার্লারের লোকজন। তারা তাকে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিচ্ছে। গায়ে মেরুন কালারের কাতান। হাতে লাল রেশমি চুড়ি। গায়ে ভারি গহনা। চুলগুলো গুছিয়ে খোপা করা। সেই খোপায় আবার যত্ন করে গেথে দেওয়া হয়েছে এক গুচ্ছ কাঠগোলাপ। তাকে এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যে কেউ দেখলে চোখ সরাতেই পারবে না….

পাশে থেকে নিলুর কাজিন (সাইফা) বলে উঠলো…

নিলুরে আজজে তোকে কি লাগছে না। আমি তো চোখই ফেরাতে পারছি না। আমি ভাবছি ভাইয়া প্রথম রাতেই বেহুশ হবে😆…
তার এই কথায় আশেপাশের সবাই হু হু করে হেসে উঠলো।

সাইফা নিলুর খুব কাছের এক বোন যাকে সে বন্ধুর মতো ভাবে..

সাইফার কথা শুনে নিলুর খুব রাগ হলো কিন্তু মুখে কিছু বলল না…
সে চুপচাপ ভাবছে আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কার সাথে হচ্ছে কে সে কি করে কোথায় থাকে। আচ্ছা সে কি আমায় আগে দেখছে বা আমি কি বা তাকে চিনি। আচ্ছা উনিই বা কেমন লোক বিয়ে করছেন অথচ বিয়ের আগে পাত্রির সাথে একবার দেখা করবেন না। কথা বলবেন না ভারি আজব তো। এইসব ভাবতে ভাবতেই পাশে থেকে শুনতে পেলো কেউ জোরে জোরে বলছে…

এই বড় চলে আসছে বড় চলে আসছে। তোমরা সবাই কোথায়। তাড়াতাড়ি আসো। এই কথায় নিলুর হুশ আসলো। সে বসা থেকে উঠে দাড়ালো আর তার ঘরের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। কারণ তার জানালা দিয়ে রাস্তার ঐ পাশটা দেখা যায়। সে দেখতে পেলো রাস্তা ভর্তি অনেক মানুষ। তারমধ‍্য থেকে একজন লোককে তার কাজিনরা ঘিরে ধরেছে। সে শুধু এতটুকুই শুনতে পাচ্ছে। দশহাজার না দিলে গেট ছারছি না। এতটুকুতেই নিলুর বোঝা হয়ে গেছে তার কাজিনরা তার হবু বড়কে চেপে ধরেছে টাকার জন‍্য। তবে নিলুর কোনো ভাবাবেগ নেই। সে যেভাবে উঠে জানালার সামনে গিয়েছিল ঠিক সেই ভাবেই খাটে এসে চেয়ারে বসে পরল। তার প্রচুর কান্না পাচ্ছে অসম্ভব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু সে কাদতে পারছে না। তার গলা যেনো কেউ চেপে ধরে রেখেছে। কেন কান্না পাচ্ছে তার কেন?

চলবে।