ভালোবাসা তেতো পর্ব-০৪

0
539

#ভালোবাসা_তেতো
#part_4
#sarika_Islam



আমরা গাড়িতে উঠে রওনা হলাম,,গাড়িতেও বরবাবু ভুলেও একবার তাকায়নি,,আমরা এসে পরলাম,,,সে বলল,,,

_বের হওয়ার আগে ফোন দিও,,

আমি শুধু মাথা নাড়ালাম,,কথা বলতে কেন যেন ইচ্ছে করছে না,,আমি গাড়ি থেকে নেমে চলে আসলাম,,পিছে ফিরেও তাকাইনি,,সে নামলো ও না আমার যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষাও করলো না চলে গেল গাড়ি নিয়ে,,আমি মনটা খারাপ করে ভিতরে ঢুকলাম,,বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে,আমি ভিতরে ঢুকতেই রীমা আসে,,

_আরে ফারু কেমন আছিস?

আমি রীমার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকালাম,,রীমা এতক্ষনে যেই উল্লাস নিয়ে আমাকে বলেছিল সব শেষ হয়ে গেল,,আমি ফিক করে হেসে দিলাম,,আর বললাম,,

_হুম ভালোই আছি,,তুই?ওই ভাইয়া আসেনি?কখনো তো দেখালি না বেশ বেস্টফ্রেন্ড বেস্টফ্রেন্ড করে ঘুরে বেরাতি কিন্তু এতটুকু বললি না,!?
_আসলে কখনো বলার সুযুগ হয়ে উঠেনি,,আয় তোকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই,,,

আমরা ভিতরে গেলাম,,সেখানে ভাইয়ার সাথে দেখা করে মীনাকেও দেখালাম,,মীনা আমাকে দেখে জরিয়ে ধরে বলল,,

_কেমন আছিস?
_ভালো, তোর বাচ্চা কই?
_তোর ভাইয়ের কাছে,,

আমি বাচ্চার সাথে দেখা করে রীমা আর মীনার সাথে এক ঘরে গেলাম,,অনেক দিন পর তিন ফ্রেন্ড একসাথে হয়েছি খুব গল্প করবো।।আমি রীমাকে জিজ্ঞেস করলাম,,

_রীমা তোর ভালোবাসার সংসার কেমন চলছে?
_খুব ভালো রে,,তোর ভাইয়া আমাকে খুব ভালোবাসে,,জান দেয় আমার উপর,,আমাদের ভালোবাসা খুব মধুর,,আমি যা চাই খুব ভালো ভাবে বুঝে,,ওই টার্চ করলেও মনে হয় জান্নাতে আছি,,

মাঝ দিয়ে মীনা বলে উঠে,,

_আমার জামাইও আমাকে খুব ভালোবাসে,,জান দেয় আমার উপর,,আমার প্রত্যেকটা জিনিসের উপর খেয়াল রাখে,, ওই আমাকে ছুলেও মনে হয় যেন কোন এক সুখের সমুদ্রে আছি,,এই সুখ আর কোথায় পাবো,,আর তোর?

আমি আর কি বলবো?

_জানি না আমি,,
_কেন?

আমার আর ভালো লাগছে না ওদের কথা তাই উঠে বাহিরে চলে আসলাম,,

আমার ভালোবাসা তাহলে এমন কেন?তেতো ভালোবাসা,,ওদের টাতো কত মধুর!আমার এমন লাগে না কেন ওদের মতো?আমার জন্য ফিলিংস নাই কেন বরবাবুর?আমাকে ছুলে কেন মনে হয় না এমন?আমাদের সম্পর্ক কেন মধুর না?

আর ভাবতে পারছি না,,রীমা আর মীনা আমার কাছে এসে বলে,,

_কিরে এভাবে উঠে এলি যে?
_এভাবেই ভালো লাগছে না,,
_ওহ,,
_আচ্ছা আমি চলি,,
_সেকি কেক কাটাই তো হলো না,,আয় সন্ধা হয়েও এসেছে সবাই এসেও পরেছে,,এখন কাটা যাক,,
_হুম,,

কেক কাটা হলে আমি বরবাবুকে ফোন করলাম,,বরবাবু বেশ কিছুক্ষনের মধ্যে চলে আসলো,,বরবাবু নিজের অফিস নিয়েই পরে থাকে নিজের কাজটাকেই প্রাধান্য দেয় বেশি,,মাকে খুব ভালোবাসে,,স্ত্রীর অধিকার দেয় শুধু আমাকে,, ভালোবাসার কোন ফিলিংস নাই,,বুঝেও যেন বুঝতে চায়না,,,কেন কেন এমন শুধু আমার সাথেই হয়!?

এসব ভাবছি আর বরবাবু গাড়ি চালাচ্ছে,,আমার সাথে কথাও বলছে না কীভাবে কাটলো দিন তাও জিজ্ঞেস করলো না,,আমি মন খারাপ করে জানালার বাহিরে মুখ দিয়ে তাকিয়ে আছি,,হঠাৎ গাড়ি থামলো,,আমি তাকিয়ে দেখি রেড সিগ্নেল,,তখন একটা পিচ্ছি হাতে অনেক গুলো গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছে,,বরাবরই আমার গোলাপ খুব পছন্দের,,গোলাপ দেখে আমার মুডটা ঠিক হয়ে গেল,,পিচ্চিটা বরবাবুর সাইডের গ্লাসটার ভিতর দিয়ে একটা গোলাপ ফুল দিয়ে কিনতে বলল,,আমার খুব আনন্দ লাগছে,,,বরবাবু বলল,,

_সব গুলো কত?

ওয়াও আমাকে সব কিনে দিবে,,মনে মনে যে আমি কত খুশি যে কেউ আমার মুখের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবে,,পিচ্চিটা বলল,,

_পাচশ টাকা সব গুলা,

বরবাবু টাকা বের করে দিয়ে বলল,,,

_নাও টাকাটা রাখো,আর ফুল গুলোও,,

গ্রিন সিগ্নেল হয়ে গেল,,বরবাবু গাড়ি চালানো শুরু করলো,,কি হলো?টাকা দিয়ে দিল কিন্তু আমাকে একটা ফুল দিল না?একটা ফুল দিলে কি এমন হয়ে যেত?আমি কি একটা ফুল নেওয়ারও যোগ্য না?আমার মুডটা আবার খারাপ হয়ে গেল,,গাড়ি চলছে আপন গতিতে,,আমি মন খারাপ করে জানালার দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছি,,,বরবাবু বলে উঠে,,

_ফারাহ বাতাস ছেরেছে জানালাটা বন্ধ করে দাও,,

আমার কানে বরবাবুর কথা ঢুকছে না,,হঠাৎ খুব জোরে বৃষ্টি নামলো,,বরবাবু আমার উপর দিয়ে আমার সাইডের জানালা বন্ধ করে দিল,,আমার খুব বিরক্ত লাগলো,,গাড়ি চলতে চলতে এক সময় বৃষ্টি আরো জোরে নামলো,আমার বৃষ্টি খুবি ভালোলাগে,,আমি বরবাবুকে বললাম,,

_প্লিজ গাড়িটা থামান এখানে প্লিজ,,
_মাঝ রাস্তায় আমি গাড়ি থামাবো কেন?
_আমার বৃষ্টি বিলাশ করতে খুব ভালোলাগে,সাউডে একটু থামান প্লিজ,,

আমার অনেক জোরাজুরিতে বরবাবু সাইড করে গাড়ি থামালো,,গাড়ি থামানো দেড়ি হলেও আমার নামতে দেড়ি নেই,,ফটাফট গাড়ির দরজা খুলে বাহিরে ভিজতে চলে গেলাম,,দুই হাত মেলে আকাশের দিকে চেয়ে ভিজছি খুব বেশি মজা লাগছে,,

গাড়ির ভিতর থেকে বরবাবু আমাকে ঘোর লাগা চোখে দেখছে,,শাড়ি পুরো লেপ্টে আছে শরিরে,, জরজেট শাড়ি পরায় আমার শরির বেশ ভালোই বুঝা যাচ্ছে,,কি মনে করে বরবাবুও গাড়ি থেকে বের হলো,,আমার সামনে এসে বেশ কিছুক্ষন আমাকে দেখতে লাগলো,,

বাহ বরবাবু আমার তাহলে রোমান্টিক আছে,,বদমেজাজি হলেও কি হবে রোমান্টিক তো,,উফফ,,

এইসব ভেবেই আমার খুব খুশি লাগছে,,বরবাবু অনেকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে আমার কোমর ধরে একদম তার সাথে মিশিয়ে নিল,,বৃষ্টির ফোটা মুখ গরিয়ে পরছে,,ইয়াদের যেন নেশাটা আরো বেরে গেল,,বরবাবু এক মিনিটও দেরি না করে আমার ঠোঁট নিজের আয়েত্তে নিয়ে নিল,,খুব জোরে জোরে কিস করছে,,আমার খুব লাগছে,,কষ্ট লাগছে,,এইটা কেমন রোমান্টিক হলো?ফিলিংস বলতে কিচ্ছু নেই বরবাবুর মধ্যে,,

মুহুর্তেই মিজাজ গরম হয়ে গেল,,তাকে ধাক্কা দিচ্ছি সরানোর জন্য কিন্তু সরাবার নামি নেয় না এমন ভাবে চিপকে আছে আমার সাথে,,অবশেষে না পেরে ধাক্কা দিয়ে খুব জোরে একটা থাপ্পর দিলাম,,বরবাবু কিছুটা দূরে চলে গেল ধাক্কার ফলে,,আমার দিকে তাকালো,,আমার তো রাগে পুরো শরীর জ্বলছে,,হঠাৎ বরবাবু আমার কাছে এসে আমাকে খুব জোরে টেনে হেচরিয়ে গাড়ির ভিতর নিয়ে ফালালো,,আর খুব জোরে ড্রাইভ করতে লাগলো,,আমি জরোসরো হয়ে বসে কান্না করছি,,খুব শীত লাগছে,,আর বরবাবু খুব জোরে ড্রাইভ করছে সামনের দিকে তাকিয়ে,,,আমার কাপাকাপি দেখে বরবাবু তার ব্লেজারটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,,

_এইটা পরে নাও,,শীত কমবে,,

আমি কিছু না বলে সেটা চুপচাপ নিয়ে নিলাম,,এখন অনেক শীত করছে রাগ করে লাভ নেই,,গাড়ি বাড়ির সামনে এসে থামলো,,গাড়ি থেকে নেমে ঘরের ভিতর ঢুকলাম,,অনেক লোকজন দেখা যাচ্ছে সম্ভবত কেউ এসেছে,,আমার দেবর কোথাথেকে এসে আমাকে বলল,,

_ভাবী তুমি দেখি ভিজে গেছ?যাও তারাতারি চেঞ্জ করে আসো,, আমার ফ্রেন্ডরা তোমাকে দেখবে তাই এসেছে,,

আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে গেলাম,,বরবাবু তো আগেই চলে গেছে,,আমি উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আরেকটা শাড়ি পরে নিচে নামলাম,,মনমরা হয়ে বসে আছি,,কিচ্ছু ভালোলাগছে না,,

ইয়াজ তার ফ্রেন্ড দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল,,মেয়ে ফ্রেন্ডও আছে কয়েকটা,,তারা বেশ ভালো খুব ভালোভাবেই আমার সাথে কথা বলছে,,আমরা কার্ডস খেললাম,,লুডু খেললাম আরো কতো কি,,আমার এখন খুব ভালোই লাগছে,,বরবাবু ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে সোফায় বসে পরলো,,টিভি দেখছে,,আমার শ্বাশুরী মা সবার জন্য নুডুলস পপকর্ন আরো কত খাবার আনলো,,আমি হেল্প করতে চাইলে আমাকে বসিয়ে দেয়,,বরবাবুকে পপকর্ন দিয়ে বলল,,

_ইয়াদ যা তুইও ওদের সাথে আড্ডা দে,,
_নাহ মা আমার একদম ভালোলাগছে না,,

আমি খেলছি আর আড়চোখে বরবাবুকে দেখছি,,ভালো সে সবাইকেই বাসে কিন্তু প্রকাশ করার তরিকা আলাদা,,আমিও তাকে ঠিক করে নিব,,এইসব ভেবেই মুচকি হাসলাম,,আমার শ্বাশুরী আমাকে ডাক দিল তার কাছে,,

_ফারাহ মা এদিকে আয়,,

আমিও সেখান থেকে উঠে তাদের সামনে গেলাম,,সোফায় বরবাবু আর মা বসে আছে,,মা আমাকে জিজ্ঞেস করলো,,

_কেমন কাটলো পার্টি?
_ভালোই মা,,
_ফ্রেন্ড দের সাথে কেমন মজা লাগলো?
_ভালোই,,জানেন মা সেখানে ওই রীমার বাচ্চাও এসেছিল,,সে নাকি খুব খুশি আছে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে,,আমার ঘারে এই বদমেজাজিটাকে দিয়ে সে দিব্যি সুখে আছে,,হুহহ,,

আমার কথা শুনে মা হেসে দেয় আমিও হাল্কা হাসি,, বরবাবু দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে,,আমি তারাতারি চোখ নামিয়ে ফেলি চুপ করে যাই,,মা আবার বলে,,

_হুম এখন এই বদমেজাজিটাকে তোরই তাদের বরদের মতো ভালোবাসা শিখাতে হবে মধুর ভালোবাসা,,
_আমি এই বদমেজাজি কে পারবো না বাবা,,

বলেই বরবাবুর দিকে তাকালাম,,সে আমার দিকে সেই আগের মতোই রাগী লুক বিয়ে তাকায়,,আমি চোখ সরিয়ে ফেলি,,বরবাবু আবার টিভির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে,,

রাতে,,

ইয়াজের ফ্রেন্ডরা ডিনার করে চলে গেল,,মা এসে আমাকে বলল,,

_ফারাহ মা খেয়ে নে,,
_নাহ মা আমি খেয়ে এসেছি,,

বলেই আমি উপরে চলে আসলাম,,বরবাবু খাচ্ছে,,রাক্ষস কোথাকার এত্ত যে কিভাবে খায়?ওপস উনি তো খায়ইনি আমিও না ধ্যাত,,এইসব ভাবতে ভাবতে উপরে উঠলাম,,একটা টপস আর প্লাজু পরে পুরো বিছানায় ছড়িয়েছিটিয়ে শুয়ে আছি,,কতক্ষন পর বরবাবু এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমুতে আসলো,,আমাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে বলে,,

_এই সরে ঘুমাও,,

আমি উঠে বললাম,,

_একটু সুন্দর ভাবে কি কথা বলা যায় না?ভালোবেসে কি কথা বলা যায়না?
_ভালোবেসে কথা বলে কি হবে?বেশি ভালোবাসা দিলে মাথায় চড়ে বসবে,, তাই ভালোবাসা না দেওয়াই ভালো,,দেখনি তোমার বান্ধুবী কি করেছে?
_ওহ এই আপনের ধারণা,,

বলেই সাইড হয়ে শুয়ে পরলাম,,বরবাবু মুচকি হেসে শুয়ে পরলো,,তোমাকে তো আমি ভালোবাসা শিখাবোই,,আমার তরিকায় শিখাবো,,বুঝবে ভালোবাসা কাকে বলে হুহহ,,

এইসব ভেবেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম,,

চলবে,,
(ভুল ত্রুটিগুলো হ্মমার দৃষ্টিতে দেখবেন🖤)