ভালোবাসা_কেবল_শুরু পর্ব -০৭

0
1626

ভালোবাসা_কেবল_শুরু
পর্ব -০৭
#লিখা – নীলকন্ঠী
.
নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করার আগে ওরা সবাই জামদানি পল্লীতে ঢুকলো। রাফান রুহিকে আর এক মুহুর্তের জন্য ও একা ছাড়লো না । রুহি কে হাসানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলো। কোন কিছুই আদির চোখে এড়ালো না । এখন নিজেকে কন্ট্রোল করা ছাড়া কিছুই করার নেই। এই মুহুর্তে দুজনের মাঝে তিক্ততা আনার কোন ইচ্ছা ই নেই আদির।

জামদানি পল্লী ঘুরে ঘুরে রুহির একটা সাদা জামদানি তে চোখ আটকে গেলো। ভীষণ স্নিগ্ধ শাড়ি টা। রাফান চোখের ইশারা করতেই দোকান দার সাদা জামদানি টা প্যাকেট করে রুহির হাতে দিলো। রুহির মুখে এত্তোক্ষনে হাসি ফুটলো।

–ভাইয়া তুমি জানো এই শাড়িটা আমার কত্তো পছন্দ হয়েছে।

–হ্যা তাই তো দিলাম কিনে। এবার বল কবে পড়ে দেখাবি?

–পরবো পরবো। তখন দেখবা আমাকে দেখে সবাই অজ্ঞান হয়ে যাবে।

–সেটাই তো কবে পরবি? দেখি তোর অজ্ঞান করার ক্ষমতা কত।

এবার রুহি চোখ বন্ধ করে আওরাতে লাগলো,

“আমার উষ্ণ ছোঁয়া তোমার কাছে তিক্ত হবে যখন,
ভাববো মরেছি আমি, মন মন্দিরে লাশ করেছো দাফন।
তোমার দেয়া সাদা জামদানি জড়িয়ে করবো কাফন, ভাবি সত্যি কি আমি কোনদিন ও হয়নি তোমার আপন! ”

–কি বলছিস এসব! কি মারাত্মক কবিতা বলে ফেললি রুহি। কিন্তু আমি তোকে সাদা জামদানি এজন্য কিনে দিই নি যে এটা নিয়ে বিষাদের সুর তুলবি। আমি কিনে দিয়েছি সাদা তে আসলেই তোকে পরী পরী লাগে।

–হয়েছে হয়েছে, চলো তো ওই দিকে দেখি আম্মুরা কি কিনে!

রাফান ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো। মনের মাঝে শুধু প্রতিধ্বনি হচ্ছে রুহি তুই কি আমাকে কখ‌নো বুঝিবি না , আমি যে তোকে ভীষণ ভালোবাসি।

আদি দুই মায়ের জন্য দুই টা মিষ্টি গোলাপী রংয়ের একই রকম শাড়ি কিনলো। শাড়ি গুলোতে চোখ বুলাতে বুলাতেই একট রেড জামদানির দিকে আদির চোখ আটকে গেলো। এক মুহুর্তের জন্য শুধু রুহির চেহারাই ভেসে উঠলো আদির চোখে। চোখ বন্ধ করতেই আদির মনে হলো এই শাড়ি টা শুধু রুহির জন্যই তৈরি। দোকানি কে এটা ও প্যাক করতে বলল।

ঢাকায় ফিরতে ফিরতে রাত হলো। রুহি দের কে বিদায় দেয়ার সময় আদি খুব চাইছিলো রুহির সাথে কথা বলতে কিন্তু হয়ে উঠেনি। কেমন একটা জড়তা কাজ করছিলো।

আদির আজকাল ঘুম ভালো হচ্ছে না। ঘুমালেই রুহির কান্না ভরা মায়াবী চেহারা টা ভেসে উঠে। তারপর আর ঘুম হয় না। না চাইতেও চিন্তা চেতনার অনেক টা অংশ রুহি দখল করে নিয়েছে। মাঝে মাঝে নিজের উপর ই আদির ভীষণ রাগ হয়। আর রাফান ছেলে টা কে তো একেবারেই সহ্য হয় না। সারাক্ষন রুহির আগে পিছে ঘুরতে থাকে। তাদের বন্ডিং টা ও খুব ভালো।

সেদিন সকালে নাস্তা করার সময় আদির মা বলছিলো ,
–আদি তুই কি খেয়াল করেছিস রুহি কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কথা শুনেই আদি বুকে কেমন ধক করে উঠলো। গলা দিয়ে আর খাবার নামছে না। আদি কখনোই কারো নিজস্বতা কেরে নিতে চায় নি ।রাগ হয়েছিলো কেউ কাউকে ভালো ভাবে জানে ও না অথচ অতিমাত্রায় অধিকার খাটাচ্ছিলো ।

জবাবে আর কিছুই বলল না । চুপ চাপ ক্লাসে চলে এলো।
ক্লাস শেষ করে যাওয়ার সময় ই ভাবলো রুহির কলেজ হয়ে যাওয়া যাক। একবার খোঁজ ও নিতে পারবে ওর স্টাডি কেমন চলছে।

কলেজের ভিতরে ঢুকেই আদি তমাল তলার দিকে তাকাতেই দেখলো রুহি ফ্রেন্ডদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। কাছে যেতেই রুহি দেখে ও না দেখার ভান করে রইলো।

–ক্লাস রেখে কি করছো এখানে? আদির কথা শুনেও না শোনার মতো রইলো। কিন্তু বাকিরা চুপ হয়েই আছে।

–ক্লাস না করলে চলো বাসায় দিয়ে আসি। আদি আবার ও বলে উঠলো।

এবার রুহির এক বান্ধবী বলে উঠলো কি রে তুই চিনিস উনাকে? তোকে ই তো বলছে কথা গুলো।

রুহি একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে বলল, চিনি না। আদি রাগে অপমানে হতবিহব্বল হয়ে পরলো। মুষ্টি বদ্ধ করে রাগ সংবরনের চেষ্টা করলো। তারপর কাছে গিয়ে
রুহির হাতে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিলো।
রুহির বান্ধবীরা অবাক হয়ে ছাড়ার জন্য চেঁচামেচি শুরু করলো।

আদি দাঁতে দাঁত চেপে রুহির দিকে তাকিয়ে বলল চিনতে পারছো না আমাকে তাই না!!

রুহি ঢোক গিলে ওর বান্ধবী দের থামতে বলে বলল, প্লিজ চেঁচাস না তোরা। উনি তোদের ভাইয়া হয়। আমার বর।

রুহির বান্ধবীরা সাত আসমান থেকে পরলো। অবাক হয়ে তাদের চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো।
পুরো রাস্তা আদি কোন কথা বলল না। রুহি রিকশা থেকে বাসার সামনে নামতেই আদি হাত ধরে ফেললো। তারপর বলল স্মৃতি শক্তি তো তোমার শুধু ডাল না হালিম বানিয়ে ফেলেছো। আর যাতে ভুলে না যাও আমাকে সেই ব্যবস্থা করছি শীঘ্রই। বলে আদি আর দাড়ালো না এক মুহুর্ত ও ।রুহি কি বুঝলো আল্লাহ ই জানে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো।

রাতে আদি খাবার টেবিলে বসে ঘোষণা করলো মা সামনের মাসেই রুহিকে বাসায় নিয়ে আসবো। তুমি ব্যবস্থা করো। আদির মা নিজের কান কে বিশ্বাস ই করতে পারছে না। আদি তার মায়ের অবস্থা বুঝে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
— মা রুহি ঠিক মতো পড়ছে না । পরীক্ষায় লাড্ডু পেলে পরে আমার মান সম্মান ই যাবে। তাই এখানে এনে আমার কাছেই পড়াবো।

মায়ের চেহারা দেখে আদি অস্বস্থি নিয়েই টেবিল ছাড়লো।আদির মা মনে মনে খুব খুশি হলো। আর ভাবলো হ্যা রে আদি কিভাবে যে তোর সুমতি হলো!!!

চলবে ….