ভালোবাসি তাই পর্ব-১০

0
1358

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ১০
#Tanisha Sultana

ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। জোরে হাওয়া বইছে। মাঝেমধ্যে ব্রজ পাত হচ্ছে। তানহার রুমের জানালা খোলা থাকায় বৃষ্টির পানিতে রুম ভিজে যাচ্ছে। খাটের মাঝে গুটিশুটি মেরে অভির বুকে ঘুমিয়ে আছে তানহা। তখন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। অভি তানহাকে বুকে আগলিয়ে নিজেও একটা বালিশে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। পাশেই নুডলসের বাটি। অর্ধেক খাওয়া নুডলস। বৃষ্টির শব্দে অভির ঘুম ভেঙে যায়। তানহার কপালের চুল সরিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ায় কপালে। তারপর আস্তে করে তানহকে শুয়িয়ে দেয়। তানহার খাওয়া চামজ দিয়ে নুডলস উঠিয়ে মুখে দেয়। তানহার কপালে কয়েকটা চুমু দিয়ে ভিজিতে ভিজতে নিজের রুমে চলে আসে। আসার সময় জানালা বন্ধ করে দিয়ে আসে। পাতলা একটা কম্বল তানহার গায়ে দিয়ে আসে।

রাত আটটার দিকে তানহার ঘুম ভাঙে। আশেপাশে তাকিয়ে অভিকে খুঁজে দেখে অভি নেই। নুডলসের বাটিটা ওভাবেই পড়ে আছে৷ চুল গুলো হাত খোপা করে মুখ ধুয়ে নেয়। নুডলস ফেলে বাটি ধুয়ে ফেলে। রাতে আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না তাই ওভাবেই শুয়ে পড়ে৷ এতোখন ঘুমিয়ে থাকায়,এখন আর ঘুম আসছে না। দরজা খুলে বাইরে বের হয়। পাশের রুমে বাচ্চারা চিৎকার করছে। লাফালাফি করছে। সামনে তাকিয়ে দেখে কয়েকটা ছেলে টাস খেলছে। তানহা আবার রুমে ফেরত আসে। কিন্তু একা একা ভাল্লাগে না। আবিরের কথা মনে পড়ছে। কান্না আসছে। তাই অভির বাসায় চলে যায়। অভিকে জ্বালাতে।

পা টিপেটিপে অভির রুমের সামনে যায়। ভয় দেখাবে অভিকে এটাই উদ্দেশ্য। দরজা খোলা। তানহা ভেতরে ঢুকে যায়। বাসা খুব বড়। তিনটা রুম। মাঝখানে বসার জন্য সোফা আর টিভি আছে। এটা নিশ্চয় ওদের বসার রুমে। সামনে কিচেন। এবার তানহা ভাবছে কোনটা অভির রুম হতে পারে। অনেক ভেবে বা পাশের রুমে ঢুকে যায়। রুমে কেউ নেই। গিটার সেতার আর জামাকাপড় বলে দিচ্ছে এটা অভির রুম। তানহা ঘুরে ঘুরে পুরো রুম দেখছে। বেশ গোছালো রুম টা। ছেলেদের রুম এতো গোছালো হয়? আলমারির ওপরে একটা নীল ডাইরি আর কিছু একটার বোতল দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত বেয়ারের। তানহা চেয়ার টেনে বোতলটা নেয়৷ তারপর অভির বেডের নিচে লুকিয়ে রাখে। অভিকে জ্বালিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে।

বেলকনিতে গিটারের টুংটাং আওয়াজ শুনে তানহা ওদিকে যায়।

দুরে কোথাও আছি বসে
হাত দুটো দাও বাড়িয়ে
বিরহ ছুঁতে চায় মনেরই দোয়ার

তুমি এলে রং ধনু রং খুঁজে দেয়
তুমি এলে মেঘরাও বৃষ্টি নামায়
এমনের আহ্লাদ আসো না ছুটে

তানহা অভির ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে গানটা শুনছিলো। এতো কিউট কারো ভয়েস হয়? সেউ জন্যই বোধহয় অভি সিঙ্গার।

গিটারটা পাশে নামিয়ে তানহার হাত ধরে টান দিয়ে তানহাকে কোলে বসায় অভি। তানহা ভেবাচেকা খেয়ে যায় সাথে চমকেও ওঠে।

“আপনি বুঝলেন কি করে? ঘনোঘনো পলক ফেলে বলে তানহা।

অভি তানহার মুখে ফু দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে
” তোমার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পায় আমি

তানহা কপালে দুটো ভাজ ফেলে তাকায়
“নিশ্বাসের আবার শব্দ হয়।

” অবিয়েসলি
তানহাকে অভির মুখোমুখি বসিয়ে বলে অভি। তানহা আরও ভেবাচেকা খেয়ে যায়।

“ছাড়ুন
অভির হাত সরাতে ব্যস্ত হয়ে বলে।
” যদি না ছাড়ি
আরও শক্ত করে ধরে বলে অভি।

“প্লিজ🥺

অভি তানহাকে ছেড়ে দেয়। তানহা দ্রুত উঠে পড়ে। এখনো বুক টিপটিপ করছে। এই ছেলেটা হুটহাট এ্যাটাক করে ফেলে।
” রুম থেকে মোড়া এনে বসো

তানহা রুম থেকে মোড়া আনার সময় ওই বোতলটার দিকে চোখ পড়ে। ওড়নার পেছনে লুকিয়ে নিয়ে যায়। অভির পাশে বসে।
অভি এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

“আবিরকে একটু বেশিই ভালোবাসতা?

” ভালোবাসতাম না। এখনো বাসি। যতদিন বাঁচবো আবির আমার এখানে (বুকের বা পাশে হাত দিয়ে) থাকবে।

অভি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
আপনার আজ কি হয়েছে বলেন তো? এখনো ননসেন্স স্টুপিট ইডিয়েট বললেন না। নিশ্চয় ভুলে গেছিলেন? আমি মনে করিয়ে দিলাম কতো ভালো আমি
এক গাল হেসে বলে তানহা।

“মানে ধমক না খেলে তোমার ভালো লাগে না তাই না?
হালকা বিরক্ত হয়ে বলে অভি।

” কারেক্ট। আপনার থেকে বকা না খেলে আমার ভালোই লাগে না। আপনার বকার মধ্যে আমি প্রেম প্রেম গন্ধ পায়। আমি জানি আপনি আমার ওপর খুব বিরক্ত। কিন্তু কিচ্ছু করার নাই। বিরক্ত হলেও আমি আপনার পিছু ছাড়বো না।
অভিকে চোখ টিপ দিয়ে বলে তানহা।

“তা ছাড়বে কেনো? এখন আবার বলো না অভি আমি তেমাকে বিয়ে করবো। তাহলে আমার গলায় দড়ি দিতে হবে।

” বিয়ে করতেও পারি।

“যাও তো

” আমার খালি আপনার কাছাকাছি থাকতে ইচ্ছে করে। বিশ্বাস করুন

অভি তানহার দিকে ঘুরে বলে
“রিয়েলি
তানহা অভির কথা ঠিক বুঝতে না পেরেই বলে
” হুমম
অভি বাঁকা হেসে তানহার মোড়া ধরে টান দিয়ে তানহাকে কাছে নিয়ে আসে।
“আরও কাছে আসতে চাও না কি?

তানহা একটা ঢোক গিলে দ্রুত মাথা নারায়। হাতে থাকা বোতলটা পড়ে যায়। অভির নিশ্বাস তানহার মুখে পড়ছে। অভি চোখ ভরে তানহাকে দেখছে। তানহা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।

” কাছাকাছি এটাকে বলে। তুমি চাইলে আমি সব সময় এরকম থাকতে পারবো। আমার কোনো পবলেম নেই
ফিসফিস করে বলে অভি।
অভির এরকম কথায় হাত হার্ট লাফাতে থাকে।
তানহা কানে হাত দিয়ে বলে
“আর কখনো বলবো না। সরি আমি দুরে দুরে থাকবো

” শিওর

“পাক্কা প্রমিজ

অভি মোরাটা আবার জায়গায় রাখে। তানহা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে
” মরছি মরছি আপনার কতো শক্তি? পাক্কা তেতাল্লিশ কেজি প্লাস পাঁচশ গ্রাম দুই হাতে উঁচু করে ফেললেন। আল্লাহ

অভি কিছু বলে না।
“আমি কিন্তু ক্রাশ খাইছি

অভি ভ্রু কুচকে তাকায়
” কিহহহ

“আপনার শক্তির ওপর ক্রাশ খাইছি
ঠোঁট উল্টে বলে তানহা।

” পেট ভরছে?

“কিহহহ

” ক্রাশ খেয়ে পেট ভরছে না কি তোমাকে এখান থেকে তুলে নিচে ফেলে দিয়ে তোমার পেট ভরাবো

তানহা দুই হাত পিছিয়ে যায়। ফ্লোর থেকে মদের বোতল তুলে ঢক ঢক করে গুলে। আসলে গলা শুকিয়ে গেছে তাই। প্রায় অর্ধেক বোতল শেষ করে ফেলে। অভি মাথায় হাত দেয়। এবার না জানি এই মেয়ে কি করবে?

তানহা বাকি মদটা ফেলে দিয়ে মাথা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ঝিমঝিম করছে মাথাটা। অভি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে৷৷ কিছুখন নিরবতা পালন করে তানহা দাঁত কেলিয়ে বলে

“চলো না বেবি আমরা প্রেম করি

অভি মুখটা ফ্যাকাশে করে একটা শুকনো ঢোক গিলে তানহাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়। তানহা শার্ট টেনে ধরে

” আমার বাবুটা আমাকে ফেলে কোথায় পালাচ্ছে
অভির মুখে গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে।

“প্লিজ বোইন আমাকে ছেড়ে দে। আমি নিষ্পাপ একটা বাচ্চা।

চলবে।