ভালোবাসি তাই পর্ব-০৯

0
984

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৯
#Tanisha Sultana

“আমি কিন্তু চিৎকার করবো
ভয় জড়ানো কন্ঠে বলে তানহা। অভি উওরে কিছু বলে না। অভি তানহার মুখের সামনে লেপ্টে থাকা ছোট চুল গুলো স্বযত্নে কানের পিঠে গুঁজে দেয়। মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে তানহার।
” এভাবে কোনো ছেলের সামনে আসতে হয় না
ফিসফিস করে অদ্ভুত কন্ঠে বলে অভি। তানহা চমকে তাকায় অভির দিকে।

“আমি তো আসি নি আপনি এসেছেন
সোজাসাপ্টা উওর দেয় তানহা।
” অভি তানহার ঠোঁট হাত দেয়
“ইসসস কোনো কথা না।
নেশাতুল কন্ঠে বলে অভি।
তানহা চুপ করে যায়।

অভি তানহার তোয়ালেটা আর একটু উপরে টেনে দিয়ে দুরে সরে যায়। মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তানহা ফট করে বিছানা থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে চেন্জ করে নেয়। বেরিয়ে এসে অভিকে ইচ্ছে মতো ধোলাই দেবে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো অভি রুমের কোথাও নেই। তানহা কপালে দুটো ভাজ ফেলে ভাবে কোথায় গেলো করলাটা? জানালার কাছে এসে দেখে অভি সামনের বেলকনিতে (যে রুমের কথা আশিক বলেছিলো ওই রুমের বেলকনিতে) দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে আর কফি খাচ্ছে। দুই তালার ওপরে। অভিদের বিল্ডিংটা মোট পাঁচ তালা। তানহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। অভি তানহার দিকে তাকাতেই তানহা ঠাস করে জানালা বন্ধ করে রুমে ফেরত আসে।

তানহার রুমের আশেপাশে আরো তিন চারটা রুম আছে। সেখানে তিনটা পরিবার থাকে। রুমের সামনে একটা বড় দড়ি টাঙানো জামাকাপড় মেলে দেওয়ার জন্য। জামাকাপড় মেলে চুলটা মুছে হাড়ি পাতিল মেজে নেয়। খুব নোংরা না আবার খুব পরিষ্কারও না। এবার খাবে কি? বাজার করতে হবে। তারপর রান্না করে খেতে হবে। ওড়নাটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে বাজারের উদ্দেশ্য। আসার সময় দেখে এসেছিলো সামনে একটা বাজার আছে। সেখানেই যাবে।

বাসা থেকে কয়েক পা এগোনোর পরেই তানহা দেখতে পায় অভি বাইলে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে। একদম হিরো হিরো লুক। চোখে সানগ্লাস, পিংক কালার শার্ট তারওপর কালো জ্যাকেট, হাতে ঘড়ি, কালো জিন্স, ক্রিম কালার ফোনের ব্যাক কভার।
“ইহহহহহহহ ভাব দেখে বাঁচি না। এমন একটা হাভ ভাব দেখাচ্ছে মনে হয় কোথাকার কোন রাজপুত্র। আসলে যে একটা হনুমান
মনে মনে বলে তানহা। তারপর ভালো করে মাথায় ঘোমটা টেনে নেয়। যাতে চিনতে না পারে। দেখলেই তো বললে হেই ইডিয়েট কোথায় যাচ্ছো? তোমার মতো ননসেন্স আমি দুটো দেখি নেই। লেজ ছাড়া বাঁদর একটা

” হেই ইডিয়েট কোথায় যাচ্ছো?
অভির এরকম ডাকে তানহা দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

“এক্সকিউজ ভাইয়া
এখানকার বাজারটা কোন দিকে একটু বলে দেবেন? আসলে আমি না এই শহরে নতুন। আপনাকে দেখে ভদ্রলোক মনে হচ্ছে তাই জানতে চাইলাম আর কি?

অভি ফোনটা পকেটে রেখে সানগ্লাস খুলে কপালে দুটো ভাজ ফেলে বলে

” সিরিয়াসলি তুমি চেনো না আমাকে?

“আপনি কোনো সুপারস্টার, সুপারম্যান, ভিলেন, টিকটকার, মূখ্য মন্ত্রী, এমপি, না কি এর থেকেও বিশেষ কিছু? আসলে আমি এনাদের চিনি কিন্তু আপনাকে তো কখনো দেখি নি। নিশ্চয় নতুন নতুন টিকটক করছে? কোনো ব্যাপার না আপনার টিকটক আইডির নাম বলেন আমি খুঁজে বের করে চিনে নেবো।

” জাস্ট সাট আপ
দুই কানে হাত দিয়ে জোরে চিৎকার করে বলে অভি।
“একি ধমক দেন কেন?
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে তানহা। অভি দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” কম কথা বলতে পারো না? সারাক্ষণ বক বক করতেই থাকো

“এমা আপনি জানলেন কি করে আমি বেশি কথা বলি? আপনি আমাকে ফলো করেন? কে আপনি? আমাকে ফলো কেনো করেন? নিশ্চয় আমার ওপর ক্রাশ খেয়েছেন? ভালো লেগে গেছে আমাকে? এঝন নিশ্চয় প্রপোজ করবেন? আমার আবার প্রপোজ পেতে বেশ লাগে
খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে তানহা। অভি প্রচন্ড রেগে তানহাকে বাইকের সাথে চেপে ধরে। তানহা একটা ঢোক গিলে।

” আর একটা কথা বললে আমি যে কি করবো

“তা আপনি নিজেই জানেন না রাইট
হেসে বলে তানহা।
” জাস্ট ইম্পসিবল
বলেই অভি ছেড়ে দেয়। তানহা বুকে থু থু নিয়ে এক দৌড় মারে।

“এই মেয়েটা জীবনে মানুষ হবে না। যার কপালে এ আছে তার জীবনটা শেষ।
একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে অভি।

তানহা পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি আলু, এক কেজি পেঁয়াজ, বড় এক প্যাকেট নুডলস, পাঁচটা ডিম, মরিচ আর সব মশলা কিনে একটা রিকশা ভাড়া করে বাড়িতে আসে। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। পুরো পাঁচশো টাকার বাজার করেছে। রিকসা ওয়ালার সাহায্যে সব কিছু রুমে আনে। একশ টাকা ভাড়া নেয়। দরজাটা বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয় তানহা। এবার রান্না করতে হবে। এক প্যাকেট নুডলস বানিয়েছি খাটে বসে আরাশসে খাচ্ছে তানহা। অভি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তানহাকে দেখছে। খাওয়া শেষ হতে না হতেই ফোন বেজে ওঠে তানহার। নাম্বার চেক না করেই ফোন রিসিভ করে মুখ ভর্তি নুডলস নিয়েই হ্যালো বলে।

ওপারে মানুষটা তানহার ভয়েস শুনে খুশি হয়।

” হেলো কে বলছেন?

“আমি
ভাঙা গলায় বলে আবির। তানহা থমকে যায়। নিশ্বাস ভারি হয়ে আসে।
” ফোনটা কেটো না প্লিজ। একটু কথা বলতে চায় তোমার সাথে। কতোদিন কথা বলি না। প্লিজ তানহা
অনুরোধের সুরে বলে আবির। তানহা ফোন কাটতো গিয়েও কাটে না। নুডলসের বাটিটা নামিয়ে বলে
“কি বলবে বলো?

” তানহা আমরা কি ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে পারি না? রিলেশনশিপের মানেই তো শুধু বিয়ে না। তোমার সাথে কথা বললে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। এতোদিনের অভ্যাস তো বদলাতে একটু সময় লাগবে
তানহা উওরে কিছু বলে না। মন দিয়ে আবিরের কথা শুনছে। এই মানুষটার প্রতি তানহা ভীষণ ভাবে আসক্ত।

“তানহা জানো আমি সিগারেট খায়। কাল ডিংক ও করেছি। আজ ইন্টারভিউ ছিলো সেখানেও যায় নি। আমি আর স্বপ্ন দেখতে পারি না। হাসতে পারি না। রুম থেকে বেরোতে পারি না৷ কারো সাথে কথা বলতে পারি না। আমি তো এমন ছিলাম না বলো

” আবির পরিস্থিতি সবটা পাল্টে দিয়েছে। এটা আমাদের মানতে হবে। থেমে থেমে বলে তানহা। গলা ধরে আসছে। প্রিয় মানুষের কষ্ট কেউ সয্য করতে পারে না।

“আমি কি আর

আর কিছু বলার আগেই আবিরের ফোনটা মায়া নিয়ে যায়।

” তুমি কেনো আমার স্বামীর পিছু ছাড়ছো না। বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের। কেনো পড়ে আছো? আমাদের সুখে থাকতে দেবে না তুমি?
মায়া রাগে ফুসতে ফুসতে এক নাগারে কথা গুলো বলে। মায়ার কথা শুনে টপটপ করে তানহার চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
আবির মায়ার থেকে ফোনটা নিয়ে ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় মারে মায়াকে। ছিটকে ফ্লোরে পড়ে যায় মায়া।
তানহা এখনো ফোনটা কানে ধরে আছে।

“তোর সাহস হয় কি করে আমার তানহাকে এসব বলার? নেক্সট টাইম আমার সামনে আসবি না। আউট
চেচিয়ে বলে আবির। মায়া ফ্লোরে বসে কাঁদছে। আবির মায়ার হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

তানহা ফোন থেকে সিম খুলে ফেলে। চিৎকার করে কাঁদে। দম বন্ধ হয়ে আসছে কান্নার জন্য।

অভি তানহার রুমের এক্সর্টা চাবি দিয়ে রুমে ঢুকে। তানহাকে কাঁদতে দেখেই এসেছে। তানহার পাশে বসে। তানহা কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে। অভির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। একহাত তানহার পিঠে আর আরেক হাত মাথায় রাখে। কাঁদতে কাঁদতে অভির শার্ট ভিজিয়ে ফেলে। অভি চোখ বন্ধ করে তানহার নিশ্বাস শুনছে। বুকের মধ্যে আলাদা শান্তি অনুভব করছে।

পাক্কা আধঘন্টা কান্না করার পর তানহা বুঝতে পারে কাউকে জড়িয়ে ধরেছে। সরে আসতে নিলে অভি শক্ত করে ধরে

” নরাচরা না করে মুহুর্তটাকে অনুভব করো।
শিতল কন্ঠে বলে অভি। তানহা নাক টেনে চোখ বন্ধ করে। অভির বুকের ধুববুকানি শুনতে থাকে।

চলবে।