ভালোবাসি তাই ২ পর্ব-০৬

0
461

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ৬
#তানিশা সুলতানা

“এতোটা চমকে গেলে কেনো?
অবাক হয়ে বলে আবির
” তুমি চেয়েছিলে আমার বাগান থেকে ফুল চুরি করতে আর আমি তোমাকে বাগানের মালিক করতে চলে এলাম।
এক গাল হেসে বলে আবির।
তানহা চোখ ফিরিয়ে নেয়। কাচুমাচু হয়ে বসে পড়ে খাটের এক পাশে। চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।
“এনি পবলেম তানহা?
তানহার পাশে খানিকটা জায়গা ফাক রেখে বলে আবির।
তানহা আবিরের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে মাথা নারায়।
” আমাকে বিয়ে করবে তুমি? পছন্দ আমাকে?
আবির প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। বুকের ভেতর ঢক করে ওঠে তানহার। মিথ্যে কথা বলতে পারে না তানহা। এখন কি করে মুখের ওপর বলে দেবে ওনাকে পছন্দ না ওর। তানহার মন জুড়ে অন্য কেউ বিরাজ করে।
“কি হলো? বলো? পছন্দ আমাকে? বিয়ে করবে? রানীর মতো করে রাখবো তোমায়। অনেক ভালোবাসবো।
আবিরের কথায় চোখ বন্ধ করে নেয় তানহা। “ভালোবাসবো” কথাটা বুকে গিয়ে বিঁধে।
“আমি এখনি বিয়ে করতে চায় না। আমার একটু সময় প্রয়োজন।
চোখ বন্ধ করে রিনরিনিয়ে বলে তানহা।
” কেনো?
আবির কপালে ভাজ ফেলে প্রশ্ন করে আবির।
“এখনো আঠারো হয় নি আমার। এখন আমার পড়ালেখা করার বয়স। অনেক বড় স্বপ্ন আছে আমার। বিয়ে করে নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে পারবো না।
বলে তানহা।
আবির দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“বিয়ের পরও পড়ালেখা করা যায়। তোমার স্বপ্ন পূরণে আমি সাথে থাকবো তোমার। সবটা দিয়ে সাহায্য করবো তোমায়। ট্রাস্ট মি
তানহার কাঁধে হাত রেখে বলে আবির।
হাল ছেড়ে দেয় তানহা। এই ছেলে বুঝবে না। উওরের কিছু বলে না তানহা।
” শুধু কি পড়ালেখা না কি অন্য কোনো কারণ আছে?
আবির ভ্রু কুচকে বলে।
তানহা মলিন মুখে তাকায় আবিরের দিকে।
“মিথ্যে বলবো না। আমি একজনকে ভালোবাসি। একতরফা ভালোবাসা। তাকে ভুলতে আমার একটু সময় লাগবে।
ভনিতা না করে সরাসরি বলে দেয় তানহা। আবির হাসে।
” ভেরি গুড
এভাবে সত্যি কথা বলার সাহস সবার থাকে না। প্রতি মুহূর্তে প্রুফ করে দাও তুমি খাটি সোনা। আমি সোনা চিনতে ভুল করি নি।
যাই হোক নো পবলেম। এক তরফা ভালোবাসা কখনোই সুন্দর হয় না। এখানে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। আমি সব ভুলিয়ে দেবো তোমায়। সব অন্ধকার মুছে দেবো তোমার জীবন থেকে।
বিয়েটা যে ভাংবে না তানহা বুঝে গেছে।
তাই আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ থাকে।

সামনে সপ্তাহে বিয়ের ডেট ঠিক করা হবে। তানহাকে একটু সময় দেওয়ার চেষ্টা করছে আবির।

আবির আর ওর পরিবার চলে গেছে সন্ধার দিকে। সেই থেকে তানহা রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। চোখ থেকে টপটপ করে পারি পড়ছে।
” অভি ছাড়া অন্য কাউকে তানহা ওর জীবনে কল্পনাও করতে পারে না”
কি এমন হতো যদি তানহা অভিকে পেয়ে যেতো। কতো ভালো থাকতো তানহা।
আয়নায় নিজের প্রতি ছবি দেখে তাহা চোখ ফিরিয়ে নেয়। কেনো অভির মনের মতো হতে পারলো না? কেনো অভি ভালোবাসে না ওকে?

সকাল সকাল স্মৃতি হালিজা আর রাফিদ চলে এসেছে। তানহার মা ওদের দেখে খানিকটা অবাক হয়।
ওরা এসেই তানহা কোথায় জানতে চায়।
তানহা এখনো দরজা খোলে নি। অবশ্য ওকে কেউ ডাকেও নি।
“মামিমা আজ রাব্বির বার্থডে খুব বড় সারপ্রাইজ দেবো ওকে। তাই তানহাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
ফলে কাটছিলো তানহার মা। হাত থেমে যায়। বিষ্ময়কর চোখে তাকায় ওদের দিকে।
” একদম না শুনবো না। তাহা আমাদের সাথে যাচ্ছে ব্যাস।
রাফিদ মামিমার কাঁধে হাত রেখে বলে।
না বলার স্পর্ধা নেই ওনার। ছেলেমেয়ে গুলো তানহাকে খুব ভালোবাসে। কিছু একটা হলেই তানহাকে নিতে আসে। এখন কি করে ওদের না করবে?

তিনজন গিয়ে দেখে তাহার রুমে দরজা ভেরানো। ওদের গলা শুনেই তানহা দরজা খুলে দিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে বই নিয়ে বসে আছে।
“কি রে লেজ ছাড়া বাঁদর কেমন আছিস?
রাফিদ তানহার মাথায় গাট্টা মেরে বলে।
” ভালো
শুকনো হেসে বলে তানহা।
“তোকে নিতে এসেছি। মামিমা পারমিশন দিয়ে দিয়েছে।
খুশিতে গদগদ হয়ে বলে হালিজা।
তানহা যাবো না বলতে গিয়েও বলে না। এতোদিন পরে অভিকে এক পলক দেখার লোকটা সামলাতে পারে না। মনে মনে ভেবে নেয় অভির সামনে যাবে না। জাস্ট দুর থেকে দেখবে অভিকে। চোখটা বড় তৃষ্ণাত্ব হয়ে আছে অভিকে দেখার জন্য।

ব্রেকফাস্ট সেরেই বেড়িয়ে পরে ওরা। তানহারা গ্রামে থাকে। আর অভিরা শহরে থাকে। খুব বেশি দুরে নয় ওদের বাসা।
আধঘন্টা লাগে।
অভিদের বাসায় আশার পরে তানহা স্মৃতির রুমে গিয়ে বসে থাকে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অভির রুমের বেলকনির দিকে তাকিয়ে থাকে। অপেক্ষা এক পলক দেখার।
এই বাড়িতে আসার পর থেকে কারো সাথে কথা বলে নি। কেউ জানে না তানহার বিয়ের কথা।

” তানহা কোথায় তুমি?
রুমে এসে অভির মা মনিকা বেগম ডাকে তানহাকে।
“আমি এখানে।
বেলকনি থেকেই বলে তানহা।
উনি বেলকনিতে আসে। তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
” মন খারাপ
তানহা ওনার দিকে তাকিয়ে হাসে।
“নাহহ এমনিতেই ভালো লাগছিলো না।
” অভির কি হয়েছে বলতে পারবে? না মানে তুমি তো সাহসী। অভির সাথে কথা বলার সাহস পাও। তো একটু জিজ্ঞেস করবে ওর কি হয়েছে?
আনিকা বেগমের কথায় ভ্রু কুচকে ফেলে তানহা। ওনার আবার কি হলো?
তাকিয়ে থাকে ওনার মুখের দিকে।
“আমার ছেলেটা কেমন যেনো হয়ে গেছে। ঠিক মতো খায় না। সারাদিন রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে।
অসহায়ের মতো মুখ করে বলেন তিনি।
” আন্টি খিধে পেয়েছে খাবো।
তানহা কথা ঘোরানোর জন্য বলে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উনি।
“চলো খাবার দিচ্ছি
বলে তিনি আগে আগে যায়।

অভির রুম থেকে অনবরত ভাংচুর আর চিৎকারের শব্দ আসছে। তানহা স্মৃতি হালিজা রাফিদ মায়া খেতে বসেছিলো। এরকম চিৎকারে সবাই ভরকে যায়। উঠে দাঁড়ায়।
” ভাইয়ার আবার কি হলো?
চল তো
সবাই চলে যায় অভির রুমের দিকে। তানহা বসে থাকে। মন চাইছে ছুটে যেতে। দেখতে কি হলো মানুষটার। কিন্তু বিবেক বলছে যাবি না। উনি তোকে দেখলেই চিৎকার করবে। অপমান করবে।

অনবরত অভির রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে সবাই। কিন্তু অভি দরজা খুলছে না। শুধু চিৎকার ভেসে আসছে। কিন্তু অভি এমন চিৎকার কেনো করছে? ভয়ে সবার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুখন পরে দরজা খুলে যায়। সবাই হুরমুর করে রুমে ঢোকে।
“অঅঅঅঅঅঅঅঅভি

আনিকা বেগমের চিৎকারে তাহা আর বসে থাকতে পারে না। অভির কিছু হলো না তো? ঠিক আছে তো অভি?
হাত পা কাঁপছে তানহার। হাঁটার শক্তি পাচ্ছে না। শরীর অবশ হয়ে আসছে। অনেক কষ্টে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে তানহা। অভির দরজার সামনে এসে অভির রক্ত মাখা হাত দেখে ধপ করে পড়ে যায় তানহা। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসে। চোখ দুটো বন্ধ করার আগে শুধু অভির রক্ত মাখা হাতটা দেখতে পায়। আর কানে আগে আনিকা বেগমের আর্তনাদ করা কান্না।

চলবে