ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-১২

0
486

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব১২
#Raiha_Zubair_Ripte

চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে রুদ্র। তার সামনেই রাগী দৃষ্টি নিয়ে বসে আছে শামসুল আলম। পাবেল হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে। রুদ্র সেদিকে একবার তাকিয়ে ফের শামসুল আলমের দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলে,,

” আপনার ছেলের কলিজা টা বোধহয় বড় হয়ে গেছে তাই না আলম সাহেব। কলিজা টা টে’নে কু’ত্তা কে খাওয়াবো ফের যদি আপনার ছেলে বাড়াবাড়ি করিয়েছে তো। ঘরে কিন্তু আপনার ও মেয়ে আছে ভুলে গেছেন?

শামসুল আলম চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। রাগে শরীর কাঁপছে তার।

” তোমার তো সাহস কম নয় আমার সামনে আমার ছেলের কলিজা টেনে কু’ত্তা কে খাওয়াতে চাও আবার হুমকি ও দিচ্ছ আমার বাসায় এসে আমার মেয়ে কে নিয়ে!

” উহু হুমকি দেইনি আলম সাহেব। জাস্ট বলে রাখলাম। আপনার ছেলেকে সামলান আমার সুহা রাণীর দিকে যদি হাত বাড়ায় তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

” মানে!

” মানে সিম্পল আপনার সেই অপকর্ম ছেলে দেশে ফিরেছে আমার সাথে লড়বে বলে। তাকে বলে দিয়েন গতবার প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছি বলে যে এবার ও দিব সেই আশা যেনো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে।

” মাহতাব দেশে ফিরেছে?

” কেনো জানেন না বোধহয়?

” না আমি তো জানি না। ও তো কিছু বলে নি।

” এখন যখন জেনেছেন তাহলে আশা করি ছেলেকে সামলাবেন। শত্রুতা ঘরের বাহিরে ভেতরে নয়। আপনারা যদি আমার পরিবার কে টানেন তাহলে আমার ও খুব বেশি সময় লাগবে না আপনার পরিবার কে টানতে।

” তাহলে তোমার চাচাকে বলো রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে। এতো দিন যেমন ব্যাবসা করছিল সেটাতে মনযোগ দিতে বলো।

” এমন আশা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন আলম সাহেব। এমনটা কস্মিনকালেও হবার নয়। আপনার ছলচাতুরীর দিন শেষ। অসহায় লোকদের পেনশন, ভাতার টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন। নিজ এলাকা বাদে অন্য কোনো এলাকার রাস্তা ঘাট স্কুল গুলো একটার ও নিরাময় করে দেন নি অথচ নির্বাচনের আগে তাদের আশা দেখিয়েছিলেন। এনি ওয়ে আপনি আমার ছেলেদের মে’রেছেন কেনো?

শামসুল আলম অবাক হয়।

” কই আমি তো মা’রাই নি।

” মিথ্যা বলছেন।

” সত্যি আমি মা’রাই নি। আমি কেনো অযথা নির্বাচনের আগে এমন কাজ করে আমার রেপুটেশন খারাপ করতে যাব!

” তাহলে কে মা’রল?

” গিয়ে তোর ছেলেদের জিজ্ঞেস কর আমার বাসায় এসে জিজ্ঞেস না করে।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই রুদ্র পেছন ঘুরে দেখে মাহতাব আসছে।

রুদ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সন্দেহান চোখে তাকিয়ে বলে,,

” তুই করিস নি তো?

মাহতাব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সোফায় বসে বলে,,

” প্রামাণ আছে কি?

রুদ্রর আর বুঝতে বাকি নেই কাজ টা কার। পাবেলের দিকে কিছু একটা ইশারা করে বেড়িয়ে যায় বাসা থেকে।

শামসুল আলম ছেলের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,,

” ফাটিয়ে দিয়েছিস তো বাপ। তুই এসে গেছিস আমার আর চিন্তা নেই। পেছন থেকে কলকাঠি তুই নাড়াবি আর আমি সামনে থেকে রাজনীতির সাদা পোষাক পড়ে রাজনীতি করবো।

” আগে আগে দেখো হোতা হ্যাঁ কেয়া। রুদ্রর জীবন টা তচনচ করে ফেলবো। তিন বছর আগের সেই ঘটনা আজ ও আমায় ঘুমাতে দেয় না। সেই প্রতিশোধ এবার ওর প্রিয় মানুষদের দিয়ে নিবো।

————–

হ্যাঁ রে সুহাসিনী নীলা তো এখনো বাসায় ফিরলো না। ফোন টাও তো নিয়ে যায় নি। চিন্তা হচ্ছে খুব।

সুহাসিনী সোফায় বসে টিভি দেখছিল হঠাৎ ফুফুর কথা কর্ণকুহর হতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তার ফুফু হন্তদন্ত হয়ে আসছে। টিভির চ্যানেল বদলিয়ে সময় চ্যানেলে নিয়ে দেখে বিকেল ৪:১০ বাজে। এক্সাম শেষ হয়েছে ১:৩০ এ আর মেয়ে টা এখনো কি-না বাসা আসে নি।

” ফুফু তুমি নীলার সাথে কাউকে পাঠাও নি?

” আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু বললো ফ্রেন্ডদের সাথে যাবে। তাই আর যাই নি।

” কিন্তু ফুফু ওর সেন্টার আর আমার সেন্টার তো আলাদা। আমি তো জানি না ও কোথায় গেছে। আচ্ছা দাঁড়াও আমি খোঁজ নিচ্ছি।

কথাটা বলে সুহাসিনী সোফা থেকে উঠে নিজের ঘরে গিয়ে রাতুল কে ফোন দেয়। রাতুল ফোন রিসিভ করলে সুহাসিনী বলে উঠে,,

” হ্যালো রাতুল ভাই নীলা কি আপনার সাথে?

” ছিল এতোক্ষণ এই কিছুক্ষণ আগেই নীলা কে বাসাী সামনে নামিয়ে দিয়ে আসলাম।

” ওহ্ আচ্ছা ফুফু চিন্তা করছে খুব।

” আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।

” আচ্ছা রাখি।

ফোন টা রেখে বসার ঘরে আসতেই সদর দরজার দিকে চোখ যেতেই দেখে নীলা হেলতে দুলতে আসছে। নীলার মা নীলীমা বেগম মেয়েকে দেখে বসা থেকে উঠে তেড়ে যায়।

” বাজে কয়টা? এক্সাম শেষ হয়েছে কখন? এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?

হঠাৎ এমন আক্রমণে ভরকে যায় নীলা। বাহু থেকে মায়ের হাত সরিয়ে বলে,,

” আ,,আসলে ম,, মা প্রশ্ন মিলাতে মিলাতে যে কখন দেরি হয়ে গেল বুঝতে পারি নি। সরি আর হবে না এমন। প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে আমার। চলো খাবো।

নীলীমা বেগম কে টেনে নিয়ে যায় নীলা। সুহাসিনী ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে। এ মেয়ে না জানি কবে ধরা খেয়ে যায়।

°

শেষ বিকেলে পশ্চিমা আকাশে যখন সূর্য ঢোলে পড়ে তখন ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সেই মূহুর্ত টা উপভোগ করে সুহাসিনী। আজও ব্যাতিক্রম হয় নি। কাল এক্সাম নেই। গ্রাম থেকে কিছুক্ষণ আগে খালা আর খালা তো বোন রিমি এসেছে।

এখন রিমির সাথে গল্প করছে সুহাসিনী। মেয়েটা সুহাসিনী বলতে পা’গল। বয়সে গুনে দু বছরের ছোট রিমি সুহাসিনীর থেকে। বয়সে ছোট হলেও মেয়েটি সুহাসিনীর ভীষণ পছন্দের। নীলার থেকে বেশি বন্ডিং এই রিমির সাথে সুহাসিনীর। বছরে দু তিন বার করে আসে তার সুহা আপুর সাথে দেখা করতে।

” আরে আমার হিরো এসেছে সুহা আপু। রুদ্র হিরো এসেছে। আমি জানতাম আমি এসেছি শুনলে ঠিক আমার সাথে দেখা করতে চলে আসবে।

সুহাসিনী কবুতর গুলো কে খাবার ছিটিয়ে দিচ্ছিল আর কবুতর গুলো উড়ে এসে খাবার গুলো খাচ্ছিল। হঠাৎ রিমি কথা কর্ণকুহর হতেই সুহাসিনীর হাত থেমে যায়। কবুতরের খাদ্যর বোয়াম নিচে রেখে ছাঁদের কার্নিশ দিয়ে মাথা এগিয়ে দিয়ে দেখে রুদ্র গাড়ি থেকে নামছে। রুদ্রর দিকে তাকাতেই দু’জনের চোখাচোখি হয়। চোখ সরিয়ে নেয় সুহাসিনী। রিমি সুহাসিনীর হাত ধরে টেনে দৌড়ে নিচে নেমে যায়।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন।)