#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব১৫
#Raiha_Zubair_Ripte
দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা পর সুভাষিণীর জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হসপিটালের বেডে দেখে পরক্ষনেই কালকের কথা মনে পড়ে যায়। সাথে সাথে হাত চলে যায় পেটে। ব্যাথা অনুভব হলো বুঝতে আর বাকি নেই তার এই পেটে আর কোনো অংশ নেই। সাথে সাথে অভ্র বলে চিৎকার করে উঠলো সুভাষিণী। অভ্র হুড়মুড়িয়ে কেবিনে ঢুকে। সুভাষিণী কে কাঁদতে দেখে সুভাষিণীর পাশে বসে বলে,,
” কি হয়েছে সুভা কাঁদছো কেনো?
সুভাষিণী কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
” আমাদের বাচ্চা অভ্র।
অভ্রর চোখ দিয়ে পানি পড়ে। প্রথম বাবা হবার আনন্দ যে এভাবে বিষিয়ে যাবে কল্পনাতেও ভাবতে পারে নি। নিজেকে সামলিয়ে সুভা কে বলে,,
” কেঁদো না পাখি। আবার আসবে তোমার কোল জুড়ে বাচ্চা। এভাবে কাঁদলে অসুস্থ হবে তো তোমার পেট কা’টা।
সুভাষিণী অভ্র কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
এদিকে সুহাসিনী এখনো মায়ের লা’শ জড়িয়ে আছে। রফিক সাহেব শশুর বাড়ি আর তার বাড়ির সবাই কে ইনফর্ম করে জানিয়েছে। তারা প্রায় সবাই আসছে। জানাজায় তো থাকতে হবে তাদের। রফিক সাহেব শত চেষ্টা করেও মেয়েকে স্ত্রীর থেকে সরাতে পারছে না। মেয়ের একটা কথা তার মাকে কোথাও নিয়ে যেতে দিবে না। তার মা তার কাছে থাকবে।
রফিক সাহেব চোখ মুখ মুছে সুভাষিণীর কেবিনে যায়। সুভা বাবা কে দেখে কেঁদে উঠে। রফিক সাহেব আর এবার কাঁদলেন না। সে এভাবে ভেঙল পড়লে মেয়েদের কিভবে সামলাবেন।
অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,,
” বাবা রুদ্র কে কি পেলে ফোনে।
” হ্যাঁ বাবা রুদ্র বেরিয়ে গেছে চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে।
লুৎফর রহমান কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলে,,
” তাহলে তোমরা একটু লা’শ টা নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করো। এভাবে আর কতক্ষণ থাকবে হসপিটালে। জানাজার ব্যাবস্থা তো করতে হবে।
সাথে সাথে বাবার বুক থেকে মাথা উঁচু করে সুভাষিণী। বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,,
” কার লা’শ বাবা। কার জানাজা হবে। আমার বাচ্চার?
রফিক সাহেব কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। লুৎফর রহমান সুভার দিকে এগিয়ে এসে বলে,,
” না মা তোমার মায়ের জানাজা।
কথাটা কর্ণকুহর হতেই যেনো সুভাষিণীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। চিৎকার দিয়ে বলে,,
” বাবা এসব কি বলছেন মায়ের জানাজা কেনো হবে। আমার মায়ের কি হয়েছে? ও বাবা বলো না বাবা এসব কি বলছে।
রফিক সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বলে,,
” তোর মা আর নেই সুভা। কারা যেনো সুমনার গ’লা কেটে হ’ত্যা করেছে।
কথাটা মস্তিষ্ক অব্দি যেতেই সুভাষিণী মা বলে একটা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে অভ্র তাড়াতাড়ি ধরে ফেলে। লুৎফর রহমান তারাতাড়ি কেবিন থেকে বেরিয়ে ডক্টর কে ডেকে আনে। ডক্টর সুভাষিণী কে পর্যবেক্ষণ করে বলে,
” উনাকে আপনারা কি এমন বলেছেন যে এভাবে জ্ঞান হারিয়েছে। উনি এখনো ডেঞ্জার মুক্ত নয়। পেট কা’টা হয়েছে এমন কিছু বলবেন না যেটা তার ব্রেন সইতে পারবে না।
” আচ্ছা ডক্টর।
ডক্টর কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।
রুদ্র কোনো রকমে বাইক চালিয়ে আসে হসপিটালে। বাইক টা থামিয়ে হসপিটালে ঢুকে রেসিপশনে কেবিন নং জেনে পাগলের মতো ছুটে যায়। কেবিনের সামনে আসতেই দেখে তার মা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। ছুটে মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
” মা এসব কি করে হলো?
রোমিলা রহমান ছেলেকে সব খুলে বলেন। দু পা পিছিয়ে যায় রুদ্র এতোকিছু ঘটে গেছে তার অনুপস্থিতিতে।
” মা সুহাসিনী কোথায়?
” ওর মায়ের লা’শ জড়িয়ে আছে। কিছুতেই ছাড়ছে না।
রুদ্র কাঁপা কাঁপা পায়ে সুমনা বেগমের কেবিনের সামনে গিয়ে দরজা ফাঁক করতেই দেখে সুহাসিনী তার মায়ের মৃ’ত দেহের পাশে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ তার। মুখ শুঁকিয়ে গেছে। বিধ্বস্ত লাগে এমনটা আগে কখনো দেখে নি। পড়নের কলেজ ড্রেস র’ক্তে মাখা। রুদ্রর বুক টা মোচড় দিয়ে উঠল।
কেবিনের দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকে সুহাসিনীর মাথায় হাত রাখে। মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না রুদ্রর। মনে হচ্ছে কেউ গলা চে’পে রেখেছে। অনেক চেষ্টা করে সুহাসিনী কে ডাকলো,,
” সুহাসিনী।
সুহাসিনী উঠলো না। রুদ্র ফের কিছুটা জোরে ডেকে উঠল।
সুহাসিনী চোখ মেলে তাকায়। রুদ্র কে দেখে বলে,,
” হুঁশশ ডাকছেন কেনো? মা ঘুমিয়েছে দেখছেন না। আমার আম্মুর ঘুম ভেঙে যাবে। চলে যান,আমি আম্মুর সাথে ঘুমাবো ডিস্টার্ব করবেন না।
রুদ্রর বুঝতে বাকি নেই সুহাসিনী অতিরিক্ত ট্রমা থেকে এসব বলছে। রুদ্র সুহাসিনীর বাহু ধরে টেনে বসায়। সুহাসিনী রেগে যায়।
” বলেছি না ডিস্টার্ব করবেন না। কথা কানে যায় না কেনো?
রুদ্র সুহাসিনীর বাহু ঝাকিয়ে বলে,,
” সুহাসিনী হুঁশে ফেরো আন্টি আর নেই।
কথাটা কানে যেতেই দু হাত দিয়ে রুদ্র কে দূরে সরিয়ে দেয় সুহাসিনী।
” একদম বাজে বকবেন না রুদ্র। আমার মা আমার পাশেই আছে সাথে। আপনি চলে যান। আমাকে আমার মায়ের কাছে থাকতে দিন। আমাড় চোখের আড়াল হলেই ওরা আমার মা কে আমার থেকে নিয়ে যাবে।
কথাটা বলে সুহাসিনী রুদ্রর হাত ধরে রুদ্রর কে কেবিন থেকে বের করে দরজা আটকাতে চাইলে রুদ্র বাঁধা দেয়। এমনিতেই সুহাসিনীর শরীরে শক্তি নেই রুদ্রর সাথে পেরে উঠলো না। যতোক্ষন লা’শ সামনে থাকবে ততক্ষণ সুহাসহনীর পাগলামী চলতেই থাকবে। রুদ্র আবার কেবিনে ঢুকে পড়ে। সুহাসিনীর হাত ধরে বলে,,
” পাগলামি করছো কেনো সুহা আন্টি নেই বাস্তবতা মেনে নাও।
কথাটা বলে রুদ্র নীলয় কে ফোন দেয়। লা’শ নেওয়ার ব্যাবস্থা করার জন্য। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন এসে সুমনা বেগমের লা’শ নিয়ে যায়। সুহাসিনী শত চেষ্টা অনুরোধ পায়ে ধরেও রুদ্রর থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারে নি। কত করে বলল তার মায়ের সাথে সে যাবে কিন্তু রুদ্র ছাড়লো না সুহাসিনীড হাত।
সুহাসিনী এক একটা কান্না আওয়াজ পাগলামি যেনো রুদ্রর হৃদয় টাকে ক্ষতবিক্ষত করে তুলছে। সুহাসিনী ঢোলে পড়ে রুদ্রর উপর। রুদ্র জড়িয়ে ধরে সুহাসিনী কে।
” সরি জান এমন টা করার জন্য। তা না হলে তোমার পাগলামি শেষ হতো না।
গ্রাম থেকে আত্মীয় স্বজনরা চলে এসেছে। সুমনা বেগমের বোন পাগলের মতো কান্না করছে এই একমাত্র বড় বোন ছিলো সেও এভাবে অকালে চলে গেল। সুমনা বেগমের মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে। কোনো মা ই পারে না তার আগে তার সন্তানের মৃ’ত্যু দেখতে। সুভাষিণী কে নিতে এসেছে অভ্র ওদিকে গোসল করানো হয়েছে সুমনা বেগম কে কিছুক্ষণ পর জানাজা হবে। তার আগে মায়ের মুখ টা শেষ বারের মতো সুভার দেখা উচিত।
সুভাষিণী নিস্তেজ হয়ে আছে। কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। অভ্রর সাথে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে।
মিনিট পঁচিশের মধ্যে সুভা কে নিয়ে বাসায় আসে অভ্র৷ সোজা মায়ের লা’শের সামনে নিয়ে যায়। সুভা কাঁপা কাঁপা হাতে মায়ের মুখ থেকে কাপড় তুলতেই দেখে তার মায়ের মুখটা। আর দেখা হবে ন মা কে। জড়িয়ে ধরা যাবে না।
বুকে মুখ গুঁজে কান্না কর যাবে না। কেউ রোজ ফোন করে জিজ্ঞেস করবে না সুভা মা কেমন আছিস। খাবার নিয়ে কেউ বলবে না খাবার বেরেছি খেয়ে নে বেলা হলো তো। কথা গুলো মনে আসতেই সুভা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।
এক দিকে সন্তান হারানোর শোক অন্য দিকে মা হারানোর শোক।
রুদ্র সুহাসিনী কে সামলাতে পারছে না। সে এখনো কাঁদছে আর মায়ের কাছে যাবে বলে পাগলামি করছে। রুদ্র আর না পেরে সুহা কে নিয়ে সুমনা বেগমের লা’শের কাছে নিয়ে আসে।
সদর দরজায় বসে রফিক সাহেব কাঁদছেন তার পাশেই নীলা রিমি কাঁদছে। সুহা মায়ের লা’শের কাছে আসতেই বোন কে দেখে একছুটে গিয়ে বোন কে জড়িয়ে ধরে বলে,,
” আপু রে আমার মা। তুই তো বাসায় ছিলি কে মা”রছে আমার মা রে বলনা আপু কে মা’রছে। তারে আমি নিজে হাতে খু/ন করবো। আমার মা রে আমার থেকে কেড়ে নিছে।
সুভা বোনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। পাড়া প্রতিবেশীদের কারো কারো চোখে পানি। সুখী পরিবার টা হঠাৎ করে কি থেকে কি হয়ে গেল।
নীলয় রফিক সাহেবের কাছে এসে বলে,,
” মামা এখন তো মামি কে নিয়ে যেতে হবে। মসজিদের মাঠ থেকে জানাজা পড়ে তারপর কবর দিতে নিয়ে যাবে।
রফিক সাহেব হুমম বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বোন নীলীমা কে বলে যায় মেয়ে দুটো কে সামলানোর জন্য।
রুদ্র তার মায়ের কাছে বলে,,
” মা সুহা আর ভাবি কে একটু সামলিয়ো। আমি জানাজা তে যাচ্ছি। জাস্ট এই সময় টুকু শুধু দেখো। জানহ সামলাতে কষ্ট হবে তবুও মা। পারলে কিছু খাইয়ে দিও।
রোমিলা রহমান ছেলে কে আস্বস্ত করে। রুদ্র সুহাসিনীর দিকে একবার তাকায়। তারপর রুদ্র অভ্র নীলয় আর রফিক সাহেব মিলে সুমনা বেগমের লা’শ কাঁধে নিয়ে চলে যায়।
#চলবে?
(ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন।)