ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-২০

0
434

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব২০
#Raiha_Zubair_Ripte

” কি ব্যাপার কার সাথে কথা বলছো তুমি?

হঠাৎ রুদ্রর আগমনে ভয় পেয়ে যায় সুহাসিনী। ফোনটা কে’টে দিয়ে বেলকনি থেকে রুমে আসতে আসতে বলে,,

” ঐ তো ব বাবার সাথে কথা বলছিলাম। আজ হঠাৎ এতো তাড়াতাড়ি আসলেন যে?

রুদ্র হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে,,

” এমনি,,আচ্ছা তুমি কি হোটেলের বাহিরে গিয়েছিলে আজ?

রুদ্রর এমন কথায় সুহার বুক ধক করে উঠে। কোনো রকম নিজেকে সামালিয়ে বলে,,

” কই না তো আমি তো হোটেলের বাহিরে যাই নি। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।

রুদ্র ভ্রুকুটি করে কতক্ষণ চেয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে যায়। সেই সুযোগে সুহাসিনী ওড়না টা মাথায় নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রুম থেকে বেরিয়ে হোটেলের পেছের দিকটায় যায়। সামিউলের তো আসার কথা ছিলো।

মিনিট দশেকের মতো দাঁড়িয়ে থেকেও যখন সামিউলের দেখা পেলো না তখন সুহাসিনী আবার হোটেলে ফিরে আসে। ততক্ষণে রুদ্র ও ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।

রুমের ভেতর সুহাসিনী কে না পেয়ে রুদ্র দরজা খুলে বাহিরে যেতেই দেখে সুহাসিনী আসতেছে। সুহাসিনীর আচরণ খুবই অদ্ভুত লাগছে রুদ্রর কাছে। সুহাসিনী রুদ্রকে ইগনোট করে রুমে ঢুকে পড়ে।

রুদ্র দরজা লাগিয়ে সুহার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,

” সমস্যা কি তোমার?

” কিসের সমস্যা?

” এই যে কেমন জানি লাগছে তোমায়।

” কেমন লাগছে?

” খুব অচেনা।

” ওহ্। খাবার ঢাকা আছে খেয়ে নিয়েন আমার ঘুম পাচ্ছে। আর কোথাও গেলে ডাকার দরকার নেই চলে যাইয়েন চুপচাপ।

কথাটা বলে সুহা চাদর দিয়ে পুরো শরীর ঢেকে শুয়ে পড়ে।

রুদ্র তপ্ত শ্বাস ফেলে খাবার টা খেয়ে বেলকনিতে চলে আসে। সামিউল রুদ্র কে ফোন দিয়ে বলে,,

” স্যার আমি তো অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি আপনি কোথায়?

” কোথায় অপেক্ষা করছো তুমি সামিউল?

” এই তো আপনার বলা হোটেলের পেছন টায়।

” আমি বলেছি?
রুদ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

” হুমম স্যার আপনিই তো গতকাল বললেন। ভুলে গেছেন।

” কই আমার তো মনে পড়ছে না এমন কোনো কথা তোমায় বলেছি কি না। আচ্ছা যাইহোক এসেছো যখন ওয়েট করো আমি আসছি।

কথাটা বলে ফোন পকেটে ভরে সুহার দিকে একবার তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

সুহা জেগে ছিল রুদ্র বের হতেই সুহা চুপিচুপি ঘর থেকে বের হয়ে রুদ্রর পিছু নেয়। হোটেলের পেছন যেতেই দেখে রুদ্র এক লোকের সাথে কথা বলছে। সুহার বুঝতে বাকি নেই এই সেই সামিউল। সুহা তাদের কথা শোনার জন্য কিছুটা এগিয়ে গিয়ে এক গাছের পেছনে দাঁড়ায়।

সামিউল পকেট থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে রুদ্রর হাতে দেয়।

রুদ্র পেনড্রাইভ টার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” কিসের পেনড্রাইভ এটা সামিউল?

” স্যার আপনি বলেছিলেন মাহতাব আর শাহরিয়া মোবারকের খোঁজ নিতে। এটায় সব ডিটেইলসে দেওয়া আছে মাহতাব আর তার শ্বশুর কিসব করে বেড়ায় এই দুবাই।

” কি করে বেড়ায়?

” স্যার আমি ওদের অফিসের দারোয়ানের সাথে ভাব জমিয়েছিলাম। কয়েকদিনে লোকটার খুব বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছি। দ্যান তার থেকে জানতে পেরেছি মাহতাব আর তার শ্বশুর বিজনেসের নাম করে মেয়ে পা’চার করে। এসব সম্পর্কে তার মেয়ে শান্তা কিছু জানে না। শান্তা বাবা অন্ত প্রাণ। সে জানে তার বাবা নর্মালি আর সব মানুষের মতো বিজনেস করে।

” তারমানে সে দুনিয়ার চোখে একজন সৎ ব্যাবসায়ি,তার মেয়ের চোখে শ্রেষ্ঠ পিতা। আর সবার আড়ালে না’রী পা’চারকারী।

” হুমম।

” আচ্ছা তুমি যাও আমি পরে জানাবো কি করতে হবে না হবে।

” ঠিক আছে স্যার আমি আসি তাহলে।

” হুমম আরো শোনো তাদের দারোয়ানের সাথে মেলামেশা বন্ধ করো না।

” আচ্ছা স্যার আসি।

সামিউল চলে যেতেই সুহা তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমে চলে আসে। বিছানায় শুয়ে চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে নেয়। রুদ্র রুমে ঢুকে সুহাসিনী কে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে ল্যাপটপ নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। পেনড্রাইভ টা ল্যাপটপে ঢুকিয়ে অন করতেই দেখে একটা ফাইল যেখানে ডিটেইলসে দেওয়া আছে কবে কবে এবং কোথায় কোথায় না’রী পা’চার করা হয়েছে। আর সামনের দশ তারিখে আর একটা ডেট আছে না’রী পা’চার করার।

রুদ্র ক্যালেন্ডারে তারিখ দেখে আজ চার তারিখ তার মানে আর পাঁচ দিন পর আবার না’রী পা’চার করা হবে।

——————-

” শ্বশুর মশাই দশ তারিখে তো মেয়ে পাঠাতে হবে আপনি তো বলেছিলেন একটা মেয়ে কম পরেছে আমার কাছে একটা মেয়ে আছে।

” সুন্দরী তো?

” মুখ দেখা হয় নি ঢাকা ছিলো। আজ আপনার মেয়ের কাছে কাজ চাইতে এসেছিল। আপনার মেয়ে তাকে আস্বস্ত করেছে কাজ দেওয়ার।

” তাহলে এই মেয়েকে বাদ দাও। এই মেয়েকে পা’চার করলে আমার মেয়ের মনে সন্দেহ জাগতে পারে। আমি চাই না আমার মেয়ে আমার আর তোমার আসল পরিচয় জানুক।

” ডোন্ট ওয়ারি শ্বশুর মশাই জানবে না আপনার মেয়ে আমার আর আপনার পরিচয়। আর শান্তা মেয়েটাকে আপনার অফিসেই জব দেওয়ার কথা বলেছে সেক্ষেত্রে কিভাবে জানবে? মেয়ে তো থাকবে অফিসে।

” বেশ তাহলে ১০ তারিখে ডিল হচ্ছে।

” হুমম।

——————–

” হ্যালো আপা।

” কে বলছেন?

” আপা আমি নয়না বলছি সকালে যাকে সকালে আপনি কার্ড দিলেন আর বললেন যে কাজ দিবেন।

” ওহ্ তুমি। আচ্ছা কাল সকলে আমার হোটেলের সামনে এসো। আচ্ছা তুমি কি আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হতে পারবা।

” সেটা কি গো আফা।

” মানে সারাদিন আমার সাথে থাকবা। আমার কাজ করবা আমার সাথে ঘুরবা।

” আফা স্যালারি নিয়া একটু বললে ভালো হতো।

” চিন্তা করো না তুমি দেড় লক্ষ টাকা পাবা মাসে।

” সামান্য ঘুরাঘুরি তে দেড়লক্ষ টাকা দিবেন আফা।

” হুমম আমার হাজবেন্ড তো বাহিরেই থাকে আর আমায় একা একা থাকতে হয়। তাই বলছি।

” আমি রাজি আফা।

” আচ্ছা তাহলে কাল এসো আগে তোমায় জানি চিনি তারপর শিওর হয়ে দিবো এই জব।

” আচ্ছা আফা কাল আসবো তাহলে।

” আচ্ছা রাখি।

” হুমম।

কথাটা বলে সুহাসিনী ফোন রেখে দেয়।

” কাজ হয়ে গেছে। এবার শান্তার বিশ্বস্ত হবার পালা।

পরেরদিন সকালে,,,

” রেডি হন আপনি। সামনের রেস্টুরেন্টে যাবো।

হঠাৎ সামনের রেস্টুরেন্টের কথা শুনে ভরকে যায় রুদ্র।

” সামনের রেস্টুরেন্টে মানে?

” এই তো সামনের রেস্টুরেন্টে । এই হোটেলের রান্না গুলো আমার ভালো লাগে না। সামনের রেস্টুরেন্টে নাকি বাঙালী খাবার পাওয়া যায়।

” কে বলছে?

” যেই বলুক চলুন তো কতে দিন ধরে বাঙালি মাছ ভাত খাই না।

অগ্যতা রুদ্র রেডি হয়ে নেয়। আর সুহা গাঢ় মেক-আপ করে মুখে যাতে মাহতাব ফেস দেখে খুব সহজে চিনতে না পারে। সাথে মুখে মাক্স পড়ে নেয়। রুদ্র হঠাৎ সুহার এমন সাজ দেখে বলে,,

” এতো সাজছো কেনো। একদম চেনা যাচ্ছে না।

” সত্যি আমায় চেনা যাচ্ছে না।

কিছুটা উৎফুল্ল নিয়ে বলে সুহা।

” না চেনা যাচ্ছে না। মেক-আপ করলে তোমার ফেস টোটালি বদলে যায়।

” আচ্ছা চলুন যাওয়া যাক।

রুদ্র মুখে মাক্স পড়ে দুজনে বেরিয়ে যায়।

সুহা রেস্টুরেন্টের সামনে আসতেই গাড়ি থেকে নেমে যায়। রুদ্র গাড়ি পার্ক করে সুহার হাত ধরে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়।

রেস্টুরেন্টে ঢুকে কয়েক রকমের খাবার অর্ডার দেয় রুদ্র। সুহাসিনীর দৃষ্টি রেস্টুরেন্টের সামনে থাকা হোটেল টায়। যেখানে শান্তারা থাকে। সুহাসিনী খাবার না খেয়ে হাতের আঙুল দিয়ে ভাতে আঁকিবুঁকি করছে দেখে রুদ্র বলে,,

” কি হলো খাচ্ছো না কেনে? তোমার না খুব বাঙালী খাবার খেতে ইচ্ছে করছিল।

” রুদ্র আমার না ইয়ে পেয়েছে।

” কি পেয়েছে?

” ওয়াশরুমের চাপ পেয়েছে। সামনেই তো হোটেল একটু নিয়ে চলুন না আর পারছি না। মনে হচ্ছে এখানেই করে ফেলবো?

” এখানে ওয়াশরুম আছে সুহা এখানকার টায় চলো।

” আচ্ছা আপনি বসুন আমি তাড়াতাড়ি সেরে আসি।

” একা যেতে পারবা?

” হুমম। আপনি বরং পেমেন্ট করে আসুন। আর খাবার গুলো প্যাক করে দিতে বলুন।

রুদ্র উঠে গিয়ে পেমেন্ট করতে চলে যায়। আর সুহাসিনী রুদ্রর পেছনে থেকে আলগোছে চুপিচুপি বেরিয়ে আসে রেস্টুরেন্ট থেকে।

#চলবে?