ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-২১

0
444

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব২১
#Raiha_Zubair_Ripte

” আফা আপনি কই আমি তো আপনার হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ায় আছি

” ওহ নয়না তুমি বরং আমার হোটেল রুম ১০০ তে চলে এসো।

” আফা আমায় কি ঢুকতে দিবো?

” হ্যাঁ দিবে আমি বলে দিয়েছি। তুমি চলে এসো।

” আচ্ছা আফা আমি আসতাছি।

কথাটা বলে সুহাসিনী হোটেলের ভেতরে ঢুকে ১০০ নম্বর রুমের সামনে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়তেই শান্তা দরজা খুলে দেয়।

” আফা আমি নয়না।

” এসো ভেতরে এসো।

সুহাসিনী ভেতরে ঢুকতেই শান্তা দরজা লাগিয়ে দেয়।

” নয়না বসো। তোমার সাথে কথা বলে নেই আগে।

” আচ্ছা আফা কি বলবেন বলেন।

” তুমি তো বাংলাদেশে থাকো তাই না?

” হুমম আফা।

” আচ্ছা তুমি কি বাংলাদেশের ধানমন্ডি এলাকা টা চিনো?

” হ আফা আমি তো ধানমন্ডি তেই থাকি।

” আমায় নিয়ে যাবা সেখানে। তুমি যতো টাকা চাও আমি দিবো।

” আফা আমি তো বাংলাদেশ থেকে এসেছি টাকা রোজগার করতে। আর আপনি আমারে বাংলাদেশে যাইতে বলতাছেন।

” টাকা দিবো তো তোমায় সাথে আমার পার্সি এসিস্ট্যান্ট ও করবো।

” তাইলে আফা আরো দু এক মাস পরে যান।

” আচ্ছা তাহলে তুমি নিয়ে যাবা। আসলে আমার শ্বশুর বাড়ি সেখানে অথচ কখনো যাই নি।

” ক্যান আফা স্যার আপনারে নিয়া যায় নাই?

” না সে বিডিতে যেতে দিতে চায় না।

” তাহলে আফা আমার সাথে কিভাবে যাবেন?

” মিথ্যা কথা বলে। বলবো তুমি আর আমি নেপাল যাচ্ছি।

” আচ্ছা তাহলে আফা কবে থেকে কাজে আসবো?

” কাল থেকে আসো। দশটার দিকে।

” আচ্ছা আসি তাহলে। বিকেলে ফোন দিবো নি সময় অপচয় করার জন্য।

” আচ্ছা।

সুহাসিনী হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তার ওপর পাশে পার্ক করা গাড়িতে গিয়ে বসে। রুদ্র রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে সুহাসিনী কে খুঁজে পায় না। ওয়াশরুম চেক করে এসেছে পায় নি। ফোন বের করে সুহাসিনীর নাম্বারে ফোন দিতেই সুহাসিনী ফোন রিসিভ করে বলে,,

” কই আপনি বিল পেমেন্ট করতে এতোক্ষণ লাগে কখন থেকে গাড়িতে বসে আছি।

” তুমি গাড়িতে গেলা কখন?

” মিনিট দশেক হবে। তাড়াতাড়ি আসুন।

” আচ্ছা।

রুদ্র ফোন কেটে দিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে দেখে সুহাসিনী গাড়ির ভেতরে। রুদ্র খাবার গুলো পেছনের সিটে রেখে সামনে বসে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে।

——————————

” বাবা প্রায় একমাস হতে চললো মায়ের খু’নির তো কোনো হদিস পেলো না পুলিশ। এই অভ্র চলো তো থানায়। এরা কেমন পুলিশ সামান্য খু’নিকে ধরতে পারছে না।

রফিক সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” থানায় যেতে হবে না সুভা রুদ্র থানায় যেতে বারন করেছে। আমার কাছে পনেরো দিন সময় চেয়েছে এই পনেরো দিনের মধ্যে আসল খু’নি রুদ্র বের করবে।

” বাবা রুদ্র দুবাই গিয়েছে বাংলাদেশে নেই যে সে খু’নির সন্ধান করবে।

” সুভা উত্তেজিত হয়ো না বাবা ঠিকই বলেছে। থানায় এতে ঘনঘন যাওয়া ঠিক নয়। আর তো মাত্র পনেরো টা দিন।

” বেশ মাত্র পনেরো টা দিনই সময় দিলাম।

” হুমম এখন চলো মেডিসিন খাবা। এখনো প্রপার্লি সুস্থ নও তুমি।

অভ্র সুভা কে নিয়ে চলে যায়। রফিক সাহেব ফোন বের করে রুদ্র কে ফোন দেয়। রুদ্র সুহাসিনী কে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে মাহতাবদের হোটেলে ফিরেছে। শান্তা তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর সিঁড়ি।

হোটেলে ঢুকতেই রফিক সাহেবের ফোন পেয়ে রুদ্র থেমে যায়। ফোন টা রিসিভ করে বলে,,

” আসসালামু আলাইকুম বাবা। কেমন আছেন?

” অলাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তোমরা?

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

” ফিরবে কবে তোমরা? সুভা তার মায়ের খু’নি দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে। থানায় যেতে চাইছিল বারংবার।

” এই তো বাবা আর পনেরো টা দিন সামলান।

” সুহাসিনী কোথায়?

” সুহা হোটেলে বাবা আমি একটু বেরিয়েছি। হোটেলল ফিরলে ফোন দিবো নি।

” আচ্ছা রাখি।

রুদ্র ফোনটা কেটে দিয়ে হোটেলে ঢুকে পড়ে। সাথে রুমে ঢোকার আগে পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে ১০০ নম্বর রুমের দরজার নিচ দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে কড়া নেড়ে চলে যায়।

শান্তা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছিল হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলে সামনে কাউকে না দেখল দরজা আবার বন্ধ করতে গেলে নিচে থাকা কাগজের দিকে চোখ যায় শান্তার।

কাগজ টা উঠিয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে পড়ে।

চিরকুট টা খুলতেই বড় বড় অক্ষরে ভেসে উঠে,,

” বিকেল চারটায় হোটেল থেকে বেরিয়ে বা দিকের ক্যাফে তে চলে আসবেন। আপনার বাবা ও স্বামীর সামনে বিপদ। কাউকে বলবেন না বললে বিপদ বাড়বে বরং কমবে না।

শান্তার ভ্রু কুঁচকে এলো। কে দিলো এই চিঠি বাবা আর মাহতাবের কি বিপদের ঈঙ্গিত দিলো? নাকি কেউ মিথ্যা বলছে।

সাথে সাথে শান্তার ফোনে কল আসে অচেনা নম্বর থেকে। শান্তা অন্যমনষ্ক হয়ে ফোন রিসিভ করে। ফোনের ওপাশ থেকে গুরুগম্ভীর কন্ঠে ভেসে আসে,,

” এটা মিথ্যা নিউজ ভেবে ভুল করবেন না মিসেস শান্তা। স্বামী বাবা কে বাঁচাতে চাইলে অবশ্যই চলে আসবেন।

কথাটা বলে শান্তা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দেয়।

শান্তা হ্যালো হ্যালো বলতেই থাকে। আবার ঐ নাম্বারে কল দিতেই ফোন বন্ধ পায়।

সামিউল রুদ্র কে ফোন করে জানিয়ে দেয় শান্তা কে ফোন করে বলা হয়েছে। রুদ্র স্মিত হেসে ফোন কে’টে দেয়। ফোনের ওয়ালপেপারে থাকা সুহার পিকের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” নিজেকে খুব চালাক মনে করো তাই না সুহা রাণী। তুমি কি ভেবেছো আমার চোখের সামনে এসব করবে আর আমি জানতে পারবো না। কখন কখন এই হোটেলে এসেছো সব আমার নজরে এসেছে।

কথাটা বলে ব্লেজার টা শরীরে দিয়ে বেড়িয়ে যায় ক্যাফেতে।

শান্তা নিজেও কোনো রকমে তৈরি হয়ে চলে যায় ক্যাফেতে। ক্যাফের ভেতরে ঢুকে বুঝতে পারছে না কোন টেবিলটায় সেই বার্তা পাঠানোর লোক বসে আছে।

কথাটা ভাবতেই ফোনের মেসেজ টং বেজে উঠে। শান্তা মেসেজ চেক করে দেখে ৫ নম্বর টেবিলটায় যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।

শান্তা কাঁপা কাঁপা পায়ে ৫ নম্বর টেবিল টায় গিয়ে দেখে মুখে মাক্স পড়ে এক লোক বসে আছে। শান্তা টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই রুদ্র বলে,,

” প্লিজ সিট ডাউন মিসেস মাহতাব।

শান্তা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে,,

” আপনিই সেই লোক যে আমায় চিরকুট + ফোন মেসেজ দিয়েছেন।

” উমমম একদম ঠিক ধরেছেন। আমি সেই ব্যাক্তি।

” আপনি বলেছেন আমার স্বামী আর বাবার সামনে বিপদ। কি করে জানলেন আপনি। আর আপনিই বা কে?

” আচ্ছা ধরুন মিসেস মাহতাব কোনো একদিন দেখলেন আপনার বাবা আর স্বামী মিলে দিনের পর দিন আপনাকে ঠকিয়ে এসেছে দ্যান আপনি কি করবেন?

” মানে! কি বলছেন এগুলো। আমার স্বামী আর বাবা কেনো আমায় ঠকাবে? কখনোই না।

” আমি যদি বলি আপনাকে তারা ঠকাচ্ছে।

” ফালতু কথা। কি প্রমান আছে আপনার কাছে?

” প্রমাণ চাইছেন বেশ আমি না হয় প্রমাণ দেখাবো কিন্তু আপনি সইতে পারবেন তো?

” পারবো।

রুদ্র হেসে নেয়। ল্যাপটপ টা অন করে একটা ভিডিও অন করে।

যেখানে মাহতাব আর শাহরিয়া মোবারকের কথোপকথন হচ্ছে সামনের দশ তারিখের মেয়ে পা’চার করার ডিল নিয়ে।

শান্তা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।

” আমি বিশ্বাস করি না এটা হয়তো আপনি এডিট করে বানিয়েছেন। আমার বাবা আর স্বামী যথেষ্ট ভালো মানুষ তারা কখনোই নারী পা’চার করতে পারে না। বরং আমার বাবা অসহায়দের কাজের ব্যাবস্থা করে দেয়।

” আপনার বাবা অয়হায়দেড কাজ দেবার নাম করে বিভিন্ন দেশে পা’চার করে দেয়। মনে আছে কয়েক দিন আগে আপনার স্বামী বিডি গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে একটা খুন করে পালিয়ে এসেছে।

” হোয়াট রাবিশ। কিসব আবল তাবল বলছেন। মাহতাব তে কয়েক দিন আগে কানাডা থেকে ফিরেছে।

রুদ্র মাক্স খুলে বলে,,

” আপনাকে আপনার স্বামী দিনের পর দিন ঠকিয়ে আসছে। কথাটা বলে ল্যাপটপে একটা পিক বের করে বলে,, এই দেখুন পিক যেটা আজ থেকে এক মাস আগের তুলা ডেট ও দেওয়া আছে। তার বাবা শামসুল আলমের সাথে তোলা নির্বাচনের। আর এই দেখছেন মহিলা টাকে সুমনা বেগম এনাকে নির্মম ভাবে হ’ত্যা করে এসেছে। আমার ওয়াইফের মা ছিলেন ইনি।

শান্তা পিক টা খেয়াল করে একটা ফ্যামিলি ফটো যেখানে এক টা মেয়ের ছবিতে চোখ আটকে যায় শান্তার। মেয়েটির পিকের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,,

” এই মেয়েটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে কোথাও যেনো দেখেছি।

রুদ্র ছবিটায় দিকে তাকিয়ে বলে,,

” ভুলে গেলেন মিসেস মাহতাব আজ সকালে যাকে পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট করার জন্য হায়ার করেছিলেন সে।

” নয়না!

” নাম নয়না নয় ওর নাম সুহাসিনী। আমার স্ত্রী। আমার আপনার হেল্প চাই।

” আমার থেকে কিসের হেল্প চান।

” আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার বাবা বা স্বামী অসহায় মেয়েদের এভাবে সুযোগ নিক। তাদের তো শাস্তি পাওয়া উচিত।

” দেখুন আমার আপনাকে বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি কোনো হেল্প করতে পারবো না।

” ফাইন, দশ তারিখে আপনার স্বামী বাবা আবার মেয়ে পা’চার করবে আর আপনি আটকাবেন না? আপনি একজন মেয়ে হয়ে অন্য মেয়েদের কষ্ট টাকে ফিল করতে পারছেন না? বাহ।

” দেখুন আমি অতো কিছু জানি না। আমি আমার বাবা স্বামীর বিপক্ষে যেতে পারবো না চলি ভালো থাকবেন।

কথাটা বলে শান্তা চলে আসে। রুদ্র শান্তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,,

” মিসেস মাহতাব আপনার মনে সন্দেহের দানা ঢুকিয়ে দিয়েছি এখন আপনি নিজে থেকেই সব এক এক করে বের করে আনবেন।

#চলবে?