#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব২২
#Raiha_Zubair_Ripte
” কি ব্যাপার এতো সকাল সকাল তড়িঘড়ি করে ল্যাগেজ গোছাচ্ছ কোথাও যাবা নাকি?
মাহতাব রেডি হচ্ছিল শান্তার কথা শুনে আকস্মিক ভয় পেয়ে যায়। পেছনে ঘুরে নিজেকে ঠিক করে বলে,,
” হ্যাঁ আসলে কয়েকদিনের জন্য ট্যুরে যাচ্ছি।
” কোথায় আর হঠাৎ ট্যুরে যাচ্ছ যে? কয়েকদিন আগেই না ঘুরে আসলে?
” তাতে কি হয়েছে?
” আমি ও যাবো। আমাকে তো কোথাও নিয়ে যাও না।
” বাবা আর আমি যাচ্ছি ট্যুরে। শ্বশুর আর জামাই যাচ্ছে সেখানে তুমি গিয়ে কি করবা?
” আমি গিয়ে কি করবো মানে? আমাকে একা রেখে কিভাবে এখানে ওখানে চলে যেতে পারো তুমি? এখন ও অব্দি তোমার নিজ বাড়িতেই আমায় নিয়ে যেতে পারলে না।হোয়াই?
” তোমার সাথে এ নিয়ে পরে কথা হবে আমি এখন আসি বাই।
কথাটা বলে মাহতাব বেরিয়ে যেতে নিলে শান্তা পথ আটকে দাঁড়ায়। মাহতাব হাতে থাকা হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলে,,
” আবার কি হলো পথ কেনো আটকালে।
” তুমি আর ড্যাড কোথায় যাচ্ছ ট্যুরে?
” বাগান বাড়িতে।
” শিওর?
” হয়েছে কি তোমার শান্তা। হঠাৎ এতো জেরা করছো যে?
” না এমনি আচ্ছা যাও সাবধানে।
কথাটা বলে শান্তা সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। মাহতাব কিছুক্ষণ শান্তার দিকে চেয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়।
——————
” কি গো কামের বেডি সুহা ওপ্স সরি নয়না কাজে যাবা না?
সুহাসিনী বিছানায় বসে কিছু একটা ভাবছিল হঠাৎ রুদ্রর এমন কথা শুনে আঁতকে উঠে। রুদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখে রুদ্র ল্যাপটপে মুখ গুঁজে রয়েছে। সুহার থেকে উত্তর না পেয়ে রুদ্র ল্যাপটপে মুখ গুঁজেই বলে,,
” কাজে যাবা না?
সুহাসিনী বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ভ্রুকুটি করে বলে,,
” কিসের কাজ?
” অন্যর বউয়ের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হওয়ার কাজ।
” ম মানে ক কি বলতে চাইছেন?
” এমা তুমি সিম্পল কথার মানে বুঝলে না সুহা। যাও যাও তোমার মালিক তোমার জন্য ওয়েট করছে। কাজে না গেলে কিন্তু মাইনে দিবে না। মাইনে না পেলে দেশে তোমার বাবা কে টাকা পাঠাবে কি করে?
সুহা এবার রুদ্রর সামনে থেকে ল্যাপটপ টা কেঁড়ে নিয়ে বলে,,
” কি বলছেন তখন থেকে এসব হ্যাঁ।
রুদ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সুহার বাহু চেপে ধরে বলে,,
” আমি কি মিন করছি জানো না! নিজেকে খুব চালাক মনে করো তাই না? কি ভেবেছো আমি জানি না তুমি যে মাহতাব কে ধরার জন্য শান্তার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর চাইছো।
সুহাসিনী নিজের বাহু থেকে রুদ্রর হাত সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ফলাফল শূন্য।
” রুদ্র ব্যাথা পাচ্ছি আমি। এভাবে চেপে ধরেছেন কেনো?
” ব্যাথা পাবার জন্যই ধরেছি। তুমি আমাকে না জানিয়ে ওসব করতে গিয়েছো কেনো? অ্যান্সার মি।
” আশ্চর্য আগে হাত সরান আপনার। ব্যাথা পাচ্ছি চোখে দেখেন না।
রুদ্র সুহাসিনী কে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বুকে দু হাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,
” নাও ছেড়েছি এবার বলো।
” কি বলবো হ্যাঁ। আপনি ও তো আমায় না জানিয়ে একা একা সব করতেছিলেন। আমায় কি বলে নিয়ে এসেছিলেন মনে আছে?
” সব মনে আছে আমার সুহা। তোমার সাহস দেখে আমি অবাক। তুমি তো সুহা আগে এমন ছিলে না।
” আগে সুহার জীবন কেমন ছিলো? আর এখন সুহার জীবন কেমন বলুন তো?
” সে যেমনই হোক তুমি আর এসবে ঢুকবে না। মাহতাব কে যা করার আমি করবো। আমার কথার যদি হেরফের হয় তাহলে সুহা আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
” তাহলে কোনো কিছু আমার থেকে লুকাতে পারবেন না এ টু জেট সব আমায় বলতে হবে।
” আচ্ছা ডান।
__________________
” হ্যালো ড্যাড তুমি আর মাহতাব কি ট্যুরে যাচ্ছ?
” কই না তো।
” তাহলে মাহতাব যে বললো তুমি আর মাহতাব ট্যুরে যাচ্ছ।
শাহরিয়া মোবারক কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলে উঠে,,
” আরে হ্যাঁ আমরা ট্যুরে যাচ্ছি। কিন্তু আজ না তো ১০ তারিখ যাবো আজ তো আট তারিখ।
” শিওর?
” হুমম।
” কিন্তু মাহতাব যে ল্যাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গেলো। তাহলে ও কোথায় যাচ্ছে?
” আই ডোন্ট নো। আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি তোমায়।
” আচ্ছা ড্যাড রাখি।
শান্তা ফোন টা রেখে রুমের মধ্যে পায়চারি করতে থাকে। পায়চারি করা থামিয়ে ফোন টা নিয়ে আবার ফোন লাগায় মাহতাবের নম্বরে। সুইচ অফ ফোন। শান্তা ফোন কে’টে দেয়।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়।
এদিকে শাহরিয়া মোবারক একের পর এক ফোন দিচ্ছে মাহতাব কে কিন্তু ফোন ঢুকছে না। রাগে মাথা ফে’টে যাচ্ছে শাহরিয়ার। পরশু তাদের ডিল আর আজকে মাহতাব নাটক শুরু করছে। নেহাৎ মেয়ে ভালোবাসে এই ছেলে কে তা না হলে কবেই মে’রে গুম করে দিত।
টেবিলের উপর সজোরে ঘুষি দিয়ে মোবাইল ফোন টা নিয়ে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে।
রুমে বসে ল্যাপটপে এতোক্ষণ ধরে শাহরিয়া কে পর্যবেক্ষণ করছিল রুদ্র। শাহরিয়ার এমন রাগান্বিত চেহারা দেখে হেসে উঠে রুদ্র।
” মাহতাব তো তার নিজের জায়গায় আছে শাহরিয়া মোবারক। এবার আপনার কি হবে? আপনার সাম্রাজ্য তো এবার রসাতলে যাবে। কি করে বাঁচাবেন নিজেকে?
” কি ব্যাপার কি বিরবির করছেন আর ল্যাপটপে কি দেখছেন? আমায় দেখান।
সুহার কথা শুনে কোল থেকে ল্যাপটপ টা সুহার কোলে দিয়ে বলে,,
” এই নাও দেখো। ততক্ষণে আমি রেডি হয়ে নেই।
কথাটা বলে রুদ্র চলে যায়। সুহা ল্যাপটপে চেয়ে দেখে একটা অফিস যেখানে কেউ নেই। ল্যাপটপ টা বন্ধ করে বলে,,
” কি দিলেন এটা এখানে তো তেমন কিছু নেই একটা অফিস রুম ছাড়া।
রুদ্র রেডি হতে হতে বলে,,
” সেটা যদি বুঝতে আহাম্মক তাহলে তো রুদ্র টাকেই পড়ে ফেলতে পারতে। যাইহোক আমি আসি। তুমি সন্ধ্যায় রেডি হয়ে থেকো তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে বাই।
কথাটা বলে সুহার কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায় রুদ্র। সুহা রুদ্রর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে নিজেও একটা ওড়না নিয়ে বেরিয়ে যায়।
#চলবে?