#ভালোবাসি
#পর্বঃ২
#Tanisha Sultana (writer)
“চিটাগং
” তুমি কোথাও যাবে না৷ আর যদি যাও তাহলে তুলিকে নিয়ে যাও (সায়ানের বাবা)
“আমি যাবো না
তুলি ফট করে বলে ফেলে বলে
” তোকে আমি নিলে তো যাবি
“আমি গেলে তো আপনি নিবেন আমায়
” আমার মুখের ওপর কথা বলিস এতো সাহস পাস কই
“চুপ করো তোমরা। সায়ান তুলি তোমার স্ত্রী। তো ওর দায়িত্ব তোমার। তো তুমি যদি কোথাও যাও তো তুলিকে নিয়ে যাবে। আর না নিলে তোমারও যাওয়া হবে না।
সায়ানের বাবা চলে। সায়ান কটমট করে তুলির দিকে তাকায়। তুলি সায়ানকে ভেংচি কেটে চলে যায়।
তুলি স্কুল ড্রেস পরে কাঁধে স্কুল ব্যাগ দুই বিনুনি করে বের হয়। তুলির দাদু আরমান খান তুলিকে ডাকে
” দাদু ডেকেছো
“হুম। আজ স্কুলে যেতে হবে না
” কিন্তু দাদু
“যাও। শাড়ি পরে সুন্দর করে সাজুগুজু করো একটু পরেই মেহমান চলে আসবে
তুলি আর কি করবে। অসহায় মুখ করে রুমে চলে আসে। তুলির রুমে রুহি আসে
” তুলি তোমার শাড়ি গহনা। চলো আমি তোমাকে হেল্প করি
“আপু এসব শাড়ি গহনা আমার ভালো লাগে না। আচ্ছা একটা গাউন পরি
” তুলি তোমাকে এটাই পরতে হবে
রুহি তুলিকে শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। সারাদিন তুলিকে সারা দুনিয়ায় সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। রাত দশটাই তুলিকে ছাড়া হয়। তুলি রুমে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচে
“আল্লাহ গোটা দুনিয়ায় আর বোধহয় কেউ বাকি নেই। সবাই আজ আমাকে চিনে গেলো সায়ান খানের বউ তুলি খান।
তখন সায়ান রুমে আসে।তুলির দিকে একটু তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। তুলি সায়ানের চলে যাওয়া দেখে আলমারির কাছে চলে যায়
” ওই একদম আমার শার্ট পরবি না
তুলি আলমারি খুলতে গিয়েছিলো সায়ানের কথায় পেছনে তাকায়
“আপনার কেনো মনে হয় আমি প্রতিদিনই আপনার শার্ট পরবো?
” মনে হওয়ার কিছু নেই তুই এখনই আলমারি খুলে আমার শার্ট নিতে গেছিলি
“ওভার স্মার্ট। যতসব
তুলি সায়ানকে পাত্তা না দিয়ে আলমারি খুলে তুলির টিশার্ট আর স্কাট নেয়। তারপর সায়ানের দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সায়ান একটা বালিশ নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
পরেরদিন তুলি স্কুলে যায়। ক্লাস রুমে বসে আছে এখনো স্যার আসে নি। তুলির বেষ্টফ্রেন্ড তমা তুলির পাশে বসে
” কি রে তুলি তোর না কি বিয়ে হয়েছে?
“হ রে
” তুই আমাকে একবারো বললি না। কেমন বেষ্টু তুই আমার
“সরি বাবু আসলে আমার বিয়ে হবে এটা আমিও জানতাম না
” ঠিক আছে। এবার বল তোর বর কেমন
“বুরো, গোমরা মুখো
” কিহহহহহহ
“হুম। আমার থেকে গুনে গুনে তেরো বছরের বড়। আর জানিস সারাক্ষণ আমাকে বকে আর মুখটাকে কাকের মতো করে রাখে। আস্ত একটা পেঁচা
তমা হাসতে হাসতে শেষ। তুলির রাগ হয়
” আমি তোর কাছে আমার কষ্ট শেয়ার করছি আর তুই হাসছিস। যাহ কথায় বলবো না
তমা কোনোরকম হাসিটা চেপে বলে
“সরি বেবি। আর হাসবো না
তখন স্যার চলে আসে।
সবগুলো ক্লাস শেষ করে বাসায় ফেরে তুলি। নিজের রুমে এসে না দেখেই ব্যাগ ছুরে ফেলে বেডে। খাটে সায়ান শুয়ে ছিলো। ব্যাগটা সায়ানের ওপর পরে আর সায়ান লাফ দিয়ে ওঠে
” ওই পাগল
সায়ানের চিৎকারে তুলি হকচকিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়
“চোখে দেখোস না? কানা না কি তুই
” আআআমি খখখেয়াল করি নননি
তুতলিয়ে বলে তুই। সায়ান তুলির ব্যাগটা ফেলে দিয়ে বলে
“তুই কখনো খেয়াল করোস? আমার তো মনে হয় খেয়াল শব্দটাই তোর মধ্যে নেই। পাগল তুই
” তাহলে এই পাগলকে কেনো বিয়ে করলেন?
“মন থেকে করি নি। জোর করা হয়েছে
” হ্যাঁ তাই তো। আপনার এই রকম গোমড়া মুখো চেহারা দেখে আপনার পালিয়ে যাওয়া বউ পালিয়েছে।
তুলির কথায় সায়ান থেমে যায়। আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তুলি সেদিকে পাওা না দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।
বিকেলে তুলির মা তুলির জামাকাপড় গোছাচ্ছে আর কাঁদছে। তুলি বেপারটা বুঝতে পারছে না। খাটের এক কোনে বসে নখ কামরাচ্ছে।
“ও মা কি হয়েছে? কখন থেকে জানতে চাইছি। আমরা কি এবাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি?
” আমরা না তুই যাচ্ছিস
“কিন্তু কোথায়?
” সায়ানের সাথে
“কিহহহহহহহ
তুলি মাকে জড়িয়ে ধরে বলে
” মা আমি যাবো না প্লিজ। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না
তুলির মা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়
“তোকে থাকতে হবে মা
” আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে
নিচে থেকে চিৎকার করে বলে সায়ান। তুলির মা তুলিকে রেডি করিয়ে দেয়। বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা চলে যায়।
সায়ান ডাইভ করছে। তুলি মেঘলা আকাশের মতো মুখ করে বসে আছে। সায়ানের ফোনে ফোন আসে। সায়ান রিসিভ করে
“হেলো
” সায়ান কেমন আছো?
মেয়েটার কন্ঠ শুনে সায়ান একবার তুলির দিকে তাকায়
“মায়া তুমি। কেনো করলে এমন আর এখন কেনোই বা ফোন করেছো? বেঁচে আছি কি না জানতে
” সায়ান সরি। আমি ইচ্ছে করে করিনি কিছু
“তোমার কোনো কথা শুনবো না। বাই আর কখনো ফোন দেবে না
সায়ান ফোনটা আছার মেরে দেয়। তুলি ভয়ে কেঁপে ওঠে। সায়ান ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। তুলি ভয়ে শেষ। না জানি কখন এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। তুলি কিছু বলারও সাহস পাচ্ছে না।কিছু বললেই ধমক দেবে। তাই বসে বসে দোয়া পরছে।
হঠাৎ করে সায়ানের গাড়িটা একটা গাছের সাথে বারি খায়। তুলি মাথায় আঘাত পায়। মাথা কেটে যায়। সায়ানও একটু ব্যাথা পায়। তুলি রাগে গিজগিজ করে বলে
” আপনি মানুষ? আপনার পারসোনাল লাইফের পবলেমের জন্য আমাকে কেনো এভাবে হেনস্তা করছেন? আমার বাবা নেই বলে? আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই বলে? খুব খারাপ আপনি
তুলি গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। রাস্তার পাশে বসে কাঁদতে থাকে। সায়ান গাড়িতেই বসে আছে। তুলির বলা কথা গুলো ভাবছে
তুলি দুই হাটুর মাঝে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে
“তুলি বাসায় চল
সায়ানের দিকে তাকায় তুলি। সায়ান আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে। তুলি যাচ্ছে কি না সেদিকে তার খেয়াল নেই। তুলি উঠে সায়ানের পেছনে যায়। ওরা একতলা একটা বাড়িতে যায়। বাড়িটা অপূর্ব সুন্দর। বাড়িটার সামনে দশতালা একটা বিল্ডিং।
সায়ান বাড়িতে ঢুকে একটা রুমে গিয়ে ধপ করে দরজা আটকে দেয়। তুলি অন্য একটা রুমে যায়। মাথা থেকে রক্ত ঝরতে। তুলি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওড়না দিয়ে রক্ত মুছে নেয়। তারপর ড্রেস চেন্জ করে রান্না ঘরের দিকে যায়।
চলবে