#ভালোবাসি
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana (Writer)
“তুলি দাঁড়াও। আমার কথাটা শুনো
তুলি আর পেছন ঘুরে তাকায় না। দাঁড়ায় ও না। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছছে আর হাঁটছে। আজ আর ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করছে না। তাই স্কুলের পাশে একটা পুকুর পারে বসে আছে তুলি।
” তুলি
পেছনে ঘুরে দেখে রিক দাঁড়িয়ে আছে। তুলি আবার পুকুরের দিকে তাকায়। রিক তুলির পাশে এসে বসে। তুলির হাত ধরে
“কি হয়েছে তুলি? আমাকে বলতে পারো
“……..
” আমি তো ফ্রেন্ড। আর ফ্রেন্ডের সাথে সব শেয়ার করায় যায়।
“…….
” তুলি তোমার কপালে কি হয়েছে? বলো না আমায়।
তুলি এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে। রিক তুলিকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়। তুলি ইচ্ছে মতো কাঁদছে। রিক বাধা দিচ্ছে না। কাদুক না। কাঁদলে কষ্ট কমে।
“তুলি কি হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে? কাল তো তোমাদের গার্ডিয়ান নিয়ে আসতে বলেছে স্কুল থেকে। তা নিয়ে কোনো পবলেম
তুলি এবার রিকের বুক থেকে মাথা তুলে। হেঁচকি তুলে বলে
” আমি বাড়ি যাবো
“বলো না কি হয়েছে তোমার?
” কিছু হয় নি
তুলি উঠে দাঁড়ায়।
“তুলি
” প্লিজ স্যার ভালো লাগছে না আমার
তুলি চলে যায়। রিক বুঝতে পারছে না মেয়েটার কি হয়েছে।
বাসায় ফিরে তুলি দেখে সায়ান রান্না করছে আর মায়া আকাশ শুভ ওরা সায়ানকে হেল্প করছে। তুলি সেদিকে না তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে
“তুলি
সায়ানের ডাকে তুলি দাঁড়ায়।
” এতো তারাতাড়ি স্কুল থেকে চলে এলি যে। আর তোর চোখ মুখ এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেনো? কি হয়েছে তোর?
তুলি রুমে ঢুকে জোরে দরজা আটকে দেয়। সায়ানের সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তুলির। আয়নার সামনে দাঁড়ায় তুলি।
“আমি কেনো কাঁদবো? একদম কাঁদবো না আমি। আমার বাবা মারা গেছে। আমাকে বড় হতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে।
একা একা কথা গুলো বলে। ওয়াশরুমে চলে যায় তুলি। একঘন্টা সাওয়ার নেয়। নীল একটা থ্রি পিছ পরে। খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু রান্না না করলে তো আর পেটে খাবার যাবে না। কিচেনে চলে যায়। সায়ান আর ওর ফ্রেন্ডরা কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে আর খাচ্ছে। তুলি ওদিকে পাত্তা না দিয়ে রান্নায় মনোযোগ দেয়।
তুলির ফোনটা বেজে ওঠে। ফোন বাজার শব্দে সবাই তুলির দিকে তাকায়। তুলি ফোনটা নিয়ে ছাঁদের দিকে চলে যায়
” হেলো স্যার বলেন?
“কি করে আমার বিউটিকুইন
“কিছু না। আপনি
” তোমার কথা ভাবছি।
“আমার কথা
” হুম
“বাট কেনো?
” তুমি বুঝো না কেনো?
“নাহহহ
” আই লাভ ইউ
“আই লাইল ইউ বাট ডোন্ট লাভ
” তুমি তো এখনো ছোট। তাই লাইক ই ঠিক আছে। বড় হও তারপর না হয় লাভ করো
“স্যার আমি মেরি
” তুলি
পেছন থেকে সায়ানের কন্ঠ শুনে তুলি পেছনে তাকায়।
“পরে কথা বলছি
রিকের ফোন কেটে দেয় তুলি। সায়ানকে পাশ কাটিয়ে যেতে নেয়। সায়ান তুলিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে
” ছাড়ুন আমাকে
“কার সাথে কথা বলছিলি
” যার সাথেই বলি তাতে আপনার কি?
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সায়ান তুলিকে ছাঁদের শেষ পান্তে নিয়ে আসে।
“আর কখনো বলবি আমার কি?
তুলি ভয় পেয়ে যায়।
” নাাা
“মনে থাকে যেনো
সায়ান তুলিকে ছেড়ে দেয়। তুলি হাফ ছেড়ে বাঁচে
” কার সাথে কথা বলছিলি
“কাল আমার স্কুলে গার্ডিয়ান নিয়ে যেতে বলেছে। তো আপনি যদি
” তোর মনে হয় আমি যাবো তোর সাথে? কখনো না। নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে শেখ
তুলি মাথা নিচু করে বলে
“সরি।
তুলি চলে যায়।
নিচে নামতেই আকাশ ডাক দেয়
” তুলি ভাবি
তুলি এগিয়ে যায়
“হুম ভাইয়া বলেন
” বসো না আমাদের সাথে আড্ডা দেই
“নাহহহ। ওর আড্ডা দিতে হবে না। রুমে যা তুই
পেছন থেকে সায়ান কথাটা বলে
” আকাশ ভাইয়া পরে কোনো সময় আমরা দুজন আড্ডা দেবো ঠিক আছে
তুলি হাসি মুখে বলে আকাশকে। আকাশ ও একগাল হেসে তুলির কাছে নাম্বার চায় তুলিও দিয়ে দেয়। সায়ান তো রেগে আগুন হয়ে আছে।
রাতে তুলি পরছে। তখন কোথা থেকে সায়ান এসে তুলির হাত থেকে বই ফেলে দেয়
“পবলেম কি আপনার
” তোর সমস্যা কোথায়? আকাশের সাথে কিসের এতো কথা তোর।
“কোথাও পোরা পোরা গন্ধ পাচ্ছি
” বাজে কথা বন্ধ কর
“বাজে কথা কই বললাম।
” আকাশের সাথে বেশি কথা বলবি না
“কই আমি তো আপনাকে বলি না মায়া আপুর সাথে কথা বলবেন না
” আমি মায়ার সাথে কথা বলি তাতে তোর কি
“সেম টু ইউ। তাছাড়া ও আকাশ ভাইয়া খুব ভালো মানুষ
” তোর কাছে আকাশের সার্টিফিকেট চাই নি।
“দিচ্ছি ও না। আমি পড়বো আপনি যেতে পারেন।
সায়ান তুলির দিকে ঝুকে বলে
” আমার কথার বাইরে যাবি না। তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে
সায়ান তুলির হাতে বই দিয়ে চলে যায়। তুলি পরায় মনোযোগ দেয়।
সন্ধায় তুলি কফি খাচ্ছে বেলকনিতে বসে। তখন সায়ান হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে তুলির রুমে ঢোকে
“তুলি
” কান খোলা আছে
“তৈরি হয়ে নে। বেরোবো
” আমি যাবো না
“তুলি
” চিৎকার করছেন কেনো? আপনি খুব বাজে। আমাকে আবার একা ফেলে চলে আসবেন।
“তুলি আমি টেন কাউন্ট করবো। এরমধ্যে যদি রেডি হতে না যাস তো তোর একদিন কি আমার একদিন
” সব সময় এমন পেচা হয়ে থাকেন কেনো? করলার মতো কথা বলেন সব সময়। বলি একটু কি হেসে কথা বললে কি আপনার ফাঁশি হয়ে যাবে না কি? যত সব
তুলি শপিং ব্যাগটা নিয়ে সায়ানকে ভেংচি কেটে চলে যায়।
হলুদ লেহেঙ্গার কাঁচা ফুলের গহনা দারুণ লাগছে তুলিকে। সায়ান চুল ঠিক করছিলো
“চলুন
সায়ান তুলির দিকে চেখ আটকে যায়। এতো সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে
” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
“এতো সেজেছিস কেনো?
” সেজেছি তো
“সাজতে কে বলেছে
” সাজতে কারো পারমিশন লাগবে জানা ছিলো না
“আর কখনো সাজবি না
” ঠিক আছে যাবো না
“চল
সায়ান তুলির হাত ধরে যায়।
আজ শুভোর গাঁয়ে হলুদ। বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সায়ান আর তুলি শুভোদের বাড়িতে ঢুকছে তখন কোথা থেকে মায়া এসে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে।
তুলি বিরক্ত হয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া পাতলা একটা হলুদ শাড়ি পরেছে। শরীরের পঞ্চাশ ভাগ দেখা যাচ্ছে
” আমাকে কেমন লাগছে সায়ান?
“মায়াপু এভাবে জাপটে ধরে থাকলে দেখবে কি করে? আর না দেখলে বলনে কি করে
মায়া সায়ানকে ছেড়ে দেয়। তুলি দাঁত কেলিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়।
” এবার বলো সায়ান
“ভাইয়া ভালো করে দেখে বলেন
সায়ান রাগী চোখে তুলির দিকে তাকায়।
” ভালো
“শুধু ভালো
“অনেক ভালো
” তুলি তোমাকে জাস্ট ওসাম লাগছে। আমি তো চোখই ফেরাতে পারছি না।
কারো কথায় তুলি সায়ান মায়া পেছনে তাকায়। মানুষটাকে দেখে তুলির মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু সায়ানের খুব রাগ হয়। হাত মুঠ করে ফেলে সায়ান।
চলবে