ভালোবাসি পর্ব-১১

0
5596

#ভালোবাসি
#পর্বঃ১১
#Tanisha Sultana (Writer)

রাতে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে তুলি। রুমের ভেতরে ঢুকতে ইচ্ছে হচ্ছে না। একটু দাঁড়িয়ে থেকে মায়ের রুমে চলে যায় তুলি। তুলির মা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।

“মা

” কি রে তুই এখানে ঘুমাতে যাস নি

তুলি বিছানায় শুয়ে বলে

“আমি তোমার কাছে ঘুমাবো

” কি বলছিস তুই

“তুই এখানে ঘুমাবি আর সায়ান ওখানে ঘুমাবে

তুলির নানু বলে

” হুম

“একদম না। তুই এখুনি যাবি ওই রুমে

” আমি যাবো না।

তুলির মা আর নানু তুলিকে ঠেলেঠুলে সায়ানের রুমে পাঠায়। তুলি আবার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে

“দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

পেছন থেকে সায়ান কথাটা বলে। তুলি চমকে পেছনে তাকায়

” আপনি এখানে

“তোকে খুঁজতে গেছিলাম

” কেনো?

“খালি কেনো কেনো করিস কেন? রুমে চল

সায়ান রুমে চলে যায়। তুলিও পেছন পেছন যায়। সায়ান খাটে বসে পারে। তুলি দাঁড়িয়ে আছে।

” দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

“না মানে আমি ঘুৃমাবো কোথায়?

” এতো বড় খাট আর তুই ঘুমানো জায়গা পাচ্ছিস না

“খাটে তো আপনি ঘুমাবেন

” তো

“আমি আপনার সাথে এক বেডে

” কেনো আমি তোর ভাই হই। তো আমার সাথে ঘুমালে কি হবে? রুহিও তো মাঝে মাঝে আমার কাছে ঘুমায়

“রুহি আর আমি এক হলাম?

” তুই ই তো বলতি তুই আর রুহি এক। তাহলে এখন কথা পাল্টাছিস

“আপনার সাথে কথা বলার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে

” তুই কি আমার সাথে কথা বলার জন্য মুড নিয়ে এসেছিলি

“আপনি অসয্যকর। আপনাকে আমার সয্য হয় না

” কিচ্ছু করার নেই আমাকেই তোর সয্য করতে হবে।

তুলি সোফায় শুয়ে পরে।

“তুই বেডে আয়

” লাগবে না

“কোলে করে আনতে পারবো না। তুই অনেক ভারি

তুলি সোফার কুশন ছুড়ে মারে সায়ানকে। সায়ান ধরে ফেলে। তুলি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে খাটে শুয়ে পরে সায়ানকে পেছন ফিরে। সায়ান তুলির পাশে শুয়ে পরে।

” তুলি
তুলি কোনো কথা বলে না

“আই এম সরি

” কিসের জন্য

“তোর সাথে অনেক বাজে বিহেব করেছি। কিন্তু কি করবো বল আমি তো মায়াকে সত্যি খুব ভালোবাসতাম। মায়ার জায়গায় তোকে মানতে পারি নি

তুলি সায়ানের দিকে ঘুরে বলে

” এখন মানতে পেরেছেন

“তুই খুব ছোট। আমার সাথে তোকে কোনোভাবেই মানায় না। তোর এখন লেখাপড়া করার বয়স। এই বয়সে তোকে সংসার করতে হচ্ছে।

” এতো ঘুরিয়ে পেছিয়ে বলার কি আছে সোজাসুজি তো বলতে পারেন আপনি আমাকে মানতে পারবেন না। আমিও আপনাকে মানতে পারবো না বা কখনো মানবোও না।

“রিক কে মানলেই হবে

” রিক কে মানলে আপনি খুশি তো

সায়ান চুপ হয়ে যায়।
তুলি একটু হেসে বলে

“আপনি চিন্তা করবেন না আমি দাদু বড়বাবা সবাইকে মেনেজ করে দেবো। আপনি ভাবছেন আমি থাকলে আপনার বিয়ে করতে পবলেম হবে তাই আমাকে রিকের গলায় ঝুলাতে চাইছেন। আমাকে নিয়ে আপনার কোনো পবলেম হবে না প্রমিজ

” এতো কথা কেনো বলিস তুই? তুই ই তো রিকের সাথে ঢলাঢলি করতি তাই তো

“মানে কি? ঢলাঢলি করার স্বভাবটা আপনার আমার না

” তাই তো দেখতাম

“কথায় বলবো না আপনার সাথে

তুলি পেছন ফিরে শুয়ে পড়ে। সায়ানও আর কিছু বলে না।

সকাল বেলা কারো ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙে সায়ানের। অননং নাম্বার। সায়ান ফোন রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে

” হেলো

ওপাশ থেকে শুভ বলে

“মায়া সুইসাইড করতে গেছিলো আমরা ওকে হসপিটালের নিয়ে এসেছি

” কি বলছিস তুই

“তুই তারাতাড়ি চলে আয়।

” মায়ার বাবা মাকে জানিয়েছিস

“ওনাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না

” আমি আসছি

সায়ান ফোন রেখে পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে

“তুলি আমি এখন ঢাকা যাবো

” মানা করছে কে

সায়ান তুলির মাথাটা সায়ানের বুকের ওপর নিয়ে একহাত দিয়ে তুলিকপ জড়িয়ে ধরে

“তুই এভাবে কেনো কথা বলিস আমার সাথে। আমি তোর বর রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবি

” বররা বুঝি এমন হয় সব সময় বউদের কষ্ট দেয়

“আমি তোকে কষ্ট দিয়েছি

” নাহহহ। আপনি কষ্ট দিলেই আমি কষ্ট পাবো না কি?

“মায়া সুইসাইড করতে গেছিলো

” করে তো আর নাই

“এটা কেমন কথা তুলি। যদি কিছু হয়ে যেতো

” কষ্ট হচ্ছে

“আমি যাবো

তুলি সরে যায়। সায়ান উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়। কিন্তু তুলি ওঠার নামই নেই।

” তুলি আমি যাচ্ছি

তুলি একবার সায়ানের দিকে তাকায়। সায়ান তুলিকে বায় বলে চলে যায়।

তুলি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যায়। ওখানে মামা নানা মা নানু মামি সবাই আছে

“কি রে সায়ান কোথায়? (নানু)

তুলি খাবার মুখে দিতে দিতে বলে

” চলে গেছে

“চলে গেছে মানে কি (মা)

” চলে গেছে মানে চলে গেছে। বাংলা বুঝো না তোমরা।
চিৎকার করে বলে তুলি

“এমন করে বলছিস কেনো? কি হয়েছে?(মামি)

” কিচ্ছু হয় নি।

তুলি শান্ত হয়ে খেতে থাকে

“তুলি

তুলির নানু কিছু বলতে যায়। তুলির নানা থামিয়ে বলে

” আহহ চুপ করো। আমার বুনুকে খেতে দাও

কেউ আর কিছু বলে না। তুলি খাওয়া শেষ করে রুমে চলে যায়। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সায়ান ফোন করেছে। তুলি সিমটা বন্ধ করে দেয়। নতুন সিম চালু করে। এই সিমটা রিক কিনে দিছিলো।

সিমটা চালু হতেই অনেক মেসেজ আসে। যা রিক দিয়েছে। ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে রিকের নাম্বার। তুলি ধরবে কি ধরবে না এসব ভাবতেই ফোনটা কেটে যায়। আবার বেজে ওঠে। ফোনটা রিসিভ করতেই রিক উত্তেজিত কন্ঠে বলে

“তুলি কোথায় তুমি? তোমার ফোন বন্ধ কেনো? তোমার বাড়িতেও গিয়েছিলাম বাড়িতে তালা ঝুলছে। সায়ান ভাইয়ার অফিসেও গিয়েছিলাম কিন্তু ওনাকে পায় নি

” স্যার আমি দেশের বাড়ি চলে এসেছি

“কিন্তু কেনো?

” এমনিতেই

“তোমার বাড়ি কোথায় এড্রেস দাও আমি এখুনি যাবো

” আমার কথা শুনুন

“তুমি জানো কতো মিছ করেছি তোমাকে। কেনো চলে গেছো

” আমি বিবাহিত স্যার। আমার স্বামী আছে। আর আমি আমার এই লাইফ টা নিয়ে অনেক হ্যাপি। আপনি আমাকে ভুলে যান।

তুলি ফোনটা কেটে দেয়।

চলবে