ভালোবাসি প্রেয়সী পর্ব-০৪

0
295

#ভালোবাসি_প্রেয়সী [০৪]
#জান্নাতুল_বিথী

ইমাদ ভাইয়ের কথা শুনে আমি আহাম্মকের মতো তার দিকে তাকাই আছি, এই কয়েক মিনিট আগেও আমি লোকটাকে কতো ভালো মানুষ মনে করেছিলাম! ভাবছি সে হয়তো সত্যিই নিজের ভুল বুঝে ক্ষমা চাইছে। কিন্তু এখন আসল কাহিনী বুঝলাম। আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য উনি ক্ষমা চাওয়ার নাটক করছে! সবটা উপলব্ধি করতেই আমি ক্ষেপে উঠে বললাম,

‘আপনাকে এক মিনিটের জন্য ভালো ভেবেছিলাম, কিন্তু আপনি যে আসলে কি সেটা এখন বুঝলাম! আপনি মানুষটা…

‘সাট আপ, যেটা বলছি সেটা করো!’

কথার মাঝে তার ধ’ম’ক শুনে থেমে যাই আমি। চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস ফেলে আবারো বললাম,

‘আমি কানে ধরবো না, কি করবেন আপনি?’

আমার কথা শুনে উনি কিছুটা রে’গে গিয়ে বললো,

‘আমি আরো কি কি করতে পারি সে সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনাই নেই, তাই যেটা করতে বলছি সেটা করো!’

‘আমি কানে ধরতে পারবো না, আজব আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে কানে ধরে উঠবস করবো? লোকে কি ভাববে?’

‘লোকে ভাববে কারনেই তো নির্জন জায়গায় এসেছি, নাও এবার তাড়াতাড়ি কানে ধরো!’

একেতো নির্জন জায়গার কারনে ভ’য় পাচ্ছি, তার উপর তার এসব কথা শুনে রা’গ লাগে অনেক। আয়েশার মা সব সময় বলবে রে’গে গেলে নাকি আমি কারো উপর রা’গ দেখাতে পারিনা। নিজের রা’গ প্রকাশ ও করতে পারি না। কারো উপর চিৎকার চেঁচামেচি ও করতে পারি না। যা করতে পারি তা হলো ঘাড় ত্যাড়ামি। তাইতো ইমাদ ভাইয়ের এমন কথার পিঠে ত্যাড়ামি করে বললাম,

‘আমি কানে ধরবো না!’

‘ফাইন!’

বলে সে বাইকে উঠে পড়ে, তাকে এতো তাড়াতাড়ি হার মানতে দেখে আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই। উনি বাইকে উঠে বললো,

‘বাইকে উঠে বসবা নাকি আমি একাই চলে যাবো!’

‘এখন আবার কোথায় যাবো?’

‘এই মেয়ে এতো প্রশ্ন করছো কেনো তুমি? এমন ভাবে প্রশ্ন করছো মনে হচ্ছে তোমার বাবা মা তোমাকে জন্ম দিয়েছে আমাকে প্রশ্ন করে জ্বালিয়ে মারতে। চুপচাপ যেটা বলি সেটা করতে পারো না?’

ইমাদ ভাইয়ের ধ’ম’কে কেঁপে উঠি আমি, চুপচাপ কোনো কথা না বলেন পুনরায় বাইকে উঠে বসি। বাবা মা কে নিয়ে কথা উঠায় চোখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলের ফোটা জমা হয়। নিচের দিকে তাকিয়ে অতি সপ্তপর্ণে জল টুকু মুচে নেই, যে মানুষটা আমাকে ভালো করে ছিনেও তার সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে কোনো লাভ আছে? দশ মিনিট পর উনি একটা পার্কের সামনে এসে বাইক থামিয়ে আমাকে ইশারা করলে আবারো নেমে পড়ি আমি। ইমাদ ভাইয়াও বাইক থেকে নেমে চাবি পকেটে নিতে নিতে বললো,

‘তোমাকে এখানে কেনো এনেছি সেই প্রশ্ন করবে না প্রশ্নকুমারী?’

তার মুখে নিজের অদ্ভুত নাম শুনে একবার তার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেই। সত্যি বলতে মন খুব উশখুশ করছে তাকে প্রশ্ন করতে। কিন্তু তার তখনকার রা’ম ধ’ম’ক ভুলিনি আমি। তাই তো ভদ্র মেয়ের মতো তার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে সামনে অগ্রসর হই! আমাকে প্রশ্ন করতে না দেখে উনি হয়তো কিছুটা অবাক হয়, তাই তো নিজে থেকেই বললো,

‘ভেবেছিলাম তোমাকে হালকা পাতলা ট্রিট দিয়ে ছেড়ে দিবো। কিন্তু তুমি তো সহজ কিছু গ্রহন করার মতো মেয়ে না, তাই এই পরিকল্পনা!’

আমি উৎসুখ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘কোন পরিকল্পনার কথা বলছেন আপনি?’

আমার কথা শুনে সে ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসে, আমি অবাক পানে তার সেই হাসি দেখি। কে বলবে এই মানুষটা দশ মিনিট আগেই আমাকে এতো হু’ম’কি ধা’ম’কি দিলো! একটু আগ পর্যন্ত ও তার রা’গের অগ্নিকান্ডের জন্য আশে পাশে ঘেরাও মুশকিল হয়ে পড়েছিলো। আর এখন সে কি না নিজেই হাসছে? এইটা কি মানুষ নাকি গিরগিটি? উনি স্বাভাবিকতা বজায় রেখে শুধালো,

‘এই তো প্রশ্নকুমারী তার আসল রুপে ফিরে আসছে। এখন আমরা প্রেমিক প্রেমিকার যুগল হয়ে পার্কে ঘুরে বেড়াবো!’

ইমাদ ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই, বলছে কি এই লোকটা? আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে উনি দুষ্টু হেসে বললো,

‘দাড়াও গুগলে সার্চ দিতে হবে কিভাবে প্রেমিকার সাথে সময় কাটাতে হয়, কিভাবে তার সাথে রোমাঞ্চ করতে হয় সেটাও দেখতে হবে। এসবে আমার আবার ধারনা একটু কম!’

তার কথা শুনে চমকে উঠি, পুরো কথাটা ঠিক বুঝতে পেরে সেখানেই থমকে দাড়াই আমি! আমাকে দাড়াতে দেখে উনি নিজেও দাড়িয়ে পড়েন। অতঃপর কাছে এসে আমার হাত মুঠো বন্ধি করে আবার হাটা ধরে। আমি বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেছি মনে হচ্ছে। কয়েক মিনিট লাগে নিজেকে সামলাতে। যখন বুঝতে পারি নিজের হাত তার মুঠো বন্ধি তখন তাড়াহুড়ো করে হাত ছাড়িয়ে বললাম,

‘আপনার লজ্জা করছে জুনিয়র একটা মেয়েকে এসব অ’স’ভ্য টাইপের কথা বলতে?’

উনি একটা বেঞ্চে বসে পড়ে আমাকেও টেনে বসিয়ে দেয়। অতঃপর বেঞ্চের সাথে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে বললো,

‘তুমি কি আমার বোন নাকি যে তোমার সাথে কথা বলতে লজ্জা পাবো? প্রেমিকার সাথে মানুষ যেভাবে কথা বলে আমি সেভাবেই বলছি!’

‘আজব প্রানী আপনি ভাইয়া!’

‘স্বামীর নাহলে প্রেমিকের বয়সী একটা ছেলেকে ভাই বলছো লজ্জা করছে না তোমার?’

এবার আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম,

‘এমন করছেন কেনো আপনি ইমাদ ভাই? আমার সত্যিই ভুল হইছে এবার তো ছাড়ুন আমায় প্লিজ!’

আমার কথা শুনে উনি ফিক করে হেসে দেয়! হাসতে হাসতে বললো,

‘প্রেমিকার সাথে বাদাম খেতে হয়, সেটা মিস করতে চাইছি না! এখানে বসো আমি নিয়ে আসছি। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে খবর করে ফেলবো!’

উনি উঠে দাড়ালে তার দিকে অসহায় লুকে তাকাই আমি, উনি চলে যাওয়ার পর আয়েশাকে ফোন করি। সে ফোন ধরেই বললো,

‘স্যরি জান তোকে ফেলে চলে আসতে হলো, তুই কি এখনো ইমাদ ভাইয়ার সাথে আছিস?’

‘হু, তুই কই আমাকে এখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যা প্লিজ!’

‘আমি এখনো ইমনের সাথে আছি, সে আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসছে। কি করবো বল এখান থেকে বের হতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না সহজে!’

‘ঠিকাচে তুই ওই দিকের কাজ শেষ করে আয়।’

আমি কথা শেষ করার আগেই কেউ আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়। চমকে উঠে আমি সেদিকে তাকালে দেখি ইতি আপু দাড়িয়ে আছে আমার সামনে। তাকে দেখে আমি উঠে দাড়াতেই সে আমার ফোনটা ছুড়ে ফেলে দেয় নিচে। তার কাজে হতভম্ব হয়ে যাই আমি। কিছুটা ঝাঁঝালো স্বরে বললাম,

‘এটা কি করলেন আপনি আপু?’

‘যা করেছি বেশ করেছি, তোমার সাহস কি করে হয় ইমাদের সাথে এভাবে ঘুরে বেড়ানোর?’

আজ যা কিছু হচ্ছে সব কিছুর শুরুটা ইতি আপুই করছে। তাই তার উপর আলদা একটা ক্ষোভ আছে আমার। একেতো তার উপর সেদিনের রা’গ তার উপর আজ আমার ফোন ভেঙ্গে ফেললো। সব মিলিয়ে আমি কিছুটা চেঁচিয়ে বললাম,

‘সবটার শুরুটা তো আপনারই করছেন, তাহলে এখানে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে? আপনার বন্ধু আর আপনারা মিলেই তো ড্রামা টা সাজালেন! তারপরো এমন করছেন কেনো?’

আমার এভাবে কথাটা হয়তো সে আশা করেনি। তাইতো আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

‘আমি ভেবেছিলাম ইমাদ তোমাকে পা’ত্তা দিবে না, যাই হোক তুমি আজ থেকে ওর আশে পাশেও থাকবে না।’

তার কথায় তরতর করে আমার রা’গ বেড়েই চলেছে। তার দিকে আঙ্গুল তুলে বললাম,

‘আপনারা কি আমাকে পুতুল পেয়েছেন যে যখন যা খুশি তা করতে বলবেন? লাইফ আমার তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত ও আমি নিজেই নিবো। এখন আমার যা ইচ্ছে হবে আমি তাই করবো, যদি প্রয়োজন পড়ে তো ইমাদ ভাইয়ার সাথে প্রেম ও করবো দেখি আপনারা কি করতে পারেন!’

চলবে,,,,,,,,