ভালোবাসি প্রেয়সী পর্ব-০৩

0
320

#ভালোবাসি_প্রেয়সী [০৩]
#জান্নাতুল_বিথী

ইমাদ ভাইয়ের ভ’য়ে দুইদিন ভার্সিটিতে যাইনি। এই দুইদিন আয়েশাও যায়নি, তাই আজ এক প্রকার জো’র করে নিয়ে আসছে আমাকে। সেই ঘটনার পর সাত আটদিন উচিত ছিলো গর্তের ভেতর লুকিয়ে থাকার। কিন্তু আয়েশার জন্য পারিনি, তার হবু বর ইমন ভাইয়া অনেক রা’গা রা’গী করছে কারনে অগত্যই আমাকে নিয়ে সে আজ বের হইছে। এতে আমি তার উপর চরম বি’র’ক্ত। তারপরো কোনো রকমে বি’র’ক্তি ভাব চেপে ভার্সিটির গেটের সামনে এসে উপস্থিত হই! আয়েশা আশে পাশে তাকিয়ে ইমন ভাইয়াকে খুজতেছে। আমি যদিও তাকে ছিনি না তারপরো আশে পাশে চোখ বুলিয়ে দেখছি কাউকে পাই কিনা।

‘এতক্ষনে তোমার আসার সময় হলো? সেই কখন থেকে খুজে চলেছি তোমাকে কোনো খবর আছে?’

হঠাৎ ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর শুনে পাশে তাকিয়ে দেখি আয়েশা একটা ছেলেকে শাসাচ্ছে। বুঝলাম এই বেচারিই তার হবু বর, ভাইয়া প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজে ভ্রু নাচিয়ে বললো,

‘তিন দিন পর ভার্সিটি এসে আবার আমার উপর রা’গ দেখাচ্ছ?’

তার কথা শুনে সে জ্বিবে কামড় দিয়ে বললো,

‘এই স্যরি স্যরি রা’গ করে না, আসলে তোমাকে খুজতেছিলাম সেই কখন থেকে।’

‘তুমি গেইট দিয়ে যখন ঢুকছিলা তখনই তোমাকে দেখেছি আমি। এবার বলো কতক্ষণ থেকে খুজছো?’

ইমন ভাইয়ার কথায় আমি ফিক করে হেসে দেই! এতক্ষনে হয়তো উনি আমাকে খেয়াল করছে। আমার দিকে তাকিয়ে মনে করার ভঙ্গিতে বললো,

‘তুমি নিশ্চয়ই উপমা, আয়েশার বোন তাইনা?’

আমি উপর নিচ মাথা নাড়ালে উনি বললো,

‘ভালোই করছো দুজনে একই ভার্সিটিতে ভর্তি হইছো। নাহলে এই অধমকে কে সামলাতো আল্লাহ্ই জানে।’

‘এই কি বললে তুমি?’

‘ কই কিছু বলছি নাকি আমি? তুমি কিছু শুনেছো উপমা? আচ্ছা চলো আমার ফ্রেন্ডদের সাথে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই!’

পর পর দুইটা প্রশ্ন করেও উত্তরের অপেক্ষা না করে আরেকটা কথা বলায় আমি চোখ গোল গোল করে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। অতঃপর তার কথাটা বোধগম্য হতেই বললাম,

‘আপনি আশুকে নিয়ে যান ভাইয়া, আমি বরং ক্লাসে যাই!’

‘আরে চলো কিছু হবে না, সবার সাথে পরিচয় হলে ভালোই লাগবে তোমাদের!’

মূলত আমি যেতে চাইছি না ইমাদ ভাইয়া আর তার গ্যাংয়ের মুখোমুখি হওয়ার ভ’য়ে! কিন্তু ভাইয়া এতো করে অনুরোধ করছে তার উপর তার সাথে আমার নতুন পরিচয় তাই না করবো কিভাবে তাই ভাবছি। আয়েশার দিকে অসহায় লুকে তাকাতেই সে শুধালো,

‘আরে তোমাকে তো ইন্টারেস্টিং ব্যাপারটা জানাতেই ভুলে গেছি!’

আমার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে আমার সাথে ভার্সিটির প্রথম দিনে ঘটা কাহিনী গুলো খুটিয়ে খুটিয়ে ইমন ভাইয়াকে জানালো সে। সব শুনে ভাইয়া মুখে হাত দিয়ে বললো,

‘ওহ মাই গড ভাবিইইই!’

তার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে তাকালে ভাইয়া হেসে বললো,

‘ইমাদের পক্ষ থেকে আমি সবটাই শুনেছি, সে ইচ্ছে করে এমন ব্যবহার করেনি। বলতে পারো অন্যের রা’গ তোমার উপর উঠাইছে। আসলে সে কিন্তু এমন ছেলে না।’

‘সে যেহেতু ইচ্ছে করে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি তাহলে তার উচিত ছিলো আমাকে স্যরি বলার। উনি কি আমাকে স্যরি বলছে? তাহলে বুঝবো কিভাবে সে ভালো ছেলে?’

‘কে কাকে স্যরি বলবে শুনি?’

হঠাৎ এমন কথায় চমকে উঠি আমি। পেছন থেকে ইমাদ ভাই কথাটা বলছে, তার কথা শুনে পেছনে ঘুরার আর ইচ্ছে হলো না। সামনে পা বাড়াতে নিলেই সে বললো,

‘ক্লাস শেষ করে গেইটের সামনে দাড়াবে, না দাড়ালে বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হবো কিন্তু গার্লফ্রেন্ড!’

তার কথায় থমকে দাড়াই আমি, পেছনে ঘুরে একবার তার দিকে তাকিয়ে দেখি দুষ্টু হেসে সে আমার পানেই তাকিয়ে আছে। আমি আবার সামনের দিকে পা বাড়িয়ে মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম ইমাদ নামক প্যা’রা থেকে যেনো তাড়াতাড়ি মুক্ত হই!
.
ক্লাস শেষ করে সত্যিই আমি গেইটের সামনে এসে দাড়াই! আয়েশা ইমন ভাইয়া সাথে আলাদা সময় কাটাতে গেছে। একেতো একা বাড়ি ফিরবো তার উপর যদি সে সত্যি সত্যি বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হয় তাহলে কি করবো আমি? তাই উপায় না পেয়ে অগত্যই দাড়াতে হলো। দুই মিনিটের মাথা হঠাৎ কেউ শিষ বাজিয়ে উঠলে আমি চমকে উঠে তার দিকে তাকাই। ইমাদ ভাইয়া বাইকে বসে আছে। তাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে তার সামনে দাড়াতেই সে বললো,

‘দ্রুত উঠে পড়ো!’

‘কোথায়?’

আমার কথায় সে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

‘আমার মাথায়, বাইকে উঠো ফা’জি’ল!’

তার কথা আমার পছন্দ হয়নি, তাই ত্যাড়ামি করে বললাম,

‘পর পুরুষের বাইকে উঠি না আমি!’

‘ভুলে যাচ্ছো আমি কে হই তোমার?’

‘ভুলতেই তো চাই কিন্তু আপনি তো ভুলতেই দিচ্ছেন না, আজব পাব্লিক ভাই আপনি!’

‘তুমি কি বাইকে উঠবা নাকি কোলে করে উঠাবো?’

তার কথায় হা করে তাকিয়ে থাকি আমি! এই লোকটার মাথা পুরাই গেছে হয়তো। আমি একটা ফাকা ঢোক গিলে বললাম,

‘সবাই কি ভাববে?’

‘সবাই অলরেডি জানে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড! এখন যদি আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমুও খাই তাও কেউ কিছু বলবে না!’

অতি বিস্ময়ে মাথায় যেনো ঠা*ডা পড়ছে আমার! স্তব্ধ হয়ে সে জায়গাতেই দাড়িয়ে আছি, আমাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে উনি বাঁকা হেসে বললো,

‘চুপচাপ বাইকে উঠবা নাকি আরো কিছু শুনতে চাও?’

‘আমি কখনো বাইকে উঠিনি, ভ’য় করে আমার!’

‘উঠো ভালো করে বসলে কিছু হবে না!’

বলে কিভাবে উঠে বসতে হবে তা সে আমাকে শিখিয়ে দেয়। আমি আশে পাশে একবার অপ্রস্তুত দৃষ্টি ফেলে বাইকে উঠে বসলে সে বললো,

‘নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসো, আর এক হাত আমার কাধে রাখো যেনো পড়ে না যাও! তবে হ্যা নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে তবেই!’

তার কথা শুনে ভেংচি কেটে আমি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে তার কাধে হাত রাখি! ইমাদ বাইক টান দিয়ে মনে মনে বাঁকা হাসে! মেয়েটার সাথে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড খেলার তার কোনো ইচ্ছেই নেই! সে নিজের জীবন কে আরেকটা সুযোগ দিতে চায়, যে মেয়েটা তাকে দেখেও নি তার জন্য এতো কষ্ট পেয়ে তো কোনো লাভ নেই! আজ যদি মেয়েটা তাকে ছিনতো, তার সাথে পরিচয় থাকতো তাহলে একটা কথা ছিলো। এখন ইমাদের নিজেকেই নিজের কাছে কেনো জানি হাস্যকর লাগছে! অচেনা একটা মেয়ের জন্য নিজের জীবনের ১২ টা বছর ন’ষ্ট করলো! ব্যাপারটা তার কাছে হাস্যকরই বটে! সে এখন ভাবছে নিজের মতো করে সবার সাথে মিলে মিশে চলবে। গত দুই তিন দিন সে অনেক ভেবেছে। তার আগে উপমার একটা বিহীত করতে হবে। তাই তো তাকে নিয়ে বের হইছে এখন। নির্জন এক জায়গায় বাইক থামিয়ে নিজের হেলমেট খুলতে খুলতে ইমাদ বললো,

‘নেমে পড়ো এসে পড়েছি আমরা!’

এমন নির্জন একটা জায়গা দেখে আমার মনে ভীতি কাজ করছে। আমতা আমতা করে বললাম,

‘এতো জন মানব শূন্য একটা জায়গায় কি করতে আসছেন আপনি?’

‘প্রেম করার জন্য এমন একটা জায়গাই তো বেস্ট, সে তুমি বুঝবে না!’

তার কথা শুনে এক লাপে বাইক থেকে নেমে পড়ি আমি। আশে পাশে তাকাতে তাকাতে বলি,

‘খবর দার উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না বলে দিলাম।’

তার কথায় মুখ লুকিয়ে হাসে ইমাদ, কেনো জানি মেয়েটাকে জ্বালিয়ে মজা পায় সে! অতঃপর উপমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা গম্ভীর স্বরে বললো,

‘তুমি বলছো সেদিন আমি ভুল করছি?’

তার কথা শুনে চোখ পাকিয়ে বললাম,

‘অবশ্যই, কেনো আপনার মনে হচ্ছে না আপনি ভুল করছেন?’

‘আচ্ছা আমি মেনে নিচ্ছি আমি ভুল করছি, যেহেতু আমি ভুল করছি সেহেতু তুমি বলো কি করলে আমি ভুল শুধরে নিতে পারবো?’

তার কথা শুনে যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। এমন ইগো নিয়ে চলা ফেরা করা মানুষটাকে বললাম,

‘ভুল যখন করছেন স্যরি বলেন!’

এই কথাটারই অপেক্ষায় ছিলো যেনো সে, মুচকি হেসে কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো,

‘স্যরি উপমা, আসলে সেদিন আমার তোমার সাথে এমন ব্যবহার করা উচিত হয় নি।’

তার মুখে স্যরি শুনে বিশ্ব জয় করার মতো এক গাল হেসে দিলাম আমি। সে একটু থেমে বললো,

‘সেদিন আমি ভুল করছি আর তোমাকে স্যরিও বলছি, এখন কথা হলো গিয়ে সেদিন তো একা আমি ভুল করিনি। তুমিও করছো একজন সিনিয়র স্টুডেন্ট কে নাম ধরে ডাকার মতো অ’প’রা’ধ করছো। এখন আমার কি করার সেটা বলো!’

তার কথা ভেবে দেখলাম আসলেই আমি সেদিন অ’প’রা’ধ করছি। তাই বলছি,

‘আচ্ছা আমি মেনে নিচ্ছি আমি ভুল করছি এখন কি করতে হবে বলুন, ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য!’

ইমাদ এবার বাইক থেকে নেমে সটান হয়ে দাড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,

‘১০০ বার কানে ধরে উঠ বস করো!’

চলবে,,,,,,