ভালোবাসি প্রেয়সী পর্ব-০৮

0
276

#ভালোবাসি_প্রেয়সী [০৮]
#জান্নাতুল_বিথী

চারদিকে ধুম বৃষ্টি হচ্ছে, শহরের রাস্তা ঘাট পানিতে টইটুম্বুর। মেঘলা আকাশ থেকে টপটপ করে জমিনে বৃষ্টির ফোটা পড়ছে, অন্যদিকে আমার চোখ থেকেও টপটপ করে পানি পড়ছে। কিছুতেই মন শান্ত করতে পারছি না আমি! বরাবরই বাবা মায়ের আদরের কন্যা ছিলাম আমি। তাদের সবটুকু ভালোবাসা ও ছিলো আমার জন্য! শৈশবের সৃত্মি হাতড়ে এখনো অব্দি বাবা মা শেষ কোন দিন আমার গায়ে হাত তুলেছে মনে করতে পারি না আমি। খুব বেশি দুষ্টুমি করলে বাবা আমাকে সব সময় খুব করে বকতেন। কিন্তু কখনো গায়ে হাত তুলেনি। মাও বরাবরই এমন ছিলো। তারা মারা যাওয়ার পর আন্টি আঙ্কেল আমাকে সব সময় আগলে রাখতেন। মা”রা তো দূরে থাক কখনো বকাও দিতো না।

এদিকে ইমাদ ভাইয়ের সাথে মাত্র সেদিনের পরিচয়। অথচ সে আমাকে দু দু’বার থা’প্পড় মেরেছে। ব্যাপারটা কোনো মতেই আমি সহজে নিতে পারছি না। সে আমার সাথে যেমন হাসি ঠাট্টার ছলে কথা বলছিলো আমিও তার সাথে তেমন ভাবেই কথা বলছিলাম। তাহলে আমার দোষটুকু এতো গাঢ় করে ধরে আমাকে এতো জনের সামনে অপমান করলো কেনো? অবশ্যই সব দোষ আমারই আমি কেনো সেই লোকের সাথে নিজে থেকে কথা বলতে যাই সব সময়? এখন তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবো প্রতিদিন। আর কখনো তার সাথে নিজে থেকে কথা বলতে যাবো না!
.
ইমনের সাথে বসে আছে ইমাদ, বরাবরই তার মেজাজ বিগড়ে আছে! ইমন নিচের দিকে তাকিয়ে এক মনে আয়েশার সাথে চ্যাটিং করছে, আর একটু পর পর ইমাদ কে পর্যবেক্ষণ করছে,

‘তুই বুঝতে পারছিস মেয়েটা আমার দিকে আঙ্গুল তুলে শাসাচ্ছিলো, আমাকে বলছে সে নাকি আমাকে দু একটা থা’প্পড় ও দিতে পারে। এতে আমার সমস্যা আছে কি না জিজ্ঞেস করছে! তার সাহস দেখছি দিন দিন চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে!’

ফুসে উঠে বললো ইমাদ! এই নিয়ে ছয় বার সে একই কথা বারবার বলছে। প্রথমে অবাক হলেও এখন যতোবারই শুনছে সে কোনো রকমই হেলদোল দেখাচ্ছে না। ডেম কেয়ার ভাব নিয়ে আয়েশার সাথে তখনো ভালোবাসার খুনশুটিতে মেতে আছে সে! এক সময় ইমাদ তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালে সে বললো,

‘তুই সেধে মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করতে যাস কেনো? প্রেমে পড়ে গেছিস নাকি তার?’

ইমনের কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে ইমাদ! কঠোর গলায় শুধালো,

‘এমন একটা লো মেন্টালিটির মেয়ের প্রেমে পড়বো আমার কি আর কোনো কাজ নেই? একজন কে নিয়ে ভেবেই কূল পাই না আবার আসছে আরেক জনের প্রেমে পড়ার গল্প বানাতে!’

‘তাহলে বারবার তার সামনে গিয়ে বলছিস কেনো তোকে সময় দেওয়ার জন্য?’

‘ভেবেছিলাম আশে পাশে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার নাম করে তার পরিবার সম্পর্কে কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো তাকে!’

‘হঠাৎ ওর পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইছিস কেনো তুই?’

বেশ কৌতূহলী স্বরে বললো ইমন, জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ইমাদ বললো,

‘ওর বাবা মা ১২ বছর আগে খু”ন হইছে। তার মা সম্পর্কে অনেক কিছু জানলেও উপমার বাবা সম্পর্কে কিছু জানিনা। কে ছিলো ওর বাবা? আর কে ই বা খু”ন করছে ওর বাবা মা কে এসব ব্যাপারে একটু জানার ছিলো!’

‘তোর কি মনে হয় ১২ বছর পূর্বের কোনো ঘটনা উপমার মনে আছে? তাছাড়া উপমা তখন বেশ ছোটই ছিলো, আমার মনে হয় না সে কিছু বলতে পারবে!’

‘ওর বাবা কে ছিলো, তার নাম কি ছিলো এসব তো অন্তত বলতে পারবে তাই না?’

‘কি জানি!’

ইমনের এমন উত্তর পেয়ে মনে মনে বিরক্ত হয় ইমাদ! আর সেই বিরক্তি প্রকাশ করতেই পর পর উঠে দাড়িয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায় সে। তাকে মাঝ পথে থামিয়ে হঠাৎই ইমন বলে উঠলো,

‘একটা জিনিস খেয়াল করছিস ইমাদ? তোর জীবন থেকে ১২ বছর একটা ছায়ার মতো লেগে আছে। ছাড়তেই চাইছে না তোকে!’

বলতে বলতে জোরে হেসে উঠে ইমন! ইমাদ তার দিকে এক পলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে চলে যায়!
.
‘তোমার কেনো এটা বিশ্বাস হচ্ছে না উপমা রাদিফ ভাইয়েরই মেয়ে!’

হঠাৎ উপমার নাম কানে আসায় থমকে দাড়ায় ইমাদ। তার মমের কন্ঠস্বর ভেসে আসছে, নিশ্চয় তার ড্যাডের সাথে কথা বলছে! উপমার নাম শুনে কেনো জানি নিজেকে আটকে রাখতে পারে না ইমাদ! আরেকটু এগিয়ে যায় উনাদের রুমের দিকে যেনো কথা স্পষ্ট ভাবে শুনতে পারে! আরেকটু এগিয়ে যেতেই শুনতে পায়,

‘রাদিফের মেয়ে ওদের সাথেই মারা গেছে পারভীন। উল্টা পাল্টা কথা বলবে না, সে মেয়ে যদি ম”রে না যেতো এতোদিনে তাকে আমার ছেলের সামনে হাজির করতাম!’

‘কিন্তু ওর চেহারার সাথে ফাইজা আপার চেহারা অনেক মিলে যায়, এতোটা মিল তো শুধু মাত্র মা মেয়ের মাঝেই থাকে তাই না?’

‘উল্টা পাল্টা চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ো না বলছি, ওরা রাদিফের পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এবং তাদের মৃত দেহ টুকুও খুজে পাওয়া যায়নি। ভুলে যাচ্ছো পুরো শহর খুজেছি তাদের আমরা?’

‘একদিনের ব্যবধানে তারা মরে হাওয়া হয়ে গেছে তাই না? তাছাড়া আখি আপা তো বলছেই তার ননদ মারা যাওয়ার পূর্বে তার স্বামীর কাছে নিজের মেয়েকে দিয়ে গেছিলো। আমার কি মনে হয় জানো? সেদিন ফাইজা আপা আর রাদিফ ভাই উপমাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে উনার ভাইয়ের কাছে দিয়ে দিছিলো। তারপর থেকেই তো তাদের কোনো খোজ খবর নাই! এসব ঘটনা কিন্তু ১২ বছর পূর্বেরই!’

এ পর্যায়ে শিপন সাহেব ধমকে উঠে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘ওরা নিজের মুখে বলছে রাদিফের পুরো পরিবারকে মেরে ফেলেছে ওরা। এবং সবার আগে রাদিফকে ভ”য় দেখানোর জন্য তার মেয়েকেই মারছে ওরা! এসব নিয়ে আর একটা কথা বললেও তোমার খবর আছে। অন্যের বিপদ নিজের ঘাড়ে টেনে নিয়ে নিজের বিপদপদ নিজে ডেকে আনবেনা!’

পর পর মম ড্যাডের এসব কথায় মাথা ঘুরে উঠার উপক্রম হয় ইমাদের। কোনো মতেই সে হিসাব মিলাতে পারছে না! তাদের আর কথার অপেক্ষা না করে সেখান থেকে কেটে পড়ে ইমাদ! নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে তার। চোখ বুজে মনে মনে কয়েকবার আল্লাহ্ কে ডেকে নেয়। তাদের কথার সারসংক্ষেপ কি হতে পারে ভাবলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। একবার ভাবে এসব সত্য নয়, আবার ভাবে হতে কি? তাকে সব তথ্য বের করতে হবে। যদি উপমাই সে হয় তাহলে ইমাদ কখনো ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়!
.
ক্লাস রুমের এক কোণায় চুপচাপ বসে আছি আমি। আমার পাশেই বসে বসে ভাষন দিচ্ছে আয়েশা। চোখ বন্ধ করে সেসবই গোগ্রাসে গিলছি আমি। কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছেও করছে না কেনো জানি! এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে সে বললো,

‘কি হইছে তোর মন খারাপ কেনো?’

‘ভালো লাগছে না!’

‘কেনো?’

‘জানিনা!’

‘এভাবে বলছিস কেনো? চল আমরা বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি!’

‘না!’

‘তুই যাবি তো বাপ ও যাবে চল!’

আয়েশার কথার সাথে না পেরে এক পর্যায়ে উঠে বাহিরে পা বাড়াই।

‘ইমনকে বলবো আমরা একটু ঘুরতে যাওয়ার কথা? বললে কিন্তু নিয়ে যাবে সে!’

‘দরকার নেই, কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না!’

ক্লাস থেকে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে গেলে ইমাদ ভাইয়ের মুখামুখি হই। তাকে এক পলক দেখে চোখ নামিয়ে নিয়ে পাশ কাটিয়ে নিচে নেমে যাই আমি!

চলবে,,,,,,,