ভালোবাসি প্রেয়সী পর্ব-০৯

0
281

#ভালোবাসি_প্রেয়সী [০৯]
#জান্নাতুল_বিথী

উপমা কে এভাবে চলে যেতে দেখে আপনা আপনি ভ্রু যুগল কুচকে যায় ইমাদের। সে কি সত্যি একটু বেশিই রিয়েক্ট করে ফেলেছে? নাহলে মেয়েটা তাকে এভাবে এড়িয়ে চলে গেলো কেনো? এসব ভেবে আপন মনে বিরবির করতে করতে উপরের দিকে চলে যায় ইমাদ!

ইমাদ ভাইয়ের মুখোমুখি হওয়াতে যেনো আমার মনটা আরো একটু বেশিই খারাপ হয়ে যায়! মলিন মুখে আয়েশার পাশে হাটতে হাটতে বললাম,

‘কোথায় যাচ্ছিস আশু?’

‘চল ওই গাছ টার নিচে গিয়ে একটু বসি!’

দূরে একটা গাছকে ইশারা করে বললো সে। দুজনে মিলে সেখানে গিয়ে বসলে পাশেই দেখি ইতি আপু সহ তার দল বলেরা মিলে সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের দেখে আরেকটু গুটিয়ে গিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকি আমি! আমাদের এসে বসতে দেখে হঠাৎ করে ইতি আপু বলে উঠলো,

‘জানিস আকাশ আজ কাল ফাস্ট ইয়ারের যে কি পরিমাণ চ্যাঁচড়া মেয়ে আছে তুই গুনে শেষ করতে পারবি না। সারাক্ষণ সিনিয়র ভাইয়ের পেছনে ঘুরঘুর করবে আর তাদের পটিয়ে পার্কে পার্কে ঘুরবে!’

তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সেখানে হাসির রোল পড়ে যায়! চারদিক থেকে অনেকেই আড়চোখে তাকাচ্ছে এদিকে! কথা গুলো আমাকেই বলছে বুঝতে অসুবিধে হয়না আমার! ঠোঁট কামড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি আমি!ইচ্ছে করছে এখান থেকে উঠে যেতে, কিন্তু উঠে গেলে তারা মনে করবে কথা গুলো আমি গায়ে মাখছি কারনেই উঠে গেছি। আয়েশা আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,

‘উপু, ইমন আমাকে ম্যাসেজ করছে! বলছে কোথাও ঘুরতে যাবে, যাবি তুই?’

আমি দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে না বললাম! হয়তো উত্তরটা তার জানা ছিলো। তাইতো মাথা কাৎ করে বললো,

‘এরপর আর ক্লাস ও হবে না, তুই তাহলে বাসায় চলে যা! আমি যাই?’

আমি কোনো রকমে উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সায় দেই তার উত্তরে।
.

‘উপমার বাবার নাম কি স্যার? আর উনি কে ছিলেন?’

কুশল বিনিময়ের পর হঠাৎ ইমাদের এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় আয়েশার বাবা ইমরোজ সাহেব। বিস্মিত নজরে সে ইমাদের দিকে তাকায়। ছেলেটা তার অফিস বয়ে এসে তার সাথে দেখা করতে চাইছিলো কি এ সম্পর্কে জানার জন্য? তিনি আরো ভেবেছিলেন হয়তো আয়েশার বিয়ের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে আসছে! উনার ভাবনার মাঝেই ইমাদ বললো,

‘আপনার ধারনাই ঠিক স্যার, আমি উপমার সম্পর্কে জানাতেই আপনার অফিসে আসছি!’

ইমাদের কথায় এবার ভড়কে যায় তিনি। সামনের সুদর্শন ছেলেটার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখের চশমাটা ঠিক করে পরে। তার দিকে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘তুমি হঠাৎ উপমার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো কেনো?’

‘আমার প্রয়োজন আছে তাই স্যার!’

কি নির্বিকার চিত্তে জবাব দেয় ছেলেটা। যেনো উত্তর তার সাজানোই ছিলো। যদিও ছেলেটার কাঠ কাঠ জবাবে তার রা’গ করার কথা, কিন্তু তিনি রা’গ করতে পারে না। মনে মনে দারুন একটা হাসি দেয় তিনি। অতঃপর গম্ভীর স্বরে বললো,

‘উপমার মা ছেলেটাকে বিয়ে করার পর থেকে আমি ওদের সাথে আর যোগাযোগ রাখি নাই। যেহেতু উপনার বাবা সম্পর্কে তোমার প্রশ্ন সেহেতু আমার মনে হয় পূর্না সম্পর্কে তুমি সবটা জানো।’

‘কি আজব একটা ব্যাপার তাই না স্যার? আপনি আপনার বোনকে এতো ভালোবাসেন অথচ বোন কোন ছেলেকে বিয়ে করলো, সেই ছেলে কেমন সেসব সম্পর্কে কোনো কিছুই জানেন না আপনি! এটা কি বিশ্বাস যোগ্য স্যার?’

ইমাদের কথায় নড়ে চড়ে বসে ইমরোজ সাহেব, ব্যাপার টা হাস্যকর হলেও সত্যি এটাই যে আসলেই তিনি উপমার বাবা সম্পর্কে কিছুই জানে না। তার বাবা কি করতো বা তার পরিবার সম্পর্কে ও কিছু জানে না তিনি। এবার উনি ইমাদের দিকে তাকিয়ে আগের ন্যায় বললো,

‘যে ছেলেটা আমার বোন কে ফুসলিয়ে এভাবে বিয়ে করলো সে ছেলে সম্পর্কে জেনে আমি কি করবো?’

‘ছেলেটার বউ কিন্তু আপনার আদরের বোন ছিলো!’

‘কি বলতে চাইছো তুমি?’

‘এটাই যে আপনি উপমার বাবা সম্পর্কে কিছু জানেন না সেটা আমার বিশ্বান হচ্ছে না!’

‘তুমি কে যে তোমাকে বিশ্বাস লাগানোর জন্য আমি কথা বলবো? শুনো ছেলে…

‘উপমার বাবার নাম কি ছিলো সেটাতো অন্তত বলতে পারবেন তাই না?’

‘রা-দিফ, রাদিফ ছিলো সম্ভবত!’

রাদিফ নামটা শুনে ইমাদের চোখ দুটো চকচক করে উঠে, ঠোঁটে দেখা দেয় তৃপ্তির হাসি। অনেক বড় কিছু খুজে পেয়েছে যেনো এতোটা খুশি হয়। যদিও সে এখনো পুরো পুরি শিওর না তারপরো তার মন বলছে উপমাই তার পিচ্চু। এবং শেষ পর্যন্ত তার পিচ্চু তারই হবে। ভাবতেই চোখ ছলছল করে উঠে তার। ইমরোজ সাহেব অবাক দৃষ্টিতে ইমাদের চেহারার পরিবর্তন লক্ষ করছিলো। ছেলেটার হঠাৎ খুশি হওয়া হঠাৎ কান্না করা কিছুর মানেই বুঝতে পারছিলো না তিনি। তারপরো ইমাদ যেনো নিজেকে সামলে নেয় তাই তিনি কোনো কথা বাড়ায়নি। চুপচাপ তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। ইমাদ হঠাৎ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে হালকা হেসে বললো,

‘থ্যাংক ইউ স্যার! আমার জন্য এটুকু জবাবই যথেষ্ট!’

‘কিন্তু তুমি হঠাৎ উপমার বাবা সম্পর্কে জানতে চাইলে কেনো বললে না তো?’

ইমাদ ঠোঁট কামড়ে বললো,

‘যাকে বিয়ে করবো তার বাবা সম্পর্কে জানতে চাইবো না তা কি করে হয় স্যার?’

ইমাদের কথায় চমকে উঠে ইমরোজ সাহেব। যে ছেলেটা কিছুদিন আগেও উপমাকে বিয়ে করবে শুনে যেভাবে রিজেক্ট করলো তাতে তিনি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলো, আর সেই ছেলেই কি না বলছে উপমা কে বিয়ে করবে? ব্যাপারটা তার ঠিক হ’জ’ম হচ্ছে না। তিনি বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে তখনো ইমাদের দিকে। ইমাদ মৃদু হেসে বললো,

‘ডোন্ট প্যানিক স্যার, এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করবো না আমি। ইমাদ যখন তার পিচ্চু কে বিয়ে করবে তখন পুরো শহর দেখবে, জানবে!’

ইমাদের কথায় আরেক দফা চমকে উঠে ইমরোজ সাহেব। ইমাদের দিকে তাকিয়ে কোনো রকমে বললো,

‘উপমার নাম পিচ্চু সেটা তুমি জানো কিভাবে? সত্যি করে বলো তুমি কে?’

ইমরোজ সাহেবের কথায় প্রথমে ভ্রু কুচকে তাকায় সে তার দিকে! অতঃপর তার কথার অর্থ বুঝতেই অধর প্রসারিত করে হাসলো সে। তার মাঝে যতোটুকু কনফিউশন ছিলো তাও দূর করে দিলেন ইমরোজ সাহেব স্বয়ং নিজে। ইমাদ উঠে উনার দিকে হালকা ঝুকে বললো,

‘পিচ্চুর ফিউচার হাজবেন্ড!’

বলে আসন ছেড়ে উঠে দাড়ায় সে, ইমরোজ সাহেব তখনো তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো! ইমাদ তার দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। ইমরোজ সাহেবের হতভম্ব হওয়া মুখ খানী চোখের সামনে ভাসতেই সে ফিক করে হেসে দেয়। যে হাসিটার মাঝে কোনো কৃত্রিমতা ছিলো! মন খুলে হেসেছে কতোগুলো দিন পর সে। সত্যিই কি তার অপেক্ষার প্রহর শেষের পথে?

সেদিনের ঘটনার পর উপমার সাথে তার যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে মিটে যাবে? নাকি এই দূরত্বই তাদের আলাদা করে দিবে? আলাদা হওয়ার কথা মাথায় আসতেই দ্রুত মাথা নেড়ে না না করে বললো,

‘না না, কখনো না জীবনেও না! আমি তোমাকে যখন একবার আমার কাছে খুজে পেয়েছি তখন আর জীবনেও তোমাকে দূরে যেতে দিবো না পিচ্চু। তুমি আমাকে সহজে মেনে নাও বা না নাও তোমার এই সো কল্ড বয়ফ্রেন্ডই হবে তোমার জীবন সঙ্গী। আমার হওয়ার জন্য তৈরি হও পিচ্চু, খুব বেশি দেরী করবো না আমি তোমাকে আমার করতে!’

চলবে,,,,,,,,,
[কমেন্ট করবেন?]