ভালোবাসি বুঝে নাও পর্ব-০২

0
6468

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও🍁🍁
#পর্ব_২
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওনি এমন কেনো আমি কি ওনাকে বলেছিলাম যে আমাকে কলেজে পৌঁছে দেন,,, এখন আমি কি করবো,, এসব ভেবে রাস্তায় দাড়িয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছিলাম তখনি হঠাৎই,,,মেহরাব ভাই গাড়ি নিয়ে আমার সামনে থামাল।

গাড়িতে উঠ,,(মেহরাব)

আজব তো নিজেই আমায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলো এখন আবার নিজেই উঠতে বলছে,, উঠবো না আমি, ওনি কি পেয়েছেন আমায়, আমার কি রাগ নেই আমি উঠবো না, এখানেই দাড়িয়ে থাকবো ১ যুগ ধরে(মনে মনে কথাগুলো বলে ওখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে থাকলাম)

কিরে কথা কানে যাচ্ছে না?? ওখানে ওমন ভেবলার মতো দাড়িয়ে না থেকে গাড়িতে উঠ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে..

আমি ওনার কথা কানে না নিয়ে আগের মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকলাম।যতক্ষণ না ওনি এসে সরি বলবে ততক্ষণ আমি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো,, দেখি ওনি কি করে,,,

হুম বুঝেছি ম্যাডামের অভিমান হয়েছে,,, তারপর মেহরাব গাড়ি থেকে নেমে মাহির সামনে দাড়ালো।

আচ্ছা সরি আমার ভুল হয়ে গেছে মেড্যাম এবারের মতো আমায় ক্ষমা করে দেন,, তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না তাই এমন করে ফেলেছি আর এমন হবে না,,, এবারের মতো এই অধমকে মাফ করে দেন (কান ধরে)

ভাইয়ার এমন করা দেখে আমার খুব হাসি পেলো আমি ফিক করে হেসে ফেললাম।

যাক অবশেষে মহারানি হাসলো,, এবার দয়া করে আপনার পদধূলি দেন আমার গাড়িতে,, তারপর ভাইয়া গাড়ির দরজা খুলে দিলো আমিও হাসি মুখে গাড়ির ভিতর গিয়ে বসলাম।
ভাইয়াকে আমি একটুও বুঝতে পারি না,, কখনো আমাকে অনেক আদর করে আবার কখনো বকে রাগ করে কেনো যে এমন করে বুঝি না,,,আসোলে আমি ভাইয়াকে বুঝতেই পারি না,,,

নাম তোর কলেজ এসে গেছে।

আচ্ছা (এই বলে আমি গাড়ি থেকে নামতে গেলেই ভাইয়া আমার হাত ধরে বলল)

এতোটাও অবুঝ হসনা যে কেউ এসে তোকে কষ্ট দিয়ে চলে যাবে,, এখন তুই বড় হয়েছিস এখন তো অন্তত বুঝতে শেখ,,নিজের ভালো পাগোলেও বুঝে তুই কেনো বুঝিস না বল তো,, তোকে প্রটেক্ট করার জন্য তো আর আমি সব সময় থাকবো না,,, কাউকে সহজে বিশ্বাস করবি না মনে রাখিস বিশ্বাস জিনিসটা অনেক দামি আর মূল্যবান জিনিস ,, এখন যা আর শোন কোনো ছেলের সাথে কথা বলবি না বুঝেছিস??

আমি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে চলে আসলাম।ভাইয়া কি বললো কিছুই বুঝলাম না,,,আর ভাইয়াই বা আমাকে রেখে কোথায় যাবে,,কি যানি কত কঠিন কঠিন কথা বলে,,, এর পর আমিও নিজের ক্লাসে চলে গেলম।

,,,,,,,,,,,,,

কলেজ ছুটির পর,,,,,,

রাস্তায় রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি,, যা গরম পড়েছে ঘেমে একেবারে গোসল করে ফেলচি বাবা,,,আর রিকশা টাও আসছে না,,, আর আসবেই বা কীভাবে এই ভর দুপুরে কাঠ ফাটা রোদের মধ্যে রিকশায় বা কে চালাবে,, তবুও কিছু লোক পেটের দায়ে এই রোদকে উপেক্ষা করে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলাম তখনি মেহরাব ভাই গাড়ি থামাল সামনে।

সরি রে পিচ্চি আজকে আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো আয় উঠে আয়,।।

আমিও চুপচাপ গাড়ির ভিতর উঠে বসলাম,,আমি বুঝি না,, এতোবড় একটা অফিস সামলে ওনি কেনো আমায় প্রতিদিন এভাবে বাড়ি দিয়ে আসে,,ওনার কষ্ট হয়না?? আর এখন তো লাঞ্চ টাইম ওনি লাঞ্চ না করে আমায় দিতে যাচ্ছে,,, আচ্ছা ওনি কি দুপুরে খাননা?? কী দরকার এতো কষ্ট করে আমায় পৌঁছে দেওয়া,,কিন্তু এই কথাগুলো ওনাকে কে বলবে, বলতে গেলেই তো একটা রাম ধমক দিয়ে বলবে,,
পিচ্চি পিচ্চির মতো থাক এতো বড়ো বড়ো কথা বলা লাগবে না,, এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি চলে আসলা।

গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির কলিং বেল টিপছি,,ভাইয়া আমায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। প্রায় অনেক সময় পর আমার ছোট ভাই মনির এসে দরজা খুলে দিলো।

আপু তুমি চলে আসছো?? তারাতারি আসো দাখো মা কাঁদছে।

মনিরের কথা শুনে আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো মা কাদছে কেনো?? তারপর তরিঘরি করে ভিতরে গিয়ে দেখি মা সত্যি কাঁদছে,,, আমি গিয়ে মায়ের কাছে বসে জিগাস করলাম।

কি হয়েছে মা কাঁদছো কেনো??

তোর ছোট মামা গ্রাম থেকে কল করিলো,, বাবার শরীল খুব খারাপ স্টক করেছে,, আমাদের সবাইকে দেখতে চাইছে কত করে বলেছি যে বাবা আমাদের সাথে আসো কিন্তু না ওনি নাকি ওনার গ্রাম থেকে আসতে পারবে না,,,, ,,, আমাদের গ্রামে যেতে হবে,,, তুই গিয়ে কাপড় গোছা কাল ভোরে বেরিয়ে পড়বো(মা কাঁদতে কাঁদতে বলল)

আমার মারা হলো দুই ভাই একবোন আম্মু একা আর সবার ছোট,, আর মেহরাব ভাইয়ার আব্বু হলো সবার বড়, তারপর ছোট মামা তারপর মা,,আম্মুর কাছে শুনেছি আমার নানুর নাকি অনেক জমি প্রায় ২০ বিঘা এর ও বেশি,, তো ছোট মামা গ্রামেই থাকে আর জমি জায়গা দেখাশুনা করে,, ছোট মামার এক মেয়ে আর জমজ দুই ছেলে,, ইশিতা আপু আর রকি,,রাকিব,,, ইশিতা আপু আমার ২ বছরের বড় এবার অর্নাস ফাস্ট ইয়ারে পড়ে,,,,তারপর আমি আমার রুমে চলে গেলাম।

,,,,সকালে,,,

এক বস্তা ঘুম চোখে নিয়ে গাড়ির কাছে দাড়িয়ে আছি,,,আর সবাই গাড়িতে ব্যাগ পএ তুলছে দুটো গাড়ি নিয়ে যাবো,, মেহরাব ভাইয়াদের তো নিজের একটা গাড়ি আছে ওটা আর আব্বু আরেকটা গাড়ি ভাড়া করেছে।

কিরে এখানে এভাবে দাড়িয়ে দাড়িয়ে না ঘুমিয়ে একটু কাজ করলেই তো পারিস,,,দেখ মুনির তোর থেকে ছোট হয়েও কেমন কাজ করছে (আম্মু)

ওকে কাজ করার কথা বলো না ফুপি ওকে বলা আর উলো বনে মুক্ত ছড়ানো একি কথা(পিছন থেকে বলল মেহরাব)

আরে মেহরাব তুই।

হ্যাঁ ফুপি,, আব্বু পাঠালো দেখতে যে তোমাদের হয়েছে নাকি।

হুম আমাদের হয়েছে,, এখন গাড়িতে উঠবো। মাহি গাড়িতে উঠ। আম্মুর কথা মতো আমি যেই গাড়িতে উঠতে যাবো তখনি ভাইয়া বললো।

ফুপি আমি মাহিকে আর মুনির কে নিয়ে যাচ্ছি,, আমরা ছোটরা মানে,, সুহান,, মেঘলা,,মাহি,,মুনির আর আমি আমাদের গাড়িতে যাচ্ছি আর তোমরা বড়রা এই গাড়িতে যাও,, আম্মু আব্বু আসছে,,

আচ্ছা ঠিক আছে,, তুই যেখানে আছিস সেখানে আমি নিশ্চিত,,, মাহি মেহরাব এর সাথে যা কোনো দুষ্টামি করবি না কিন্তু।

আমিও ভাইয়ার সাথে যেতে লাগলাম,, এখনো ভালো করে চারিদিকে ফর্সা হয়নি ফজরের নামাজ পড়েই সবাই বেরিয়ে পরেছে আসোলে অনেকটা পথ যেতে হবে তো তাই,, আমি ভাইয়ার হাত ধরে ঘুমে ঢুলু চোখে হেঁটে চলেছি।।

কিরে সারারাত ঘুমোসনি?? এখন এমন ঢুলছিস কেনো??

কি ভাইয়া মা সেই কাক ডাকা ভোরে উঠিয়ে দিয়েছে,, ভালো করে তো ঘুমাতেই পারিনি।

তোকে তো বেলা ৮ টাই উঠালেও বলবি তোর ঘুম হয়নি অলস মেয়ে একটা।

ভাইয়ার কথা শুনে আমি কপট রাগ দেখিয়ে ভাইয়ার হাত ছেড়ে দিলাম,, তারপর কিছু একটা ভেবে ভাইয়াকে ডাকলাম।

ভাইয়া একটা কথা বলবো??

হুম বল।

আচ্ছা আপনি তখন আমায় বললেন আমায় কিছু বলা আর উলো বনে মুক্তা ছড়ানো একি,,,

হুম ঠিকি তো বলছি।

আচ্ছা এই উলো বনে মুক্তা ছড়ানো মানে কি?? আর সবাই মুক্তা বনে কেনো ছড়াবে??

আমার কথাশুনে ভাইয়া হাটা থামিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

তোর এই মোটা মাথায় সেটা ঢুকবে না, বুঝলি,, এখন কথা না বলে পা চালা,, সবসময় শুধু বকবক।

ভাইয়া আমার হাত ধরে হাটতে লাগলো, আর আমিও ভালো মেয়ের মতো হাঁটতে লাগলাম কোনো কথা না বলে।

চলবে,,,,,?