ভালোবাসি বুঝে নাও ২ পর্ব-৪৭+৪৮+৪৯

0
358

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৪৭_পর্ব

.
কিছুক্ষণ পর মেহরাব রুমে ফিরে আসলো, এসেই রুমের লাইট অন করে তড়িঘড়ি করে শার্ট পরতে শুরু করল,

কি হয়েছে কে ডাকছিলো আপনাকে?? আর এতো রাতে কোথায় যাচ্ছেন?

মেঘ এসেছিলো ইপ্সার পেটে নাকি বেথ্যা করছে, তাই ওকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে,, সবাই অলরেডি গাড়িতে ওঠে পড়েছে, (শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল মেহরাব)

কিহ,, আমিও যাবো,,.

নাহ তোমার কোথাও যেতে হবে না, আর বেশি কেউ যাচ্ছে না শুধু আমি শুভ নেহাল আর মেঘ যাচ্ছি,,

কিন্তু এতো রাতে কোনো হসপিটাল খোলা পাবেন নাকি??

না থাকলেও কিছু করার নেই ইমারজেন্সি যেতেই হবে ইপ্সার অবস্থা খারাপ (এটা বলতে বলতেই বাইরে থেকে মেহরাব এর ডাক পড়ল মেঘ ডাকছে যলদি আসতে বলছে)

এখনো অনেক রাত বাকি তুমি ফ্রেশ হয়ে মেঘলার কাছে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো,, এখানে একা থাকতে ভয় করবে,, আমি কখন আসবো জানি না হয়ত সকালে আর টেনশন করো না ওকে (কথাগুলো বলে মাহির কপালে চুমো দিয়ে চলে গেলো মেহরাব)

যাহ ওনি তো চলে গেলো,, এখন আমি কি করবো সত্যি আমার একা একা রুমে ভয় করছে,, তারপর চাদর টা গায়ে জরিয়ে রেখেই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা সুতির শাড়ি পরে, বাইরে আসলাম হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে কোনো মতে চুলটা শুকায়ে মেঘলা আপুর রুমে চলে গেলাম, চুল ভেজা দেখলে ওনার সামনে লজ্জায় পড়তে হবে যতই হাসি মজা করি শত হলেও বড় আপু।

আপুর রুমে গিয়ে দেখি আপুও বসে আছে, মনে হয় কাউকে তেমন জানাইনি নয়ত বাড়ি ভরা এতো মেহমান এতোক্ষণে হইহট্টগোল শুরু হয়ে যেতো,, আপির কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে দুজনেই শুয়ে পড়লাম,, ওনি তো টেনশন করতে নিষেধ করলেন কিন্তু চাইলেই কি আর এই সময় টেনশন না করে থাকা যায়,, চোখ বন্ধ করে কিছুসময় আগের মেহরাব ভাই এর ছোঁয়া গুলো অনুভব করার চেষ্টা করলাম,, যতই মনে পড়ে ততই সারা শরীলে কেমন একটা শিহরণ বয়ে যায়, ইস আজকে ওনি কত কাছ থেকে কতটা গভীর ভাবে ছুঁয়েছেন আমায়,, এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি।

সকালে,,,,,

মনে হচ্ছে কেউ নরম কিছু একটা দিয়ে আমার পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে ঘুমের মধ্যেই ঠিক পাচ্ছি,, ক্রমশ জিনিসটা আমার পা ছাড়িয়ে হাঁটুর উপরে উঠতে লাগলো,, হাঁটুতে আসতেই আমি চোখ মিলে তাকালাম দেখলাম মেহরাব আমার উপর বুঝে হাতে একটা গোলাপ নিয়ে আমার পায়ে সুড়সুড়ির দিচ্ছে,,

কখন আসলেন??

একটু আগেই এসেই আমার বউ এর কাছে চলে আসছি (মাহির উপর শুয়ে বলল মেহরাব)

ওরে উঠুন ইস কি ভারি আপনি, কুঁমড়ো পটাস (মেহরাব এর বুকে হাত দিয়ে ঠেলে বলল মাহি)

তাই আমি ভারি?? কালকে রাতে ভারি লাগেনি??(দুষ্ট হেসে বলল মেহরাব)

কালকে রাতের কথা মনে পড়তেই আমি লজ্জায় নুইয়ে গেলাম,, তারপর হঠাৎই ইপ্সা আপুর কথা মনে উঠতেই ওনাকে বললাম,, ইপ্সা আপুর কি খবর ওনি সুস্থ আছেন তো??

ওমম হমম ইপ্সার ছেলে হয়েছে, মা ছেলে দুজনই ভালো আছে (মাহির গলায় মুখ গুজে বলল মেহরাব)

কি শুরু করলেন সকাল সকাল সরুন তো উঠতে হবে অনেক বেলা হয়ে গেছে (মেহরাব ধাক্কা দিতে দিতে বলল মাহি)

ওমমম নাহ উঠবো না, কালকে রাতের বাকি আদর টুকু এখন করবো,, মাহির গলায় মুখ গুজেই বলল।

হুট সব সময় শুধু বাজে কথা,, আরে আমি তো মেঘলা আপুর রুমে, সরুন সরুন যে কোনো সময় আপু চলে আসতে পারে,, আর আপনি যেহেতু আসছেন তখন তো মেঘ ভাইয়াও আসছে হায় হায় রে আজকে ইজ্জত এর ফালুদা হয়ে যাবে, কইরে উঠুন।

কেউ আসবে না, ভালো করে তাকিয়ে দেখো আমরা আমাদের রুমেই,, আমি এসে তোমাকে ও রুম থেকে কোলে করে এখানে নিয়ে আসছি, আর তোমার কি ঘুম বাবা একটুও টের পেলে নাহ??

ভালো করে তাকিয়ে দেখি সত্যি তো আমি তো আমার রুমেই,, তবুও আপনি সরুন আমি এখন উঠবো,

শোনো আমি একটু ঘুমাবো,,, ১০ টার দিকে ডেকে দিবা সবাইকে নিয়ে বেবি দেখতে যাবো,,

সত্যি?? আচ্ছা আমি সব কাজ সেরে রেডি হয়ে আপনাকে ডেকে দেবো,, এখন তো উঠেন।

হুমমম,, ওরে একটা কাজ বাকি রয়ে গেছে।

কি???

ওনি আমার গলায় একটা চুমো খেয়ে তারপর মাথা তুলে আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলেন,, আমিও সমান তালে তাল মিলালাম, আবেশে চোখ বন্ধ করে,, কিছুক্ষণ পর ওনি আমার ঠোঁট টা ছেড়ে দিয়ে ঠোঁটে পাশে লেগে থাকা পানি ওনার বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে আবারো ঠোঁটে শব্দ করে একটা চুমো খেয়ে আমার উপর থেকে উঠে পাশে উপুড় হয়ে শুয়ে পরলেন,,, আমিও এই ফাঁকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলাম।

হারে রাতে এতো কিছু হয়ে গেলো তোরা আমাদের একবার ডাকলি ও নাহ (মেহরাব এর মা) ,

আরে তোমরা সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলে তাই আর ডাকিনি,,

তা মেঘ কোথায় এসেছে তো??

হ্যাঁ রুমে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে,, জানোতো মা, ইপ্সার ছেলে হয়েছে,, শুভ ভাইয়া হসপিটালেই আছে আর নেহাল ও এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

আরে মাহি আয় বস এখানে, রাতে কত কান্ড হলো, কিছুই জানলাম না তা মেহরাব কোথায়??

ওনি তো এসেই ঘুমায় গেছে আর আমাকে বলেছে ১০ টাই ডেকে দিতে, সবাইকে নিয়ে যাবে বেবি দেখাতে,,

হুমম আমরাও তো যাবো,, তাহলে চল হাতে হাতে সব কাজ সেরে ফেলি, অনেক বেলা তো হলো, বাড়িতে মানুষ আছে তাদেরকে খেতে দিতে হবে। আর মেঘলা তোর শশুর শাশুড়ী উঠলে ওনাদেরকে নাস্তা দিবি, তোর শাশুড়ী তো আবার অসুস্থ।

ঠিক আছে মা, আমি ওসব দেখে নেবো,,

হুমম চলো মামি মণি আমিও তোমাকে হেল্প করছি,,

এই মামী মণি কিরে হ্যাঁ শাশুড়ী হই তোর, মা বলবি।

নাহ মা বলবো না আম্মু বলবো হবে??

খুব হবে পাকা বুড়ি,, তোকে কাজ করতে হবে না শুধু আমায় সাহায্য করলেই হবে।

সব কাজ সেরে মেহমানদের খাবার দিয়ে আমি উপরে চলে আসলাম,, প্রায় সাড়ে নয়টা বেজে গেছে এসেই দেখি ওনি উদম গায়ে উপুড় হয়ে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে,, দেখে গেলাম শার্ট গায়ে এর মাঝে খোলা সারা,, ওনাকে দেখে আমি ওয়াশ রুমে চলে গেলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে শাড়ি পাল্টে অন্য একটা শাড়ি পরে নিলাম,, বিছানায় গিয়ে ওনার মাথার কাছে বসে ওনার পিঠে একটা চুমো খেয়ে ওনাকে ডাকতে লাগলাম,,

এই যে উঠুন দশটা তো বেজে গেছে আর কত ঘুমাবেন বেবী দেখতে যাবেন না?? ওই কুম্ভ কর্ণের নাতী উঠুন, (ওনাকে ঝাঁকিয়ে)

ওমম কি শুরু করলে মাহি, ঘুমাতে দাও তো (বিরক্তি সরে বলে আবার ঘুমিয়ে গেলো)

যাহ ঘুমিয়ে গেলো,, এটা কি রে মহিষ একটা,, তারপর অনেক কষ্টে ওনাকে উঠিয়ে রেডি হতে বললাম,, পুরোটা সময় আমাকে জ্বালিয়ে মারছে, একবার গালে চুমো দেয় তো আবার পেটে চিমটি কাটে,, অবশেষে সব কিছু করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম,, এক গাড়িতে আমি মেঘলা আপু আর আম্মু বসলাম পিছনের সিটে মেহরাব আর মেঘ ভাইয়া সামনে, মেহরাব ড্রাইভ করবে।

আরে তোমরা সবাই গাড়িতে উঠে পরলে আমাকে নিবে না, নাকি আমি যাবো তো (মীরা)

গাড়িতে আর জায়গা নেই তুই বাড়িতে বসে থাক (মেহরাব)

কখনো না আমি যাবোই।

আচ্ছা মীরা বলছি যে নেহাল ও যাবে, তুমি বরং ওর বাইকে করে চলে আসো,, ওকে, এই মেহরাব চল এই বলে ওরা চলে গেলো।

যাহ চলে গেলো, এখন আমাকে ওই গন্ডারটার সাথে যেতে হবে,, কি যে ভাব নেবে এখন ওহ আল্লাহ আমি যে কি করি,, তখনি নেহাল চুল হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে আসতে লাগলো বুকের সাথে সানগ্লাস ঝুলানো,, মীরা কে দেখে বুক থেকে সানগ্লাস টা নিয়ে চোখে পড়ে নিয়ে আঙুলে বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে বাইকের কাছে চলে গেলো।

কি ভাব আমাকে পাত্তাই দিলো না,, বেয়াদব একটা, দেবে কেনো ওনার তো সাথী আছে,, মনে মনে মনে কথাগুলো বলে মীরা নেহালকে ডাক দিলো।

শুনুন আমিও যাবো আমাকেও নিয়ে যান।

চলবে,,,,,,???

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৪৮_পর্ব

.
মীরার কথা শুনে নেহাল বাইকের উপর বসেই একটা আঙুল কানের মধ্যে নিয়ে একটু ঝাঁকিয়ে বলল,, উফফ এই কানটাও না সব সময় শুধু ভুলভাল কথা শোনে, কাঁদা সুন্দরী নাকি আমার সাথে যাবে এটাও শোনার বাকি ছিলো,

আগেই জানতাম এ ছেলে বড়ই তেড়্যা যাকে বলে জন্মগত তেড়্যা,,মনে মনে কথাটা বলে মীরা বলল, দেখুন এতো ভাও খাওয়ার কোনো দরকার নেই, গাড়িতে জায়গা ছিলো না তাই আমাকে আপনার সাথে যেতে বলেছে, নয়ত আমার এতো দুর্দিন আসিনি যে আপনার বাইকে যাবো,

আমারও ঠেকা পরেনি তোমাকে বাইকে তোলার।

তা তুলবেন কেনো,, আপনার বাইকে বসার জন্য তো সা,,,বলতে গিয়ে আর বললো না

কি বললে সা কি??

ক,,,কই কিছুই নাহ চলুন তো সব সময় শুধু বকবক, ওরা মনে হয় এতোক্ষণে পৌঁছে গেছে।
তারপর নেহাল আর মীরাও চলে গেলো।

,,,,হসপিটালে,,,

আম সো সরি মাহি আমার জন্য তোমার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা রাত নষ্ট হয়ে গেলো আম সো সরি, (ইপ্সা)

ধ্যাত তুমি যে কি বলো না আপু,, আমি তো ভীষণ খুশি হয়েছি যখন শুনেছি আমাদের পিচ্চি হয়েছে, দেখেছো কি সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে দোলনায়

আমিও সরিরে,, আসোলে আমরা তোকে ডাকতে চাইনি কিন্তু না ডেকেও কোনো উপায় ছিলো না (শুভ)

ধুর সালা বন্ধুর বিপদে যদি বন্ধুর পাশেই না থাকতে পারি তাহলে কেমন বন্ধু,, তাহলে বল তোর জন্য কিন্তু আমি আমার বাসর ছেড়ে চলে আসছি, তেকেও কিন্তু আসতে হবে।

আমার বাসর হয়ে গেছে,, বাসর করে ছেলের বাবা পযন্ত হয়ে গেলাম,,, মেহরাব আর শুভ দাঁড়িয়ে কথা বলছে কেবিনের বাইরে আর মাহি মেঘলা ইপ্সার কাছে, মেহরাব এর মা শুভর বাবা মায়ের কাছে গেছে,,, হসপিটালে প্রায় অনেক সময় থাকার পর দুপুরের দিকে ওরা সবাই চলে গেলো কেননা বিকেলে আবার মাহির বাড়ি থেকে মাহিদের নিতে আসবে,,, বাড়ি ফিরেই মেঘ মেহরাব নেহাল কাজে লেগে গেলো শুভ আসিনি, আসতে পারিনি কেননা হসপিটালে ওদের একটা রেখে আসা রিস্কি কেননা পুরুষ বলতে ও একাই এই জন্য,,
মাহিকে সাজানো হচ্ছে পার্লারের মেয়েরা ওকে সাজাচ্ছে মেহরাব ও সব কাজ সেরে গোসল করে রেডি হয়ে নিচ্ছে।

বিকেল পড়ে গেছে সব অতিথীরা খেয়ে চলে গেছে আবার কেউ কেউ রয়ে গেছে ওদের বিদায় দিয়ে একেবারে যাবে,, মীরা শাড়ি পরেছে চুল গুলো খুলা রেখেছে, নেহাল দূর থেকে অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো তারপর মীরার অজান্তেই ওর কিছু ছবি তুলে রাখল।

যায় কাঁদা সুন্দরীর সাথে একটু ঝগড়া করে আসি,, শুনেছি ঝগড়া করলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে,, এই বলে নেহাল মীরার কাছে চলে গেলো, মীরা সবার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো।

তোমাকে কিন্তু হেব্বি পেত্নী পেত্নী লাগছে (পিছন থেকে ফিসফিস করে মীরার কানে বলল নীহাল)

নীহাল কে দেখে ওনাদের বিদায় দিয়ে পিছন ঘুরে নীহাল এর সামনা সামনি দাঁড়ালো,, প্রথমে ভেবেছিলাম হয়ত বলবে তোমাকে হেব্বি সুন্দর লাগছে কিন্তু নাহ এ তো নাম্বার ওয়ান তেড়্যা এর মুখ থেকে ঝগড়া ছাড়া অন্য কিছু বাড় হয় না।

কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো প্রেমে পড়ে যাবে কিন্তু।

আপনার মাথা আমার এতোটাও খারাপ সময় আসিনি যে আমাকে আপনার প্রেমে পড়তে হবে,,

তাই নাকি দেখা যাবে।

হুম, দেখে নিয়েন (প্রেমে পড়ব কি অলরেডি পড়ে গেছি,, কিন্তু সেটা প্রকাশ করা যাবে না)

প্রেমে তো তুমি পড়ে গেছোই কিন্তু শিকার করছো না,, হুমম তোমাকে তো শিকার করতেই হবে সেই ব্যাস্হায় করবো আমি,,,মনে মনে বলল নেহাল।

,, মীরা ওখান থেকে চলে গেলো, সব কিছু শেষ হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো,, মাহি মেহরাব মাহিদের বাড়িতে চলে গেছে, আর তারপরপরই মেঘ আর মেঘলারাও চলে গেলো কদিন পর আবার আসবে,, মীরাও ওর বাবা মায়ের সাথে চলে গেলো,, তবে যেটুকু সময় ছিলো নীহাল সারাক্ষন ওকে জ্বালিয়েছে।

,,রাতে,,,,

মেহরাব ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের একটা কাজ করছে আসার সময় ল্যাপটপ টা নিয়ে আসছে ম্যানেজার কল দিছিলো একটা সম্যসা হয়েছে সেটাই সমাধান করছে,, মাহি এসেই উধাও হয়ে গেছে,, কোথায় কোথায় বেড়াচ্ছে, মেহরাব কাজটা শেষ করে ল্যাপটপ টা টি টেবিলে রেখে শুয়ে পড়েছে,, রাত প্রায় নয়টার দিকে মাহি রুমে আসলো, এসে দেখলো মেহরাব মুখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে, মাহি পা টিপে টিপে রুমে ঢুকে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে ওয়াশরুম থেকে এসে মেহরাব এর পাশে শুয়ে পড়ল,, ওমনি খপ করে মেহরাব মাহির উপরে আধশোয়া হয়ে বলল।

কি বেপার কি হুম?? এসে থেকে দেখছি কোনো পাত্তাই দিচ্ছো না সম্যসা কি।

আ,,,আপনি ঘুমাননি??

বউ পাশে না থাকলে ঘুম আসে না বুঝলে,,

হুম বুঝলাম,, শুনুন না আমার না কেমন যেনো একটা সন্দেহ হচ্ছে।

কার উপর??

এভাবে কি বলা যায় নাকি আগে সরুন আমার উপর থেকে, বিছানায় এতো জাগা পড়ে আছে যান ওপাশটাই গিয়ে শোন।

ঠিক আছে,, এই বলে মেহরাব পুরোটাই মাহির উপর নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে ওর গলায় মুখ গুজে বলল,,,এটা আমার সম্পত্তি আর আমি এখানেই ঘুমাবো, তুমি কি বলছিলে বলো।

একে বললাম কি আর ওনি করলো টা কি,,, আমার কেমন যানি মনে হচ্ছে মীরা আপু আর নেহাল ভাইয়ার এর মধ্যে কিছু চলছে।

হুম চলছে তো,,, মাহির গলায় মুখ রেখেই ফিসফিস করে বলল মেহরাব

সত্যি কি চলছে?? উৎফুল্ল হয়ে জিগাস করল মাহি

আমাদের মধ্যে ভালোবাসাবাসি চলছে,, এখন সেটা বাসরে পরিনত হবে।

কিহ?? মোটেও না আ,,,আর বলতে পারলো না মাহি তার আগেই মেহরাব ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো, আর ওকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলো।

চলবে,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৪৯_পর্ব

.
দেখতে দেখতে অনেকগুলো মাস পেরিয়ে গেলো,,মাহি মেহরাব এর বিয়ের পাঁচ মাস হয়ে গেছে,, মেঘলার এখন ছয় মাস চলছে নেহাল ভার্সিটি শেষ করে একটা জব করছে আজকে শুভ আর ইপ্সার মেয়ের মুখে ভাত দেখতে দেখতে পিচ্চি টার বয়স পাঁচ মাস হয়ে গেলো, মাহি মেহরাব সহ বাড়ির সবাই ওদের বাড়ি যাচ্ছে,,

কি হলো মাহি তোমার হয়েছে?? আর কতক্ষণ লাগবে??

আর একটু এই তো হয়ে গেছে,

বিয়ের পাঁচ মাস হয়ে গেলো তবুও শাড়ি পড়া শিখলে না,,

আমি কি করবো আমি কি শাড়ি পড়ি নাকি?? যখন পড়ি তখন তো মেঘলা আপু নয়ত আম্মু পরিয়ে দেয় কিন্তু আজকে দুজনের একজন ও নেই মেঘলা আপু শশুর বাড়ি আর আম্মু আব্বু তো আগেই শুভ ভাইয়াদের বাড়ি চলে গেছে।

আচ্ছা ঠিক আছে,, দাও আজকে আমিই তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছি,,

আপনি পারেন??

পারি না তবে চেষ্টা করতে দোষ কোথায়,, এই বলে মাহির হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে এদিক ওদিক করে অবশেষে মাহিকে শাড়িটা পরিয়ে দিলো।

ইয়াহ একদম পারফেক্ট,,, এই বলে মাহির মাথায় একটা চুমো দিলো,, এখন চলো,।
তারপর দুজনে শুভদের বাড়ি চলে গেলো,,

,,,,নেহাল অনেকদিন পর আজকে ভার্সিটিতে এসেছে, এখান থেকে যাওয়ার পর মীরার সাথে আর তেমন দেখাই হয় না তাই আজকে তার কাঁদা সুন্দরীর কে দেখতে এসেছে এরপর শুভদের ওখানে যেতে হবে ,এই জন্য অফিস থেকে একদিনের ছুটি নিয়েছে, ভার্সিটিতে এসে মাঠে দাঁড়িয়ে একজনের সাথে কথা বলছিলো তখনি পিছন থেকে সাথী বলে উঠলো।

আরে নেহাল ভাইয়া আপনি?? (সাথী)

কিরে পড়াশোনা কেমন চলছে হুম?? আর আমার কাঁদা সুন্দরী কে দেখে রেখেছিস তো??

সে আর বলতে, তবে মীরা আপু আর আগের মতো তেমন হাসে না শুধু মন খারাপ করে থাকে আর আমাকে আর আপনাকে নিয়ে সন্দেহ করে।

হুম আমাকে অনেক জ্বালিয়েছিলো সেই জন্যই তো এই প্লানটা করা,, পাগলি টা তো জানেই না, আমি সেই প্রথম থেকেই ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি,, ভালোবাসি সেটা বুঝেই না।

আপনি কি কখনো বলেছেন নাকি আপুকে, অনেক হয়েছে আর কষ্ট দিয়েন না, বেচারি অনেক কষ্ট পাচ্ছে।

হুমম ভাবছি এখন বলেই দেবো এতোদিন চাকরির জন্য অপেক্ষা করছিলাম এখন তো হয়ে গেছে তাই ভাবছি বলে দেবো।

ভ,,,ভাইয়া পিছনে তাকাও।

কেনো কি হয়েছে পিছনে কি?? এই বলে নেহাল পিছনে তাকিয়ে দেখলো মীরা রেগে লাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।

ওরে বাবা আমি গেলাম এই বলে সাথী দৌড়ে চলে গেলো,, নেহাল একটা শুকনো ঢোক গিলে মীরার কাছে যেতে গেলো, কিন্তু তার আগেই মীরা ওখান থেকে চলে গেছে।

,,,,,,,,,,,,,,,,
মাহি মেহরাব ওখানে গিয়ে সবার সাথে হাসি খুশি ভাবে দিনটা কেটে গেলো রাতে মেহরাব এর বাবা মা চলে আসলেও মাহি আর মেহরাব কে যেতে দিলো না শুভ, বললো কাল সকালে যেতে,, অনেক রাত অবধি মেহরাব,, মেঘ, শুভ, নেহালসহ সবাই মিলে ছাদে আড্ডা দিলো তারপর ডয়িং রুমে মাদুর বিছিয়ে তার উপর কাথা পেরে বিছানা করা হলো,, বলা হলো সব ছেলেরা এখানে ঘুমাবে আর মেয়েরা আর বাড়ির আত্মীয়রা রুমে ঘুমাবে, মেহরাব করুন চোখে মাহির দিকে তাকালো মাহি মুখ টিপে হাসছে।

কিচ্ছু করার নেই ভাই আজকের রাতটা বউ ছাড়াই কাটাতে হবে,, মেঘ ফিসফিস করে মেহরাব এর কানে বলল।

মেহরাব তো মাহিকে জরিয়ে না ধরে ঘুমাতেই পারে না, আজকে রাতে আর ঘুম হবে না,, তারপর সবাই ঘুমিয়ে পড়ল,, প্রথমে মেহরাব তারপরে মেঘ,, তারপর নেহাল আর শেষে শুভ,, শুভর পাশে একটা কোলবালিশ আর তারপরে শুভ কাকা সহ বাড়ির গুরজনেরা শুয়ে আছে।
একটা রুমে মাহি আর মেঘলাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে আর ইপ্সা বেবি নিয়ে অন্য রুমে আছে।

,,,একবার এপাশ তো আরেকবার উপাশ করছে কিছুতেই মাহির ঘুম আসছে না কেননা মেহরাব এর বুকে মাথা না রাখলে ঘুম আসে না,, যখন আর কিছুতেই ঘুম আসলো না তখন শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ল মাহি

হুট কিছুতেই ঘুম আসছে না, কি যে করি,, তারপর কিছু একটা ভেবে একটা মুচকি হেসে আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে গুটি গুটি পায়ে দরজার কাছে গেলো তারপর আস্তে করে দরজাটা খুলে বেরিয়ে গেলো। তারপর ডয়িং রুমে গিয়ে মেহরাব কে খুঁজতে লাগল।

এতো জনের মধ্যে আমি ওনাকে খুঁজে পাবো কিভাবে,, একে তো অন্ধকার তারপর এতো ঠাসাঠাসি করে শুয়েছে,, একটার উপর আরেকটা রুমের হালকা আলো এসে ডয়িং রুমে পড়ায় মাহি সেটা দিয়েই মেহরাব কে খুঁজতে লাগল,, অনেকক্ষণ পর দেখলো মেহরাব একপাশে শটান হয়ে শুয়ে চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে আর পাশেই মেঘ মেহরাব এর গায়ে পা তুলে ওকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে আর মেহরাব বার বার বিরক্ত হয়ে মেঘকে সরিয়ে দিচ্ছে,, মাহি মুচকি হেসে মেহরাব এর পায়ের কাছে বসে পড়ল তারপর আস্তে করে মেঘ এর পা ধরে মেহরাব এর উপর থেকে সরিয়ে দিলো, মেঘও ঘুমের ঘোরে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল,, মাহি সেই ফাঁকে ফটাত করে মেহেরাব এর পেটের উপর উঠে বসে পড়ল।

মাহিকে ছাড়া কিছুতেই ঘুম আসছিলো না তার উপর আবার মেঘ গায়ের উপর পা তুলে দিচ্ছে বিরক্ত হয়ে কেবলি একটু ঘুমের ঝুল এসেছে তখনি পেটের উপর ভারি ভারি লাগায় মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে সামনে তাকালাম।

একি তুমি এখানে??

হুম আমি,, দাঁত কেলিয়ে বলল মাহি,,

তুমি এতোরাতে এখানে কেউ দেখে ফেললে মান ইজ্জত সব যাবে,,, তখনি উপরের রুম খুলে কেউ বাইরে বের হলো,, মেহরাব যলদি করে মাহিকে নিজের উপর থেকে নামিয়ে ওর অপরপাশে শুইয়ে দিয়ে নিজে ওর উপর ওঠে ওকে আড়াল করে রাখল। ইপ্সা রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে আবার রুমে চলে গেলো,, মেহরাব কেবলি মাহির উপর থেকে উঠতে যাবে তখনি পিছন থেকে মেঘ আবারো মেহরাব কে জরিয়ে ধরলো।

ওফ কি করছেন মেহরাব উঠোন আমি তো এবার চিরে চেপ্টা হয়ে যাবো,, মেহরাব কে ঠেলতে ঠেলতে বলল মাহি।

আরে আমি কি করবো দেখছো না পিছন থেকে মেঘ কীভাবে জরিয়ে ধরে আছে।

তারাতারি উঠোন আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তো।

মেহেরাব আস্তে করে মেঘ কে সরিয়ে মাহির উপর থেকে উঠে নিচে হয়ে মাহিকে কোলে তুলে নিলো তারপর হাঁটতে শুরু করলো,, মাহি মেহরাব এর গলা জরিয়ে ধরে বলল।

কোথায় যাচ্ছি আমরা??

ছাঁদে,, মাহিকে কোলে নিয়েই বলল মেহরাব।

কিন্তু কেনো??

বাসর করতে।।

কিহ?? এই নাহ আমি যাবো না নামিয়ে দেন আমায়,, হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে বলল মাহি।

সে কথা এখানে আসার আগে ভাবা উচিত ছিলো,, এখন নো ছাড়াছাড়ি।

কিন্তু সকালে,, সবাই আমার চুল ভিজা দেখলে ক্ষেপাবে তো।

তাতে কি,, বরের জন্য না হয় একটু সহ্য করলে,, এখন নো কথা,,তারপর মাহিকে নিয়ে সোজা ছাঁদে চলে গেলো মেহরাব আর ছাঁদের দরজা বন্ধ করে দিলো।

,,সকালে,,,

চেঁচামেচিতে মাহির ঘুম ভেঙ্গে গেলো,, পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো ও মেহরাব এর খালি বুকে শুয়ে আছে,, মেহরাব শার্ট পাশেই খুলে রেখেছে শেষ রাতে ঠান্ডা লাগছিলো তাই মাহি ওর শাড়ি দিয়ে চাদর বানিয়ে গায়ে দিয়েছে,, শাড়িতো রাতেই মেহের খুলে দিয়েছিলো।। কি হলো নিচে হঠাৎ এতো চেঁচামেচি হচ্ছে কেনো,, এটা ভেবে মাহি মেহরাব কে ডাকতে লাগল।

এই শুনছেন উঠুন উঠুন দেখুন নিচে কি যেনো হচ্ছে।

মেহরাব চোখখুলে হাতদুটো প্রসারিত করে একটা হাই তুলে বলল,, কি হলো এভাবে ডাকছো কেনো??

আরে যলদি উঠুন দেখুন নিচে চেঁচামিচি হচ্ছে,, চলুন গিয়ে দেখি কি হলো আবার,, মাহি উঠে বসে পড়ল। মেহেরাব শুয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কমরটা নাড়িয়ে বলল,,,ওফ এতো শক্ত এভাবে ঘুম হয় নাকি কমরটা বেথ্যা হয়ে গেছে।

কমর পরে ঠিক করবেন এখন চলেন যলদি,,

হুম চলো তাহলে। পাশ থেকে জামা নিয়ে পরতে পরতে বলল মেহরাব

আরে যাবো কীভাবে,, শাড়িটা তো খুলে দিয়েছেন না পরিয়ে দিলে যাবো কীভাবে।

ওহ তাইতো,, এই বলে মেহরাব মাহিকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে গেলো,, নিচে গিয়ে তো দুজনেই অবাক।

চলবে,,,,,,,,,??