ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব-০৭

0
370

#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#পর্ব_৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

রাতে সবাই এক সাথে খাবার খেতে বসেছে।

রুদ্র হসপিটাল নিয়ে কথা বলছে। আগামী সপ্তাহে হসপিটাল উদ্ভোদন করা হবে।

দূর থেকে কুলসুম আক্তার নিজের স্বামী আজাদ চৌধুরী কে চোখের ইশারায় কিছু বলতে বলছেন।

আজাদ চৌধুরী একবার আনোয়ার চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আবার রুদ্রের দিকে তাকালো।

আজাদ চৌধুরীঃ আব্বা আমার কিছু বলার ছিলো…
আনোয়ার চৌধুরী ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ হুম বলো…
আজাদ চৌধুরীঃ আব্বা আমাদের রুদ্র তো মাশাল্লাহ বড় হয়ে গেছে এখন ডাক্তার ও হয়ে গেছে। এই শুভ সময়ে যদি আরেকটা শুভ কাজ সেরে ফেলা যায় তাহলে কেমন হয়..?

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে নিজের মেঝো আব্বুর দিকে তাকালো। আসলে উনি শুভ কাজ বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছেন..!?

হানিফ চৌধুরী, রায়হান চৌধুরী অবাক হয়ে আজাদ চৌধুরীর দিকে তাকালো।

আনোয়ার চৌধুরী স্বাভাবিক ভাবে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,’ দাদুভাই আমার মনে হয় আজাদ একদম ঠিক কথা বলেছে আমার বয়স হয়েছে কখন কি হয়ে যাই। ম’রার আগে নাতি বউ কে একবার দেখে যেতে চাই। ‘

আনোয়ার চৌধুরীর মুখে এমন কথা শুনে রুদ্র বাদে বাকি সবাই খুশি হলো।

রুদ্র আনোয়ার চৌধুরী কে কিছু বলার আগেই কুলসুম আক্তার রুদ্রের কাছে এসে বললো,’ রুদ্র বাবা তুমি আর না করো না। আব্বা তো ঠিকি বলেছে এই বাড়ির একমাত্র ছেলে তুমি তোমার বউ না দেখে আব্বা কিভাবে ম’রবে..? মর’লেও আব্বার আত্মা শান্তি পাবে না।

সবাই এবার অবাক হয়ে কুলসুম আক্তার এর দিকে তাকালো। উনি বার বার মরা’র কথা কেনো বলছেন!

আনোয়ার চৌধুরী ছেলের বউ এর দিকে তাকিয়ে হাসলেন।

এই মহিলা এখনো বুঝলো না কোথায় কি কথা বলতে হয়!

নূর আড় চোখে একবার রুদ্রের দিকে তাকালো। রুদ্র ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে রুদ্র চোখ সরিয়ে হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলো।

রুদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রুদ্রের আব্বু বলে উঠলো, ‘ আব্বা আমার মনে হয় রুদ্র কে আরেকটু সময় দেওয়া দরকার। আগে হসপিটালের কাজ টা শেষ হোক। আর আপনি যা বলেন রুদ্র তাই করবে বাকিটা আপনার ইচ্ছে।

আনোয়ার চৌধুরী কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো, ‘ আমি এই বিষয়ে রুদ্রের সাথে সময় করে কথা বলে নেবো। ‘

কুলসুম আক্তার আমতাআমতা করে বলে উঠলো, ‘ তা ঠিক আছে আব্বা কিন্তু তার আগে মেয়ে যদি দেখে রাখেন তাহলে ভালো হয় না…!?

আনোয়ার চৌধুরী কুলসুম এর দিকে তাকিয়ে বললো,’ এইসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না মেঝো বউ। ঘরে মেয়ে থাকতে আমাদের বাহিরে মেয়ে দেখতে হবে না।

কুলসুম আক্তার মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন উনি তো এটাই চাচ্ছিলেন।

সালমা বেগম আর আয়েশা বেগম রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে সবার কথোপকথন শুনছিলেন।

আয়েশা বেগমঃ বড় আপা আমি কোনো দিন ও নীলা কে বউ হিসেবে মেনে নিবো না। আব্বা কি দেখে নীলাকে বউ করার কথা ভাবছেন।
সালমা বেগমঃ কেনো নীলার মধ্যে সমস্যা কি ছোটো..?
আয়েশা বেগমঃ নীলার মধ্যে সমস্যা কি আপনি দেখেন না! সারা দিন টইটই করে সারাগ্রাম ঘুরে বেরায়। কাজ কাম কিছুই পারে না। বড়দের কথাও শুনে না। পড়ালেখায় ও ভালো না। আমি কিছুতেই নীলা কে মেনে নিবো না আপা।

সালমা বেগমঃ বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে ছোটো। একসময় ছেলে মেয়ে এমন থাকে তুই আমি কি একদম সাধু ছিলাম বিয়ের পর আমরা ঠিক হয়ে গেছি না..?আর আব্বা তো একবার ও নীলার নাম নেয় নি চিন্তা করিস না।

আয়েশা বেগম কিছু না বলেই চুপচাপ কাজে মন দিলেন।

রাতে সবাই ঘুমিয়ে আছে নূরের চোখে ঘুম আসছে না। ব্যালকনি দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখে আজ আকাশটা তাঁরায় ঝলমল করছে। কোনো কিছু না ভেবে মাথায় ঘোমটা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ছাঁদে চলে গেলো নূর।

ছাঁদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আকাশের তাঁরার মাঝে মা’কে খুঁজছে নূর।
হাতের ফোনের রিংটোনে ধ্যান ভাঙলো নূরের।।

এই অচেনা নাম্বারের ফোন নিয়ে সে খুবি বিরক্ত। কে প্রতি রাতে ফোন দেয়..? ফোন দিয়ে কথা বলে না কেনো..?

নূর ফোন কেটে মোবাইল বন্ধ করে দিলো।

এই ফোন তাকে বার বার মনে করিয়ে দেয় ফায়াজের কথা।

ঠিক এমন ভাবে একটা সময় ছিলো নূর ফায়াজ নামের পুরুষটিকে প্রতি মাঝ রাতে কল দিয়ে বিরক্ত করতো। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেতো ফোন কাটতো না। কেউ কথা বলতো না শুধু নিশ্বাস এর শব্দ শুনতো। কতো সুন্দর মধুময় ছিলো দিন গুলো। ফায়াজের কথা ভাবলেই বুকটা ভার হয়ে আসে। প্রথম ভালোবাসা বলে কথা। হয়তো ফায়াজের জায়গাটা আর কাউকে কখনো দেওয়া হবে না।

রুদ্র নূরের পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,’ এতো রাতে ছাঁদে…
নূর প্রথম ভয় পেয়ে গেলো। যখন বুঝলো রুদ্র রেগে বলে উঠলো, ‘ আপনি বলে কয়ে আসতে পারেন না!!
রুদ্রঃ কেনো ভয় পেয়েছো..?
নূর আমতাআমতা করে বলে উঠলো,’ একদম না।
রুদ্র হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা বুঝলাম।’
নূরঃ আপনি হাসছেন কেনো..? আর কি বুঝছেন.?
রুদ্রঃ বুঝলাম তুমি অনেক সাহসী মেয়ে।
নূরঃ হুম।
রুদ্রঃ তুমি কি জানো এই গ্রামে কয়েকদিন আগে একজন মেয়ে সুইসাইড করেছে ওর আত্মা এখনো গ্রামে ঘুরে বেরায়। দুইদিন আগে আমাদের দারোয়ান কাকাও দেখেছে।
নূর ভয়ে রুদ্রের ঘা ঘেঁষে দাঁড়ালো।
রুদ্রঃ এই মেয়ে নাকি মেয়েদের দেখলে সাথে করে নিয়ে যায় । এটা আমি বলছি না এই গ্রামের লোকজন বলে।
নূর ভয়ে রুদ্রের হাত আঁকড়ে ধরলো।
রুদ্রঃ নূর তুমি কি ভয় পাচ্ছো..?.
নূর রুদ্রের হাত ছেড়ে দূরে চলে গেলো,’ একদম না আমি এইসব বিশ্বাস করি না।

রুদ্রঃ ওহ আচ্ছা ।
নূর রুদ্র কে রেখেই ছাঁদ থেকে নামতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বললো,’ রুমে যাবেন না..?’
রুদ্র হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো। সে ভালো করেই বুঝতে পারছে নূর খুব ভয় পেয়েছে । এতোটাই ভয় পেয়েছে যে ছাঁদ থেকে নেমে নিজের রুমেও যেতে ভয় পাচ্ছে।

রুদ্র মাথা নেড়ে ছাঁদ থেকে নূরের সাথে নেমে আসলো।

নূর আজ আর নিজের রুমে না গিয়ে সুজা ইভার রুমে চলে গেলো। আজ একা কিছুতেই ঘুমাতে পারবে না।

__________

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে নাস্তা বানাচ্ছে।
নূর গিয়ে উনাদের সাহায্য করলো। নাস্তা নিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রাখলো। চা নিয়ে আনোয়ার চৌধুরীর রুমে দিয়ে আসলো।
তিন মামা কে চা দিলো।

আয়েশা বেগম রান্না ঘর থেকে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন একটা লক্ষী মেয়ে যদি উনার ছেলের বউ হতো। নূর কে উনি যতো দেখে ততো মুগ্ধ হয়।

আজ রুদ্র ওদের ভার্সিটিতে পৌঁছে দিলো।

ইভা ভার্সিটির মাঠে আসতেই কিছু সিনিয়র মেয়ে ওকে ঘিরে ধরলো।একটা মেয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমাদের মধ্যে ইভা কে..?
নূর ইভাকে সরিয়ে নিজে বলে উঠলো, ‘ কেনো আপু..?
আরেকটা মেয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমিই তাহলে ইভা..? তোমার সাহসের প্রসংশা না করলে নয়। কতো বড় সাহস কাল মাহিন তোমাকে দেখা করতে বললো আর তুমি ওকে এটিটিউড দেখিয়ে দেখা না করে চলে গেলে।
নূরঃ সরি আপু আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে আমরা মাহিন নামের কাউকে চিনি না। কে উনি…?

আমাকে চিনেনা এমন মেয়েও এই ভার্সিটিতে আছে!!

নূর সহ সবাই পেছন ফিরে তাকালো একটা চেংড়া চিকনা পোলা চোখে গোল গোল বড় বড় চশমা দিয়ে এসে নূরের পাশে দাঁড়ালো।

নূরঃ আপনি কে…?

ছেলেটা অবাক হয়ে চোখ থেকে চশমা খুলে নূরের দিকে স্টাইল করে তাকিয়ে বললো,’ আমি হলাম এই ভার্সিটির ক্রাশ বয় মাহিন।

ইভা আর নূর অবাক হয়ে এই ছেলের পা থেকে মাথা অব্দি তাকালো। নূর হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।

নীলা ভয়ে বলে উঠলো, ‘ এভাবে হেঁসো না আপু এই ছেলে খুব খারাপ। ‘
ইভাঃ চুপ থাক বইন এক থাপ্প’ড় দিলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না এই চিকনা কে।

মাহিনঃ আমাকে নিয়ে মজা করছো। হাউ কি কিউট শালি।

ইভাঃশালি!!

মাহিনঃ ইভার সাথে আমার বিয়ে হলে তুমি নিশ্চয়ই আমার শালি হবে।

ইভাঃ ইভা টা কে..?
মাহিন নূরের দিকে ইশারা করে বলে উঠলো, ‘ কি আজব এখনো নিজের ফ্রেন্ড কে চিনো না। দিচ ইজ ইভা আমার ফিউচার ওয়াইফ।

নূর রেগে বলে উঠলো, ‘ আগে ইংরেজি বলা শিখেন ব্রো। ওয়াইফ বলতে আসে শালা খবিশ।

নূর ইভা নীলা চলে যেতেই মাহিন গিয়ে মেয়েগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,’ তোদের ভাবি কি আমাকে অফমান্স করলো…?’

~আরে না তোর প্রসংশা করছে।

মাহিন চোখের চশমা ঠিক করে বলে উঠলো,’ হুম আমি জানি আমি খুব হ্যান্ডসাম… ‘

~আগে চশমা ঠিক করে পর।

মাহিন চোখে হাত দিয়ে দেখে চশমা উল্টো পড়ে আছে।

___

বাহিরে মুশল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। নূর ব্যাগ কাঁধে দাঁড়িয়ে আছে।

আজ সব গুলো ক্লাস ভালোই যাচ্ছিলো কিন্তু বিজ্ঞান ক্লাসে সে এমন একজন কে দেখেছে সে এখনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কি সত্যি ছিলো নাকি চোখের ভুল!

নূর আনমনে বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পরলো। আজ বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে করছে। বৃষ্টি যেনো ওর মন খারাপের সঙ্গি হতে এসেছে।
নূর বৃষ্টি তে ভিজতেই একটা হাত এসে ওকে থামিয়ে দিলো।
নূর চোখ তুলে হাতের মালিক এর দিকে তাকালো।
না আবারো হয়তো চোখের ভুল নাকি আমি কোনে ঘোড়ে আছি…?

নূর হাত বাড়িয়ে লোকটার গালে হাত রাখলো।

~ নূর আপনি ঠিক আছেন..? আপনি বৃষ্টিতে কেনো ভিজতে যাচ্ছেন..? আপনি তো বৃষ্টি তে ভিজতে পারেন না অসুস্থ হয়ে পড়েন। আন্টি নেই বলে নিজের যত্ন নেওয়া ছেড়ে দিয়েছেন! একবার বৃষ্টি তে ভিজে ১৫দিন বিছানায় পরে ছিলেন।

নূরঃ আপনি এখানে…?

~ আমি কি জিজ্ঞেস করছি আর আপনি কি বলছেন..?

নূর কিছু বলার আগেই পেছন থেকে ইভা বলে উঠলো ” ফায়াজ স্যার আপনি এখানে …..? ”

চলবে….

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।