ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব-০৩

0
507

ভালোবাসি_হয়নি_বলা

লেখকঃmahin_al_islam
#পর্বঃ০৩

আমিঃ অপারেশন চলতেছে মানে,,

আমি বেশ অবাক হলাম যে ডক্টর টাকা ছাড়া আমার ভাইকে, হসপিটালে নিতে চাচ্ছিল না সেই ডক্টর আমার ভাইকে ফ্রি অপারেশন করাবে এটা কিভাবে হতে পারে

নার্স ঃ আপনার স্বামী একটু আগে এসেছিল তিনি টাকা জমা দিয়ে গেছেন,,আর ডাক্তার সাহেবের সাথে কথা বলছেন তাই আপনার ভাইয়ের অপারেশন চলতেছে,,

আমি অবাক এর উপর অবাক হচ্ছিলাম কারণ আমার স্বামী,, আমারতো এখনো বিয়েই হয়নি আমার স্বামী আসবে কোথা থেকে আর তার থেকে বড় কথা হইলো লোকটাকে হতে পারে

আমিঃ আপনার কি মাথা গেছে নাকি আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি বিবাহিত মহিলা

নার্স ঃ আমি অনেকবার লোকটাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আপনি পেশেন্টের কি হন
লোকটা বেশ গভীর আমাকে ধমক দিয়ে বলে তোমাকে যেটা করতে বলছি সেটাই করো

আমিঃ বাহ বাহ আপনাকে ধমক দিলো আর আপনি সোজাসাপ্টা মেনে নিলেন আমাদের একটু জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না তাই না,,

নার্স ঃ দেখুন আমি এত কথার উত্তর দিতে পারব না লোকটা ডক্টর উমর স্যারের সাথে কথা বলেছেন, আর তিনি এখন আপনার ভাইয়ের অপারেশন করতাছে,

আম্মুঃ উনার সাথে এভাবে বকাঝকা না করে চলনা অপারেশন থিয়েটারের সামনে গিয়ে বসি ডক্টর সাহেবের হলে তার সাথে কথা বলে দেখি আসলে বিষয়টা কি

আমিঃ আমার ভাইয়ের যদি কিছু হয় না আমি আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা করব

আম্মুঃ চুপ থাকত এসব কথা বলতে নেই আল্লাহকে ডাক আল্লাহর যা চাইবে তাই হবে

তারপর আম্মু আমাকে টেনে অপারেশন থিয়েটারের সামনে চেহারা নিয়ে গিয়ে বসালো

আম্মুঃ এত টেনশন করিস না তো যেটা ভাগ্যে লেখা আছে সেটাই হবে

আমি ঠিক বুঝতে পারতেছি আম্মু যতই আমাকে টেনশন মুক্ত থাকতে বলছে কিন্তু আম্মু নিজেই অনেক টেনশনে আছি

আসলে মায়েরা কখনো সন্তান অমঙ্গল চায়না
আমাকে ঠিক থাকতে বলছে অথচ নিজের ভিতরে যে কতটা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে সেটা হয়তো আমি অনুভব পর্যন্ত করতে পারতেছিনা

আমিঃ আম্মু আমাকে সত্যি করে একটা কথা বলবা

আম্মুঃ পাগলি মেয়ে দেখো কি বলে আচ্ছা বল

আমিঃ তুমি আমাদেরকে খুব ভালোবাসো তাই না

আম্মুঃ পাগলি মেয়ে কি যাতা বলতেছিস মার ফোন তো আমাকে ভালবাসবে না তো কাকে ভালবাসবে

কথাটা বলে আম্মু কান্না করে দিল আমি স্পষ্ট বুঝতে পারতাছি আম্মুর মনের ব্যথা কতটা

কিছুক্ষণের মধ্যে ডক্টর সাহেব বেরিয়ে এলেন

ডক্টর উমরঃ তাহলে আপনারা এসেছেন যাইহোক ভালোই হলো

আম্মুঃ আমার ছেলের এখন কি অবস্থা ডক্টর সাহেব

ডক্টর ওমর ঃ এখন আপনারা অনেকটাই চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন 24 ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে

আম্মুঃ আল্লাহর কাছে কোটি কোটি বার শুকরিয়া আলহামদুলিল্লাহ

আম্মুঃ এই শুনছি রে মা আমার ছেলে ভালো হয়ে যাবে

আম্মু খুশিতে কান্না করে ফেলল

আম্মুঃ ডক্টর সাহেব আমি কি এখন আমার ছেলেকে একটু দেখতে পারি

ডক্টর ওমর ঃ এখন দেখতে পাবেন না একটু পর আপনার ছেলেকে কেবিনের শিফট করা হবে সেখানে গিয়ে দেখতে পারবেন

আম্মুঃ অহহ

ডক্টর ওমর ঃ আপনারা এখানে একটু অপেক্ষা করুন একটু পর নার্স আপনাদের ডেকে নিয়ে যাবে

আমিঃ ডক্টর আঙ্কেল আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল জরুরী

ডক্টর ওমরঃ হ্যাঁ বলো মা কী বলতে চাও

আমিঃ আপনি তো প্রথমে টাকা ছাড়া আমার ভাইকে আপনাদের হসপিটালে নিতেই চাচ্ছিলেন না আর এখন,, আপনি আমাদের কাছে টাকা না নিয়েই অপারেশনটা করলেন, আমি না কিছুটা বুঝতেছি না ব্যাপারটা কি আমাকে একটু খুলে বলবেন

ডক্টর ওমর ঃ আসলে মা আমার এখানে কিছু করার নেই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা দের আদেশ আমাদের মানতে হয়,, আমরা এখানে চাকরি করি আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান না,, আর তুমি বললা না টাকা ছাড়া অপারেশন করলাম কিভাবে আমাদের কাছে টাকা জমা হওয়ার পর তোমার ভাইয়ের অপারেশন টা হয়েছে

আমিঃ টাকাটা দিলো কে,,, আর হঠাৎ করে এত টাকা আমার ভাই জন্য দিবে টা কে

ডক্টর ওমর ঃ দেখো মা এটা আমি বলতে পারব না

আমি বেশ অবাক হলাম

আমিঃ কিন্তু কেন আঙ্কেল

ডক্টর ওমরঃ শুধু এটা জেনে রাখো তোমার আপন কেউ টাকাটা দিসে আর আমি তার নাম ঠিকানা বা পরিচয় তোমাকে এখন দিতে পারবো না যদি তিনি অনুমতি না দেন তো

আমিঃ উনি অনুমতি দিবে মানে

ডক্টর ওমর ঃ আসলে আমি তাকে কথা দিয়েছি আর আমি কথা দিলে কথা রাখার চেষ্টা করি,, আমি এখন আসছি একটু পর নার্স এসে আপনাদের কেবিনে নিয়ে যাবে

ডক্টর আঙ্কেল আরেকটুকু কানাইয়া দাঁড়ালেন না চলে গেলেন তার নিজের কেবিনে

আম্মুঃ যে আমার এত বড় উপকার করছে আমি দোয়া করি তার জন্য সবসময় মঙ্গল হয়

আমিঃ হ্যা মা এত বড় উপকার যে করছে তার তো মঙ্গল কামনা করা আমাদের উচিত

এতক্ষণ তো ভালোই ছিলাম এখন একটু ব্যাথা ব্যাথা অনুভব হচ্ছে আর ব্যাথা অনুভব হতেই আমার গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল
আম্মুকে তো এই কথা বলাও যাবে না বললে আম্মু আমার মুখটা দেখতে চাইবে না

কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা

আমিঃ আম্মু তুমি এখানে একটু বসো আমি একটু আসি

আম্মুঃ এখনোও তুই কোথায় যাবি

আমিঃ আম্মু আমি একটু বাথরুমে যাব

ammu: ওকে

আম্মুকে মিথ্যা কথা বলে আমি একটু গাইনি ডক্টর এর সাথে দেখা করতে গেলাম

ওনার সাথে কথা বলে,, কিছু পরামর্শ সাথে একটা মেডিসিন লিখে নিলাম,,
যাতে করে খুব তাড়াতাড়ি ব্যাথাটা দূর হতে সাহায্য করে নয়তো আম্মুর চোখে খুব জলদি ধরা পরবো

টাকা মানুষ কে কত কিছু করতে বাধ্য করে গতকাল আমি এই সময় একজন ভার্জিন ছিলাম আর আজকে এই সময় আমি একজন নষ্ট মেয়ে আসলে নিয়তির পরিহাস কোন দিকে যায় বোঝা বড় মুশকিল,,,

হয়তো এই খবরটা যদি কেউ জানতে পারে তাহলে এইব সমাজে আমি আর মুখ দেখাতে পারবো না

আমি এসব ভাবতেছি আর আনমনে আসতেছি হঠাৎ করে কে জানি আমার হাত ধরে টান দিলেন

আমিঃ আরে আপনি এখানে কিভাবে

উনিঃ তার আগে বলেন এখন আপনি কেমন আছেন

আমিঃ আমার ভালো থাকা না থাকা সেটা পুরোটাই নির্ভর করে আমার ভাইয়ের উপর আর আমার মায়ের উপর তারা দুজন ভালো থাকলে আমি ভালো থাকি,,,

উনিঃ এত খেয়াল রাখেন আপনার পরিবারের উপর

আমিঃ যদি তাদের খেলনা রাখি তাহলে আমি পৃথিবীতে বেঁচে থাকব কি নিয়ে

উনিঃ আপনার সাথে যুক্তিতে হয়তো আমি পারবো না কারণ আপনি অনেক যুক্তি দেখাতে পারবেন

আমিঃ আপনি বললেন না তো এখানে কেন এসেছেন

উনিঃ এসেছিলাম একটু কাজ ছিল,,

আমিঃ অহ

উনিঃ আচ্ছা আপনি কি আমারও টাকার জন্য দেহ বিক্রি করবেন

আমিঃ কেন কিনবেন বুঝি

চলবে…………..