ভালোবেসে থাকবো পাশে পর্ব-১২

0
583

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্বঃ_১২
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

আরিয়া দুজনের কাছে গিয়ে বললো,, ফারু এন্ড জিজু দু’জনকেই কংগ্রেস। ছোঁয়া তোরাও আয় ফারু আর জিজুকে হলুদ লাগাবি।

আরিয়া হাতে হলুদ নিয়ে ফারিয়া আর রাতুলের পুরো মুখে মেখে দিল। সবাই আরিয়ার দিকে বিষ্ময় ভরা চোখ নিয়া তাকিয়ে আছে। আরিয়া যে এমন করবে কেউ ভাবতেই পারে নি।

আরিয়া এটা কী করলি? তুই জানিস আমি এসব একদম পছন্দ করি না তাই সবাই এতক্ষণ ধরে অল্প করে হলুদ দিচ্ছিল আর তুই পুরা মুখে একদম লেপ্টে দিলি!

কুল ডাউন ফারু। আজ এত রাগলে শ্বশুর বাড়ির লোক তোর আসল চেহেরা টা দেখে নিবে। সো আজ যা যা করবো চুপচাপ দেখে যা।

ফারিয়া আস্তে করে বলল,, আরিয়া কাজ টা একদম ঠিক করলি না।

ধ্যাত তোর ভালো আর খারাপ তোর খুলে নিয়া বসে থাক। আমার কী!

হঠাৎ আরিয়ার চোখ যায় রাতুলের দিকে! রাতুলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,, আরে জিজু তুমি কী নিজের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছ না? আবার একটু হলুদ দিব নাকি জিজু! বলেই একটা চোখ টিপ দিল।

রাতুল ঢোক গিলে বলল,, আরে না না অনেক দিছ আর দেওয়া লাগবে না।

হেই কও কী তুমি রাতুল! ওওও সরি জিজু আমরাও তো বাকি আছি। আফটার অল ফারিয়া আমাদের ফ্রেন্ড আর তুমি তো জিজু সো আমাদেরও তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি! বলেই ছোঁয়া, অন্তু আর আহিল আরো কিছু হলুদ লেপ্টে দিল তাদের মুখে।

ফারুরে তোরে তো সেই সুন্দর লাগছে একদম গাছে থাকা হলুদ শাঁকচুন্নির মতো! বলেই আরিয়া ফিক করে হেসে দিল।

আর এইদিকে তূর্য(শিশির) মুগ্ধ হয়ে আরিয়ার হাসি দেখতেছে। আরুপাখি কবে যে তোমাকে মনের কথা টা বলবো! কবে যে তোমাকে আমার নিজের করে পাবো! আমি নিজেও জানি না তুমি যেদিন জানবা আমিই সেই অচেনা কেউ তখন কী রিয়েক্ট করবা। অনেক টাই তো বদলে গেছো আজ তুমি। সেই আগের আরুপাখিটা যে আর নাই।ভেবেই তূর্য তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।

তখনি আহিল এসে তূর্যর কাঁধে হাত করে শান্ত গলায় বলল,, ভাইয়া তুই আরুর কথায় ভাবছিস তাই না। যে ও বদলে গেছে।

হুম!

আমিও সেটাই ভাবছি রে। জানিস ভাইয়া মানুষ বদলায়…. বদলাতে না চাইলেও পরিস্থিতি মানুষকে বদলাতে বাধ্য করে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাদুকর সময়। যার জন্য এক সময় প্রচন্ড ভালোবাসা থাকে তার মায়াও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। তীব্র রকমের ভালোবাসাও ফুরিয়ে শুকনো নদী হয়ে যায়..!!

দীর্ঘ দিন পাড়ি দেওয়ার পর তার কথা আর নিয়ম করে মনে পড়ে না। সময়ের সাথে সব কিছু কেমন জানি বিলিন হয়ে যায়..!! আজ থেকে দশ বছর আগে যার জন্য হৃদয় পুড়ে ছাই হয়ে যেত, প্রতিটি নিঃশ্বাসে যে মানুষটা বেঁচে থাকত, যার জন্য বাঁচা অসম্ভব হয়ে যেত, সময়ের আবর্তনে সেই মানুষটাকে ঘুনাক্ষরেও আর মনে পড়ে না..!! তবে চির তরে ভুলা যায় না কোন বিশেষ দিনে বা দিবসে তাকে মনে পড়ে। তখন আগের পাগলামি গুলোর কথা মনে পড়ে হাসি পায়..!! সময়ের বিবর্তনে আমাদের সব শোক শুকিয়ে দেয়। বাস্তবতার মুখোমুখি হলে জীবন আমাদের পথ চলা ঠিক‌ই শিখিয়ে দেয়..!!

মানুষ বদলায় খুব বদলায়। সময়ের সাথে সাথে বদলায় রুচি। তুই যে দেখছিস সে দেখার চোখ‌ও বদলায়, আর অনুভবের হৃদয় অদ্ভুত ভাবে বদলায়..!! মানতে কষ্ট হলেও এটাই বিশ্বাস করতে হবে যে, তুই যে জীবনে বাস করছিস সে জীবন ছাড়াও আরো অনেক জীবন আছে, তুর মনে হতে পারে সে জীবন গুলোতে তুই বাস করতে পারবি না..!! কিন্তু সময় বড় অদ্ভুত জাদুকর সময়ের সাথে সাথে তুই সে জীবন গুলোতে কখন যে পদার্পন করবি তুই নিজেও টের পাবি না..!!

— জীবনে কোন কিছুই অপরিহার্য নয় কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। এ পৃথিবীতে এমন কেউই নেই যাকে ছাড়া বাঁচা যায় না-!!
কষ্ট পেতে পেতে মানুষ এক সময় পাথর হয়ে যায়৷ অবহেলা পেতে পেতে মানুষ বদলে যায়। ঠিক আমাদের আরুও আজ বদলে গেছে।

কথা গুলা ঠিক। কিন্তু তুই তো দেখি কবি হইয়া গেছিস।

আরে ভাইয়া সত্যি কথায় কইলাম। এখন চলো আরুদের কাছে যাই।

এই আরু রাতুল তোর দিকে সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে! ব্যাপার টা কী রে?(ছোঁয়া)

আজব আমি কেম্নে কমু। তুই গিয়া জিজ্ঞেস কর।

আরে এম্নে কস কে? বাই দ্যা সোফা ও আবার তোরে ভালোবাসতে শুরু করল নাকি?

পাগল হইছিস তুই? রাতুল আমাকে না ফারিয়াকে ভালোবাসে। আর তাই ফারিয়াকেই বিয়ে টা করছে।

তাহলে এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কী?

হয়তো আমাকে এভাবে থেকে অবাক হয়ে গেছে। ও হয়তো ভাবছিলো আজকে আমি ওর কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চাইবো না হয় ওদের বিয়েতে সিনক্রিয়েট করবো।

তখনি ফারিয়া এসে বলে, তুই তো সত্যিই বদলে গেছিস আরু সরি আরিয়া। সত্যিই ভেবেছিলাম তুই ভেঙে পড়বি, আমাদের বিয়েতেও আসবি না। কিন্তু না তুই তেমন কিছুই করলি না। একটু বাজে সিনক্রিয়েট করলেই পারতি। সবার চোখে খারাপ বানাতে পারতাম। ধ্যাত এমন কিছুই করলি না। আসলেই অনেক বেশিই বদলে গেছিস। আর বলছিলি তো আমাদের জবাব দিবি, তো কেম্নে দিবি? কী করতে পারবি তুই সেটাই দেখব!

তুই কখনোই ভালো হবি না তাই না। আমাকে কষ্ট দিতে পারলেই তুই শান্তি পাস তাই না ফারু?কিছুটা করুন কন্ঠে বলল আরিয়া।

হ্যাঁ অনেক বেশিই শান্তি পাই আমি।

ছোঁয়া আরিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে ফারিয়াকে বলল,, ফারু প্লিজ আজ অন্তত চুপ থাক। ওর বদলে যাওয়াটাই অবাক হওয়ার কী আছে। তোরাই তো ওকে বদলাতে বাধ্য করছিস। প্লিজ যা এখান থেকে।

ফারিয়া আর কিছু না বলেই চলে গেলো।

ফারিয়া চলে যেতেই ছোঁয়া আরিয়ার হাত ধরে নিয়ে গেলো। পিছন পিছন অন্তুও আসলো। এক জায়গায় নিয়ে বসিয়ে ছোঁয়া আরিয়াকে বললো,,

আরু শুন তুই যতই ভালো মানুষ হস না কেন এই সমাজে প্রতিষ্ঠিত না হলে তোকে কেউ দাম দিবে না। কেননা, এই সমাজে ভালো মানসিকতা নয় এই সমাজে সুন্দর এবং প্রতিষ্ঠিত মানুষদের দাম দেওয়া হয়। তোর মধ্যে যদি সৌন্দর্য না থাকে এবং তুই যতটা সবার কাছে এভিলেভেল হয়ে যাবি ঠিক ততটাই মানুষের কাছে তুই স্বস্তা হয়ে যাবি এবং অবহেলা পাবি। কেননা এই সমাজের মানুষ গুলা কিছু ফ্রি-তে পেয়ে গেলে সেই মানুষটা যতই মূল্যবান ও ভালো হোক না কেন তাকে কদর করতে জানে না। একটা সময়ই সবকিছুই বুঝতে শুরু করবি তখনি নিজেকে বদলে নিতে শুরু করবি। আর এই যান্ত্রিক সমাজের যান্ত্রিক মানুষ গুলোর মতই নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলবি। আর ঠিক তখনি তুই তখনি আগের মানুষ গুলোর কাছ থেকে শুনতে পাবি তুই অনেকটা বদলে গেছিস। আর এই বদলে যাওয়ার জন্য তারা তোকেই ব্লেইম করবে। কিন্তু নিজের ভুল গুলা কখনোই স্বীকার করবে না। যেমন টা একটু আগে ফারিয়া করলো। তাই বদলে যাওয়ার পর লোকে কী বললো সেটা শোনার প্রয়োজন নেই। কারণ লোকে অনেক কথাই বলবে কিন্তু দিন শেষে নিজের মতো করে নিজেকেই ভালো থাকতে হবে। কারণ জীবনটা তোর অন্যের নয়। তাই নিজের মতো করে নিজেকেই ভালো থাকতে হয়। হুম একটা সময় বদলে তোকেই যেতেই হবে তাই সময়ের সাথে সাথে নিজেকে বদলে নে-!! নিজের মতো করে ভালো থাকতে শিখ। নিজের মতো করে বাঁচতে শিখ।

হুম আরু ছোঁয়া একদম ঠিক কথা বলছে। কোনো বেইমানের জন্য নিজের লাইফ থামিয়ে রাখলে চলবে না।(অন্তু)

হুম এটা সত্যি যে আমি মাঝে মাঝে এখনও রাতুল কে ভেবে কষ্ট পাই। কিন্তু আজ থেকে ওকে পুরোপুরি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো। আর নিজের লাইফে মুভ অন করবো। তোরা আমার পাশে থাকলেই হবে।

হুম আমরা সবসময় তোর পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ।

তূর্য দূর থেকে আরিয়ার কথা শুনে মুচকি হাসলো। তারপর মনে মনে বললো,, হুম আমিও তোমার পাশে আছি আরুপাখি। আমি তোমাকে সাহায্য করবো রাতুলকে ভুলতে। কোন একটা সময় তুমি রাতুলকে পুরোপুরি ভুলে যাবা। তখন শুধু আমিই তোমার মনে থাকবো। আর সেই সময়টা খুব তাড়াতাড়ি আসতে চলেছে।

তূর্য আরিয়াদের কাছে গিয়ে বললো,, অনুষ্ঠান প্রায় শেষ তোমরা সবাই রুমে যাও। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে যেও।

জ্বী ভাইয়া গুড নাইট।(আরিয়া)

আবার ভাইয়া? দয়া করিয়া এই অদম কে আর ভাইয়া ডাকিওনা! বুক টা হাডি যায়।

তূর্যের কথা শুনে সবাই হেসে দিল।

হয়ছে এখন রুমে যাও ফ্রেশ হও।

_______________
ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুয়ে আছে আরিয়া। তিনজন একসাথে। আরিয়া মাঝখানে তাই শান্তি তে ঘুমাতেও পারছে না।

এই তোদের কী আমারে কোলবালিশ মনে হয়? এম্নে জড়ায় ধরে আছিস কেন?

অন্তু ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,, চুপ কর দয়া করে ঘুমাইতে দে। কাল সকাল সকাল উঠে সাজতে হবে। প্লিজ ঘুমা।

তুই সাজা ছাড়া আর কী বুঝিস! তোরে বলাই বৃথা। এই ছোঁয়া তুই অন্তত একটু সর প্লিজ। আমার দম বন্ধ হইয়া আসছে।

আরে এত রাতে কী শুরু করলি তুই? একটু শান্তিতে ঘুমাইতে দে। আর আমরা জড়ায় ধরছি বলে বকবক করছিস যখন জামাই জড়িয়ে ধরবে তখন কী করবি শুনি? তখন তো কইবি যে,, ওগো বালিশ একটাই রাখো আমি তোমার বুকে ঘুমাবো। এখন যত্তসব ডং!

ছোঁয়ার এমন লাগামহীন কথা শুনে আরুর অবস্থা এমন,, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!🐸

চুপ কর মেরি মা। নে ঘুমা আমি আর কথা কমু না।

হুম এই তো গুড গার্ল। নে জানু উম্মাহ।

লুচি মেয়ে কোথাকার।

হঠাৎ আরিয়ার মোবাইলের কথা মনে পড়লো। অচেনা লোকটা হয়তো মেসেজ দিয়েছে। দুইটা দুইদিক থেকে যেভাবে জড়িয়ে ধরছে এখন তো উঠে গিয়ে ফোন টাও আনতে পারমু না৷ ধ্যাত কেন যে ফোনটা নিয়ে শুইলাম না। ভেবেই মনে মনে আরিয়া নিজেকে গালি দিতে লাগলো। এক মিনিট আমি ওই লোকটা কে নিয়ে কেন ভাবছি? ওই লোকটার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি না তো আবার। না আরু এটা হতে পারে না। আর কারো মায়ায় নিজেকে জড়াস না। পৃথিবীতে মা-বাবা ছাড়া কেউ আপন না। কেউ কারো না। সবাই স্বার্থপর।
নিজেকে বুঝাতে বুঝাতে হঠাৎ ঘুমিয়ে গেলো আরিয়া।

_______________________

বিয়ে বাড়িতে মানুষ গমগম করছে। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে শতাধিক পরিচিত, অপরিচিত মানুষের আনাগোনা। সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।

আরিয়াকে দেখে হঠাৎই তূর্যের চোখ আটকে যায়। হাল্কা খয়েরী রংয়ের লেহেঙ্গা, হাল্কা মেকআপ, খয়েরী চুড়ি, আর মেচিং করা অর্নামেন্ট পড়েছে। এক কথায় অপূর্ব লাগছে।

ছোঁয়া, আর অন্তুও সেইম ড্রেস আর তিনজন সেইম ভাবেই সেজেছে।

ওয়াও আরু আজ তোদের কে খুব সুন্দর লাগছে।

ধন্যবাদ আহু।

অপরদিকে রাতুল আরিয়ার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ব্যাপার টা তূর্য ঠিকি লক্ষ্য করছে। ইচ্ছে তো করছে রাতুলের নাক ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু বেচারা তো পারছে না। নাক ফাটিয়ে দিলে তো সব বানচাল হয়ে যাবে।

এইরে ভুল করে ফোনটা রুমেই রেখে আসছি। তোরা একটু দাঁড়া আমি ফোন নিয়ে আসছি।

আরু আসবো আমি?

না আমি পারবো তোরা থাক!

আরিয়া ফোন নিয়ে আসতে যাবে তখনি কেউ একজন তার হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে গেলো।

— আরিয়া খেয়াল করলো লোকটার মুখে মাস্ক লাগানো। দরজা, জানালা আটকানো তাই পুরা রুম অন্ধকার হয়ে আছে। ফেইস টাও ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।

#চলবে…….!!!