ভালোবেসে থাকবো পাশে পর্ব-০৩

0
738

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্ব_০৩
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

কিছুক্ষণ পর, আরিয়া লক্ষ করলো একটা ছেলে দৌড়ে আরিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে।
ছেলেটা মুখ দেখার আগেই….

”আরিয়াাাা এই আরিয়াাাা!

সাথে সাথেই ঘুম বাদ দিয়ে আরিয়া লাফ দিয়ে উঠে বসলো।

(পাঠকগন আপনারা কী ভাবছিলেন আরিয়া মারা গেছে। আমার বোন তো ভাবছিলো আরিয়া অজ্ঞান হয়ে গেছে!)🙊

আমি জানি আমার নাম আরিয়া সেটা এত চিৎকার করে বলার কী আছে আম্মু?(আরিয়া)

চিৎকার কী আর আনন্দে করছি? আর এটা বল তুই এত ঘামছিস কেন?

আসলে আম্মু একটা খুব বাজে স্বপ্ন দেখছিলাম তাই এই অবস্থা হয়ছে। এখন বলো চিৎকার কেন করছিলা?(আরিয়া)

”ভার্সিটি যাবি সেটা নিশ্চয় ভুলে গেছিস!”

হ্যাঁ আম্মু। তুমি যাও আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি।(আরিয়া)

“ওকে” বলেই আরিয়ার আম্মু রুম থেকে বেরিয়ে গেলো৷ আরিয়া বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো,,
‘‘আবার সেই বিশ্বাসঘাতকদের সাথে দেখা টা হবে। আমি খুব করে চাই রাতুল যেন চর কখনোই আমার সামনে না আসে আল্লাহ।”

“আরিয়া তাড়াতাড়ি আয়।”

“আসতেছি আম্মু বলেই আরিয়া ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।

রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ব্রেকফাস্ট করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো আরিয়া।

” ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়া প্রায় পঁচিশ মিনিট ধরে। তার তো মনে হচ্ছে পঁচিশ বছর ধরেই দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর সেই কাঙ্ক্ষিত মুখ দেখতে পেয়ে আরিয়ার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। এতক্ষণ যার জন্য অপেক্ষা করছিল সে আর কেউ না সে হলো আরিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড অন্তু। কাছে আসতেই আরিয়া অন্তুকে উদ্দেশ্য করে বলল,, ❝কিরে শাঁকচুন্নি এত লেট কেন করলি? তুই কী কখনোই শুধরাবি না লেট লতিফের বউ? ডেইলি লেট করিস কেন? রাস্তায় কী খেতে বসেছিলি নাকি ভিক্ষা করছিলি? পঁচিশ মিনিট ধরে রাস্তায় আছিস বলেই যাচ্ছিলি! বাই এনি চান্স,, রাস্তায় ঝাড়ু দিচ্ছিলি না তো আবার? 🙄

আরিয়ার কথাই আজ অন্তু হাসলো না বরং সে খুব অবাক হয়ে দেখছে আরিয়াকে। একদিনে মেয়েটার চেহেরার কী অবস্থা হয়েছে। অথচ সে মজাই করে যাচ্ছে।

কি দেখছিস এমন করে? (আরিয়া)

দেখছি আমার কিউট বান্ধন্নী টারে। শুন কুত্তি আমি রাস্তায় খাইতে বসে, ভিক্ষা করতেও বসে নি। আর ঝাড়ুও দিচ্ছিলাম না। আসলে ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হয়ে গেছে। সরি দোস্ত আর হবে না! কানে ধরে একটু অনুনয়ের সুরে অন্তু ফারিয়াকে বলল।

এটা তো তুই ডেইলি বলিস। বিগত পাঁচ বছর ধরে এমন টাই হয়ে আসছে। এখন ভার্সিটির ভিতরে চল। (আরিয়া)

এমন না করলে তোর কিউট বকা গুলাও তো শুনতে পারমু না। (অন্তু)

হইছে শাঁকচুন্নি দিব কানের নিচে একটা। এখন ভিতরে চল।

হুম!

আরিয়া হাঁটছে আর ভাবছে,, সারাদিন যতই মন খারাপ থাকুক এই অন্তুটার মুখ দেখলেই সব উদাও হয়ে যায়৷ আর আমি ওর সামনে চাইলেও মন খারাপ করে থাকতে পারবো না। আমার কষ্ট দেখে মেয়েটা সহ্য করতে পারবে না। রাতুল আর ফারিয়ার সাথে ঝামেলা করবে।

হঠাৎ আরিয়া আর অন্তুর সামনে ফারিয়া ও তার কিছু ফ্রেন্ড রাস্তা আটকিয়ে দাঁড়ালো।

কিরে কিছু বলবি?(আরিয়া)

হ্যাঁ! কালকে তোর সাথে এত বড় এত ঘটনা ঘটলো আর তুই স্বাভাবিক কীভাবে? তোর কষ্ট হচ্ছে না তোর রাতুল এখন আমার হয়ে গেছে?(ফারিয়া)

আরিয়া কিছু টা শান্ত গলায় উত্তর দিলো,, ‘‘কেন ফারিয়া তুই কী ভাবছিলি রাতুলের শোকে আমি পাগল হয়ে যাবো? ওর জন্য আমি নিজেকে অন্ধকার রুমে আবদ্ধ করে নিব? তুই কী ভাবছিলি আমি আত্মহত্যা করবো?
কার জন্য আত্মহত্যা করবো আমি বলতো! যে আমার ভালোবাসার বিনিময়ে শুধু ছলনা করে গেছে! একটা বিশ্বাসঘাতকের আত্মহত্যা করে আমি আমার মা-বাবা, ভাইকে কষ্ট দিতে পারবো না। যেখানে রাতুল আমার কষ্টের কথা না ভেবে আমাকে নিজের স্বার্থে ছেড়ে চলে গেছে, যে সৌন্দর্যের মোহে পড়ে ছেড়ে চলে গেছে! সেখানে আমার মা-বাবা আমার একটু বাসায় ফিরতে দেরি হলেই প্রচন্ড চিন্তা করে, খোঁজ নিতে শুরু করে। একটু অসুস্থ হলে পাগলের মতো আচরণ করে তাদেরকে ভুলে গিয়ে বিশ্বাসঘাতকদের জন্য মরবো আমি ভাবলি কেমনে? আর শোন আমাকে ওইসব মেয়েদের মতো ভাবিস না যারা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।
সবথেকে বড় কথা হলো কোনো বিশ্বাসঘাতকের জন্য নিজেকে কষ্ট দিতে চায় না। তোদের জন্য মা-বাবার বুক খালি করতে চায় না।
আর ছোট থেকেই তো আমার সব পছন্দের জিনিসে নজর দেওয়া আর কেড়ে নেওয়ায় তো তোর স্বভাব ছিলো। আর আমিও তা হাসি মুখেই তোকে দিয়ে দিতাম। মনে কর, রাতুলকে দান করলাম। আমার এই পছন্দের মানুষটাও হাসি মুখেই তোরে দিয়ে দিলাম।

একনাগাড়ে কথা গুলা বলে থামলো আরিয়া। সামনে তাকিয়ে দেখে রাতুল দাঁড়িয়ে আছে। রাতুল কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিয়া অন্তুকে বলল চল এখান থেকে। বলেই অন্তুর হাত ধরে ক্লাসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।

ফারিয়া আরিয়াকে অপমান করতে গিয়ে নিজেই যেন অপমানিত হয়ে গেলো। তখন রাতুল এসে ফারিয়ার কাদে হাত রেখে বলল, কী ভাবছো! ওর কথাই কষ্ট পেয়ো না। চল আজ ক্লাস করতে হবে না। আমরা আজ শপিং করব কেমন।

ওকে চলো।

ফারিয়া তার বান্ধবীদের বলে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো। মনে মনে ভাবছে, আরু তুই আজ আমায় যেভাবে অপমান করলি একদিন প্রতিশোধ টা নিবই।

আড়াল থেকে একজন মানুষ হাসি মুখে সরে গেলো। তার প্রেয়সী আজ যোগ্য জবাব দিয়েছে। যদিও সে জানে তার প্রেয়সী এখনো রাতুল কে মন থেকে ভুলতে পারছে না তবুও সে খুব খুশি। কেননা, তার প্রেয়সী নিজের ক্ষতি করবে না।
তবে সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল যারা তার প্রেয়সীকে কষ্ট দিছে তাদের শাস্তি দিবেই আর সবসময় সে তার প্রেয়সীকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে।

অন্যদিকে আরিয়া আর অন্তু ক্লাসে আসার পর জিজ্ঞেস করলো আরিয়া তুই তখন কী বলছিলি তোর সব পছন্দের জিনিস ও কেড়ে নিতো। কেমনে কী দোস্ত?

#চলবে..!!