ভিনদেশি তারা পর্ব-০৪

0
3441

#ভিনদেশি_তারা
#পর্ব-৪
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া

৯.
‘ কি ভাবছো চিটু?’

‘ ভাবছি তোমার বন্ধু একটা বেয়াদব।’

মারোলা মুখটা চুপসে যাওয়া বার্গারের মতো করে ফেললো। বললো, ‘ মোটেও না!’

আমি আর কিছু বললাম না। গাড়ির ভেতর বসে মাথাটা এলিয়ে দিলাম সিটে। মারোলা’ও এসে বসলো ড্রাইভিং সিটে, ও নিজের গাড়ি নিজেই চালাতে জানে। সাউন্ড সিস্টেমে মৃদু স্বরে একটা গান বাজছে। ‘The Way Look At Me Christian Bautista.’

এই পরিবেশে গানটা কেমন অদ্ভুত লাগছে! আমি আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশ ঘন কালো হয়ে আছে। যে-কোন সময় বৃষ্টি নামবে। আমি মনেপ্রাণে চাইছি আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামুক। ভার্জিনিয়াতে বৃষ্টি হলে দেখতে কেমন হয় জানা নেই, বাংলাদেশের মতো নাকি ভিন্ন?

আমাদের গাড়িটা দাঁড়ালো একটা হাইওয়ের পাশে। এখান থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব সুন্দরভাবে দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ি জংলামতো একটা জায়গা। বড় বড় কিছু পাহাড় আকাশ ছুঁয়েছে। সবকিছু এতো সুন্দর কেন? মারোলা হাসছে! আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো, ‘ কি? বাড়ি যাবে? নাকি আরও ঘুরবে?’

আমার বেশ ভালো লাগছিলো। বললাম, ‘আরেকটু থাকি প্লিজ?’

‘ কেন নয়?’

‘ থ্যাংকস।’

‘ আচ্ছা, আমার সাথে এক জায়গায় যাবে?’

‘ কোথায়?’

‘ ওই-যে। ক্লেভের বাড়ি, তখন দেখলে না?’

আমি মারোলা’র দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। বেয়াদব লোকটার বাড়ি যেতে চায় কেন সে? মুখের উপর বাড়ির গেইট লাগিয়ে দিলো আর এই সরল মেয়েটা ওখানেই যেতে চাইছে! আমি হলে তো জীবনেও এই লোকের মুখদর্শন করতাম না। কিন্তু ভদ্রতার কারণে মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ বোধক জবাব দিতেই হলো।

গাড়ি ঘুরালো মারোলা। এলক্লেভের বাড়ির কাছাকাছি একটা পার্কিং লটে গাড়িটা রেখে এলো। কয়েকগজ হেঁটে পৌঁছলাম ক্লেভের বাড়ি। মারোলা’র পিছু পিছু হাঁটছি। লোহার গেইট খুলে দুজনে এমনভাবে ঢুকলাম যেন চুরি কর‍তে এসেছি। লন পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলাম উপরে। কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুললো একটা বুড়ি মহিলা, সম্ভবত ক্লেভের দাদী। রুপকথার গল্প থেকে উঠে আসা ডাইনি বুড়ির মতো লাগছে। মারোলা বললো, ‘আমি এলক্লেভের বন্ধু। ওর সাথে দেখা কর‍তে এসেছি।’

বুড়ি মহিলা আমাদের দুজনকে আগাগোড়া পরখ করে মারোলার উদ্দেশ্যে বললো, ‘তুমি এলক্লেভের বন্ধু, কিন্তু ও কে?’

‘ আমার বন্ধু!’

‘ তোমার বন্ধুকে তাহলে বাইরে থাকতে বলো। শুধু তুমি আসো।’

কি ইনসাল্ট! এই অষ্টাদশী ডাইনি বুড়ি আমাকে বাইরে থাকতে বলে? কত্তবড় সাহস। যেমন এলক্লেভ, তেমন তাঁর দাদী। আমি জ্বলন্ত চোখে বুড়ির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মারোলা আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বুড়িকে বললো, ‘ ওর সাথেই তো ক্লেভের দেখা করার কথা, সেজন্য নিয়ে এসেছি।’

বুড়ি সন্দেহী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বুঝলাম না আমি কি ভিনদেশি সন্ত্রাসীনি নাকি চোর-ডাকাত? এমনভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে যেন আমি ওর নাতিকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছি। যত্তসব আজাইরা! আমরা বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম, কেউ থাকেনা নাকি এই বাড়িতে? ভুতুড়ে দেখাচ্ছে সবকিছু। মারোলা’র কানে ফিসফিসিয়ে বললাম, ‘ কই তোমার ক্লেভ বাবু? দেখছি নাতো।’

বুড়ি পেছন থেকে একটা চিৎকার দিয়ে বললেন, ‘ পূর্ব দিকের করিডোর ধরে সামনে এগিয়ে বাঁক নাও, দক্ষিণের ঘরটাই এলক্লেভের।’

এই চিৎকার শুনে আমরা দুজন এতো ভয় পেলাম যেটা বলার বাইরে। এবার সত্যিই মনে হচ্ছে এই বুড়ি একটা ডাইনি! মারোলা আমার হাত ধরে ঝটপট সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো পূর্ব দিকের করিডোরে। তারপর বাঁক নিয়ে দক্ষিণের ঘরটা দেখতে পেলাম। দরজাটা হাট করে খোলা। আমরা পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকলাম। কাঠের মেঝেতে কি সুন্দর কার্পেট, একদম নরম আর তুলতুলে। চারদিকের দেয়ালে নানারকম ছবি, শো-পিস সাজানো। বিশাল বড় বেড আর অন্যপাশে বইয়ের তাক। কিন্তু ঘরে কোনো মানুষ চোখে পড়লোনা। আমি আর মারোলা চোখাচোখি করলাম। বেরিয়ে আসতে নিবো ঠিক তখনই দরজা খোলার শব্দ পেলাম। ঘুরে তাকিয়ে দেখি এলক্লেভ ফর্সা উদোম গায়ে গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ওয়াশরুম থেকে বেরুচ্ছে। মুখে কি একটা গানের বুলি আওড়াচ্ছে। হঠাৎ আমাদের দেখে সে ভড়কে গেলো। মারোলা তাড়াহুড়ো করে আমার পিছনে লুকালো। ক্লেভ তাঁর নীল চোখজোড়া দিয়ে আমাকে খুঁটিয়ে দেখে নিয়ে বললো,

‘ হু আর ইউ মিস?’

আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে না। কোনোমতে বললাম, ‘মারোলা’র বন্ধু!’

‘ কে মারোলা?’

আমি অবাক হয়ে তাকালাম ক্লেভের দিকে। মারোলা আমার পিছন থেকে বেরিয়ে ক্লেভের সামনে কোমড়ে দু’হাত রেখে রাগী গলায় বললো, ‘সিরিয়াসলি? মারোলাকে চেনোনা?’

ক্লেভ অবাক হয়ে বললো, ‘ স্যরি, এক্সট্রেমলি স্যরি। মাথায় ছিলো না তোমার কথা।’

‘ লাগবেনা স্যরি।’

ক্লেভ তাড়াতাড়ি আলমিরা ঘেঁটে একটা ডেনিম শার্ট বের করে পরে নিলো। তারপর মারোলা’র দু’হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বললো, ‘ রাগ করোনা প্লিজ। এতোদিন পর দেখা তাই মাথায় ছিলোনা।’

‘ তুমি আসলে একটা বোকা, স্বার্থপর।’

‘ যা ইচ্ছে হয় বলতে পারো।’ হাসলো ক্লেভ!

‘ তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে?’

‘ কোথায় আবার? জানোই তো ঘুরাঘুরি, অ্যাডভেঞ্চারের নেশা আমার রক্তে মিশে আছে।’

‘ এবার কোথায় ঘুরে এলে?’

‘ সিক্রেট!’

‘ তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো!’

‘ কি কথা?’ ভ্রু কুঁচকে ফেললো ক্লেভ। দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।

‘ আমার মিলার’কে মেরে ফেলেছে লেসলি!’ অসহায় গলায় নালিশ করলো মারোলা। আর মিলা’র হলো মারোলা’র পোষা কুকুর, যাকে ও অনেক ভালোবাসতো।

ক্লেভ চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ কখন ঘটলো এসব?’

‘ দু’মাস আগে। তুমি ছিলে না শহরে।’

ক্লেভ দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘দেখে নেবো ইহুদী খুনিটাকে। তুমি মন খারাপ করোনা মারোলা।’

এদিকে আমি দুজনের মাঝে কাবাব-মে-হাড্ডি হয়ে আছি। দুজনে অনেক কথা বলছে কিন্তু আমার দিকে নজর নেই, আমি সেই দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছি। এতো রাগ হচ্ছিলো বলার বাইরে। এই সাদা দুই ভূতে এতো আলাপ জমিয়েছে যে আমেরিকানদের সম্পর্কে আমার ধারণা বদলে গেলো। আগে ভাবতাম এরা বোধহয় কথাই বলতে জানেনা বা কাজ ছাড়া অন্য বিষয়ে কথা বলেনা। এখন দেখি পুরোই উল্টো!

১০.
এলক্লেভের চোখ যখন আমার উপর পড়লো তখন সে ভারী অবাক হওয়ার ভান করে মারোলাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ ও কি তোমার কিছু হয়?’

‘ হুম। আমার বন্ধু।’

ক্লেভ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ফরেইনার নাকি? দেখেতো ইন্ডিয়ান মনে হচ্ছে।’

আমি একটু রাগী গলায় বললাম, ‘না। আমি বাংলাদেশি।’

‘ ব্যাঙলাদেসি?’

‘ বাংলাদেশি। নাম শুনোনি নাকি? আজব!’

ক্লেভ হাসছে। যেন মজার কথা বলেছি আমি।

আমি রাগী গলায় বললাম, ‘ হোয়াট দ্যা প্রবলেম?’

‘ আমি জানি, ব্যাঙলাদেসি মেয়েদের নাকি অনেক রাগ। তোমাকে দেখে প্রুফ পেলাম। দেখো গাল কেমন লাল তোমার।’

আমি নিভলাম। ক্লেভ বললো, ‘ আমি ইন্ডিয়া গিয়েছি কিন্তু ব্যাঙলাদেসে যাইনি। ওখানের মানুষ নাকি পাগল।’

আমি রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে তাকাতেই ক্লেভের মুখ থেকে হাসিটা মিলিয়ে গেলো। দুপুরের বেয়াদবির ঝাঁঝটা এখনো মনে লেগে আছে। ক্লেভ বললো, ‘ স্যরি। আমি জোক করছিলাম। তুমি বসো।’

আমার বেশ রাগ উঠছিলো হুদাই। আমি মারোলাকে বললাম, ‘প্লিজ চলো বাড়ি যাই।’

মারোলাকে কিছু বলতে না দিয়ে ক্লেভ বললো, ‘ ওয়েট ওয়েট। এতো রাতে কোথাও যাওয়া চলবেনা, তাছাড়া এখন বৃষ্টি নামবে।’

‘ নামলে নামুক, আমি এক্ষুনি বাড়ি যাবো।’

মারোলা বললো, ‘এখানে থেকে যাইনা প্লিজ চিটু! আমরা ক্লেভের সাথে গল্প করবো!’

ক্লেভ বোধহয় আমার রাগ হওয়ার কারণটা ধর‍তে পারছিলোনা। সে গমগমে গলায় বললো, ‘কিছু মনে করোনা, তুমি এরকম অদ্ভুত বিহেভ করছো কেন?’

আমি বললাম, ‘ভালো লাগছেনা এখানে।’

‘ থেকে যাও, ভালো লাগবে। বৃষ্টির দিনে একা একা বাড়িতে ভালো লাগবেনা।’

এমন নিঃসংকোচ আবেদনে আমার রাগটা একটু কমলো। ঠিকই তো! আমাদের বাড়িতে বৃষ্টির দিনে সব ভাইবোনেরা মিলে লুডু, ক্যারাম খেলতাম। দাদার কাছে বসে ভূতের গল্প শুনতাম, একা একা ভালো লাগতো না। এই বিদেশ বিভূঁইয়ে এমন দিন কখনো আসবেনা জানি, তাই ক্লেভের প্রস্তাবটা মেনে নিলাম।

মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে বসে পড়লাম কাউচের উপর। ক্লেভ জিজ্ঞেস করলো, ‘ ইয়ে..তোমার নাম কি মিস?’

আমি রাগী গলায়ই বললাম, ‘চিত্রা!’

‘ চে…তলা?’ ক্লেভ বলার চেষ্টা করলো।

‘নো নো। চিত্রা!’

‘ এতো কঠিন নাম? ওহহ গড। চেইত..রা? এখন হলো?’

‘ না হয়নি। চিত্রা বলো।’

ক্লেভ অনেকচেষ্টার পর বললো, ‘ চিট..রা…!’

আমি হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম, ‘ হুম, চিটরা।’

‘ তো চিট..রা, মারোলা! ডিনারে কি নেবে?’

‘ আমার তোমার হাতের কফি চাই, দ্যাটস এনাফ।’

‘ ইউ?’ আমাকে জিজ্ঞেস করলো ক্লেভ।

আমি অসহায় গলায় বললাম, ‘ কফিই।’

ক্লেভ উঠে চলে গেলো। ভাত তো আর দিবেনা আর আমি অন্যকিছুও খাবনা তাই কফিই বলতে হলো।ভেবেছিলাম ক্লেভ আমার সাথে দুর্ব্যবহার করবে, কিন্তু না। বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। কিন্তু গেইটের ব্যাপারটা মনে হলে আমার এখনো রাগ লাগছে। তবে মারোলা একটা কথা ভুল বুঝেছে আমি বুঝতে পেরেছি। কারণ ক্লেভকে দেখে মনে হচ্ছেনা সে আমার সাথে দুর্ব্যবহার করবে বা ও বদরাগী! আর ক্লেভের মুখে বারবার “চিট..রা” ডাক শুনে আমার মনে হচ্ছে আমি বুঝি “চিটার”! কি এক কান্ড! নিজের দেশ ছেড়ে পৃথিবীর আরেক প্রান্তে এসেও নাম নিয়ে সমস্যায় পড়ে গিয়েছি। দেশে তো সবাই তো ভেঙিয়ে বলতো, ” চিতাবাঘ, চেতাইরা, চৈতালি, চৈত্রমাস!”

১১.
কফির মগে চুমুক দিতেই আমার ব্রহ্মরন্ধ্র পর্যন্ত কেঁপে উঠলো। ও আল্লাহ! এটা কফি? নাকি করল্লা’র জুস? আমি গিলতে পারলাম না আবার তিতকুটে স্বাদের জন্য মুখেও রাখতে পারলাম না। ফড়াৎ করে সবটা মুখ ছুটে বেরিয়ে এলো এবং গিয়ে পড়লো এলক্লেভের পরণে সুন্দর ডেনিম শার্টের উপর। কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি বুঝতে পারলাম না কি হয়েছে! যখন আমার সম্বিত ফিরে এলো তখন দেখলাম,
মারোলা ক্লেভের দিকে, ক্লেভ আমার দিকে আর আমি ক্লেভের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছি আর অপেক্ষা করছি ক্লেভ কখন এসে আমাকে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।

আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। মারোলা’র চোখেমুখে স্পষ্ট ভয়ের চিহ্ন। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, খানিকক্ষণ পরপর বিদ্যুৎ ঝিলিক দিচ্ছে আর সেই আলোতে ঘরটাও ভেসে উঠছে। এই ভয়ংকর একটা মুহূর্তে কাউকে কিছু না বলে একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে পড়লো ক্লেভ! আমি তাকালাম না ওর দিকে। ক্লেভ সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে শব্দ করে দরজা লাগালো। আমি এবার ভয়ের চোটে দু’হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে দিলাম। মারোলা অবাক হয়ে বললো, ‘কাঁদছো কেন? এই চিটু?’

‘ এটা ঠিক হলোনা মারো! আমি ইচ্ছে করে এমন করিনি!’

‘ ইট’স ওকে হানি। কাঁদার মতো কিছু হয়নি, রিল্যাক্স।’

‘ ক্লেভ কি ভাববে? তোমাদের আড্ডায় আমার জন্য ব্যাঘাত ঘটলো, আমি ওর জামাটাও নষ্ট করে দিলাম।’

‘ আহা! ক্লেভ কিছু বলবে না।’

‘ আমি জানি ও রেগে গিয়েছে। দেখলে না কিভাবে চলে গেলো?’

মারোলা আরো কিছু বলতে যাবার আগেই আমি দৌড়ে ব্যলকুনিতে চলে এলাম। কি একটা অবস্থা! কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ জ্বলছে। এমন বিচ্ছিরি একটা ব্যাপার ঘটে গেলো। রাগে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ক্লেভ দেখলো আমি নেই। মারোলাকে জিজ্ঞেস কর‍তেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো আমি ব্যলকুনিতে। ক্লেভ আসলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে আসো।’

আমি চুপ। ঝাপটা বৃষ্টি আমার মুখে পড়ছে। আমি মাথা নাড়িয়ে না বলতেই ক্লেভ এসে টেনে আমাকে ঘরে নিয়ে গেলো। টাওয়ালটা হাতে দিয়ে হেসে বললো, ‘বোকার মতো কেউ এমন করে? চুলগুলো মুছে নাও।’

‘ আমি স্যরি ক্লেভ।’

‘ স্যরি বলার কিছু নেই তো। এমন এক্সিডেন্ট আমার নিজেরও কতোবার হয়েছে, এতে রিয়্যাক্ট করার কিছু নেই।’ হাসতে হাসতে বললো এলক্লেভ!

‘ আমি আসলে তিতা খেতে পারিনা। কফিতে বেশি করে চিনি মিশিয়ে খাই।’

মারোলা আর ক্লেভ অবাক হয়ে একসাথে চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘হোয়াটটট??’

‘ কি?’

‘ সুগার মিশিয়ে খাও? তুমি জানো এটা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকারক, মাই গড!’ ক্লেভ বললো।

‘ স্বাস্থ্য দিয়ে কি হবে যদিনা খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারি?’

ওরা দুজন আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি কি এক ভয়ংকর কথা বলে ফেলেছি। আমার অস্বস্তি হচ্ছিলো। ‘ এভাবে তাকাচ্ছো কেন?’

‘ তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি মারা যাচ্ছি। প্লিজ আমাকে কেউ বাঁচাও, আমি অল্প বয়সে মর‍তে চাইনা। এই আফসোস ভরা অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে মরে গেলে আমি ভূত হয়ে ফিরে আসবো চিট..রা। আমার আফসোসের জীবনটা বাঁচাও!’ চোখ দুটো বড়বড় করে বললো ক্লেভ।

ক্লেভের কথা শুনে আর ওর এক্সপ্রেশন দেখে আমি হেসে দিলাম। মারোলা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। একটু হাসি, একটু মজা এই নাহলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক? আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম নীল চোখের মানবটার দিকে, বাতাসে তাঁর চুল উড়ছে। হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় ফুটে উঠেছে এক বিশ্বস্ত বন্ধুর প্রতিচ্ছবি।

নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার। ক্লেভের বিরুদ্ধে এতক্ষণ কিসব উল্টাপাল্টা ভাবছিলাম আমি। এতো ভালো একটা ছেলে যে অন্যকে হাসাতে পারে, যত্ন নিতে পারে সে মোটেও আমার ভাবনার মতো উচ্ছিষ্ট নয়।

মাঝরাত হয়ে গেছে কিন্তু এখনো অনুশোচনায় পুড়ছি আমি। দু’চোখে কিছুতেই ঘুম আসছে না। পাশে মারোলা শরীর ভাঁজ করে গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। ঠান্ডা লাগছে হয়তো ওর। আলতো করে ওর গায়ে পশমি কম্বলটা জড়িয়ে দিলাম মারোলার গায়ে। এলক্লেভের পাশের ঘরটাতে রয়েছি আমরা। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দের সাথে আসছে জংলি ফুলের মিষ্টি সুবাস। মনে মনে ভাবছি একদম ভুল করেনি মারোলা। এডওয়ার্ড এলক্লেভ নামক যুবকটিকে পুরো বিশ্বাস করা যায়। হোক না একটু বদরাগী, অগোছালো।

👉”ইবাদত একটি ব্যবসার মত। এর দোকান হলো নির্জনতা, পুজি হলো তাকওয়া, লাভ্যাংশ হল জান্নাত!”

__হযরত আবু বকর (রাঃ)

চলবে…ইনশাআল্লাহ! ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।