ভিনদেশী তারা পর্ব-০১

0
6265

#ভিনদেশী_তারা
#পর্ব-১
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া

বিয়ের আগের দিন রাতে জানতে পারলাম আমার হবু স্বামী একটা মাফিয়া দলের লিডার। সে মানুষ খুনোখুনি সহ সব ধরণের খারাপ কাজের সাথে জড়িত। সবাই নাকি তার ভয়ে কাঁপে। অথচ তার সুন্দর, সুশ্রী মুখ দেখে কিছুই বোঝা যায়না।
আমাকে একদিন রাস্তায় দেখে সে। অতঃপর তার মাকে দিয়ে আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু আজ জানলাম ওনার কোনো মা-ই নেই। সব ফ্রট!

এই খবর শোনার পর বাসায় সবাই চিন্তায় অস্থির। কাল বিয়ে আর আজ যদি কেউ শোনে হবু বর গুন্ডা, তাহলে কি হবে? মুখ দেখানোর উপায় থাকবেনা সমাজে।

ওর নাম নিঝুম। শহরের সবচেয়ে বড় মাফিয়া দলের লিডার। এই খবর শোনার পর আব্বু রেগে ফোন করে ওনাকে স্রেফ মানা করে দিয়েছেন যে, এই বিয়ে হবেনা। শুনে ওনি নাকি বাঁকা হেসে ফোন রেখে দিয়েছেন। একটা খুনি, সন্ত্রাসীর কাছে তাঁরা মেয়ে তুলে দিবেন না। খবর শুনে আমি প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে খুব খুশি হলাম। বিয়ে বাড়ির সব কাজকর্ম সেখানেই অফ করা হলো।

পরদিন আমার ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো। আমি সিন করে দেখলাম, রিতুর নাম্বার। ওর সাথে ক্যাফে’তে দেখা করতে বলেছে। আমিও সেইমতো রিতুর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রেডি হয়ে আব্বু-আম্মুকে বলে বেরুলাম। বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে ‘ব্ল্যাক ক্যাফেটেরিয়া’র উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম।

মাঝপথে যেতেই একটা কালো গাড়ি এসে পথ রোধ করে দাঁড়ালো। রিকশাওয়ালা ব্র‍্যাক করে থামালো। গাড়ি কালো হুডি পড়া একটা লোক এসে হঠাৎ করেই আমাকে গাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেতে লাগলো। আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘এই যে? কে আপনি? আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছাড়ুন আমাকে।’

হুডি পড়া লোকটা আমাকে ছাড়লোনা। আরো জোরে জোরে হাত টান দিতে লাগলো। টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো। আমি রিকশাওয়ালাকে বললাম, ‘চাচা, বাঁচান আমাকে।’

রিকশাওয়ালা এগিয়ে আসতেই হুডি পড়া লোকটা এক ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে ফেলে দিলো। গিয়ে ধাক্কা খেলো রাস্তার উপর বিছিয়ে রাখা ইটে, মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে গেলো। আমি নিজের হাতটাকে কোনোমতে ছাড়িয়ে উল্টোদিকে দৌড় দিলাম। কিন্তু পারলাম না, লোকটা বড়বড় পা ফেলে আমাকে ধরে ফেললো।

আমাকে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসালো। দরজা লক করে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আমি হাত-পা ছুঁড়াছুঁড়ি করছি, কিন্তু লোকটার হেল-দোল নেই। আমি এবার হাল ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে আপনি? আমাকে এভাবে তুলে আনার মানে কি?’

লোকটা চুপ। আমি এবার প্রচন্ড রেগে গাড়ির কাচে ঘুসি দিলাম। কাচ ভেঙে হাতে ঢুকে রক্ত বেরিয়ে এলো খানিকটা। লোকটা ভয়ংকর রেগে বললেন, ‘এসব নাটকবাজি বন্ধ করো বেবি। জীবনটা বাংলা সিনেমা নয় যে তুমি হাত কাটলে আর আমি সেবা করবো।’

আমি ওড়না দিয়ে হাত চেপে ধরে বসে আছি। বললাম, ‘কে আপনি?’

বলে টেনে লোকটার হুডি সরিয়ে দিলাম। যা দেখলাম, তাতে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। আমার পাশে নিঝুম বসে আছে। বাঁকা হাসছে। কে বলবে এই সুন্দর মুখের আড়ালে একটা কুৎসিত মানুষের বসবাস!

আমি চিৎকার করে বললাম, ‘আমাকে এভাবে তুলে আনার মানে কি?’

‘ তোর বাপ আমায় রিফিউজ করলো কেন? এজন্যই তুলে আনতে বাধ্য হয়েছি।’

তুইতোকারিতে আমি বাক্যহারা হয়ে গেলাম। ঘৃণায় সারা গা শিরশির করে উঠলো। বললাম, ‘আব্বু রিফিউজ না করলে আমি রিফিউজ করতাম। আপনার মতো দুশ্চরিত্র লোককে কে বিয়ে করতে চায়!’

নিঝুম বাঁকা হাসলো। হা হা করে হেসে বললো, ‘ সারা শহরের মেয়েরা নিঝুম বলতে অজ্ঞান, আর তুই বলছিস কে বিয়ে করবে আমায়? তুই জানিস না তো জেনে রাখ।’

‘ ওসব মেয়েরা আপনার রুপ দেখে আসেনা, টাকা দেখে আসে।’

‘ ঠিক বলেছিস। আমার প্রচুর টাকা আছে, সেই টাকা দিয়ে তোর মতো কয়েকশো মেয়েকে কিনতে পারি আমি!’

‘ তো কিনে নেন। কিন্তু আমাকে ছাড়েন!’

‘ না, তোকে ছাড়বোনা।’

‘ আমিতো আপনাকে বিয়ে করবোনা, তাহলে ধরে এনেছেন কেন আমাকে?’

‘ প্রতিশোধ নিতে!’

‘ কিসের প্রতিশোধ?’

‘ আমাকে রিফিউজ করার। তুই বিয়ে করবি না তো কি হয়েছে, আমি করবো বিয়ে!’

‘ আপনি কি আমাকে জোর করবেন নাকি?’

‘ না, বাধ্য করবো।’

‘ মানে?’

‘ মানে তোকে আমার বেড পার্টনার বানাবো আজ রাতে। হা হা!’

কথাটা শুনেই আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। কি ভীষণ নোংরা লোকটার মন! এর সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছিলো? ছিহ…ঘৃণা হচ্ছে আমার। কিন্তু আমাকে তো এখন নিজেকে বাঁচাতে হবে। কি করবো আমি?

একসময় গাড়ি একটা বিশাল বাড়ির সামনে থামলো। নিঝুম আমাকে জোর জবরদস্তি করে গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো। একটা রুমে এনে আমাকে ছুঁড়ে ফেললো। বললো, ‘ আজ রাতটা হবু বউয়ের সাথে কাটবে, অন্যদের না করে দিই বেবি?’

‘ মানে?’

‘ মানে আমার তো প্রতিদিনই নতুন নতুন মেয়ে লাগে রাত কাটাতে, আজ তুমি আছো তাই অন্যদের আসতে নিষেধ করে দিচ্ছি।’

বলেই আমাকে রুমে আটকে চলে গেলেন। এদিকে রাত নেমে এসেছে। আমার শরীর দিয়ে ভয়ে ঘাম ছুটছে। হাতটা খুব জ্বলছে, রক্ত শুকিয়ে লেগে গিয়েছে। আমি ভাবছি কি করে এখান থেকে বেরুনো যায়? বাসার সবাই না জানি কত চিন্তা করছে। সবকিছু শেষ হয়ে যাবে যদিনা আমি এখান থেকে পালাতে পারি। কিছু একটা কর‍তেই হবে। নিজের হ্যান্ডব্যাগটা দেখতে পেয়ে স্বস্তি পেলাম।

অনেকক্ষণ পর নিঝুম দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। হাতে খাবারের ট্রে। আমাকে এসে বললো, ‘খেয়ে নে!’

‘ খাবোনা।’

‘ খেতে হবে বেবি। নইলে আমি কি করে খাবো বলো!’

আমি কিছু একটা ভেবে নিলাম চট করেই। বললাম, ‘খাবো। কিন্তু একটা শর্তে!’

নিঝুম ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘কি শর্ত?’

‘ আপনাকে আগে খেতে হবে!’

‘ ওকে!’

নিঝুম মেনে নিলো। আমিও বাঁকা হাসলাম। নিঝুমের অন্তরালে ব্যাগ থেকে ঘুমের ঔষধ বের করে মিশিয়ে দিলাম ওর জুসের গ্লাসে। নিঝুম ঢকঢক করে সবটা খেয়ে নিলো। আমি ভয়ে শেষ, যদি বুঝতে পারে তাহলে আমাকে শেষ করে দিবে নিশ্চিত। রুটির টুকরো ছিঁড়ে মুখে দিচ্ছি, হার্টবিট জোরে জোরে শব্দ করছে।

নিঝুম বাঁকা হেসে বললো, ‘আমার থেকে পালিয়ে গেলেও পার পাবিনা তুই, তোর জীবন তছনছ করে দেবো। তোকে আমাকেই বিয়ে করতে হবে। তাই পালানোর চেষ্টাও করিস না।’

আমি ভয় পেয়ে গেলাম। বুঝে ফেললো না তো আবার।আমি চুপ করে রইলাম।

কিছুক্ষণ পরে নিঝুম আমার দিকে তাকিয়ে রেগে বললো, ‘কি খাইয়েছিস আমায়? আমার এমন লাগছে কেন?’

আসসালামু আলাইকুম! চলবে….ইনশাআল্লাহ! বেশি পর্ব হবেনা এটা। নামটা নিয়ে কনফিউজড হবেন না।

👉নবী করিম( সাঃ) বলেন,
তোমরা কোরআন পড়,কেননা
কেয়ামতের দিন কোরআন তোমাদের
জন্য সুপারিশ করবে।

~ [মুসলিমঃ-১৯১০]