ভুলিনি তোমায় পর্ব-০২

0
4846

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :২

চোখ বন্ধ হওয়ার আগে বাবার আর্তনাদ কানে বাজতে লাগলো। আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা,আমি তোমার ভালো মেয়ে হতে পারি নি।কথাটা মনেই রয়ে গেলো,মুখ দিয়ে আর বলতে পারলাম না।

চোখ খুলতেই নাকে,মুখে অক্সিজেন মাস্ক,এক হাতে ক্যানালার অন্যহাত ব্যান্ডেজ করা গায়ে হসপিটালের পোশাক,আরো কত তার লাগানো, এসব দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম,মাথাটা চক্কর দিতে লাগলো। আবারো চোখ বন্ধ করতেই সব মনে পড়ে গেলো,সাথে সাথে চোখ খুলতেই দেখলাম বাবা টুলে বসে আমার বেডে মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন।আমি একটু নড়তেই বাবা উঠে গেলেন,আমাকে দেখতেই বাবার চোখে খুশির ঝিলিক দেখলাম,বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,,”মা,কেমন লাগছে?অসুবিধা হচ্ছে?কিছু লাগবে?কষ্ট হচ্ছে?ডাক্তার ডাকবো?দাড়া আমি ডাক্তারকে নিয়ে আসতেছি।”বলেই বাবা হন্তদন্ত হয়ে ডাক্তারকে নিয়ে আসতে গেলেন।এদিকে বাবাকে এমন করতে দেখে মনটা খুশি হয়ে গেলো।

দুই/তিন সেকেন্ডের মধ্যেই বাবা ডাক্তারকে নিয়ে হাজির হলেন,সাথে ফুপ্পি আর পাশের বাড়ীর সোয়েব চাচা ও আছেন।কিন্তুু ফুফি এখানে কেনো?উনি তো ঢাকায়, তাই না?
ডাক্তার এসে নানা চেকআপ করলেন, এরপর বাবাকে বললেন আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতে।বাবা দ্রুতগতিতে যেতে লাগলেন।সোয়েব চাচা এসে আমার পাশে বসেই প্রশ্ন করলেন,,, “এখন কেমন লাগছে?”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,ভালো লাগছে।আমি ইশারায় চাচাকে জিজ্ঞাস,,” করলাম,আমি এখানে কেনো,কী হয়েছে?”

এরপর চাচা আমাকে সব বলতে লাগলেন যা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো।চাচার ভাষ্যমতে,, আমার যখন জ্ঞান হারিয়েছিলো তখন,, বাবা জোরে জোরে বলতে লাগলেন,,”নায়লা নায়লা।কী হয়েছে,সোনামা?”

তখনই সোয়েব চাচা চিৎকার শুনে আসলেন,এসেই এসব দেখে উনি টাসকি খেয়ে গেলেন,উনি বাবাকে বললেন,,”এই আশরাফ,তোর মেয়ের কী হয়েছে?ও মা ওর হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে।তার মানে ও সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে,ওকে হাসপাতালে নিতে হবে।উঠ,নাহলে ও বাঁচবে না।”

বাবা এতক্ষণ যেনো ঘোরের মধ্যে ছিলো,আমার মৃত্যুর কথা শুনে, পাগলের মত বলতে লাগলেন,,না, না আমার মেয়ের কিছু হবে না।বলেই উনারা দুজনে মিলে আমাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।পথে অনেকেই অনেক কিছু বলেছে।হাসপাতালে নিয়ে আসতেই ডক্টরস রা সিরিয়াস পেশেন্ট বলে ইমার্জেন্সিতে শিফ্ট করলেন।প্রায় অনেকক্ষণ পর ডাক্তার বের হয়ে এসে বললেন,,”পেশেন্টের অবস্থা সিরিয়াস, শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরন হয়েছে,,উনার হাতের নার্ভ আই মিন রগ কেটে গেছে এন্ড উনি ভিন্ন ধরনের অনেকগুলো পিল খেয়েছেন,যার মধ্যে এ্যালজিন,সার্জেল,রেনোবা আরো কয়েক ধরনের ঔষদ রয়েছে।আমরা উনার হাতের রগটাতে তিনটে সিলাই দিয়েছি,হাই ডোজের মেডিসিনের কারনে উনার জ্ঞান ফিরতে দেরী হবে।আপনারা তো জানেনই গ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থা এতটা উন্নত নয়,আমাদের এখানে উন্নত মানের মেশিনগুলো নেই।তাই আমি আপনাকে সাজেস্ট করবো আপনি উনাকে ঢাকা এপোলো হাসপাতালে নিয়ে যান।না হলে পেশেন্ট বাঁচানো ক্রিটিক্যাল হয়ে যাবে।আপনি বললেই আমরা ওখানের ডাক্তারদের ইনফর্ম করবো,আমাদের এম্বুলেন্স আপনাদের দ্রুত পৌঁছে দিবে।”

বাবা সাথে সাথেই বলে উঠলেন এখনই ব্যবস্থা করতে। পুরোটা রাস্তায় বাবা কান্না করেছিলেন আর সোয়েব চাচা উনাকে শান্তনা দিয়েছেন।

বাবা মানুষটাই অন্যরকম,নিজের হাজারো দুঃখ -কষ্ট আড়াল করে মুখে মিথ্যা হাসি বজায় রাখে শুধু মাএ সন্তানের সুখের জন্য।পৃথিবীতে বাবার মত দ্বিতীয় কেউ হয় না।

ঢাকা পৌঁছাতেই সোয়েব চাচা বুদ্ধি করে ফুফিকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়।যেহেতু আগে থেকেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ ছিলো তাই বেশী সমস্যা হয় নি,দ্রুতই ইমার্জেন্সি বিভাগে শিফট করে।টানা তিনঘন্টা অপারেশনের পর ওটি থেকে ডাক্তার বের হলেন।ডাক্তারকে দেখেই বাবা হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠলেন,,,”ডাক্তার আমার মেয়ে,ও কেমন আছে?”

ডাক্তার হাত থেকে গ্লাবস খুলতে খুলতে বললেন,,”রিলেক্স,উনি আপাতত আউট অফ ডেঞ্জার।আপাতত উনার পেট থেকে ওয়াশ করে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করা হয়েছে।রগটা একটু বেশিই কেটেছে তাই আবারো সিলাই দিতে হলো।প্রচুর পরিমানে রক্ত গিয়েছে,তাই রক্ত দিতে হয়েছে।চার ঘন্টা অবজারভেশনে রাখতে হবে।আপনার মেয়ের রক্তের গ্রুফ এবি নেগেটিভ যেটা খুব কম পাওয়া যায়,আমাদের এখানে তিন ব্যাগ ছিলো এবং আমরা তা দিয়েছি।কিন্তুু উনার শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরন হয়েছে যার কারনে আরো এক ব্যাগ লাগবে।আপনার রক্ত যদি মিলে তাহলে তো ভালো না হলে অন্য কোথাও থেকে ম্যানেজ করুন কারন চার ঘন্টা পর আমাদের উনাকে রক্ত দেওয়া লাগবে।”

বাবার রক্ত টেস্ট করানোর পর জানতে পারলো বাবার রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ যা মিলে না।এর ভেতর ফুফি চলে এসেছে, উনি এসেই এসব শুনে রিয়েক্ট করবে তার আগেই বাবা বললেন,,”সানজু, প্লিজ কিছু কর আমার মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না,আমার মেয়েটাই আমার শেষ সম্বল। তুই তো সবই চিনিস,দয়া করে রক্তের ব্যবস্থা করে দে না।”
বাবার কান্নামাখা মুখ দেখে ফুফি আর কিছু না বলে, সবাইকে ফোন করে রক্তের কথা বললেন।ফুফির বাসার পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলার রক্তের সাথে আমার রক্তের গ্রুপ মিলে যায়,পরে উনি এসে রক্ত দিয়ে যায়।বাবা মহিলার কাছে হাত জোড় করে রক্ত দিতে বলেছিলেন, সবাই অনেকটা অবাক হয়েছিলো কারন বাবা কখনও কারো সামনে মাথা নত করে না।এরপর মহিলা যখন রক্ত দিয়েছিলো তখন বারবার করে শুকরিয়া আদায় করেছিলেন..!!

একটু পর পর ডাক্তারদের কাছে প্রশ্ন করতে লাগলেন,,”আমার মেয়ে কখন উঠবে?ঠিক হয়ে যাবে তো?” সোয়েব চাচা বারবার বাবাকে বুঝাচ্ছেন যে আমি এখন বিপদমুক্ত তাও বাবা শান্ত হননি।সারাদিন না খেয়ে থাকার কারনে বাবার শরীরটা খারাপ করতে লাগলো,সোয়েব চাচা বাবাকে অনেকবার বলেও খাওয়াতে পারে নি।বাবা নাকি বলেছে,,,”সোয়েব এসব কী বলছিস?আমার মেয়ে মৃত্যুের মুখে, ও তো কিছুই খাই নি,এ অবস্তায় আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে তুই ভাবলি কী করে?”বাবা নাকি এখনও কিছু খায়নি,সারাক্ষন আমার পাশে বসে আমার সেন্স ফিরার অপেক্ষায় ছিলেন।
.
.
.
আমি ভাবতে লাগলাম,,বাবা আমাকে এত ভালোবাসে?কই আগে তো কখনও বুঝি নি।বাবা তো আমার সাথে ঠিক মত কথাও বলতো না, আমার কিছু দরকার পড়লে বলতাম, বাবা কোনো প্রশ্ন না করে এনে দিতেন।আর আজ সেই বাবায় আমার জন্য এত কিছু করেছেন,আমি কেমন মেয়ে যে নিজের বাবাকে বুঝলাম না?আরে যেখানে দুই বছরের ভালোবাসার মানুষকে বুঝলাম না সেখানে বাকীরা কী?

হুট করে আবার সৌরভের কথা মনে পড়লো,সৌরভ কী জানে এসব?ও কী আমাকে দেখতে এসেছে?ও তো আমাকে অনেক ভালোবাসে নিশ্চয় শুনলে আমাকে দেখার জন্য এখানে পাগলের মত ছুটে আসবে।এটা ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে গেলো।দরজার দিকে উকিঝুকি দিতে লাগলাম,কয়েক সেকেন্ড পর দেখলাম কে যেনো আসছে।মনে হয় সৌরভ,ভাবতেই লজ্জা লাগতে লাগলো। অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকাতেই দেখতে পেলাম বাবা আসছে খাবার নিয়ে।নিমিষেই মনটা ভেঙ্গে গেলো,আবারো কষ্ট হতে লাগলো।

বাবা খাবার নিয়ে এসে আমার পাশে বসলেন।একহাত দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন আর অন্য হাত দিয়ে মাস্ক সরাচ্ছিলেন। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আমার মুখে খাবার দিতে লাগলেন।আর আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম,সেই ছোট্ট থাকতে কবে বাবার হাতে খাবার খেয়েছিলাম মনেও নেই,আর আজ বাবা মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন।বাবা আমাকে চেয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো,,”কি হলো মা খাচ্ছো না কেনো?ইচ্ছে করছে না?আচ্ছা একটু খেয়ে নেও তোমাকে ঔষদ খেতে হবে তো।”

আমি কিছুই বললাম না,বাবা সব নিজে নিজেই বলতে লাগলেন,বাবাকে আমার জন্য অস্থির হতে দেখে মনে খুব খুশি লাগছে।কারন আমি ভাবতাম কেউ আমাকে ভালোবাসে না,কারো আপন নই।”

বাবাকে ইশারায় বললাম,, “বাবা তুমি খাও।”বাবা বুঝলেন না,উনি বারবার বলতে লাগলেন কী?কিছু লাগবে? তখন পাশ থেকে সোয়েব চাচা বলে উঠলেন,, “ও তোকে খেতে বলছে,না হলে ও খাবে না।”

বাবা বললেন,,”আচ্ছা এই দেখ আমি খাচ্ছি,নে এবার তুই খা।”বাবা খেতেই আমিও খেতে লাগলাম।একবার বাবা খাচ্ছে তো একবার আমি খাচ্ছি। এমন দৃশ্য দেখে পাশ থেকে একজন নার্স বলে উঠলো,,”আজকালকার মেয়েরা পান থেকে চুন খসলে সুইসাইড করতে যায়,এরা কী আদৌ ভাবে ওদের লাইফের সাথে আরো অনেকের লাইফ জড়িত..!!কী এক দুনিয়া আসলো যেখানে,, নার্সের কথা শেষ হওয়ার আগে আমার বাবা উনাকে ধমকি দিয়ে উঠলেন,সাথে সাথে সবাই কেপে উঠি।

বাবা রেগে বলে উঠলেন,,,”টাকা দিয়ে মনে হয় চাকরী পেয়েছো তাই তো এসব বলতেছো।তোমার মধ্যে কী সামান্য কমনসেন্সও নেই? একজন ডিপ্রেশনের রোগীকে তুমি কটু কথা শুনাচ্ছো, মন ভেঙ্গে দিচ্ছো।তোমার উচিত ডিপ্রেশনের রোগীদের সবসময় সাপোর্ট করা, তাদের মনোবল বাড়ানো তাদেরকে বুঝানো।আর সে জায়গায় তুমি তাকে আরো নিরুৎসাহিত করতেছো।” বাবা আরো জ্ঞান দিতে লাগলো,নার্স টি নিজের চাকরীর ভয়ে সরি বলে চলে গেলো।

হসপিটাল থেকে বিকালের দিকে রিলিজ দিলো,এর মধ্যে কেউ আমাকে একবারের জন্যেও জিজ্ঞাস করেনি কেনো আমি এমন করেছি?কিন্তুু প্রশ্ন করলে কী জবাব দিবো?
রিসেপশনে এসে দেখলো অনেকগুলো টাকা হয়েছে।বাবা তো আসার সময় কিছুই নিয়ে আসে নি,সোয়েব চাচার টাকায় এসেছিলো।বাবা ফুফির কাছে ধার চাইলেন কিন্তুু ফুফি বললো ধার কেনো দিবো,আমার ভাইজি আমি টাকা দিবো।কিন্তুু বাবা মানে নি টাকাগুলো ধার হিসেবে নিয়েছেন। যেহেতু আমার অবস্থা বেশি ভালো নয়, তাই ফুফির বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত হলো।

ফুফির বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি,বাবা আর ফুপি দুইজন দুইপাশ থেকে ধরে রেখেছে।এর মধ্যে আমি একবারও কোনো কথা বলি নি।পুরো পথ আনমনা হয়ে সৌরভের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো মনে করছিলাম।

ওইসব দিনগুলো কত না সুখের লাগতো,আর এখন মনে পড়লে দুঃখ হয়।আমি এতটা অবুঝ কীভাবে হলাম?দুইবছরেও ভালোবাসা চিনলাম না,আচ্ছা হঠাৎ করে কেনো আমাকে ওর ভালো লাগলো না,আগে তো আমাকে ওর খুব ভালো লাগতো।সবসময় বলতো তোমার মতো কেউ নেই,তোমাকে আমি খুব খুব ভালোবাসি,তোমার জন্য আমি সব করতে পারি।ও যখন এসব বলতো তখন লজ্জায় লাল হয়ে যেতো আমার গালগুলো আর এখন ওইকথাগুলো মনে পড়ায় রাগ লাগছে।আচ্ছা সৌরভ যে বললো, আমি ওর আবেগ এমনকি ও আমার আবেগ।ওকে আমি ভুলে যাবো?সত্যিই কী আমি ভুলে যাবো?”ভালোবাসা ভুলে যাওয়া কী সত্যি এত সহজ?”আমি সত্যি বলতেছি, ও আমার আবেগ নয়, আমি ওকে সত্যি ভালোবাসি,ওকে কী কোনোদিন ভুলতে পারবো?

ফুফির বাসায় ঢুকতেই ফুফাতো বোন তার মাকে প্রশ্ন করে উঠলো,,”উনারা কে?”বিষয়টা মোটেও আশ্চর্য লাগে নি।কারন আমি নিজেও উনাদের চিনি নাই।ফুফি কোনোরকম আমাদের পরিচয় দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলেন।আজব,তাই না,যে আমি কেমন মেয়ে যে নিজের ফুফিদের সম্পর্কে জানি না।
আমার জানার কথাও না,কারন ফুফিরা ছোট থেকেই ঢাকায় থাকতো,ফুফির এক মেয়ে আর এক ছেলে,আমি উনাদের কখনো দেখি নি,কারন উনারা আমার জন্মের পর গ্রামের বাড়ীতে যাই নি।মা যাবার পর ফুফি অনেকবার গিয়েছিলো বাবাকে দ্বিতীয় বিয়ে করানোর জন্য কিন্তুু বাবা মানে নি। কেনো মানে নি,তাদের কী কথা হয়েছিলো তা আমি জানি না।আমার সামনে উনারা এসব কথা বলতো না।

উনাদের গেস্ট রুমে আমাদের থাকতে দেওয়া হলো,বাবা এক মুহূর্তেরর জন্যও আমাকে একা ছাড়ে নি।বাবাকে কী জানে আমার সাথে এখন হাজার মানুষ থাকলেও আমি একাই থাকবো। বাবা বারবার প্রশ্ন করছে “এখন কেমন লাগছে?কিছু লাগবে?”আমি মাতা নাড়িয়ে না বলে দিয়েছি।আচ্ছা বাবা কী জানে আমি কেনো সুইসাইড করতে চেয়েছি?উনি তো একবারও প্রশ্ন করে নি।

একটু পর দিবা আপু একটা পিচ্চি মেয়েকে সাথে নিয়ে আসলেন।উনার হাতে ছিলো শরবত।ঢাকা শহরে তো অনেক গরম তাই মনে হয় শরবত নিয়ে এসেছে।আপু বাবাকে এক গ্লাস দিয়ে অন্য গ্লাস আমাকে ধরে খাওয়াতে লাগলেন,আমারও অনেক তেষ্টা পেয়েছিলো তাই কিছু না বলে খেয়ে নিলাম।আপু বাবাকে উনার আম্মুর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।

আমাকে প্রশ্ন করলেন,,,”নায়লা, আমি জানতাম আমার একটা মামাতো বোন আছে বাট কখনো দেখি নি।আজ প্রতম দেখলাম আর আজকেই জানতে পারলাম তুমি সুইসাইড করতে চেয়েছো।তুমি এত বড় একটা স্টেপ কীভাবে নিলে?আই নো তোমার বয়স টা আবেগের তাই বলে এমন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সুইসাইড?”

আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম।ছোটখাটো বিষয়???এটা ছোটখাটো?আর আবেগ মানে কী?সবাই কেনো বলছে আবেগ?আবেগ, আবেগ,আবেগ,,,হোয়াট দ্যা হেল।কীসের আবেগ?আমার ভালোবাসা কী এত তুচ্ছ?আমি কী আবেগ আর ভালোবাসা বুঝি না?ওকে আমি কতটা ভালোবাসি সেটা তো শুধু আমিই জানি।সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে যখন আমার ভালোবাসাকে কেউ আবেগ বলে। আমার জায়গায় যদি এক মুহূর্তের জন্য থাকতে তাহলে বুঝতে বিচ্ছেদের যন্ত্রনা কতটা কষ্টের।কেউ কেনো বুঝে না? সবার কাছে কেনো ফালতু,ছোটখাটো এসব লাগে?

আজ যদি মা থাকতো,নিশ্চয় আমাকে বুঝতো, তাই না?মা তুমি কেনো নেই?কেনো চলে গিয়েছো?সবাই কেনো আমাকে ছেড়ে চলে যায়।মা তোমার কী আমার কথা মনে পড়ে না,এতটা বছরেও কী আমাকে দেখার প্রয়োজন মনে হয় নি?একবার এসে দেখে যাও মা আমি কতটা কষ্টে আছি, এখানে কেউ আমাকে বুঝে না মা।মা,আজ তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন,কষ্ট হচ্ছে আমার।তাই তো এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছি,কিন্তুু বাবা দেয় নি।না,আমি চলে যাবো এ পৃথিবী ছেড়ে,থাকতে চাই না আমি।কিন্তুু বাবা???

চলবে,,,

(সবার পছন্দ এক নয়,ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলুন।)