ভুলিনি তোমায় পর্ব-০৪

0
4111

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :৪

—“সম্পর্কের 2 বছর পর যখন জানতে চাইলাম আমি কি কেও না তোমার। তুমি বলেছিলে না কেও না,শুধু আবেগ।তোমার উত্তর টার জন্য আমি তৈরি ছিলাম না।

তুমি বললে,, ভালোলাগে তোমাকে কিন্তু ভালবাসতে পারিনি তোমার জন্য কোন অনুভূতি আসেনা আমার।কি আজব তাইনা, 2 বছরেও ভালবাসা হতে পারিনি আর তার কোনো অনুভুতিই জন্মায় নি।

কিভাবে পারে মানুষ এত ভালো অভিনয় করতে সত্ত্যি আমার জানা নেই।এতো দিনেও মনের মত হয়নি তোমার মন বলে কি সত্যি কিছু আছে আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়।

জীবনে আফসোস হয়তো থেকে যাবে যে এত ভালবাসার পরে তোমার ভালবাসা হতে পারলাম না জানিনা কখনো পারবো কিনা। এই গুলো শোনার পর আমার অবস্থা তুমি বুজবেনা।তবুও তোমাকে ধন্যবাদ দেরি তে হলেও সত্যি বলেছো। বলেছো মনের মত কাউকে পাওনি মনের মত তুমি ঠিক পাবে কিন্তু তোমাকে ভালবাসার জন্যে কাউকে পাবেনা।আমি কখনোই বলবো না যে তুমি অন্য কারো কাছে ভাল থেকো।ঠিক আমি যতটা কষ্ট, কান্না আর আপসোস নিয়ে বেচে আছি তার চেয়ে দিগুণ আপসোস নিয়ে তুমি বেচে থাকো।””

কথাগুলো একনাগাড়ে সৌরভকে বলেছিলাম, তাকে আর কোনো কিছুর বলার সুযোগ না দিয়ে জানালা লাগিয়ে দিলাম।

সৌরভ হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তুু আমি শুনি নি।ওকে দেখলে কষ্ট হয়,খুব বেশি কষ্ট হয়।যখন কাউকে মন থেকে ভালোবাসবেন আর সে আপনাকে ভালোবাসবে না তখন বুজবেন বিষয়টা কতটা কষ্টের।সৌরভকে দেখে আমার শুধু বারবার ওর বলা কথাগুলো মনে পড়তে লাগলো। ও কীভাবে বললো,,আমি ওর আবেগ?

হুম,তুমি ঠিকই বলেছো সৌরভ,তুমি আমার আবেগ।এমন আবেগ যা কোনোদিনও কাটবার নয়।কে বলেছে ভালোবাসা ভুলা যায়,কোনোদিনও না। ভালোবাসা কখনও ভুলা যায় না হয়তো টান টা একটু কমে যায়,কিন্তুু ভুলা যায় না। কাউকে যদি তুমি মন থেকে কোনোদিন ভালোবেসে থাকো তাহলে দেখে নিও তাকে কোনোদিনও ভুলতে পারবে না।যেমনটা আমিও পারবো না।আমাদের সম্পর্কটা গড়তে যতটা না সময় নিয়েছিলো ভাঙ্গতে তার অর্ধেক সময়ও নেয় নি। সৌরভকে আমি কোনোদিনও ভুলতে পারবো কী না জানি না তবে বিশ্বাস দ্বিতীয়বার করতে পারবো না।
কাচের গ্লাস একবার ভাঙ্গলে জোরা লাগে না ঠিক তেমন বিশ্বাসও একবার ভাঙ্গলে আর জোরা লাগে না।

আমার সাথেই কেনো এমন হয়?কেউ কেনো আমাকে ভালোবাসে না?ছোট থেকে কখনও কারো ভালোবাসা পায় নি,কখনও মায়ের কোলে ঘুমাতে পারি নি,কখনও মায়ের হাতের খাবার খেতে পারি নি,সব সময় নিজেরটা নিজেকেই করতে হয়েছে।’মায়ের সুখ যখন সন্তানের থেকে বেশি হয়ে যায় তখন বোধ হয় এমনই হয়।’সৌরভ যখন আমাকে ভালোবাসে বলেছিলো তখন মনের ভেতর অন্য রকম অনুভূতি হয়েছিলো। ওই অনুভূতি এতটা সুখের ছিলো যে আমার মনে হয়েছিলো এমন সুখ আগে কখনও অনুভব করি নি।প্রথম প্রথম হয়তো এমনই লাগে।কিন্তু ও আমায় ভালোবাসে নি,, কান্ড-জ্ঞান হওয়ার পর যাকে এত ভালোবেসেছিলাম সে আমাকে ধোকা দিলো?
.
.
.
—“কিন্তুু মা,মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমি কীভাবে ব্যবস্থা করবো?”

—“সেটা তুমি জানো।আমি পারবো না এখানে থাকতে।সকাল হওয়ার আগেই আমরা এ গ্রাম ছেড়ে চলে যাবো।এখন তুমি জানো তুমি কীভাবে কী করবে?না হলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।”

—“না, না,তুমি এমন কিছুই করবে না।আমি সব ঠিক করতেছি।হ্যা আমরা চলে যাবো।”

রাত ১২ টার দিকে বাবাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলায় বাবা নিশ্চয় মনে করবে আমি পাগল হয়ে গিয়েছি।কিন্তুু আমি কী করবো?আমি পারবো না এখানে থাকতে,প্রত্যেক টা মানুষের গা জ্বলানো কথা হজম করার ক্ষমতা আমার নেই,আর সবচেয়ে বড় কথা সৌরভ।ও আমার সামনে অন্য মেয়ের সাথে ঘুরঘুর করবে সেটা আমি ভুলেও মানতে পারবো না।মানুষদের বারন করলেও তারা বলবে,,কারন এটা তাদের স্বভাব।জানি না, মানুষ কী শান্তি পায়?তারা একবারো ভেবে দেখে না তাদের বলা কথাগুলো অন্যের উপর কতটা এফেক্ট করে।একজন মানুষকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দিতে মানুষের বলা কটু কথা গুলোই যথেষ্ট।সবাই যদি অন্যের অবস্থা বুঝতো,একবার নিজেকে অন্যের জায়গাতে বসাতো তাহলে তারা বুঝতো,আফসোস তারা এটা ভুলেও ভেবে দেখবে না।জানি না কবে এমন মানসিকতা পরিবর্তন হবে,কবে একে অপরকে বুঝবে।
.
.
.
চারদিকে শো শো করে বাতাস বইছে,বাস চলছে তার আপন গতিতে।বাসের ভেতর নাক মুখ চেপে চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি আমি,কারন টা হলো বাসের ভেতরের দম বন্ধকর গন্ধ যার কারনে বমি বমি ভাব করতেছে।বাসের ভেতরে যে এত বাজে গন্ধ করে তা আগে তো জানতাম না, জানবো কী করে আগে কী কখনও বাসে চড়েছি নাকী?বার বার বমি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি তাও পারতেছি না।অবশেষে যখন বুঝলাম আমি আর পারবো না তখন বাবাকে ইশারায় পলিথিন দিতে বললাম।পলিথিন দিতেই গড়গড় করে বমি করে দিলাম।একটু পর যখন বুঝলাম আর বমি আসবে না তখন সোজা হয়ে বসলাম।বাবা পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে আমার মুখ ধুয়ে দিলেন,মাথায়ও একটু পানি দিয়ে দিলেন।আহা কী শান্তি!যদি ছোটবেলাতেও এমন যত্ন নিতো তাহলে হয়তো আমার এ অবস্থা হতো না।

বাবাকে বারবার অস্থির হতে দেখে ভ্রু টা কুচকে এলো।বাবা এমন উশখুশ কেনো করছে?কী বলতে চাইছে?অবশেষে বাবা চোখ মুখ খিচে বলে উঠলেন,,,”দেখো নায়লা আমি তোমার বাবা হই যদিও বাবার দায়িত্ব পালন করতে পারি নি।তুমি এতটাও ছোট নয় যে আমার কথার অর্থ বুঝবে না।আশা করি আমার প্রশ্ন বুঝবে?বিষয়টা খুব খারাপ লাগবে কিন্তুু আমি নিরুপায় বিষয়টা জানা খুব দরকার।তুমি শুধু মাথা নাড়িয়ো।”

আমি বাবার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বাবার কথা বুঝবার চেষ্টা করছি,কী বলতেছে আমি তো আগা গোড়া কিছুই বুঝতেছি না।

বাবা কয়েক সেকেন্ড দম নিয়ে দ্রুত বলে উঠলেন,,,”তোমার সাথে কী ছেলেটার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিলো?”

বাবার কথা শুনে আমার বিষম খাওয়ার মত অবস্থা।ছিঃ,ছিঃ! কী একটা পরিস্থিতি। শরমে দম বন্ধ হয়ে আসছে।এখন মনে হচ্ছে একটু আগের দম বন্ধকর অবস্থা থেকে এই পরিস্থিতি বেশি বাজে।সৌরভের প্রতি রাগ উঠতে লাগলো,,শয়তান পোলা, তোর কারনে কী একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালাম যার অর্থ না।

আমার উত্তর শুনে বাবা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,মনে হলো হাজার টেনশন থেকে মুক্তি পেলো।কিন্তুু আমার মাথায় এটা ঢুকছে না,বাবা হুট করে এ প্রশ্ন কেনো করলো?যেখানে ছেলেটা কে সেটাও জানতে চাইলো না আর সেখানে এমন প্রশ্ন?হোয়াই?আমার বাবা আমার সাথে একদম কম কথা বলে,দুই একটা কথা বলতেও ইতস্ত করতো।আমি কোনো জবাব ভেবে না পেয়ে আবারো সিটে হেলান দিতে লাগলাম,ঠিক তখনই বাবা বলে বিরবির করে বলে উঠলো,,,”মনে হয় প্রথম বাসে উঠেছো যে তাই বমি হয়েছে।গ্লাস খুলে দেও,বাতাস লাগলে আরাম লাগবে।”

কীহহ?শুধু বমি হয়েছিলে বলে বাবা এমনটা ভেবেছে?এখন তো আমার বমি করতেও শরম করবে।

বাসের গতি বাড়ার সাথে সাথে বাতাস লাগতে লাগলো,পরম আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে এলো।চোখ বন্ধ করতেই সৌরভের চেহারা ভেসে উঠলো,চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো,কত সুন্দর মায়াবী মুখ।কী মাসুম চেহারা,পুরো বাচ্চা টাইপ লাগে।সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে যখন ও নিঃশব্দে হাসতো।এত বেশি সুন্দর লাগতো যে আমার ইচ্ছা করতো ওর গালে টুস করে একটা চুম্মা দিয়ে দেই।আমি যখন ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম তখন ও ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাস করতো কী?তখন আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলতাম আর তখন ওর মুখে অন্য রকম একটা রিয়েকশন ফুটে উঠতো।ওর সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো আরো বেশি সুন্দর ছিলো।টানা দুই বছর আমাদের সম্পর্ক ছিলো।কত দ্রুত শেষ হয়ে গেলো,সুখের সময়গুলো মনে হয় এমনই কখন শেষ হয়ে যায় টেরও পাওয়া যায় না।আই মিস ইউ সৌরভ,রিয়েলি!খুব মিস করছি তোমায়।আই উইশ আমার মনের ভেতরের আর্তনাদগুলো তুমি শুনতে পেতে,তাহলে বুঝতে কতটা ভালোবাসি তোমায়।

তোমাকে আমার দেখতে খুব ইচ্ছে করছে,খুব বেশি।কী এমন কমতি ছিলো আমার ভালোবাসায় যে তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারো নি।আমি তো শুনেছি,কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে তাকে পাওয়া যায়,তাহলে আমি কী তোমাকে মন থেকে ভালোবাসতে পারি নি?আর ভাবতে পারতেছি না,ভাবতেও চাই না।আমি জানি এমন একদিন আসবে যেদিন তুমি বুঝবে আমি কী ছিলাম? মনে মনে ভেবে চোখের পানি মুছতে লাগলাম।
.
.
দীর্ঘ ঘন্টার জার্নির পর গন্তব্য পৌঁছালাম।বাবা রাত্রেই ফুফিকে বলেছিলো একটা ফ্ল্যাটের জন্য,ফুফি উনাদের বিল্ডিং এর উপরের তলার ফ্ল্যাট নিয়েছেন।বাবা, অফিসে ফোন করে ঢাকাতে ট্রান্সফার করে ফেলেছেন।ফুফির বাসা থেকে অনেক কাছে,যার জন্য সমস্যা হবে না।সকালে ভোরের আলো ফুটার সাথে সাথেই রওনা দিয়েছিলাম,রাতেই সব ঠিক ঠাক করে নিয়েছি।রাতে তো এমনিতেই ঘুম আসে না তাই সমস্যা হয় নি।খুব বেশি মিস করবো সবকিছু।জন্মের পর যেখানে এত বছর বড় হয়েছি থেকেছি সেখান থেকে শুধু মাত্র তোমার দেওয়া ধোকার কারনেই চলে আসতে হলো।বাবা আগেই নেমে গিয়েছে, আমি গাড়ী থেকে নামতেই দেখলাম,,,

চলবে,,,