ভুলে যেতে ভালোবাসিনি পর্ব-০৭

0
3925

ভুলে যেতে ভালোবাসিনি
পর্ব-০৭
রোকসানা আক্তার

নীর চুপিচুপি সদর পেরিয়ে উপরের দিকে চলে আসে।বাসায় খুব বেশি মেহমান না থাকায় নীর উপরে আসতে তেমন ঝামেলা হয়নি।কারণ, সবাই তখন কমিউনিটি সেন্টার থেকেই যে যার বাসায় চলে যায়।নীর দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে।কয়েক কদম পা বাড়াতে পায়ের সাথে নরম কোনো বস্তুর হোচট খায়।নিচে তাকিয়ে দেখে নাতাশা ফ্লোরের উপর গাঁ ছড়িয়ে শুয়ে আছে।তার পায়ের পাতা নাতাশার পেট ভরাভর।আর একটু জোরে চাপ পড়লে নাতাশা বোধহয় ব্যথায় কুকড়ে উঠতো।তবে নীরের পায়ের স্পর্শে নাতাশার কোনরকম হুঁশ হয়নি।সে এখনো ক্লান্ত শরীরে চোখবুঁজে নিমজ্জে ঘুমচ্ছে।

নীর তার পা সরিয়ে পাশ কেটে বিছানার কাছে যায়।গাঁ থেকে শার্টটি খুলে খাটের চৌকাঠের উপর ছুঁড়ে ফেলে।আর মুখে শিষের সুর টেনে হনহন করে বাথরুমে ঢোকে।মুখে পানির হালকা ঝাপসা ছিটিয়ে দেয়।তোয়ালে হাতে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বাহিরে বের বেরিয়ে আসে। পরক্ষণে তোয়ালের ফাঁক দিয়ে নাতাশার দিকে নজর পড়ে।সে ফ্লোরের উপর অস্থিরতাভাবে কাতরাচ্ছে আর সারা শরীর থরথরে কেঁপে উঠছে।ক্লান্তিঘোরে ভীষণ রকম কষ্ট হচ্ছে নাতাশার।
নীর তা দেখেও কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ না করে তোয়ালেটা কাঁধের পেছনে রেখে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায়।মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ভাজ করতে থাকে।

নাতাশা ফ্লোর ছেড়ে উঠার চেষ্টা করে।তবে পারছে না।প্রচন্ড রকম বল প্রয়োগ করেও লাভ হয়না।আয়না দিয়ে নীরের তা দৃষ্টিগোচরে আসে।নীর আবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকায়।নাতাশা সত্যিই কি এমন করছে নাকি ভান ধরেছে তা নিয়ে নীর সন্দেহ করতে থাকে।
এসব ভাবতে ভাবতে ভাবনার ছেদ ঘটে দরজায় টানা করাঘাতে।
নীর লোকলজ্জার ভয়ে সাতপাঁচ না ভেবে নাতাশাকে উঠাতে যায়।নাতাশা হাত দিয়ে ইশারা করে ধরা লাগবে না।নীর আর সাহস পায়নি নাতাশার হাত স্পর্শ করতে।
নীর দরজার দিকে হাঁটে আর পেছন ফিরে নাতাশার দিকে তাকায় সে এখনো ফ্লোর ছেড়ে উঠছে কিনা।নাতাশা যেই বিছানার চৌকাঠ ধরে হালকা উঠে ফেলে নীর ওমনি ধপাস করে দরজা খুলে দেয়।কোহিনুর বেগম এসছেন।উনি নীরের দিকে খানিক রাগ রাগ ভাব নিয়ে বলেন,
–ডিল শেষ?!
–হু,মা।মা জানো আজ প্রায়ই পঞ্চাশ লাভ টাকার ডিল করেছি।এটাই আমাদের কোম্পানির সবথেকে বড় ডিল।
–আমি ছয়নয় শুনতে আসিনি।আসছিস ভালো কথা খেতে আয় ভাত বেড়ে রেখেছি।আর খাওয়া শেষ করে আমার একটু রুমে আসিস তোর সাথে আমার কথা আছে।
কথা শেষ করেই কোহিনূর বেগম চলে যান।নাতাশা অস্থির মনে কপালের উপর আঙ্গুল চাপড়ে উদাসমনে অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে।নাতাশার আজ শরীরটা ভালো ঠেকছে না।তার মা-বাবা,ভাই-বোন যাওয়ার পর থেকে শরীরে কেমন যেন দুর্বল দুর্বল হয়ে গেছে।হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। নিস্তেজ শরীরটা বিছানার উপর ছড়িয়ে দিলে একটু আরাম লাগতো।

নীর নাতাশার দিকে ড্যাবড্যাব চোখে একনজর তাকিয়ে ডিনার করতে যায়।ডিনার শেষে কোহিনুর বেগমের রুমে আসে।কোহিনুর বেগম নামাজে ছিলেন।নামাজের মোনাজাত শেষ করে তসবি গোনতে থাকে।তসবি গোনা শেষ করে জায়নামাজটা একপাশে রেখে নীরের অপোজিটে এসে বসেন।ফ্যাকাসে কন্ঠে বলেন,
–বৌ-ভাত থেকেই কি তোর কোম্পানিটা বড় হয়ে গেল?আমার মানসম্মানটা তোর টাকার থেকেও তুচ্ছ?আজ আত্মীয়-স্বজন মনে মনে কিসব যা তা বলে গেলেন জানি না।ভালো কিছু বলবেন বলেতো মনে হয়না।আচ্ছা মানলাম আমাদের রিলেটিভদের কথা।তবে,নাতাশার মা-বাবা কি মনে করেছেন।নাতাশার মা-বাবা কত আগ্রহ নিয়ে অনেকটা সময় অপেক্ষা করলেন যে তার জামাই বাবাজী আসবে। জামাই বাবাজীকে নিজ হাতে আংটি পড়িয়ে দিবে,আবার চেইন পড়িয়ে দিবে!কিন্তু তুই!!কতটা জানি উনারা কষ্ট পেয়েছেন।এটা তুই একদম ঠিক করিস নি নীর!ডিলের ডেটটা অন্যদিন দিলো তোর কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত শুনি!?
–আরেহ মা অন্য তারিখে ডেট ফালালে উনারা অন্য কোম্পানির সাথে ডিল চুক্তি করে ফেলতেন,তখনতো..
–আমি এত্তকথা শুনতে চাইনা।আর জানতেও চাইনা।নাতাশা এখন এ বাড়ির ছোটবউ।এই বাড়িতে ওর অধিকারও আছে।আমি চাই না কোনোমতে ও কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত হোক।দেখ, তোকে আমি আগেও বলেছি এবং এখনো বলি নাতাশার সাথে এমন কিছু করবি না যারজন্যে নাতাশার মনে আঘাত লাগে!
এবার আসতে পারিস।কথা শেষ করে কোহিনুর বেগম কিচেনে চলে যান।
এদিক দিয়ে,রহিমা খাতুন রুমের বাইরে থেকে নাতাশার কাতরানো আওয়াজ শুনে দৌড়ে রুমে ঢোকে।নাতাশা মাথার চুল টেনে কুঁকড়ে উঠছে।কোহিনুর নাতাশার পাশে বসে কপালে হাত রাখে।চমকে উঠে রহিমা।আতঙ্কিত হয়ে বলে,
–আপা আপনের কপাল তো গরমে পুইড়া যাইতাছে।মনে হয় জ্বর আইছে।খালাম্মারে যাইয়াতো খবরডা দেওন লাগবো।আচ্ছা আমি যাইয়া খালাম্মারে কইয়া আহি।
নাতাশা কাতরানো কণ্ঠ বলে,
—আরে না না যাওয়া লাগবে না আমি ঠিক আছি।
—আপনে এসব কইলে হইবো?একটু কষ্ট কইরা বহেন তো আমি আইতাছি।

রহিমা তড়িঘড়ি কোহিনুর বেগমকে নিয়ে আসে রুমে।কোহিনুর বেগম কপালে হাত দিয়ে আঁতকে যান।সত্যিইতো গরমে কপাল পুড়ে যাচ্ছে।বেলকনিতে দাড়ানো নীরের কাছে গিয়ে কটু গলায় বলে উঠেন,
—বউ যে অসুস্থ তা দেখছিস না?ডাক্তারের কথা আমার আবার মুখ ফুটে বলা লাগবে!?
নীর আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,
—আমি বুঝিনি
—এখনতো বুঝছিস তাহলে এখনো গাছের মতো দাড়িয়ে আছিস কেন!
—যাচ্ছি।

নীর মায়ের কথায় ডাক্তার ডাকতে নিচে চলে যায়।ডাক্তার থার্মোমিটার দিয়ে নাতাশার জ্বর মেপে দেখেন জ্বর ১০২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি। আর প্রেসারও মেপে দেখেন লো!ডাক্তার মুখে চিন্তার ভাঁজ এনে বলেন,
—রোগী বোধহয় খুব টেনশন ফিল করে।তাছাড়া অতিরিক্ত টেনশনে এই বয়সে প্রেসার হয়ে যাবে যার দরুন ব্রেণ স্টোকও হতে পারে।তাই আগ থেকে একটু সতর্ক হওয়া ভালো।চিন্তা রোগীর দ্বারকাছেও ঘেষতে দিবেন না।আর
আমি কিছু ওষুধপাতির নাম লিখে দিচ্ছি আপনারা ওগুলো নিয়মিত খাওয়াবেন এবং কপালে ঘনঘন পানির ফট্রি দিবেন।
তারপর কোহিনুর বেগম সিলিপটা হাতে নেন।ডাক্তার চলে যাওয়ার পর কোহিনুর বেগম নীরের হাতে সিলিপটি দিয়ে বলেন এখানে যেসব ওষুধের নাম লিখা আছে সবগুলো নিয়ে আসতে।নীর তার মায়ের কথানুযায়ী ওষুধ আনতে চলে যায়।রহিমা খাতুন এক গামলা পানি এনে নাতাশাকে বিছানার উপর শুইয়ে মাথায় পানি ঢালতে থাকে।পানি ঢালা শেষ হলে কোহিনুর বেগম নাতাশার মাথা ভালোভাবে মুছে তোয়ালে দিয়ে মাথার চুলগুলো আঁকড়ে রাখেন।আর খাবার নিয়ে আসেন এবং নাতাশাকে নিজহাতে খাইয়ে দেন।নাতাশার প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়েও কোহিনুর বেগমের এসব কাজকারবার দেখে চোখদুটো ছলছল করে উঠে।চোখ ভিঁজে যায় নাতাশার।ইনি কি কোনো মানব নাকি ফেরেস্তা! নাতাশা উনার এমন আদরমাখানো ভালোবাসা নাতাশার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়।কারণ

নীর ওষুধ নিয়ে বাসায় ফিরে।কোহিনুর বেগম নীরের থেকে ওষুধের প্যাকেটটি হাতে নিয়ে নাতাশাকে রাতের ওষুধ খাবিয়ে দেয়।অতঃপর আলতোভাবে নাতাশাকে বিছানার উপর শুইয়ে দিয়ে নীরকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
—নাতাশার দিকে খেয়াল রাখিস আমি গেলাম।আর টেম্পারেচারটা বার বার পরিক্ষা করিস
কোহিনুর বেগম কথা শেষ করে রুম থেকে চলে যান।নীর দরজা বন্ধ করে নাতাশাকে বলে,
–সুইচ কি অফ করবো নাকি অনই রাখবো?
নাতাশা কোনো সাড়াশব্দ না করে একসাইড হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।নীর নাতাশার রেসপন্স না পেয়ে সোফার উপর গিয়ে শরীরটা ছড়িয়ে দেয়।বাতি আর অফ করেনি।আজ নাতাশা নীরের বিপরীত এবং নীর নাতাশার বিপরীত বেডে ঘুমিয়েছে।নীরের কিছুই করার নেই।রোগী মানুষের সাথে থাকার জায়গা নিয়ে টানাহেঁচড়া করলে উপরওয়ালা অখুশি হবেন।কাজেই নীর সোফার উপর ঘুমায়।
সকাল হয়।নাতাশা ঘুম থেকে জাগে।শরীরটা এখন তার হালকা হালকা লাগছে।জ্বরের টেম্পারেচার অনেকটা স্বাভাবিকে।নাতাশা বিছানা থেকে নেমে বাথরুম থেকে নামাজের ওযু করে নেয়।নামাজ শেষ করতেই দরজায় টোকা পড়ে।নাতাশা সালাম ফিরিয়ে জায়নামাজটা ওয়ারড্রবের উপর রেখে দরজা খুলে দেয়।কোহিনুর বেগম কপালে হাত রেখে বলেন,
—এখন কেমন অনুভব হচ্ছে?শরীর ঠিক আছে তোমার?

নাতাশা থতমত খেয়ে যায়।দরজাটা আর একটু টেনে কোহিনুর বেগমের সমান্তরাল বরাবর দাড়ায় যাতে কোহিনুর বেগমের দৃষ্টি সোফায় না পড়ে।তাহলে গন্ডগোল বেঁধে যাবে নীর সোফার উপর ঘুমানোর কারণে।।গলার পানি শুকিয়ে আসছে নাতাশার।
মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে নাতাশা কোহিনুর বেগম এখান থেকে চলে যেতে।
অতঃপর কোহিনুর বেগমের দিকে দীর্ঘ টানা চোখে তাকিয়ে শান্তগলায় বলে,
—হ্যাঁ মা আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালো আছি।
—নীর কি রাতে টেম্পারেচার পরিক্ষা করেছে?
—হ্যাঁ মা হ্যাঁ করেছে।
—ওকে,,একটু পর নাস্তা নিয়ে আসবো রুমে।আর নীর কি ঘুমায়?
—হ্য-হ্য-হ্যাঁ মা ঘুমায়,ঘুমায়।
–জ্বরতো তোমার বোধহয় এখনো কমেনি।এত অস্থির অস্থির লাগছে কেন তোমায়?

নাতাশা নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।স্বাভাবিক হয়ে বলে,
—নাহ মা আমি ঠিক আছি।কপালে তো হাত দিয়ে দেখলেন আমার অবস্থা!
—কপালে হাত রাখলেই কি জ্বরের অবস্থা বুঝা যায়?হা হাহাহাহা,, হাসালে।

নাতাশা দমখিঁচে মনে মনে বলে “উফ মা যাচ্ছে না কেন!!!! প্লিজজ মা একটু তাড়াতাড়ি যান!এখন আমার মন পুলিশ পুলিশ।গেরস্ত হয়ে চোরের মুখখানা দেইখেন না!!”
তৎক্ষনাৎ কোহিনুর বেগম মৃদু হেসে বলেন,
—আচ্ছা আমি কিচেনে যাচ্ছি। থাকো।
কাহিনুর বেগম চলে যাওয়ার পরই নাতাশার দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।আাহা মাবুদ বাঁচালে।

রুমে ঢুকে নাতাশা সব গোছগাছ করে।এরফাঁকে নীর ঘুম থেকে জাগে।সে নাতাশাকে কাজ করতে দেখে ইন্ডাইরেক্টলি বলে,
—বাসায় কাজ করার লোকের কি অভাব পড়েছে!?অবান্তর কাজ করে জ্বর দ্বিগুণ বাড়িয়ে পরে দোষ পড়বে অন্যদের।অন্যেরা এমন জঞ্জাল কাজ দিয়ে অসুখ বাঁধিয়েছে!আজাইরা!
এ বলে নীর বালিশ পাশে ছুঁড়ে ফেলে ওয়াশরুমে চলে যায়।নাতাশা সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে সে তার মতে কাজ করে যায়।রুমটা গোছগাছ শেষ হলেই নাতাশা নিচে চলে যায়।নীর ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তার মোবাইল বেজে উঠে।সোফার সামনে এসে ফোনটা হাতে তুলে নেয়।ডলি কল দিয়েছে!
—হ্যা বল!
–কিরে কালকের মতো আজ আবার কোনো বিপদে টিপদে পড়লি নাতো?
–এখনতো বলতে পারছি না।সবেতো সকাল। দেখি আরেকটু সময় পার হোক তারপর নাহয় বুঝতে পারবো।তবে,নাউ আই এম ওকে।
— কাল তো মায়ের সাথে লুকোচুরি খেলে আমাদের বাসায় দিব্যি ঘুম দিয়েছিস।এখন সেই ঝামেলা তো মিটমাট,রাইট?
–হু!তবে মায়ের একটু বকাবকি শুনতে হলো আর-কি!
–তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল দেখা করতে পারবি?
–কখন?
–এই ধর সন্ধে নাগাদ।
–দেখি।আর যাওয়া পসিবল হলে তোকে জানাবো।
–য়ু হু আসবি।তোর থেকে আমি কিছু একটা পাওনা আছি।
–কী পাওনা?
–ও মা! রাতের মধ্যেই ভুলে গেলি?
–সত্যি আমার মনে নেই!প্লিজজ এক্সপ্লেইন কর।
–লিপ কিস!!!
নাতাশা রুমে আসে।নীর তড়িঘড়ি ডলির কল কেটে দেয়।
নীর কেন ডলিদের বাসায় গিয়েছিল তার কারণ জেনে নিন।বৌ-ভাতে নাতাশার গ্রাম্য মা-বাবা এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে নীরের।নীরের মতো একজন ছেলে যে কিনা খেত-গাইয়াদের ধারেকাছেও ঘেষে না সে বৌ-ভাতে তাদের সাথে হাত মিলাবে,কোলাকুলি করবে!ওদের আবার শ্বশুর -শ্বাশুড়ি,শালা-শালি,চাচা-চাচি ইত্যাদি ইত্যাদি বলে সম্বোধন করবে!বউটাইতো এই বাড়ি টিকবে কি না তার ঠাই-ঠিকানা নাই,,আবার উটকো ঝামেলা কাঁধে নিয়ে ঘুরবে!!এতটা হেয় মৌনতা নিয়ে নীর বাসায় আর একমুহূর্তে না থেকে ডলিকে কল করে।ডলি নীরের ক্লাসমেট।ভার্সিটি লাইফ একসাথেই কেটেছে দুজনের।ডলি তখন থেকেই নীরকে নিয়ে মনে মনে মনকলা খাচ্ছে।কখনো মুখ ফুটে বলেনি–নীর আমি তোকে ভালোবাসি।নীরও ডলির ফিলিংস বুঝে উঠেনি।

।ডলি গাড়ি নিয়ে নীরকে ওদের গেইটের সামনে থেকে নিয়ে যায়।আর ভুলবাল বানানো কথা বলে ডলিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দেয়—কোহিনুর বেগম তাকে জোর করে একটা আধপোড়া মেয়ের সাথে বিয়ে করাতে চাচ্ছে।তাও আজ।সে এই বিয়ে করতে মোটেও রাজি নয়।দরকার হলে গলায় ফাস দিবে এই হ্যানত্যান।ডলি সবটাই বিশ্বাস করে।সে অবশ্য জানে না নীর যে নাতাশাকে বিয়ে করেছে।নীরের কোনো বন্ধু-বান্ধব এখনো নীরের বিয়ের ব্যাপারে জানেনা।তার ওয়েটনেস কমে যাবে ভেবে সে বিয়ের কথা ধামাচাপা রেখেছে।

—নাতাশা বিছানার কাছে এসে তার ফোন খুঁজতে থাকে।ফোনটা বিছানায় খুঁজে পায়নি।তারপর চারপাশ আঁকুপাঁকু করে তাকায়।নীর বুঝতে পেরে বলে,
–মোবাইল ওয়ারড্রবের উপরে রাখা।
নাতাশা নীরকে কিছু না বলে ওয়ারড্রব এর উপর মোবাইলটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

ডাইনিং আসার পর কোহিনুর বেগম হাঁক ছেড়ে বলেন,
–নীর কে বলেছ নাতাশা?
–ইয়ে মানে মা উনি বোধহয় ওয়াশরুমে তাই বলতে পারিনি।(মিথ্য)
–আচ্ছা সমস্যা নেই,সম্যা নেই।আমহ রহিমা কে পাঠাচ্ছি।
–আচ্ছা মা।
অতঃপর কোহিনুর বেগম রহিমাকে দিয়ে নীরকে ডাক পাঠান।

চলবে…
(ভীষণ রকম ক্ষেপে আছে নাতাশা নীরের প্রতি!!)