ভুলে যেতে ভালোবাসিনি পর্ব-০২

0
5091

ভুলে যেতে ভালোবাসিনি
পর্ব-০২
রোকসানা আক্তার।
(নায়িকার নাম পরিবর্তন করেছি–টোপা নয়,নাতাশা।)

নীর রুম থেকে বের হতেই নীরের ভাবি শিরিন শাহ নীরের হাতটা টান দিয়ে নীরকে একপাশে এনে দাড় করান।আর নীরের কানের পাশে মুখ গুঁজে ফিসফিসিয়ে বলেন,
—–নীর আমি এতক্ষণ তোদের কথোপকথন সবটা শুনতে পেয়েছি।আসলে কি বলবো ওই মেয়েটা একদম তোর অযোগ্য!জানি না মা কি বুঝে ওই খেত মেয়েটাকে তোর গলায় এনে ঝুলিয়ে দিছেন।

নীর তার ভাবির মুখের পাশ থেকে কানটা সরিয়ে নেয়।
কারণ নীর খুব ভালো করেই জানে তার চতুর ভাবী এখন ফন্দিফিকির খুঁজছে।আর ঝোঁপ বুঝে কোপ মেরে উনার বোনকে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে।বিয়ের আগে নীর বাদে সবথেকে বেশি আপওি ছিল শিরিন শাহের।উনি চাইতেন নীর শুধু উনার বোন ফারিনকেই বিয়ে করুক।তবে নীর কোনোটাই গাঁয়ে বিঁধে না।সে তার সিদ্ধান্তেই অটল।না ফারিনকে,না নাতাশাকে।
শিরিন শাহ চোখদুটোয় টান টান ভাব এনে বলে,
—–দ্যাখ ভাই,তুই সবসময় আমায় ভুল জানিস।আজ অন্তত ভাবী হয়ে একটা রিকুয়েষ্ট করবো।প্লিজজ রাখিস।

নীর অস্থির মনে জোরে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
——কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।
——তুই যেহেতু এই মেয়ের প্রতি এতটাই অপারগ,তাহলে একটা কাজ করতে পারিস তুইই আজই কোথাও চলে যা ।চার-পাঁচদিন বাড়িতে আসবি না।তোর পলাতকে না মা কিছু বলতে পারবেন,না ওই মেয়ে।পরে এ বাড়িতে তোর প্রবেশাধিকার না দেখে ওই খেতটা বিড়ালের মতো লেজ গুটিয়ে এমনি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।আর ডিভোর্সের কথা বলছিস না?এখন ওসবে যাওয়া একদম দরকার নেই,কোর্টকাচারির ব্যাপার-স্যাপার আছে।খামোখা উটকো ঝামেলায়!

নীর শিরিন শাহের কথা শুনে অনেকক্ষণ চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকে।আর মনে মনে ভাবে,
—–মন্দ বলে নি।এটা করা যেতে পারে।তবে বাসা থেকে বের হবোটা কীভাবে…!
—-নীর কিছু ভাবছিস?
শিরিন শাহের কথায় টনক নড়তেই নীর নড়েচড়ে সোঁজা হয়ে দাড়ায়।
—–না মানে যদি এই উপায় অবলম্বন করি তাহলে যাবোটা কিভাবে!নিচেতো মেহমান পিঁপড়ের দল।তাছাড়া,এতরাতে যাবোটা কোথায়!
—–সে কেমন কথা!আমাদের বাসা আছে না সেখানে চলে যাবি।আর একটা এক্সকিউজ দেখিয়ে বাসা থেকে বের হবি,নিচে ফারিন তোরজন্যে দাড়িয়ে থাকবে। ও তোকে নিয়ে যাবে।এইতো… সিম্পল একটা কাজ!

নীর ঠোঁট বেঁকে ইতস্ততা করতে থাকে।নীরকে উদ্দেশ্য করে পেছন থেকে বাড়ির একজন কাজের লোক এসে বলে,
—–সাহেব, খালাম্মা আপনেরে ডাহে।
নীর সেদিকে তাকিয়ে বলে,
—–আচ্ছা তুমি যাও আমি আসতেছি।
——নাহহ বলছে এহনি যাইতেন।

তারপর নীর শিরিন শাহের এখান থেকে প্রস্থান করে।
কোহিনুর বেগমের দরজায় কড়া নেড়ে বলে,
—–মা ভেতরে আসবো?
—–আস।
কোহিনুর বেগম রুমের পর্দা মেলে দিতে দিতে বলেন,
—-চেয়ারে বস।তোর সাথে কথা আছে আমার।
নীর চেয়ার টেনে বসে।কোহিনুর বেগমের কাজ শেষ হলে তিনি বিছানার উপর বসেন।চোখ থেকে সাদাফ্রেমের চশমাটি খুলে বলেন,
—–শিরিন শাহের সাথে কি নিয়ে কথা বলেছিলি?
নীর তার মায়ের দিকে ক্ষীণদৃষ্টিতে তাকায়।গলার হাক ছেড়ে বলে,
—–নাহহ এমনি উনার নাকি সোনার লকেটটা ছিঁড়ে গেছে। রিপেয়ার দোকানের তালাস করতেই আমার ।এই আর কি।
—–তুই আমার সাথে মিথ্যে বলছিস?দেখ বাবা,আমি তোকে আজ কিছু কথা বলে দিই।আমি তোকে খারাপ ভেবে এই বিয়েটা করাই নি। তোর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই নাতাশাকে তোরজন্যে বউ করে নিয়ে এসেছি।নাতাশার মতো মেয়েরাই শ্বশুর বাড়ির লোকদের প্রতি, স্বামী প্রতি এবং নিজের সংসারের প্রতি ভক্তি।এরা আর তোর বড়ভাবির মতো বদ বিহেভ করেনা।বড় ছেলের বউকে নিয়ে আমি কতটা সুখে আছি তুই তো তা নিজ চোখে ভালো করেই দেখছিস..

কথা শেষ করে কোহিনুর বেগম ব্যর্থমনে একটা নিংশ্বাস ছাড়েন।
—–মা, তাই বলে একটা গ্রামের মেয়ে?তুমিতো আগ থেকেই জানতে যে গ্রাম আমার মোটেও পছন্দ না!তাহলে এত বড় মিথ্যে লুকিয়ে কেন আমার জীবনটা তছনছ করলে,বলো?
—–নীর গ্রামের মেয়েরা অনেক ভালো হয়।
—–শহরের মেয়েরা কী দোষ করছে?শিরিন ভাবী খারাপ বিধায় কি শহরের সব মেয়েরাই খারাপ!?আর শিরিন ভাবীর প্রসঙ্গে কেন আমায় টানো!আমি নিহান ভাই(কোহিনুর বেগমের বড় ছেলে)নই।আর তুমি
সবাইকে একচোখে দেখো কেন?ভালোমন্দ সব জায়গায়ই আছে!

কোহিনূর বেগম ছেলের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন,
—–তাহলে গ্রামের মেয়েরা কি দোষ করলো?এই যে বললি ভালোমন্দ সবজায়গায় আছে!নিজেই বলছিস,আবার নিজেই কথার ভাঁজ আউলাচ্ছিস!?আমি তোকে আজ ডিরেক্ট কিছু কথা বলে দিই— তুই জানিস নীর?তোর বাবা আমায় প্রথম প্রথম তেমন দেখতে পারতেন না।আমি যেন তার চোখের কাল ছিলাম।দাসী হয়ে তোর বাবার সংসারে থেকেছি আমি।তোর বাবা,তোর দাদী, কাকা,ফুপী সবাই আমাকে হেয় চোখে দেখতেন শুধু তোর দাদা ছাড়া।কারণ তোর দাদাই আমাকে তার পুএবউ করে এনেছেন।কতটা কষ্টের ছিল সেই দিনগুলো যা ভাবতেই এখন সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়।
উনাদের শুধু একটাই কারণ ছিল যে আমি গ্রামের মেয়ে!আর তুইও তোর বাবার এই বদ অভ্যেসটা পেয়েছিস!
তাই আমি যে কষ্ট পেয়েছি আমি চাই না নাতাশাকে তুই সেই কষ্টটা দে।ওদের মতো মেয়েরাই স্বামীর সামান্য কেয়ারনেসে আকাশচুম্বী মনে করে।তুই নাতাশাকে একটু বুঝ বাবা,দেখবি মেয়েটার মন মোমের থেকেও নরম।

নীর বিরক্তি নিয়ে বললো,
—–মা তোমার এই আবেগী কথা রাখো আমি গেলাম!

নীর দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে।আর ভেতরে ঢুকতেই হকচকিয়ে উঠে।কারণ নাতাশা রুমটা পরিপাটিভাবে গুছিয়ে নিয়েছে এবং তারসাথে নিজেও ভারী গহনা,বিয়ের সাঁজ-শাড়ি চেন্জ করে সিম্পল একটা শাড়ি পড়ে নিয়েছে।ডাগর চোখে কাজল সম্মেত শাড়িটা নাতাশাকে বেশ মানিয়েছে।
নীর তাড়াতাড়ি নাতাশার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওয়ারড্রবের ড্রয়ারের কাছে যায়।নীর কিছু খুঁজছে তা নাতাশার দৃষ্টিগোচরে আসতে বলে উঠে,
—–কিছু খুঁজছেন আপনি?

নীর কোনো রেসপন্স না করে বিড়বিড় করে বলে,
—–উফস মোবাইলটা তো এখানেই রেখেছি কোথায় যে গেল…!
—–আপনার মোবাইল বিছানার উপর ছিল।আমি টি-টেবিলের উপর রেখেছি।

এ বলে নাতাশা টি-টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়।নীর তা দেখেই ধমকে বলে উঠে,
—–তোমাকে কেউ বলেছে আমার ফোন ধরতে?এরকম যেন দ্বিতীয়বার না দেখি!আর ফোন তোমার তুলে দেওয়া লাগবে না, আমার ফোন আমিই তুলে নিচ্ছি।
নীর এগিয়ে এসে নাতাশার সামনে থেকে ফোনটা তুলে নেয়।
কাউকে কল দেওয়ার জন্যে ব্যস্ততা মনে মোবাইল স্ক্রিনের উপর তড়িঘড়ি হাত চালাতে থাকে।কল ঢুকতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ হয়।নীর বেলকনিতে চলে যায় কথা বলতে।
কথা বলা শেষ হলেই পেছন ঘুরে তাকিয়ে অবাক হয়!নাতাশা বালিশ হাতে দাড়িয়ে আছে।আর কন্ঠস্বর ছোট করে নীরকে বলে,
—–আমি সোফার উপরে ঘুমাচ্ছি।আপনি বিছানার উপরেই ঘুমান!আর ডিভোর্স এর কথা বললেন না?আপনার যদি আপওি না থাকে ডিভোর্স দিতে পারেন আমায়!আমি তা মেনে নেব।কারণ কখনো জোর করে কখনো ভালোবাসা হয়না!

নীর কোনো কথা না বলে আবার বেলকনিতে চলে যায়য়!
চলবে…..

(নাতাশার কথার জবাব ঠিক আছে।আমি মনে করি!!মেয়েরা যত বেশি মাথানত করবে ততবেশি ওদের উপর বিপদ হবে!)