ভোরের কুয়াশা পর্বঃ১৭

0
1111

ভোরের_কুয়াশা
#পর্বঃ১৭
#Misty_Meye(মরিয়ম)

বাড়িতে এসে আমি একাই একাই কাঁদছি।
___থাকবোনা আমি এখানে,,,,,কিছুতেই থাকবোনা আমি।কেনো থাকবো আমি।আমাকেতো ভালোইবাসে না ভোর।তাহলে থাকবো কেনো আমি? (কান্না করতে করতে)।আমি আজই চলে যাবো।হ্যা, এক্ষুনি চলে যাবো।বলে যেই বের হতে যাবো তখনি আবার মনে হলো ,,,,

___নাহ,,,,কুয়াশা। কি করছিসটা কি,,,,,,তুই চলে গেলে ভোর আর রিমি কাছাকাছি হয়ে যাবে।আর তুইতো সঠিক জানিসনা যে ভোর তোকে ভালোবাসে কিনা।ভালোবাসতেই পারে।কারন আগেতো ও তোকে অনেক ভালোবাসতো।হুম,,,,তাই হবে।ভোর হয়তো আমায় ভালোবাসে।কিন্তু আমাকে বলতে চাইছে না।আমাকে চলে যাওয়া যাবে না।থাকতে হবে যতো কষ্টই হোক।কয়দিনইবা থাকবো ওই রিমি।কিছুদিন পরতো ঠিকিই চলে যাবে।তখন দেখবো ভোর কার সংগে এতো গল্প করে।কার সংগে এতো হাসাহাসি,মিলামেশা করে।হুম,,,,দূর তবুও আমি কাঁদছি কেনো?চোখের পানি থামছেই না।এতো চোখের পানি কই থেকে আসে।ভালো লাগছে না আমার।যাই চোখেমুখে একটু পানি দিয়ে আসি।তাহলে একটু ভালো লাগবে মনে হয়।

তারপর আমি চোখেমুখে পানি দিয়ে রাতের রান্না করে নেই।দুপুরে হয়তো ওরা একসাথেই বাইরে খেয়ে নিয়েছে।আমার খেতে ইচ্ছা করছেনা তাই আমি না খেয়েই রান্না করে বসে আছি।

রাতে ওরা বাসায় আসে।বাইরে থেকে খেয়ে আসছে বলে আর খাবে না বলে রিমি উপরে চলে যায়।আর ভোর বলে যায় কালকে ওর বাবা আর বোন আসছে।তাই যেন সব ব্যবস্থা করে রাখি।আর ওরা রাতেও বাইরে থেকে খেয়ে আসছে দেখে আমি সব খাবার ফ্রিজে ঢুকিয়ে আসি।

কিন্তু আমি আজকে খুব খুশি ।আমার শ্বশুর আর ননদ আসছে বলে কথা। আমিতো ওদের কখনো দেখিনি।কাল দেখবো।উফঃ আমার আনন্দ হচ্ছে খুব।মুহূর্তে আমার মন খারাপ ভালো হয়ে যায়।ননদ আর শ্বশুর আসলে আমি ওদের সাথে কথা বলব।আসলে আমার বাবা সব সময় অফিসের কাজ নিয়ে থাকতো। ছোট থেকে আমি একা বড় হয়েছি।আমার মা আমার জন্মের সময়ই মারা গেছে।বাবাকে ও আমি সেভাবে পাইনি।বাবাও আমাকে খুব একটা সময় দেয়নি।তবে আমার সব কিছুর জন্য অনেক লোক রেখে দিতো।আমার যেন কোন সমস্যা না হয়।কোন কিছুর অভাব না হয় তার দিকে খেয়াল রাখতো।তাই আমাকে কাজ করতে হতো না।আর এই জন্যই আমি কোন কাজ কিছুই পারি না। তবে বাবা আমার ভালোর জন্য কখনো আর দ্বিতীয় বিয়ে ও করেনি।কিন্তু আমিতো এগুলার কিছুই চাইতাম না।আমি শুধু বাবাকেই চাইতাম।কিন্তু বাবা আসতো না।আর আমার ভাই বা বোন নেই।তাই ভোরের বোনকে আমি আমার বোন ভাবতে পারবো।এবং ভোরের বাবার সাথে আমি মন ভরে কথা বলতে পারবো।আর রিমির ও একটা ব্যবস্থা করবো।হিহিহি,,,,,,

সকালে,,,,,

আমি উঠে সকালের নাশতা করে সব ব্যবস্থা করে রাখছি।রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ঘর পরিষ্কার করে সব পালটিয়ে দিয়ে সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছি।তারপর আমি একটা গোলাপি শাড়ি পরে নিলাম।আমাকে একদম নতুন বউ বউ লাগছে।হিহিহি,,,,,

অপেক্ষা করতে করতে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো।কলিংবেল বাজলে আমি ঘোমটা টেনে দরজা খুলে দেই।তারপর সালাম করে নিই।

___থাক,থাক।তুমি কেমন আছো?(ভোরের বাবা)

___ভালো। আপনি কেমন আছেন?(আমি)

___আমি ও ভালো আছি।

___আর আমাকে জিজ্ঞাসা করবা না ভাবি,,,(ভোরের বোন।)

___তুমিই বিন্দু। তাই না।(হেসে)

___হুম।আমিই বিন্দু।(হেসে)

___কেমন আছো তুমি,,,,,

___আমিও ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?

___এইতো আমিও ভালো।আসো ভিতরে আসো।

___কুয়াশা,, ভোর কোথায়?(ভোরের বাবা)

___হ্যা,,, তাইতো ভাইয়া কোথায় ভাবি।(বিন্দু)

___ওতো উপরে,,,,,,ওইতো চলে আসছে,,ও,,,(আমি)

ভোর আর রিমি একসাথে নিচে নামতে নামতে,,,,,

___আরে,,,,ড্যাড,,,,, তুমি কখন আসছো।(ভোর)

___এইতো,,,,,একটু আগেই আসছি।(ভোরের বাবা)

___হ্যালো,,,আংকেল কেমন আছেন?(রিমি)

___এইতো ভালো আছি।তুই কেমন আছিস।(ভোরের বাবা)

___আমি তো খুব ভালো।আর এখানে আমার ভিষন ভালো লাগছে।

___হুম,,,,,এখানেইতো তোকে থাকতে হবে।তাই আগেই অভ্যাস করে নে।

(ভোরের ফ্যামিলি রিমিকে আগে থেকেই চিনে।তাই ভোরের বাবা রিমিকে তুই করে বলে।আর বিন্দু রিমি আপু বলে ডাকে।)

___(এখানে থাকার অভ্যাস করে নে মানে,,,,,কয়দিন থাকবো ওই রিমি।কি বলছে কি এইসব।মনে মনে)

কই ভাবলাম রিমিকে তাড়াবো। কিন্তু আমার দিকেতো কেউ তেমন খেয়ালই করছে না।সবাই আমার সাথে কেমন পর পর ব্যবহার করছে।আমাকে দূরে দূরে রাখছে।সবাই শুধু আমার সাথেই গোমরা মুখে কথা বলছে।কিন্তু ওই রিমির সাথেই বেশি বেশি কথা বলছে।আগেতো শুধু ভোর ছিলো।এখনতো ওর পরিবারো বেশি বেশি করছে।

তারপর খাওয়ার সময় সবাইকে খাবার দিয়ে দেই। সবাই একসাথে গল্প করছে আর খাচ্ছে।

___ভোর,,,,,তোমাদের ডিভোর্স এর কি অবস্থা।(ভোরের বাবা)

___(ডিভোর্স মানে,,,,,তোমাদের মানেতো,,,, আমার আর ভোরই হবে।কিন্তু আমাদের ডিভোর্স এর কথা কেনো উঠছে।আমরাতো ডিভোর্স নিয়ে কিছু ভাবিনি।মনে মনে,)(আমি)

___হ্যা ড্যাড,আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি।উনি বলছেন কিছুদিনের মধ্যেই পেপারস রেডি করে দিবে।আর তারপর আমার আর কুয়াশার সাইন করে দিলেই ডিভোর্স হয়ে যাবে।

___বাহ,,,,,তাহলেতো ভালোই।তারপর রিমি আর তোমার বিয়েটা দিয়ে দিবো কি বলো?

___সেটা তুমি যা ভালো বুঝো তাই করবে।

আমিতো কিছুই জানলাম না।ভোর ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করছে,আবার ভোরের সাথে রিমির বিয়ে।এই জন্যই ওদের এতো মিলামিশা। ভোরতো একবারো বললনা যে ও এই বিয়ে করবেনা।ও কি সত্যিকারে আমায় আর ভালোবাসেনা।আমার ভিষন কষ্ট লাগছে।হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছে।নিজের চুল ছিরতে ইচ্ছা করছে।আমার মরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে।কি করে পারলো ভোর আমাকে এভাবে ঠকাতে।আমাকে একবার বলতে পারতো।আমাকে না বলেই ও আমাকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।কিভাবে পারলো,,,,

তারপর আমি কোন মতে সব গুছিয়ে সোজা উপরে ছাদে গিয়ে প্রচুর কান্না করছি।আমার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু গলা দিয়ে একটু আওয়াজ ও বের হচ্ছেনা।বুকের মধ্যে এসেই আটকে আছে কষ্টগুলো।আমার শ্বাস নিতেও অনেক কষ্ট হচ্ছে।আজকে মতো কষ্ট হয়তো আর কখনো পাইনি।আমাকে ভোরকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।ভোর অন্য আরেকটা মেয়েকে নিয়ে থাকবে।সত্যি আমার একদম সহ্য হচ্ছেনা।কারন আমি ভোরকে ভালোবাসি। হ্যা খুব বেশি ভালোবেসে ফেলছি ওকে আমি।

আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না।কিছুতেই না।তারপর আমি অনেক্ষন ধরে কান্নাকাটি করে চোখমুখ মুছে নিচে গিয়ে দেখি,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

চলবে………………………..