#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২৪
#M_Sonali
” বাবা তুমি শ্রাবনকে ফোন করে বলো আমি তার সাথে চলে যেতে চাই। আর তুমি ঠিক বলেছো সত্যিই আমার কি হয়েছিল আমি জানিনা। তাই এমন উল্টাপাল্টা কথা শুরু করে দিয়েছিলাম। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আর কখনো এমন হবে না। তুমি ওনাকে ফোন করে বল আমি তার সাথে যেতে চাই। আর কখন ওনার সাথে রাগারাগি করবো না।”
কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো চাঁদনী। ওর কথা শুনে বেশ অবাক হলেন রতন মিয়া। সেইসাথে খুশিও হলেন বটে। তিনি ওর কাছে এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“অবশেষে তুই বুঝতে পেরেছিস এটাই অনেক মা। স্বামীর সাথে যতই ঝগড়া হোক না কেন সব সময় মনে রাখবি, বাবার পরে মেয়েদের যদি মাথার উপর ছাদ বলতে কেউ থাকে। সেটা হল স্বামী। যে সারা জীবন তোর পাশে থাকবে, তোকে আগলে রাখবে। তাই তার ব্যাপারে মানুষের সামনে এমন কিছু বলিস না যে সবাই তাকে খারাপভাবে। যাইহোক আমি অনেক খুশি হয়েছি যে তুই আমার কথাগুলো বুঝতে পেরেছিস। আমি একটু আগেই ওকে ফোন করেছিলাম ও হয়তো এখন রাস্তায় আছে। তুই রেডি হয়ে থাক। শ্রাবন এলে খাওয়া-দাওয়া করে একসাথে বেরিয়ে যাস।”
উনার কথার উত্তরে চাঁদনী কিছু বলল না। মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সেখান থেকে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। চুপচাপ বসে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগল। হঠাৎ তার ভাবনায় ছেদ কেটে তার পাশে এসে বসল কেউ। মুহূর্তে কেঁপে উঠল চাঁদনী। পাশে তাকাতেই দেখলো শ্রাবন হাসিমুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও কিছু একটা ভেবে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,
“কখন এসেছেন?”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ একটি রহস্যময় হাসি দিল। তারপর আবেগি কণ্ঠে বলল,
“যখন তুমি মনযোগ দিয়ে আমার কথা ভাবছিলে ঠিক তখন।”
ওর কথা শুনে চাঁদনী একটি ছোট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমি রেডি হয়ে আছি। বলুন কখন আমাকে নিয়ে যাবেন।”
“এত তাড়াহুড়ো কিসের চাঁদ পাখি? আজতো শুধু তোমাকে নয় তোমার দাদি এবং বাবা তাদেরকেও নিয়ে যাব। আজ পর্যন্ত মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি দেখে নি সেটা কিভাবে হয় বলো। ওনাদেরও তো দেখা উচিত তার মেয়ে বিয়ে হয়ে কোথায় গিয়ে থাকছে।”
কথাটা শুনতেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল চাঁদনীর। সে হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“উনাদের কেন সাথে নিয়ে যাবেন আপনি? প্লিজ উনাদের কোন ক্ষতি করবেন না। আমি তো আপনার সাথে যাচ্ছি’ই।”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ মৃদু হাসল। উঠে দাঁড়িয়ে পিছনে গিয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো। তারপর ঘাড়ের কাছে মুখ রেখে আদুরে গলায় বলল,
“আরে আরে তুমি এত হাইপার হচ্ছ কেন চাঁদ পাখি। আমি ওনাদের ক্ষতি করতে যাব কেন? ওনারা তো আমার সম্মানের ব্যক্তি। আমার একমাত্র শশুর এবং দাদি শাশুড়ি। উনাদের কি কোন ক্ষতি করতে পারি। আর তাছাড়া তুমি কিভাবে ভাবলে যে ওদের কোন ক্ষতি করবো? কিছুই হবে না শুধুমাত্র ওনাদের দেখাতে চাই তোমাকে আমি কতটা সুখে রেখেছি। এখন এসব চিন্তাভাবনা না করে যাও তো, আমার জন্য খাবার-দাবারের আয়োজন চলছে। সেখানে একটু হাত লাগাও। দাদি তো বৃদ্ধ মানুষ কতটা কাজ আর একা করবে।”
চাঁদনী কি বলবে বা কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। শ্রাবনকে নিজের এতটা কাছে দেখে অসম্ভব রকম ভয় লাগছে তার। ওর এমন কথা শুনে যেন ভীষণ রকম ভয় পাচ্ছে চাঁদনী। সে ভাল করেই জানে শ্রাবণ কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে এখানে এসেছে। তবে সে উদ্দেশ্যটা কি সেটাই তার না জানা। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আকাশ-পাতাল ভাবতে থাকলো সে। তাকে এভাবে ভাবতে দেখে শ্রাবন এবার গালে ছোট্ট করে একটি চুমু এঁকে দিয়ে বলল,
“এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে বরের আদর’ই খাবে নাকি বরের জন্য কিছু খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করবে বলো তো? আমার কিন্তু আপত্তি নাই এভাবে আদর করতে।”
ওর এমন কথায় মুহূর্তেই ওর কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে গেল চাঁদনী। কোন রকম কথা না বলে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেল। শ্রাবন কিছু বলল না। মৃদু হেসে বিছানার উপর বসে পড়ল। কিছু একটা ভেবে তার মুখে ফুটে উঠল রহস্যময় হাসি।
রান্না ঘরে গিয়ে চাঁদনী দেখলো তার দাদী সব রান্না শেষ করে এখন সবকিছু গুছিয়ে টেবিলে নিয়ে আসছে। সে গিয়ে তার সাথে হাত লাগাতে চাইলে রত্না বেগম ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
“তোকে এখানে আসতে বলেছে কে রে চাঁদনী বুড়ি? জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করে তো অনেক কিছুই ঘটালি। এখন কি এখানে এসে তার সময়টুকুও নষ্ট করতে চাস। যা গিয়ে তাকে সময় দে। একটু আদর সোহাগ করে রাগ অভিমান ভাঙা। এগুলো আমি একাই সামলে নিবো।”
উনার এমন কথায় চাঁদনী বেশ বিরক্ত হলো। তবুও তার দাদিকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বলল,
“উনি বলেছেন ওনার জন্য খাবার রেডি করতে। তাই এখানে এসেছি।”
এবার রত্না বেগম মৃদু হাসলেন। বললেন,
“যাক তার মানে তোদের মাঝে রাগ অভিমান সব ঠিক হয়ে গেছে। তাই তো? মাশাআল্লাহ সুন্দর। একটা কথা বলি শোন, জামাই হল মেয়েদের মাথার তাজ। তার সাথে কখনো খারাপ আচরণ করবি না। ঝগড়াঝাটি করে এরকম দুমদাম বাপের বাড়ি চলে আসবি না। জামাইকে আদর সোহাগ করে আঁচলে বেঁধে রাখতে হয়। তবেই জীবনে সুখী হতে পারবি। আর তোর তো কোন শশুর শাশুরি বা দেবর ননদের ঝামেলাও নাই। এত সুন্দর একটা রাজপুত্রর মত জামাই পাইছিস। তোর জায়গায় আমি হইলে তো সারাক্ষণ জামাইরে জাপ্টে ধরে রাখতাম। এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করতাম না। যদি আবার অন্য কাউকে পেয়ে আমাকে ছেড়ে যায়। এখনো মন চায় যদি জোয়ান হইতাম তোর জামাইয়ের সাথে প্রেম করতাম রে চাঁদনী বুড়ি।”
কথাগুলো বলেই ফিক করে হেসে দিল রত্না বেগম। ওনার কথা শুনে চাঁদনীর কোনরকম রিয়াকশন দেখা গেল না। সেতো মনে মনে ভয় মরছে। শ্রাবণ কেন তার দাদী এবং বাবা কে সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। আর কোথায় নিয়ে যাবে সে? ওই বাড়িতে তো কখনোই নিয়ে যাবে না। তাহলে কোথায় নিয়ে যাবে সে তাদের?
,
,
,
খাবার টেবিলে সবকিছু রেডি করে পিছনে ঘুরতেই চাঁদনী দেখল রতন মিয়া ২ হাতে প্রায় ৫-৬ কেজির মত মিষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। উনার হাতে এত মিষ্টি দেখে ভ্রু কুচকালো চাঁদনী। এগিয়ে গিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“এত মিষ্টি কেন এনেছ বাবা? এগুলো দিয়ে কি হবে? তুমি কি সারা এলাকায় মিষ্টি বিলাবে নাকি? কিন্তু কেনো”
ওর কথার উত্তরে রতন মিয়া হাতে থাকা মিষ্টির প্যাকেট গুলো পাশে টেবিলের ওপর নামিয়ে রেখে হাসি দিয়ে বলল,
“নারে মা এগুলো নিয়ে এসেছি আজ প্রথম তোর শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছি খালি হাতে গেলে কেমন দেখায় বল। তাই অল্প কিছু মিষ্টি নিয়ে এলাম। আচ্ছা তুই তাড়াতাড়ি জামাই বাবাজি কে নিয়ে খেতে বস। আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি।”
কথাটি বলেই উনি চলে গেলেন। চাঁদনী যেন আরো বেশি ঘাবড়ে গেল তার বাবা কথায়। সেকি তাহলে আরো বেশি বিপদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? নিজের ফুল ফ্যামিলি সহ? পাশে তাকাতেই দেখলো শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে রহস্যময় হাসি। এবার যেন অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল চাঁদনীর। সে কিভাবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে এতোটুকু নিশ্চিত যে আজকে নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটবে। শ্রাবণ অবশ্যই কোন একটা কিছু প্ল্যান করে রেখেছে। কিন্তু যত কিছু হয়ে যাক না কেন সে কোনভাবেই নিজের বাবা এবং দাদির ক্ষতি হতে দিবে না। দরকার হলে শ্রাবনকে মারবে, নয় নিজে মরবে। যেভাবেই হোক তাদেরকে সকল বিপদ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে সে। চাঁদনীকে শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শ্রাবণ পাশে এগিয়ে এল। মুখের সামনে চুটকি বাজিয়ে বললো,
“এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছো? এত ভাবাভাবির কিছু নেই জলদি খেতে দাও। খাওয়া-দাওয়া করে আবার রওনা হতে হবে তো। নইলে দেরি হয়ে যাবে না?”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২৫
#M_Sonali
“বাবা আপনাদের কে একটি কথা বলার ছিল। কিন্তু আসার পর থেকে আপনাকে একদম ফ্রি পাইনি তাই বলা হয়নি। অনেক বড় একটি গুড নিউজ আছে আপনাদের জন্য।”
খাবার টেবিলে বসে খাবার খেতে খেতে কথা গুলো বলে উঠলো শ্রাবণ। ওর কথা শুনে পাশের চেয়ারে বসে খাবার খেতে থাকা রতন মিয়া আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকাল ওর দিকে। উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
“কি গুড নিউজ জামাই বাবা? তাড়াতাড়ি বল শুনি।”
ওনার কথা শুনে রত্না বেগম এবং চাঁদনী ও আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকালো শ্রাবনের দিকে। সে এবার খাওয়া ছেড়ে বলতে শুরু করল,
“আপনারা তো জানেন আমি এতিম। আমার বাবা-মা ভাই-বোন কেউ নেই। বাবা মারা যাওয়ার আগে যতোটুকু সম্পত্তি রেখে গেছে তা দিয়েই বেশ ভালো ভাবেই চলছিল। কিন্তু যেদিন চাঁদনীকে এখানে রেখে যাই, তার ঠিক পরদিন একজন উকিল আসে আমার সাথে দেখা করতে। সে আমাকে জানায় আমার দাদুর বিশাল সম্পত্তির কথা। যেটা বেওয়ারিশ হয়ে পড়ে আছে। তাই দাদুর সব সম্পত্তি একমাত্র আমাকে লিখে দিতে চায়। কথাটা প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে দেখি সত্যি বলছেন তিনি। আর সেই সম্পদ নিজের নামে বুঝে নেওয়ার কারণে কয়েক দিন এখানে আসতে পারিনি। আপনাদের খোঁজ নিতে পারেনি।”
এতোটুকু বলে থামল শ্রাবণ। ওর কথা শুনে রতন মিয়া এবং রত্না বেগম দুজনের চোখই চিকচিক করে উঠল। তারা যেন খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। এদিকে চাঁদনী সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রতন মিয়া উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলে উঠল,
“আলহামদুলিল্লাহ এটাতো অনেক ভালো খবর। তাহলে তো আমাদের আর কোন চিন্তাই নেই। আমার একমাত্র মেয়ে অনেক সুখী হবে তোমার সাথে। তা তোমার দাদার সম্পত্তিতে কি কি পেয়েছো তুমি?”
“বিশাল বড় দু তলা একটি বাড়ি। দুটি প্রাইভেট কার। আরো কিছু জমিজমা পেয়েছি বাবা। আর কিছু ব্যাংক ব্যালেন্সের টাকা পেয়েছি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ কোটির মত হবে।”
ওর কথা শুনে রত্না বেগম এর হাত থেকে খাবার পড়ে গেল। হা করে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। এত টাকার মালিক হয়েছে শুনে তারা ভীষণ রকম খুশি। তাদের আদরের চাঁদনী তাহলে অনেক সুখি হবে। রাজ রানীর মত থাকবে সে শ্রাবণের ঘরে। ভেবেই যেন রতন মিয়ার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। সে ভীষণ রকম খুশি হচ্ছে।
তারপর খাবার টেবিলে আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে খাওয়া শেষ করে সবাই উঠে দাঁড়ানো। শ্রাবণ রুমে যেতে যেতে বলল,
“বাবা, দাদি তাহলে আর দেরি করবেন না আপনারা। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন। আমরা এখনই বেরিয়ে পড়বো।”
ওর কথা শুনে রতন মিয়া ভ্রু কুচকালো। অবাক হয়ে বলল,
“এসব তুমি কি বলছো জামাই বাবা? এত রাতে আমরা কিভাবে যাব? এখন রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। এখন যে যার মতো ঘুমাও আমরা বরং সকালে রওনা দিব। তাহলে ভালোভাবে পৌছানো যাবে।”
“সমস্যা হবে না বাবা। আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমি সাথে করে প্রাইভেটকার নিয়ে এসেছি। আমরা সেটাতে করেই যাব। কোন ঝামেলা হবে না।”
ওর কথা শুনে রতন মিয়া কিছু বলার আগেই চাঁদনী বলে উঠল,
“না আমরা এখন কোথাও যাবো না। গেলে কাল সকালে সূর্য ওঠার পর যাব। আর তাছাড়া এত রাত করে আমার কোথাও যেতে ভালো লাগেনা।”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ মুচকি হাসলো। তারপর আদুরে গলায় বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি যখন চাইছো তাহলে আমরা কাল সকালেই যাব। তাহলে বাবা আপনারা ঘুমিয়ে পড়ুন। আমিও ঘুমাতে যাচ্ছি। আমরা বরং সকালেই যাব। সেটাই ভালো হবে।”
কথাটি বলেই চাঁদনীর রুমে ঢুকে গেল। এতে চাঁদনী বেশ অবাক হলো। সে ভেবেছিল শ্রাবণ কিছুতেই তার কথা মানবে না। জোর করে নিয়ে যেতে চাইবে। কিন্তু এক কথাতেই এভাবে মেনে যাবে সেটা যেন কল্পনায়ও ছিল না তার। মেয়ের কথায় রাজি হয়ে যাওয়াতে রতন মিয়া মনে মনে ভীষণ খুশি হল। সে ভাবলো জামাই তার মেয়েকে সত্যিই কতটা ভালোবাসে। যে তার মেয়ের একটা কথাও ফেলে না।
সবাই যে যার রুমে চলে যেতেই চাঁদনী রাতে আগুন হয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করল। দরজা লাগিয়ে দিয়ে শ্রাবণের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। শ্রাবণ পায়ের উপর পা তুলে বিছানার উপর শুয়ে আছে। আর তাকিয়ে আছে উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে। ওকে পাশে এসে দাড়াতে দেখেই ফ্যানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকাল শ্রাবণ। মুচকি হেসে বলল,
“সুইটহার্ট তুমি এসেছ? আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”
“দেখুন আমার সাথে একদম নাটক করবেন না। আমি বেশ ভালোভাবেই জানি আপনি অনেক বড় কিছু প্ল্যান করে এখানে এসেছেন। সত্যি করে বলুন আপনি কি করতে চলেছেন?”
ওর কথার উত্তরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো শ্রাবণ। তারপর ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে দুগালে হাত রেখে বললো,
“আরে তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো চাঁদপাখি। আমি তেমন কিছুই করবো না যেমনটা তুমি ভাবছো।”
ওর কথার উত্তরে ওর হাতটা ছিটকে দূরে সরিয়ে চাঁদনী বললো,
“আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। আমার বাবা এবং দাদির সাথে কি করতে চাচ্ছেন আপনি। দয়া করে ওনাদের কোন ক্ষতি করবেন না। ওনারা তো আপনার কোন ক্ষতি করেনি। বরং আপনাকে ওনারা কত ভালবাসে। কত বিশ্বাস করে। দয়া করে ওনাদের কিছু করবেন না।”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ মৃদু হাসল। আবারো বিছানার উপর গিয়ে বসে পায়ের উপর পা তুলে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
“ঠিক আছে তোমার বিশ্বাস করতে হবে না। কালকে নিজের চোখেই দেখো কি করি।”
এবার চাঁদনী বেশ কিছুটা ঘাবড়ে গেল। শ্রাবণ এর পায়ের কাছে এসে ফ্লোরে বসে পড়লো। দুই হাত জোড় করে বলল,
“আপনার কাছে দোহাই লাগে। আপনি আমার বাবা বা দাদির কোনো ক্ষতি করবেন না। ওদের কিছু হলে আমি বাঁচব না। আমিও মরে যাব। ওদের কিছু করার আগে আপনি আমাকে মেরে ফেলুন। তবুও ওদের কোনো ক্ষতি করবেন না।”
কথাটি বলার সাথে সাথে শ্রাবণের চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করলো। রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ওকে শক্ত হাতে দুই বাহু ধরে উঠে দাঁড়ালো। ওকে ঝাঁকিয়ে কর্কশ গলায় বলল,
“তোমাকে কতবার বলেছি এই কথাটা না বলতে। আমি আর কতবার বলবো আমি তোমাদের কারো কোন ক্ষতি করব না। তুমি কেন বারবার আমাকে এভাবে রাগি দাও। তুমি কি জানো না আমার রাগের পরিণাম?”
চাঁদনী নিমেষেই চুপসে গেল। আর কোনো কথা বলল না। দু বাহুতে প্রচন্ড ব্যথা পাচ্ছে সে। শ্রাবণ বেশ শক্ত করে চেপে ধরেছে। যে কারণে এতক্ষণে প্রচুর ব্যথা পাচ্ছে সে। ব্যথায় দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল চাঁদনীর। ব্যাপারটা বুঝতে পারতেই শ্রাবণ দ্রুত তাকে ছেড়ে দিলো। তারপর নিজের স্বাভাবিক রুপে ফিরে ওর দুবাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে পাগলের মত করে বলতে লাগল,
“কি হয়েছে চাঁদপাখি। ব্যথা পেয়েছ? আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি বুঝতে পারিনি। ইচ্ছে করে ব্যথা দিইনি। তুমি আমাকে কেন রাগিয়ে দাও বারেবারে। জানো না রাগ উঠলে আমি নিজের ভেতর থাকি না। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। কোথায় ব্যথা পেয়েছো দেখাও আমাকে। আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না প্রমিস।”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,