মজিলো প্রেম সখার সনে পর্ব-০২

0
241

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে _ ০২

ভার্সিটির গেটের সামনে শাফখাত খান সবার সামনে তিহার গালে একটা থা’প্প’র দেয়। তিহা তার একজোড়া চোখ বড় বড় করে শাফখাতের উপরে নজর ফেলে। গালে হাত দিয়ে বলে আপনার এত বড় সাহস আপনি আমাকে থা’প্প’র দেন। শাফখাত খান চোখগুলো বড় বড় করে করে, হু’ম’কি মূলক আওয়াজ দিয়ে বলে, এখনতো থা’প্প’র দিলাম। এরপর থেকে যদি তুমি আমার কথা না শুনো ক’চুকাটা করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দিয়ে আসবো। মোহনা এই দৃশ্য আর কথপোকথন শুনে দাত দিয়ে নখ কাটে। মনে মনে বলে হঠাৎ এদের আবার কি হলো? এইরকম করছে ক্যান? কাল পযর্ন্ত তো সব ঠিকঠাক শুনলাম।

তিহা কর্কশ স্বরে বলে, আপনাকে না বলেছি। আমার সামনে কখনো এই মুখ নিয়ে আসবেন না। আমি আপনাকে দেখতে চাইনা। আমি যেই জিনিস বারবার মানা করি সেই জিনিস বারবার করেন কেনো? কোন অধিকারে ভার্সিটির সবার সামনে আমার গালে থা’প্প’র দেন। জানেন আমি ইচ্ছে করলে আপনাকে লোক দিয়ে মা’র খাওয়াতে পারি। বলবো রাস্তাঘাটে এক অবলা নারীকে উক্তত্য করছেন? দেখেন সবাই আপনাকে কিভাবে দেখছে।

শাফখাত খান কাউকে ভয় খায় নাকি? কোন ব্যা’ডার সাহস আছে। আমিয়ো দেখতে চাই। এমপির ভাতিজার গায়ে হাত তোলার।

এই কথা শুনে তিহা তার চোখ জোড়া লাল করে ফেলে। এই আপনাকে না বলেছি আমার সামনে আপনার বড়আব্বুর গুনগান উচ্চারণ করবেন না। নিজে কি করেন সেইটা নিয়ে পরিচয় দেন। কথায় কথায় বড়আব্বুর প্রসঙ্গ ক্যান টানেন? অবশ্য আপনিতো আপনার চাচাতো বোন ডিলনাশিনের পিছনে পিছনে ঘুরেন।

এই কথা শোনামাত্রই শাফখাত তিহার গালে আবারো থা’প্প’র দেয়। বলেছি না ডিলনাসিন কে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা না বলতে। ও অনেক ছোট কেবল ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আমি শুধু ওকে বোনের চোখে দেখি। ছোটবোন হিসাবে বড়ভাইয়ের একটা দায়িত্ব থাকে। সেই দায়িত্ব থেকেই ওকে প্রতিদিন আমি কলেজে পৌঁছে দেই। আর ও আমার পিছনে থাকে ভাইবোনের একটা মধুর সম্পর্ক হয়না। সেই সম্পর্ক থেকে সবসময় লেগে থাকা স্বভাব। এই নিয়ে এই কথাটা তোমাকে কতবার বুঝাতে হবে? এই বিষয় নিয়ে রাগের কি আছে এখানে?

তিহা তার গালে হাত দিয়ে বলে, দানব পুরুষ আমার সামনে আসবেন না আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইনা। ও কি আপনার নিজের বোন যে সবসময় কাঁধের উপর নিশ্বাস ফেলে। আমি যে বিষয়টা সিরিয়াস ইস্যুতে দেখি সেই বিষয়ে একটুখানি গুরুত্ব দিলে কি হয়? অবশ্য আপনিতো ভালোবাসা কি এটা বুঝেন না? নাহলে এভাবে থা’প্প’র দিয়ে গাল লাল করতেন না। দ্বিতীয়বার যোগাযোগের ট্রাই করবেন না।

মোহনা মনে মনে বলে, এই তিহা শুধু এক বিষয় নিয়ে শাফখাত ভাইয়ের সঙ্গে সপ্তাহে একবার করে ঝামেলা পোহায়। এসবে শুধু আমায় আর ফিহাকে নীরব দর্শক হতে হয়। মনডা চায় দুইটারে জু’তা দিয়ে পিটাই। আজকে তো ফিহা নাই আমাকেই একাই সহ্য করতে হচ্ছে। মোহনাকে চুপ দেখে শাফখাত বলে, এই মোহনা তুমি কথা বলছো না কেনো? তোমার বান্ধবী কি সারাজীবন আমাকেই ভূল বুঝে যাবে?

মোহনা আমতা আমতা করে বলে, সকাল সকাল ঘুম থেকে ভার্সিটি আসি ক্লাস করতে ভাই। আপনাদের ড্রামা দেখতে নয়। এই একটি বিষয় নিয়ে তিহা নাহলেও এক বছরের সম্পর্কে আপনাকে ৫০ বার মানা করেছে। কিন্তু আপনিতো তিহার কথা শুনেন না। বরং আসেন আমাদের জ্বালাতে। আর তিহা তোকেও বলি ডিলনাসিন ননদ হয় তোর সতীন না। যত তাড়াতাড়ি কথাটা মাথায় ঢু’কা’বি ততই ভালো। সামান্য বিষয় নিয়ে বারবার লাগলে সম্পর্ক কি মুভ অন করতে পারবি?

এই মোহনা তুই চুপ থাক। প্রেম কি তুই বুঝিস। বাচ্চা মেয়ে কোথাকার। তোর প্রেমিক পুরুষের গলা অন্যজন ধরে পিক তুলে ফেসবুকে আপলোড দিবে। ক্যাপশনে লিখে দিবে মাই লাভ তুই সহ্য করতে পারতি। কখনো পারতি না। এইটা ওর বুঝা উচিত। আপনি আপনার ডিলনাসিন কে নিয়ে থাকেন। কয়েক পা সামনে ফেলে তিহা ক্যাম্পাসের দিকে পা বাড়ায়।

শাফখাত পিছন থেকে তিহার ওরনা টেনে পেছিয়ে পেছিয়ে কাছে যেয়ে বলে আই লাভ ইউ তিহা। আমি শুধু তোমার। এত ভূল বুঝলে হয়। আমি ডিলনাসিনকে বকে দিবো। ও ছোট একটা মেয়ে এতোকিছু বুঝেশুনে পিক আপলোড দেয়নাই। আমার সাথে ওকে যায়। কত ছোট একটা মেয়ে ১৬ বছর কেবল। আর তুমি হাটুর বয়সী মেয়ের সঙ্গে আমাকে নিয়ে সন্দেহ করো।

ওড়না ছাড়েন আমার ক্যাম্পাসের সবাই দেখছে। এখান থেকে চলে যান বলছি। এই মোহনা তুই কি ওখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার অপমান দেখবি। ওরনা ছাড়তে বল ওকে। মোহনা নিজের চুলে হাত দিয়ে বলে আল্লাহ আমাকে তুলে নাও। সবসময় বান্ধবী নামক ভূত দুইটাকে আমাকেই সামলাতে হয়। শাফখাত ভাই আমাদের ক্লাস আছে। মান সম্মান কিছু রাখেন। আপনি এমপির ভাতিজা ভূলে গেলেন। কেউ যদি ভিডিও করে আপনি একটি অবলা মেয়ের ওড়না টেনে, তার সম্মানে হাত দিচ্ছেন। তাহলে আপনার মান সম্মান কোথায় যাবে একবারো ভেবে দেখেছেন? শুনছি সামনে নির্বাচন আসছে আরো এইসব কীর্তি জানার পর আপনার বড় আব্বুকে আর কেউ ভোট দিবে।

শাফখাত দ্রুত তিহার ওরনা ছেড়ে দেয়। মোহনার হাতে ব্যা’থা’নাশক মলম দিয়ে বলে এটা ওর গালে লাগিয়ে দিয়ো।

পিছন থেকে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে ফিরোজ খান। শাফখাত কে এখানে দেখে জিজ্ঞেস করে শাফখাত তুই ভার্সিটিতে। শাফখাত ফিরোজকে দেখে বলে ভাইয়া একটু কাজ ছিলো তাই আসছি। তোর কাজ আমাকে বললেই তো করে দিতাম। তোকে আসার কি দরকার ছিলো। ভাইয়া আমার কাজটি হয়ে গেছে আমি আসতেছি। তড়িঘড়ি করে ভার্সিটি থেকে পা’লা’য় শাফখাত।

ফিরোজ আরে অদ্ভুত তো ক্যান্টিনে কফি খেয়ে যা এক কাপ। এই কথাটি আর শোনেনা শাফখাত। ফিরোজ শুধু একবার তিহা আর মোহনার দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে চলে যায় ওখান থেকে।

মোহনা তিহাকে এসে বলে, তুই কি জানতিস ফিরোজ স্যার শাফখাত ভাইয়ের ভাই হয়।
” না’তো। ”
” বলিস কিরে। শেষ পর্যন্ত তুই লেকচারার ভাসুর পেলি? একবছর থেকে ভালোবাসিস। ভালোবাসার মানুষের বাড়িতে কে কে আছে শুনবি না। ”
” সব তো জানি রে। কিন্তু কখনো দেখা হয় নাই কারো সঙ্গে। ও বলেছিলো ওরা চার ভাইবোন। দুজন এমপি সাহেবের ছেলে মেয়ে। আর দুজন ওর বাবার ছেলে মেয়ে। ব্যাস এতটুকু জানি। ”
” আমার মন বলছে এই শাফখাত ব্যাডা ইচ্ছে করেই লুকাইছে, এই বিষয়টা। ”
” তুই শাফখাত নিয়ে কথা বলা বন্ধ কর ভালো লাগছে না। ”
” মোহনা মনে মনে বলে যতসব ঢং। একটুপরতো ফোন দিয়ে রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলবি ”

( ★ )

ফিহা আজ ঘুম থেকে লেট করে উঠেছে। কাল রাত দুইটা পর্যন্ত জেগে ছিলো। তার আম্মার শরীরে হঠাৎ করে জ্বর এসেছিলো। কিছুতেই জ্বর কমছিলো না। বাবাতো কাজের সূত্রে সিলেট গেছে। বাড়িতে ফিহা আর ফিহার আম্মা ফাতেমা ছাড়া কেউ নাই। রাত জেগে আম্মুর পাশে বসে মাথায় জলপট্টি দিয়েছে। জলপট্টি দেওয়ার পর জ্বর কিছুটা কমেছে। এখন আপাতত ভালো আছে। কিন্তু ভার্সিটিতে ক্লাস থাকায় না খেয়েই চলে আসতে হলো। আজকে প্রথম ক্লাস ফিরোজ স্যারের তাই তড়িঘড়ি করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে ফিহা। এরপরে হাতের ঘড়িতে টাইম দেখে ২ মিনিট পার হয়ে গেছে তাই দৌড়াতে লাগলো কোনো কিছু না দেখে। রুমের সামনে আসতেই কারো শক্ত শরীরের সাথে ধাক্কা খায় ফিহা। ছিটকে ফ্লোরে পড়ে যায়। অপর মানুষটি মুখ ঘুড়িয়ে বলে। হোয়াইট দ্যা হেলেস দিস। দেখেশুনে আসতে পারেন না। চোখ জোড়া পিছনে রয়েছে। কেউ কারো সঙ্গে এভাবে ধা’ক্কা খায়। ফিহা এলোচুল গুল গুলো ঠিক করে সামনে থাকা মানুষটির দিকে তাকায়। মানুষটিকে দেখে গলা শুকিয়ে যায়। মুখের থুথু দিয়ে গলাটা ভেজায়। ফিহাকে দেখে ফিরোজের চক্ষু কপালে উঠে যায়। এরপরে হাত বাড়িয়ে দেয় ফিহাকে ইশারা করে হাত ধরে উঠো। কিন্তু ফিহা মুখ ভেঙচি দিয়ে একা একা ফ্লোর থেকে উঠে। ফিহা মনে মনে বলে এই ধলা বিলাইয়ের হাত ধরবো আমি, উহু এতো খারাপ দিন আসে নাই আমার।

ফিরোজ ফিহার এই মুখ দেখে রাগে শরীর রি রি করছে। রুমের বাকি স্টুডেন্টরা জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখছে। মোহনা তিহাকে বলে আজ ফিহার কপালে শনি আছে। তিহা মোহনাকে বলে ফিরোজ স্যার কিভাবে হাতটা বাড়িয়ে দিলো আর এই ফিহা কিভাবে এভোয়েড করলো। আমিতো হলে স্যারের গলা ধরতাম এই সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে। মোহনা তিহার মাথায় একটা ঠালা দিয়ে বলে ওই দেখ কি হচ্ছে ওখানে।

বাড়ি থেকে আসার পথে কি চোখ দুইটা রেখে আসছো? নাকি চোখে দেখতে পাওনা। অন্ধ তুমি, এইভাবে কেউ ধা’ক্কা খায়? যদি এক্সিডেন্ট হতো?

ফিহা মাথা নিচু করে বলে, কিছুতো হয়নাই স্যার। আসলে আমি লেট করে ফেলছিলাম তাই তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে এমনটা হয়েছে।

দোষ যেহেতু করছো শাস্তি পেতেই হবে।

কি শাস্তি স্যার?

ফিরোজ কিছু না বলে রুমে ঢুকে। পিছন পিছন ফিহা রুমে প্রবেশ করার জন্য পা বাড়ালো। ফিরোজ চিৎকার দিয়ে বললো বেয়াদপ ভিতরে আসার জন্য অনুমতি নিতে হয়।আদব_কায়দা কোনোকিছু শিখো নাই দেখছি। প্রাইমারিতে আবার তোমাকে ভর্তি করতে হবে।

এই কথা শুনে ফিহা বলে, ধলাবিলাই আমার সঙ্গে ইচ্ছে করেই এরকম করছে। মে অ্যাই কামিন স্যার?

ফিরোজ না শোনার ভান করে রোল কল করা শুরু করলো । ফিহা বিরক্ত ভরা মুখ নিয়ে ফিরোজকে দেখে আবারো বললো স্যার আসতে পারি?

ফিরোজ মনে মনে মৃদু হেসে বললো লেট করে কেউ আমার ক্লাসে আসলে তাকে আমি ঢুকতে দিইনা। বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেই ক্লাস করতে হবে। ফিরোজ এরপরে হোয়াইট বোর্ডে মার্কার পেন দিয়ে লেখা শুরু করলো।

বেডা ধলাবিলাই ইচ্ছে করে আমার সাথে এরকম করছে। নিজে যে দুইমিনিট লেট করে ক্লাসে আসছে তার বেলায় কিছুনা। ফিহা মনে মনে বলে ধলাবিলাই যে তোর বউ হবে সে যেনো বাংলা মুভির রিনা খান হয়। তাহলে তুই উচিত শিক্ষা পাবি। একটা নিরীহ মেয়ের সঙ্গে ইচ্ছে করেই এরকম করছে।

ফিরোজ ফিহাকে দেখে বললো মনে মনে কি বীরবীর করছো?

ফিহা মাথা উপড়ে তুলে বলে কই স্যার কিছুতো নাতো?

ফিরোজ এরপরে বোর্ড যা যা লিখছে ছাত্র ছাত্রীদের পয়েন্টগুলো বুঝাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ফিহা মনে মনে বললো এই ধলাবিলাই নিশ্চিত জন্মের পর মধু খায় নাই। তাই মুখ থেকে খালি কর্কশ কথা বের হয়। এরপরেও এই ভার্সিটির মেয়েগুলো ক্যানো যে এরজন্য পাগল। আমার ক্লাসের বান্ধবীগুলো হায়েনার মতো কিভাবে তাকাচ্ছে তার দিকে। ফিহা এরপরে তার কুত্তি বান্ধবী দুইটাকে খুঁজছে। তিহা হাত তুলে দেখালো। ফিহা হাত দিয়ে ইশারা করলো এইখানে আয়। তিহা মুচকি হাসি দেয়। পুরো ৪৫ মিনিট খালি বুঝিয়ে গেলো ফিরোজ। আর ক্লাসের মেয়েগুলো পড়াশোনা বাদ দিয়ে ফিরোজকে দেখছে তার অধর ভিজাচ্ছে।

আজকের মতো ক্লাস এখানেই শেষ। ফিরোজ মার্কার পেন দুইটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বাইরে চলে গেলো। ফিহা ভিতরে ঢুকে ডাস্টার টা হাতে নিয়ে বললো ইচ্ছে করছে পিছন দিক থেকে এই ধলাবিলাইকে এই ডাস্টার মারি। তাহলে আমার রাগ কমে। ধলাবিলাই একটা।

চলবে,,,
®️রিয়া জান্নাত