মজিলো প্রেম সখার সনে পর্ব-০১

0
375

®️ রিয়া জান্নাত
#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে
#সূচনাপর্ব

ফিহার দুই গালে দুইটা থা’প্প’র দিয়ে ভার্সিটির মাঠে সবার সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে রাখছে ফিহাকে । তার অপরাধ সে এই ভার্সিটির লেকচারার, আর সব মেয়েদের হার্ট থ্রোপ মোহাম্মদ ফিরোজ খান স্যারের গালে চুমু দিয়েছে। তাও এমনি এমনি না বন্ধুদের ডেয়ার এর চাপে। ফিহা ভেবেছিলো ডেয়ার কমপ্লিট করার পর স্যারকে সবটা বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু ফিরোজ কিছু শোনার আগেই রেগে এক্কেবারে বোম হয়ে যায়।আর যার ফলে ফিহার এখন এই অবস্থা। ফিহার এই মুহূর্তে তার বন্ধু নামক অপদার্থ গুলাকে খুঁজছে। কিন্তু কাউকেই আশে পাশে দেখছে না। রাগে তার শরীর রি রি করছে। সে মনে মনে ভাবছে ,,,

”কত বড় মাপের খবিস হলে মানুষ নিজের বেস্টিকে এমন বিপদের মধ্যে রেখে হাওয়া হয়ে যায়।ওই কুত্তি দুইটাকে খালি একবার পেয়ে নেই ওই চায়ের দোকানের টাকলা মামার সাথে এদের বিয়ে দিবো। যাতে বিয়ে পর ওই টাকলার মাথায় তবলা বাজাতে পারে। শা’লা হারামি এদের জন্য আমি এইভাবে ফেঁসে গেছি! কি দরকার ছিল এমন ফালতু মার্কা একটা ডেয়ার দেয়ার । আর আমিও বা কেন এই ডেয়ার মানতে গেলাম।আল্লাহ ওই খাটাস স্যারটা না জানি আমাকে টিসি দিয়ে ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়। তাহলেতো আমার আম্মু আমাকে ডিরেক্ট কোরবানি করে ফেলবে।শয়তান স্যার আমার পুরো কথাটায় শুনলো না। হু কি একটা ভাব যেন উনার প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। বুঝিনা এই ধলা বিলায়ের উপর কেন মেয়েরা এতো ক্রাশ খায়।আমি ওই ধলা চামড়ার উপর ক্রাশ খাওয়ার মতো মেয়ে না।হুম যত্ত সব আজাইরা ভাব। ”

কথা গুলো ভাবতেই ফিহার চোখ সামনে যায়।সে তাকিয়ে দেখে ফিরোজ আর তাদের ভার্সিটির প্রিন্সিপাল স্যার এই দিকেই আসছে। ওদেরকে দেখা মাত্রই ফিহার গলা শুকিয়ে যায়। সে মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে আরাম্ভ করে।

”হে আল্লাহ এই বারের মতো বাঁচিয়ে দাও। আর জীবনেও কোনো ডেয়ার গেইম খেলবো না প্রমিস। প্লিজ আল্লাহ প্লিজ!”

মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে ফিহা। ফিরোজ আর প্রিন্সিপাল স্যার ও ধীরে ধীরে ফিহার দিকে এগোচ্ছে। ফিহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে মনে মনে বলে,,,

”এই বুঝি টিসিটা আমার হাডে ধরিয়ে দিয়ে বলবে কাল থেকে তোমাকে যেন আর এই ভার্সিটিতে যেনো না দেখি।”

ফিহা চোখ বন্ধ করা অবস্থায় টের পায়, উনারা তার পাশ কেটে এগিয়ে গেছে।বিস্ময় নিয়ে চোখ খুলতেই প্রিন্সিপাল স্যার কিছুটা পথ গিয়ে একবার পেছনে ফেরে ফিহার সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর ফিহাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে ,,,

”কি ব্যাপার তুমি এখানে এইভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

ফিহা মনে মনে বলে , দাঁড়িয়ে আছি কি আর স্বাদে আপনার গুণধর স্যারতো আমাকে এই শাস্তি দিয়েছে।

কথা গুলো ভেবে ফিহা বোকার মতো হাসি দিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগে ফিরোজ বলে উঠে ,,,

”স্যার ওকে আমি পানিশমেন্ট দিয়েছি. আসলে ও আমার সাথে একটু বেয়াদবি করেছিল তারই শাস্তি স্বরূপ সে এখন কান ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছে।”

ফিরোজের কথা শুনে প্রিনসিপাল বলে ,গুরুতর কিছু করেছে কি?করে থাকলে বলো আমি স্টেপ নিবো।

স্টেপ নেয়ার কথা শুনে ফিহার মুখটা আরো শুকিয়ে গেলো সে এবার নির্ঘাত কেঁদে দিবে। ফিহার এই কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে ফিরোজের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। ফিরোজ কোনোরকমে হাসি আটকিয়ে তার প্রিনসিপালকে বলে ,,,

”না স্যার তেমন কিছু না। আমিই হেন্ডেল করে নিতে পারবো.আর এমনিতেও ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে আমাকে সরি বলেছে। তাই আর এটা নিয়ে এত ঝামেলা করার দরকার নেয়।”

প্রিনসিপাল স্যার ফিরোজের দিকে তাকিয়ে বললো ,, ঠিক আছে তোমার ছাত্রী তুমিই বুঝে নাও”

ফিরোজ প্রিনসিপালের কথা শুনে মিনমিন করে বললো,শুধু ছাত্রী না পাত্রী ও।

ফিরোজ কিছু মিনমিন করে বলেছে সেটা বুঝতে পেরে ফিহা, ফিরোজের দিকে ব্রু কুঁচকে তাকালে ফিরোজ ফিহাকে চোখ মারে।ফিহা তো পুরো শকট। ফিরোজ তাকে চোখ মেরেছে কিন্তু কেন?স্যারের মাথায় কি অন্য কিছু চলছে! কিন্তু সেটা কি তাই বুঝতে পারছে না সে। ফিহা আবারো একবার ফিরোজের দিকে তাকাতেই ফিরোজ বলে ,,,

”আপাতত তোমার শাস্তি মওকুফ করা হলো।এখন যাও গিয়ে ক্লাস করো। ”

ফিহা একবার বিরক্ত ভরা চোখে ফিরোজের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

( ★ )

ফিহা এই মুহূর্তে তার দুটো হারামি বন্ধুকে খুঁজছে। কই লুকিয়েছে এইগুলা।একবার পাই শুধু তাহলে তোদের একদিন কি আমার যত দিন লাগে!”

সে খুঁজতে খুঁজতে কেন্টিনে যায়!সেখানে গিয়ে দেখে কেন্টিনের একদম কোনায় ঘাপটি মেরে বসে দুজনে কি যেন বলা বলি করছে! ফিহা ধীর পায়ে তাদের দিকে এগিয়ে যায় যাতে করে তাদের মধ্যে কথোপকথন গুলো সে শুনতে পারে।

”দোস্ত আজকে আর আমাদের রেহাই নেয়.ফিহা নির্ঘাত আমাদেরকে খুন করবে ”(চোখে মুখে ভয় নিয়ে তিহা কথাটা বলে)

তিহার কথাটা শুনে পাশ থেকে মোহনা দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলে ,,দোস্ত একবারে মেরে ফেললে তো বেঁচে যেতাম। কিন্তু ফিহা তো আমাদের কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারবে। বেচারি আজ যা রেগে আছে না। আমাদের আজকেই এই পৃথিবীতে শেষ দিন। শোন আমার হতে হতে না হওয়া জামাইকে বলে দিস যেন আমি মরলে আরেকটা বিয়ে করে ফেলে।

মোহনার কথাটা শুনে তিহা চোখ মুখ শক্ত করে বলে ওই হারামি মরবি কি তুই একা!আমাকে কি ফিহা ছেড়ে দিবে।তোর জন্য হয়েছে সব কিছু।কি দরকার ছিল এমন একটা ডেয়ার দেয়ার!তোর জন্য আজ ফিহার এই অবস্থা তার সাথে নিজে তো মরলি মরলি আমারেও সাথে নিয়ে মরলি।

মোহনা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে আমি কি জানতাম নাকি? আমি বলবো আর ফিহাও এই ডেয়ার কমপ্লিট করতে রাজি হয়ে যাবে।

মোহনা যে হাতের নখ কাটছিলো তিহা সেই হাত ঠাস করে মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো। কেন তুই জানিস না ফিহা কোনো ডেয়ারেই হারতে রাজি না। যেকোনো মূল্যে সে সব ডেয়ার কমপ্লিট করে। যত্ত সব আবাল মার্কা কথা বার্তা। এখন এটা ভাব কি করে ফিহাকে বুঝাবি।

মোহনা আবার ডান হাতটা আবার মুখে দিয়ে বলে। হুম ভাবছি, তুইও ভাব!

এতোক্ষন পেছন থেকে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথায় শুনেছে ফিহা। ওদের এমন ভয় পাওয়া দেখে ফিহার বেশ হাসি পাচ্ছে।ফিহা মনে মনে ভাবলো এখন হাসা যাবে না। আগে ওদের ভয়ের সুযোগ নিয়ে নেই।তারপর অন্য কিছু?

” কথাটা ভেবেই ফিহা ওদের দুজনের মাথায় একসাথে চাটি মারে। সঙ্গে সঙ্গে দুজন ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ফিহাকে দেখে দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা ঢোক গিলে একসাথে বলে উঠে, ফিহা তুই! ”

ফিহা মুখে বিরক্তি ভাব এনে বলে হুম আমি তো।তোরা কি চেয়েছিলি নাকি আমি আরো কিছুক্ষন ওভাবেই কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকি?

তিহা আর মোহনা দুজনেই একসাথে বলে উঠে না না দোস্ত এইসব কি বলিস বলতো। তুই আমাদের দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বান্ধবী তোর কষ্টটা কি আমরা দেখতে পারি বল। তাইতো আমরা দুজন প্লেন করছিলাম কিভাবে ফিরোজ স্যারকে বলে তোর পানিশমেন্টটা কেন্সেল করা যায়। ”

ফিহা দুহাত বুকের উপর ভাজ করে ব্রু উঁচিয়ে বলে ওহ আচ্ছা তাই।

তিহা আর মোহনা বোকার মতো হাসি দিয়ে একসাথে বলে উঠে হুম।

ওরা যেই না হুম বলেছে। অমনি ফিহা ওদের কান মলা দিয়ে ধরে বলে ,,,

”আমাকে কি তোদের ২ বছরের বাচ্চা মনে হয় যে আমাকে যা বুঝাবি আমিও তাই বুঝবো। তোরা এতক্ষন এখানে কি কি কথা বলেছিস তা সব কিছুই আমি শুনেছি। তাই খবরদার যদি মিথ্যে বলেছিস। এমনিতেই আমার মাথা ভীষণ গরম। তোদের এই ফাউল মার্কা ডেয়ার রাখতে গিয়ে আজ আমার মান সম্মান সব প্লাস্টিক বানিয়ে ফেলেছি। জানিস আমাকে এইভাবে দেখে সব স্টুডেন্টরা হাসা হাসি করছিলো।ইশ কি লজ্জা। মনে হচ্ছিলো পায়ের নিচের মাটিটা দুভাগ হয়ে যাক। আর আমি এর মধ্যে ঢুকে যাই। কিন্তু এইসব কিছুর মধ্যে তো তোদের কোনো খবরই নেয়। বিন্দাস এখানে বসে বসে গল্প করছিস। ছি তোদের লজ্জায় মরে যাওয়া উচিত। ”

ফিহার কথায় মোহনা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে সরি রে দোস্ত আমরা জানতাম না যে ব্যাপারটা এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে।আমরা ভেবেছিলাম তুই ডেয়ার কমপ্লিট করার পর আমি আর তিহা গিয়ে স্যারকে বলবো যে এটা একটা ডেয়ার ছিল। কিন্তু স্যার কিছু শোনার আগেই এতটা রেগে যায় যে আমরা ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসি।তোকে একা রেখে আসার জন্য সরি রে।প্লিজ মাফ করে দে।আর কানটাও ছেড়ে দে ভীষণ লাগছে।

ফিহা উঁচুগলায় বলে লাগুক। ইচ্ছে তো করছে তোদের কান গুলা ছিড়ে ফেলি। যত সব হা’রা’মির দল।বন্ধু নামের কলঙ্ক তোরা!তোদের তো কচু গাছের সাথে ফাঁসি দিয়ে মরার দরকার

ফিহার কথায় মোহনা অবাক হয়ে বলে আচ্ছা দোস্ত কচু গাছের সাথে ফাঁসি দেয়া যায়।

ফিহা রেগে গিয়ে বলে হুম যায়। আমি যখন বলেছি তখন যায়। তোর এত বিশ্লেষন করতে হবে না।

তিহা মোহনাকে গুতা দিয়ে চুপ করতে বলে নিজে বলে দোস্ত বলছি যে তুই চাইলে আমাদের যেকোনো শাস্তি দিতে পারিস। আমরা মাথা পেতে নিবো। কিন্তু তাও তুই আমাদের উপর রাগ করে থাকিস না প্লিজ।

ফিহা ভেবে বলে শাস্তি তাই না। হুম। আজ থেকে ১ সপ্তাহ তোরা দুজন আমার কথা মতো চলবি। আর এটাই হলো তোদের শাস্তি। বুঝতে পেরেছিস।

দুজনেই একসাথে বলে হুম বুঝেছি। এবার আমাদের কানটা ছাড়।

ফিহা ওদের কান ছেড়ে একটা চেয়ার টেনে বসে তারপর ওদের দিকে ঘুরে বলে যা এবার আমার জন্য দু কাপ কফি নিয়ে আয়।

তিহা আর মোহনা একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে যাচ্ছি।

তারা সেখান থেকে যেতেই ফিহা মনে মনে হেসে বলে সবে তো শুরু হলো তোদের শাস্তি।তোদেরকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর মুখ্যম সুযোগটা হাত ছাড়া করা যাবে না।দেখোই না আমার জানেমানরা আগে আগে আরো কত কিছু করাই।আর ওই ধলা বিলাইটারেও আমি দেইখা নিবো। হনুমান একটা হু।

চলবে ,,,