মজিলো_প্রেম_সখার_সনে পর্ব-০৭

0
180

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_০৭

ফিরোজ স্যারের পার্সোনাল কাজ পড়াতে আজকে ফিহার ভার্সিটি আসতে লেইট হয়েছে! প্রথম পিরিয়ডের ক্লাস মিস করে ফেলেছে। ফিহা যে ক্লাস টা মিস করেছো, আমি বাড়িতে সবটা বুঝিয়ে দিবো। আফসোস রাখিয়ো না আমার উপর। ঠিক আছে স্যার। আচ্ছা ফিহা তুমি এখন সোজা ক্লাসরুমে যাবে দ্বিতীয় পিরিয়ড শুরু হয়েছে অলরেডি ০৪ মিনিট লেট। আমি অফিসে যেয়ে ফিঙ্গার পান্স করে আসতেছি। তোমাদের ক্লাস নিতে। ঠিক আছে স্যার এই বলে গাড়ি থেকে ফিহা নেমে সামনের দিকে এগোতে থাকে। ফিরোজ সাইটে গাড়িটা পার্ক করে গাড়ি থেকে বাইরে বের হয়। গাড়ি থেকে নেমে আচমকা এই দৃশ্য দেখবে ভাবতে পারেনাই ফিরোজ।

” ফিহা আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর কতবার বললে তুমি বুঝবে বলো। আজকে এই একগুচ্ছ গোলাপ শুধু তোমার জন্য। শুনেছিলাম তুমি হলুদ গোলাপ খুবই পছন্দ করো। আমার পক্ষ থেকে এই গোলাপ শুধু তোমার আমার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। কি হলো কি দেখছো গোলাপগুলো হাতে নাও। দেখো আমি বাংলা সিনেমার নায়কের মতো প্রপোজ করতে না পারলেও, আমার ভালোবাসা সত্যি। প্রায় ১ বছর হয়ে গেলো তোমার পিছনে ঘুরতেছি। আর কত ঘুরবো তোমার পিছনে। তুমি কি আমার ভালোবাসা বুঝবে না। ”

কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে কাব্য। কথাগুলো বলতে কাব্যর ললাটের ঘাম ছুটে গিয়েছে। কারণ এতদিন থেকে পিছনে ঘুরলেও ফিহাকে এভাবে কখনো বলতে পারেনাই। আজকে বুকে সাহস সঞ্চয় করে ফিহার সামনে একগুচ্ছ হলুদ গোলাপ নিয়ে দাড়িয়েছে। এরজন্য ললাটের ঘাম এভাবে ছুটে গেছে। কি হলো ফিহা তুমি গোলাপ নিবেনা। ফিহার সামনে আচমকা এভাবে আসছে কাব্য। ফিহা দ্বিধায় পড়ে যায় কি করবে। কারণ ফিহা তো কাব্যকে ভালোবাসে না। মুখের উপর কিভাবে না বলি। কিন্তু এই ছেলে বুঝে না কেনো আমি তাকে ভালোবাসি না। আমি তাকে ভাইয়ের দৃষ্টিতে দেখি, এসব দৃষ্টিতে নয়।

দেখুন কাব্য ভাই আমার পথ ছাড়ুন। আমি আপনার গোলাপ নিতে পারবো না। এই কথা কাব্য শুনে বলে ফিহা কি নেই আমার মধ্যে যারজন্য আমাকে ভালোবাসতে পারবেনা। গত একটা বছর পরেও এই কথা শুনতে হবে ভাবিনি। আজকে তোমাকে বলতে হবে ক্যানো আমাকে ভালোবাসতে পারবেনা?

ফিরোজ এসে ফিহার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। ফিরোজকে দেখে অধর ভেজানোর চেষ্টা করে ফিহা। ফিরোজ এসে বলে কি হচ্ছে ফিহা এখানে? আমি তোমাকে ক্লাসে যেতে বললাম না। এখানে দাড়িয়ে আছো ক্যান? আর কাব্য এইটা প্রতিষ্ঠান গোলাপ বিনিময় করার জায়গা না। তুমি ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট হয়ে এরকম কাজ করবে ভাবতে পারিনাই। ক্যাম্পাসের জুনিয়র রা তোমাদের দেখে কি শিক্ষা নিবে?

ফিরোজের এরকম কথায় ফিহা কেঁদে দেয়। দেখুন স্যার আমার কোনো দোষ নাই। আমি কারো কাছে গোলাপ চাইনি। ফিরোজ স্যারকে দেখে হলুদ গোলাপ ঘাসোর উপর ফেলে দৌড় দেয় কাব্য। পিছন দিকে আর একবারো ফিরে তাকায় না কাব্য। ফিরোজ ফিহার কাছে আসে। ফিহার হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠে। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে থাকে ফিহা। দমবন্ধ অবস্থা লাগছে ফিহার । ফিরোজের এভাবে কাছে আসাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায় ফিহা। চোখগুলো বন্ধ করে ফেলে। ফিরোজ ফিহার কানের কাছে নিজের মুখয়ব এনে ঠোঁট ভাজ করে। ফিহার কানের কাছে গরম নিঃশ্বাসের বাতাস বইতে থাকে। ফিহা দ্বিধায় ভূগে। ফিরোজ স্যার ক্যানো এভাবে নিজের মুখশ্রী আনলো। ফিরোজ ফিহার কানে কানে বললো ক্লাসে যাও। এই রোদে এভাবে দাড়িয়ে থাকোনা। আমি দেখছি বিষয়টা। ফিহা আর এক মূহুর্তেও সেখানে দাড়ায় নাই সোজা হাটা দেয় ক্লাসের জন্য।

ফিরোজ চারদিকে পর্যবেক্ষণ করে দেখলো প্রত্যকটা স্টুডেন্ট তার দিকে চেয়ে রইছে। এইখানে কি হচ্ছে। আমায় কি অ্যাটম মনে হয় যে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার খাওয়ার জন্য চেয়ে রয়েছো। স্যারের এরুপ কথা শুনে সব ছাত্র – ছাত্রী দিক পরিবর্তন করে ফেলে। ফিরোজ মুডটা গম্ভীর করে হনহন করে বাহু ঝাঁকিয়ে ক্যাম্পাস গমন করে।

( ★ )

ফিরোজ স্যারের ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে আসে তিন বান্ধবী। মুড ভালো নেই। তাই টাকলামামার চা খেতে আসে। তিহা দেখতে পেলো সকাল থেকে তার দুই বান্ধবী মুখ গুরুগম্ভীর করে বসে আছে। চাঞ্চলতা নেই দুজনের মধ্যে। যা দেখে তিহার প্রচুর খারাপ লাগলো। মনে মনে বললো চঞ্চল মেয়ে দুটার আজ কি হলো একসঙ্গে দুজন চুপ করে রয়েছে । তিহা মুড খারাপের কারন জানতে চাইলো।

মোহনা বললো এই তোরা জানিস মেহেদী ছেলেটা কিছুতেই আমার পিছু ছাড়ছে না। এই কথা শুনে তিহা বলে তা কি করলো তোমার জুনিয়র মেহেদী। তবে শুন ___

কাল ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার আমি রিকশা করে বাড়িতে ফিরছিলাম। হঠাৎ পরিচিত পুরুষালির কন্ঠস্বর ভেসে আসে। আমি ডানদিকে মাথা ঘুড়িয়ে সেই ছেলেটিকে দেখি। মেহেদী আমাকে বলছে হুট টা উঠাও নাহলে রোদে পুড়ছে তোমার শ্রী। আমি মৃদু হেসে বলি পুড়ুক তাতে কার কি? পুড়লে তো আমার পুড়ছে। এই কথা শুনে মেহেদী বলে তোমার শ্রী আমার হৃদপিণ্ড, কিডনি,ফুসফুস,লিভার। আমি চাইনা আমার এগুলা পুড়ুক।

ও আচ্ছা এতদিন জানতাম এগুলা মানুষের শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গ। আজকে জানলাম এগুলা নাকি অন্য কারো শ্রীয়ের সঙ্গে কানেক্টেড? তা আর কি কি পুড়ছে মেহেদী হাসান।

উফফ! মোহনা তোমার মুখে আমার নাম শুনতে ভালো লাগে? যাক তোমার পিছুপিছু আসা আমার সার্থক হয়েছে। প্রিয়তমার মুখে নিজের নাম শুনছি।

এই ছেলে তুমি কি পা’গ’ল একটুআগে তো আপু বলতেছিলে এখন মোহনা এসব কি? আর রিকশার পিছুপিছু এভাবে সাইকেল চালানো ভালো নয়। চলে যাও এখান থেকে। আমি কি করবো আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তোমার তা নিয়ে না ভাবলেও চলবে।

তিহা এবার বলে এরপরে কি হলো মোহনা? কি আবার হবে আমি বাড়িতে ফিরলাম। আর মেহেদী হাসান আমার পিছু পিছু সাইকেল ধাওয়া করে এসেছে। আজকে আমার সকালে দেখি ছেলেটি সাইকেল নিয়ে আমার বাসার গেটের সামনে হাজির। আমি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে রিকশাতে উঠি। রিকশা কিছুদূর এগোতেই মেহেদী বলে ___

হ্যালো, হ্যালো। মুখ বাড়িয়ে বললাম আমাকে বলছো? তো কাকে বলবো এইখানে তো তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নাই। আমি ছেলেটির কথা পাত্তা দিলাম না। মোহনা তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে? এই প্রশ্ন শোনার পর আমার রাগ বেড়ে যায়। মোহনা তুমি কি কালা, শুনতে পাওনা আমিতো প্রশ্ন করছি। রেগে যেয়ে ছেলেটিকে বলি না নেই। মোহনা তোমার জন্য লালটকটকে গোলাপ আনছি একজোড়া। গোলাপগুলো ওই খোপায় লাগালে দারুণ লাগবে। আমি মৃদু হেসে বলি তুমি যে আমাকে ডিস্টার্ব করছো, তোমার বাড়ির লোক জানে? সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি বাসার আড্রেস দিয়ে বলে এখনো কেউ জানেনা।তোমার ইচ্ছে হলে জানাতে পারো । হঠাৎ মেহেদী রাস্তার পাশে রাখা ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সাইকেল নিয়ে পড়ে যায়। ছেলেটি দ্রুত সাইকেল উঠিয়ে আমার পিছু পিছু আসে। ছেলেটির কনুই ফেটে রক্ত বেড় হচ্ছে তবুয়ো সেইদিকে তার মনোযোগ নাই। সম্পূর্ণ মনোযোগ শুধু আমার দিকে। এখন তোরা বলতো এই ছেলেকে নিয়ে আমি করি কি?

তিহা ফিক করে হেসে বলে হয়তো ছেলেটা তোকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে। কবিদের কাছে শুনেছি ভালোবাসার মানুষদের অবঙ্গা করতে নেই। চুপ কর তিহা ছেলেটির সঙ্গে আমার যায়। ২ বছরেরে জুনিয়র ও পড়াশোনা শেষ করবে কবে। আর চাকরি পাবে কবে। তোর ধারণা আছে৷ এই ভালোবাসার ভবিষ্যত কি? আমি ঠিক করেছি ছেলেটির দেওয়া অ্যাড্রেসে যাবো ওর বাবা মায়ের কাছে বিচার দিয়ে আসবো। ছেলেটি বাবা মায়ের বকা শুনলে হয়তো ঠিক হবে। কি বলিস তোরা।

তিহা বলে দেখ মোহনা এইটা তোর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। ভেবেদেখ কি করা যায়। এত কথা বললাম ফিহা তুই চুপ করে রইলি কোনো কথা শুনলি না আমার। মোহনার এই কথায় ফিহা বলে সব শুনছি আমি। আমার মুড অফ। ক্যান তোর কি হইছে? ভার্সিটিতে ঢুকছিস এভাবে। এখনো এভাবেই রয়েছিস ক্যান? বাড়িতে কিছু হইছে?

দেখ মোহনা, তিহা তোরাতো জানিস চতুর্থ বর্ষের কাব্য ভাইয়া গত একবছর থেকে আমার পিছনে ঘুড়ছে। আজকে সে কি করছে জানিস? আমি ভার্সিটিতে প্রবেশ করা মাত্রই একগুচ্ছ হলুদ গোলাপ নিয়ে বলছে আমি তোমাকে ভালোবাসি। সবকিছু ফিরোজ স্যার দেখছে। আমার খুব ভয় হচ্ছে রে। জানিনা এই ফিরোজ স্যার বাড়িতে কি বলে?

তিহা বলে আরে এতো চিন্তা হওয়ার মতো কিছু হয় নাই। ফিরোজ স্যার তেমন লোক নয়।

এমন সময় ক্যান্টিনে সিনিয়র ভাই সবার উদ্দেশ্য বলে,,,

এটেনশন এভরিওয়ান!তোমাদের সবাইকে একটা দুঃসংবাদ দেয়ার আছে। সেটা হলো আমাদের ভার্সিটির এইবার অনার্স ৪র্থ বর্ষের একজন ছাত্র নাম কাব্য আহমেদ সে কিছুক্ষন আগে হসপিটালে ভর্তি হয়েছে।তাকে কেউ খুব মারাত্মক ভাবে মেরেছে ।তবে সেই অপরাধি কে এখনো তা জানা যায়নি।তবে পুলিশ কমপ্লেইন করা হয়েছে।পুলিশ অফিসাররা বলেছে কাব্যর জ্ঞান ফিরলে ওর মুখ থেকেই সব কিছু শুনবে।আর আমাদের ভার্সিটির পক্ষ থেকে সবাই ওর সুস্থতা কামনা করছি।আর তোমরাও সবাই ওর জন্য দোআ করো যেন সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

কথাগুলো বলে সেই সিনিয়র ভাইটা কেন্টিন থেকে চলে যায়।আর এই সব কথা শুনে ফিহা স্তব্ধ পুরো হয়ে আছে।সে ভাবতেই পারছে না কিছুক্ষন আগেও না ছেলেটা একদম সুস্থ ছিল আর এই কিছু সময়য়ের ব্যবধানে কাব্য এখন হস্পিটালাইজড।কথাটা যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ফিহা ।যতই কাব্যর উপর ফিহা রাগ দেখাক না কেন তবে ফিহা জানে কাব্য ওকে সত্যিই খুব ভালোবাসে।সেই দ্বিতীয় বর্ষ থেকে কাব্য ফিহাকে ভার্সিটির সব ব্যাপারে অনেক সাহায্য করে এসেছে। ফিহাকে ভালোবাসার কথা বলায় ফিহা ওকে অনেক অপমান করেছিল। কিন্তু কাব্য কোনোকিছুই গায়ে মাখেনি সেই ফিহার পিছু পিছু ঘুরে।আজ কেন জানি ওর ভীষণ মায়া হচ্ছে কাব্যর জন্য।কারা মারলো ওকে আর কেন!

ফিহা কথাগুলো ভেবেই উঠে দাঁড়িয়ে বলে ,,,
‘চল তিহা মোহনা আমরা হসপিটালে যাবো কাব্যকে দেখতে।

কথাটা বলেই ফিহা সোজা সামনের দিকে হাঁটা আরাম্ভ করে।আর তিহা আর মোহনা একজন অন্যজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিহার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে,,,

তিহা আর মোহনা বলে তবে প্রেমে পড়লো কাব্যর।

চলবে,,
®️ রিয়া জান্নাত