মজিলো_প্রেম_সখার_সনে পর্ব-০৬

0
183

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_০৬

ফিহা তুইতো ভালোই দিন কাটাচ্ছিস রে। প্রতিদিন এই ভার্সিটির ক্রাস ফিরোজ স্যারের গাড়ি করে যাতায়াত করতেছিস। আগেতো ফিরোজ স্যারকে সহ্য করতে পারতিনা। ধলাবিলাই নাম দিয়েছিলি। এখন ধলাবিলাই এর কাজিন হওয়াতে সব ভূলে গেছিস? তো ফিরোজ স্যারকে বাড়িতে স্যার নাকি ভাইয়া বলিস? জানিস ভাইয়া থেকে সাইয়া সাইয়া হয়ে উঠে। আচ্ছা তুই এত বড় সত্যি জানার পরে স্বাভাবিক ভাবে নিলি কিভাবে?

আরো প্রশ্ন আছে তোর মোহনা? এতগুলো প্রশ্ন মানুষ করে কিভাবে তোকে না দেখলে জানতাম না। বা’চা’ল মেয়েমানুষ।

ও সত্যি কথা গুলো বললে গায়ে ছ্যা’কা লাগে তাইনা। এই তিহা আমাকে ও তোর সামনে বা’চা’ল বললো তুই কিছু বলবি না।

ঠিকই তো বলছে ফিহা বিষন্ন মনে কথাটা বলে তিহা। তিহার মন খারাপ দেখে ফিহা বলে তোর কি হয়েছে? মন খারাপ কেনো? তিহা বলে তোর কাজিন না টাজিন ডিলনাসিন মেয়েটা বড্ড জ্বালাচ্ছে আমাকে। জানিস কালকে ফোন করে বলছে আমি যেনো শাফখাতের সঙ্গে ব্রেক আপ করি। তুই বলতো এইটা কেমন কথা? ফিহা এই কথা শুনে মুচকি হেসে বলে তা তুই ওকে জিজ্ঞেস করলি না ক্যানো ব্রেকআপ করবো? তোর ওই বোনের এই কথা শুনে আমি রীতিমতো শকড ছিলাম। প্রশ্ন করার সাহস পায়নি। আমারতো মন বলছে ওই মেয়ে শাফখাতকে ভালোবাসে। নাহলে আমার সঙ্গে এরকম করতো না। ফিহা ঠোঁটের কোণে ভাজ ফেলে বলে ডিলনাসিন খুবই দুষ্টুমি করে। ওর কথা সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার কি? আচ্ছা আমি ওকে বকে দিবো। এবার মুডটা ঠিক কর।

দেখ ফিহা আমি একবার খালি ওই বাড়িতে বিয়ে করে যাই। তারপরে ছুটাবো ওর দুষ্টুমি।

মোহনা বলে আমার প্রচন্ড বোরিং লাগছে। আমার দুইটা শা’ক’চু’ন্নি বান্ধবী চুটিয়ে প্রেম করছে অথচো আমি এখনো সিঙ্গেল। আমার প্রেমে কেউ পড়েনা কেনো ফিহা।

ফিহা দাঁত চেপে হেসে বলে আমিয়ো তো জন্মগত সিঙ্গেল। চল আজকে লাইব্রেরীতে যেয়ে বই পড়বো। রোমান্টিক উপন্যাস পড়ে তিহার মতো প্রেমঘোরে ভাসবো। তিহার এই প্রস্তাবটা ভালো লাগেনা। তবুও বাধ্য মেয়ের মতো যেতে হয় ওদের সঙ্গে সঙ্গে।একা থাকলে আরো বোরিং লাগবে। এরচেয়ে লাইব্রেরীতে যেয়ে বইয়ে মুখ গুজে রাখা ভালো।

( ★ )

মায়া, জেবা, ফাতেমা কিচেন সামলিয়ে সবাইকে খাওয়া দাওয়া শেষ করিয়ে নিজেরা খেয়ে নেয়। ফাহিম খান আজকে মন্ত্রীসভায় বসবে এরজন্য শাফখাতকে নিয়ে সংসদে চলে যায়। ডিলনাসিন আর পারিজাতকে পথিমধ্যে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যায়। ফুয়াদ খান সরকারি চাকরি করে তাই সে অফিসে গিয়েছে। সিয়াম খান কারখানায় চলে গিয়েছে আজকে বায়ার ভিজিট করবে । ফাহমিদুল খান কে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে দেয় জাদেজা খান। বাড়িতে এখন কেউ নাই। সবাই যার যার মতো কাজে চলে গিয়েছে। মায়া, জেবা,ফাতেমা খাওয়া দাওয়া শেষ করে লিভিং রুমে বসে গল্প করে। ফাতেমাকে দেখলে মনে হয়না সে এই বাড়িতে নতুন। সবার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে খুব সহজে। এমন সময় মায়া খান বলে ফিরোজের তো অনেক বয়স গেলো এবার ছেলেটার বিয়ে দেওয়া উচিত। তোমরা কি বলো জেবা, ফাতেমা। জেবা বলে বিয়ে একটা না আফা দুটোই দেওয়া উচিত। দুই ছেলের বউ একসঙ্গে আনতে হবে। বাড়িতে কথা বলা উচিত এই ব্যাপারে। কিন্তু জেবা যতক্ষণ পর্যন্ত না ফিহার বিয়ে হচ্ছে তোমার ভাসুর ছেলেদের বিয়ে দিবে বলে মনে হয়না। কিন্তু আফা ফিহা তো তৃতীয় বর্ষে পড়ে পড়াশোনা শেষ না করেই কিভাবে বিয়ে দিবো। আর ফিহা এক্ষুনি বিয়ে করবে বলে মনে হয়না। মায়া খান এবার বলে ফাতেমা বাদ দে এসব বিষয় নিয়ে। ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে ওদের পছন্দের একটা ব্যাপার আছে। আমরা এগুলো নিয়ে বরং সময় হলে ওদের সামনে কথা বলবো।

( ★ )

লাইব্রেরিতে হুমায়ন আহমেদের বই খুঁজছে মোহনা। তিহা আপাতত মোবাইল টিপছে সামনে একটা বই রেখে। ফিহা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখের বালি উপন্যাস টা পড়া শুরু করেছে। মোহনা বিরক্ত স্বরে বলে আর হলে লাইব্রেরীতে হুমায়ন আহমেদের বই চোখে ভাসে। আজ এই হুমায়ন ব্যা’ডার বই কই পা’লা’লো। তিরিং বিরিং করে আঙুল দিয়ে বইগুলোর উপর কভারে নাম দেখা শুরু করলো।

লাইব্রেরীর অপর সাইটে প্রথম বর্ষের একটি ছেলে একাই বই পড়ছে। ছেলেটির হঠাৎ নজর পড়ে লাইব্রেরি নিচের কোণে একটি মেয়ের পায়ের পায়েলের দিকে। একদৃষ্টিতে মেয়েটির পায়েলগুলো দেখতে থাকে। মেয়েটি নড়াচড়া করছে আর পায়েলগুলো শব্দ করতেছিলো। ফর্সা পা আর পায়েলের শব্দ ছেলেটির মন কেড়ে নেয় ওইদিকে।

মোহনা হুমায়ুন আহমেদের বই না পেয়ে ফিহাকে বলে এই চল আজকে আমি লাইব্রেরী তে বই পড়বো না। হুমায়ন আহমেদের বই পাইনাই। ফিহা বলে তুই অ’ন্ধ নাকি মোহনা। হুমায়ন আহমেদের এতো এতো বই থাকতে বই পাসনা? এই ফিহা চুপ থাক আমি আজকে বই পড়বো না আর। চল ক্যান্টিনে যেয়ে রফিক ভাইয়ের কড়া ঝালের ঝালমুড়ি খাবো। তিহা ঝালমুড়ির নাম শুনে লোভাতুর হয়ে বলে এই আমি খাবো। কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা নাই। বিল দিবে কে তাহলে? ফিহা মুচকি হেসে বলে তুইতো প্রত্যেকবার এরকম ভাবে বলিস। এত কিপ্টামি করে আমার শাফখাত ভাইকে পটাইলি কিভাবে। তিহা মুখ বাকিয়ে বলে আমি তোমার ভাইকে পটাইতে যাই নাই। পুরা ৭২ দিন আমার পিছনে ঘুড়ছে সে এরপরে তাকে আই লাভ ইউ টু বলেছি। মোহনা বলে যেসব আবার বলতে হবে? তখন কি জানতাম সে আমার ভাই হয়, তাহলে তোকে রিজেক্ট করিয়ে নিতাম। ফিহার এরুপ কথায় ব্যঙ্গ করে বলে ওই কালাচাঁদকে আমি পাত্তা দিছি বলে সব মেয়েই পাত্তা দিবে এমন ধারণা ভূলে যা। তুই আমার ভাইকে কালাচাঁদ বলছিস যা তোর ঝালমুড়ির বিল দিবো না আমি। মোহনা বলে চুপ থাক আমার ঝালমুড়ি খেতে হবে। এরপরে তিনজনে ক্যান্টিনে যায়।

পিছন পিছন লাইব্রেরীতে বসে থাকা ছেলেটি পায়েলের দিকে অনুসরণ করে আসতে থাকে।

মোহনা, ফিহা,তিহা খুবই ঝাল খেতে পছন্দ করে। তাই রফিক মামা ওদের বানানো ঝালে প্রচুর কাঁচা মরিচ দেয়। তিনজনেই খাওয়া শুরু করলো। এমনভাবে ঝালমুড়ি গুলো খাচ্ছিলো না জানি তিনদিন থেকে এরা অভুক্ত। যেকোনো মানুষ দেখলে মনে করবে। এমন সময় লাইব্রেরিতে থাকা ছেলেটি মোহনার কাছে বলে আপনি একটু আগে লাইব্রেরিতে ছিলেন? ছেলেটির প্রশ্নে মোহনা খানিকটা ভ্যা’বাচ্যাকা খায়। এরপরে বলে আপনি কে? আর আমি একটু আগে লাইব্রেরিতে ছিলাম কিনা এগুলা জেনে কি করবেন? ছেলেটি বলে আমি আপনার পায়েলের শব্দ আর পা দেখে ক্রাস খাইছি। বলুন না সেই মেয়েটি আপনি ছিলেন?

ছেলেটির এমন দুঃসাহসিক কথা শুনে অবাক চোখে তাকায় তিন বান্ধবী। এরপরে ফিহা বলে এই ছেলে আপনার নাম কি? আপনার সাহসতো কম না সরাসরি মেয়ের সঙ্গে এরকম ভাবে কথা বলেন?

আমি মেহেদী হাসান। এই ভার্সিটিতে পড়ি অর্নাস প্রথম বর্ষ।

তিহা ছেলেটিকে বলে দেখো আমরা তোমার সিনিয়র আপু। আমাদের দেখে ক্রাস খেতে পারো, কখনো প্রকাশ করতে আসিয়ো না। আমরা তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। বয়সেও তোমার থেকে বড় হবো।

তিহার কথা শুনে ছেলেটি সরল মনে বলে, প্রেম ভালোবাসাকে কখনো বয়স দিয়ে যাচাই করবেন না। প্রেম ভালোবাসা হলো অনুভূতি। আমার সুপ্ত অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে পায়েল পড়া আপুর দিকে। আমি আপনাকে ভালোবাসি আপু।

ছেলের সাহস দেখে ফিহা দাঁতে দাত চেপে বলে, এইছেলে তোমার সাহসতো কমনা। ভার্সিটির বড়আপুকে ডিস্টার্ব করতেছো। জানো আমরা যদি প্রিন্সিপালকে বিচার দিই তোমার কি হবে? তোমাকে সাসপেন্ড অথবা রাস্টিকেট ও করতে পারে। নিজের যদি ভালো চাও দ্বিতীয়বার বড়আপুকে অসম্মান করতে আসবে না।

আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে আসিনাই। আপনারা এতো কথা বলছেন কেনো? আমি কি আপনাদের প্রপোজ করছি। যাকে প্রপোজ করছি তার মুখের বলি তাকে ছুড়তে দিন। আমি অসম্মান করছি না আমি আমার অনুভূতি ব্যক্ত করছি। এই পায়েল পড়া আপুকে আমার লাগবে।

মেহেদীর লাগামহীন কথাবার্তা শুনে মোহনার রাগ তরতর করে বাড়িয়ে যায়। ঝালমুড়ির বিল দিয়ে ফিহাকে ইশারা করে চল এখান থেকে চলে যাই। ফিহা বুঝতে পেরে তিহার হাত ধরে মোহনাকে নিয়ে সামনে আগাতে থাকে। পিছন থেকে মেহেদী বলে আই লাভ ইউ আপু। কোনোতো উত্তর দিলেনা। নামটা বলে যেতে পারতেন। মোহনা থেমে যায় মেহেদীর এমন কথা শুনে। এরপরে ফিহাকে বলে তোরা এখানে থাকিস। আমি ছেলেটার সঙ্গে কথা বলে আসতেছি।

মোহনার মেহেদীর সামনে এসে বলে তুমি কি কা’লা? আমার বান্ধবীরা কি বললো শুনো নাই। তোমার সঙ্গে আমার যায়? আমি তোমার দুই বছরের সিনিয়র। বড়আপুকে অসম্মান করার সাহস পাও কি করে? তোমার মুখ থেকে দ্বিতীয়বার যাতে এই কথা না শুনি। যদি আবার এরকম কিছু শুনি এই মোহনা কিন্তু তোমাকে ছাড়বে না।

মেহেদী জিহ্বা দিয়ে অধর ভিজিয়ে বলে, তোমার সৌন্দর্যের মতোই নামটাও সুন্দর। আমি তোমাকে ভালোবাসি মোহনা?

মোহনা এরকম কথায় রেগে যেয়ে মেহেদী গালে দুইটা ঠা’স ঠা’স করে থা’প্প’র দিয়ে বলে বেয়াদপ ছেলে। কখনো আমার সামনে আসবি না আর। তাহলে কিন্তু ফল ভালো হবেনা বলে দিলাম।

মেহেদী নিজের গালে ডানহাতের তালু দিয়ে ঘষামাজা করে বলে তুমি তৈরি থাকো মোহনা। শুরু করলাম কেবল। তোমার মুখ থেকে লাভ ইউ টু শুনেই ছাড়বো। একদিন তুমি আমাকে পাওয়ার জন্য পাগলের মতো করবে। এই মেহেদীর নিখুঁত ভালোবাসা তখন ও থাকবে শুধু মোহনার জন্য।

মোহনা আর কিছু না বলে ফিহা, তিহার সামনে এসে বলে ছেলেটা বোধহয় পা’গ’ল। জানিনা আজকাল পা’গ’লগুলো কিভাবে এই ভার্সিটিতে চান্স পায়। এদের তো পাবনায় থাকা উচিত। এরা ভার্সিটি আসে কি জন্য ? মোহনার এরকম কথায় ফিহা মুখ চেপে হেসে বলে। একটু আগে তো বললি আমাকে কেউ ভালোবাসে না কেনো? আল্লাহ বোধহয় তোর কথা কবুল করে নিলোরে এভাবে।

চলবে,,,,