মধু_পিঁপড়া
পর্ব ২৩
#অত্রি আকাঙ্ক্ষা
গোটা দেশজুড়ে প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া বিরাজ করছে।মধ্যাহ্নের তেজস্বী রৌদ্দুরের দাবদাহে আদিবা দরদর করে ঘামছে।মিরপুর চিড়িয়াখানার কাছাকাছি আসতে রিকশা থেকে নেমে পড়ে তারা।রিকশা থেকে নামার পরই মেপে মেপে হাঁটছে আদিবা।যেন বহু কষ্ট হচ্ছে তার!!কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটা জমেছে।গাল দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে।অত্যধিক গরমে তার হট ফ্লাশ জনিত সমস্যা হয়।কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের মধ্যেই তার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।কখনো কখনো স্বাভাবিকের চেয়ে হৃদস্পন্দনের গতি দ্রুততর হয়ে উঠে।উপরে নিজেকে শান্ত রাখলেও ভেতরে ভেতরে, সে বেশ অস্থিরতা বোধ করছে।তারদিকে তাকিয়ে সাঈফের বেশ মায়া হলো।সে এগিয়ে গেল।এতো সময় পিছু পিছু হাঁটছিলো।
—“কোনো সমস্যা হচ্ছে? ”
—“হ্যাঁ!গরমে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।এখন কি তাহলে কোলে নিয়ে হাঁটবেন?আসুন কোলে নিন।”
হাঁপাতে হাঁপাতে চটপট উত্তর দিলো আদিবা।সাঈফ এবার আর অবাক হলো না।সে জানতো আদিবা হতে সোজাভাবে কোনো উত্তর পাওয়া যাবে না।সে আশাও করে না।সাঈফকে পাত্তা না দিয়ে আদিবা টিকিট কাটতে চলে গেল।টিকিট কাটা হতেই পেছনে ফিরে দেখলো সাঈফ ঠান্ডা পানির বোতল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।তার জন্য অপেক্ষা করছে।আদিবার ঠোঁটের কোনে মৃদু হাঁসি ফুটে উঠলো।ঝটপট পানির বোতল খুলে নিলে ঢকঢক করে গিলতে লাগলো।পানি খাওয়া হতেই তারা একসাথে চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশ করলো। প্রায় ঘন্টা খানিক তারা একসাথে ঘুরলো।এর মধ্যে তাদের মাঝে বিন্দুমাত্র পরিমাণও কথা হলো না।দু’জনই নিস্তব্ধ!অভ্যন্তরীণ মনস্তত্ত্বে মশগুল।
—“আপনাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় কেন এসেছি জানেন?”
—” নিশ্চিত কোনো বানর পালিয়ে গেছে তার পরিবর্তে আমাকে এখানে দিয়ে যেতে এসেছো তাই তো?”
সাঈফ এবার নিজেও আদিবার মতো বাঁকা করে উত্তর দিলো। আদিবা কিছুটা থমকে,খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। সাঈফ কেবল সেদিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো,
–“ভালোবাসার মোহ মানুষকে কতোটাই না বদলে দেয়। ছোট থেকে সে কিছুটা ঠাট্টা তামশা এড়িয়ে চলে।অথচ আজ আদিবার মুখের হাসির জন্য নিজেকে ছোট করতে দুবার ভাবলো না।দিনদিন যেন সে এক আত্মসম্মানহীন ব্যক্তিত্বে নিজেকে কনভার্ট করছে।ভাবতে ভাবতে সাঈফ গভীর শ্বাস ছাড়লো।”
আরো ঘন্টা খানিক অতিবাহিত করে ফুরফুরে মেজাজে যার যার বাড়ির রাস্তার দিকে পা ফেললো।এতোটুক সময় দুজন কেবল একে অপরকে আড়চোখে পর্যবেক্ষণ করে গেছে।
ফেরার সময় সাঈফ পিছনে ঘুরে বেশ সময় তাকিয়ে থাকলেও,আদিবা ফিরে তাকালো না।নিজেকে শক্ত করে হাঁটতে লাগলো।সাঈফ চাচ্ছিলো আদিবা নিজ থেকে তাকে এগিয়ে দিয়ে আসার কথা বলুক।বিপরীতে আদিবার মনে ছিলো,সাঈফের নিকট হতে অফুরন্ত প্রত্যাশা।
————
দূরের মানুষ জন কৌতুহল উদ্দীপিত চোখে তাকিয়ে আছে।কয়েকজন ছুটে এসেছে।ভালোই ভীড় জমেছে।সেখানকার কয়েকজন লোক স্থানীয় ভাষায় কিছু বলছে।শুনতে বেশ কর্কশ শোনাচ্ছে। এতোক্ষণে সামিরা হুশে এলো। সে চিন্তত মুখে চারধারে চোখ বুলালো।আবির নির্বিকার।ড্যাম কেয়ার!কিছুই আসে যায় না তার।একজন ফোন বের করে ইমার্জেন্সিতে কল দিতে নিলেই একটি আবছা নতুন কন্ঠ স্বরভেসে আসলো।
–“দে আর বেস্টফ্রেন্ড!!হোয়েন দে মিট,দে অলওয়েজ ফাইট।প্লিজ ডোন্ট ওরি! হি উইল বি ফাইন সুন!!”
কন্ঠ স্বরের মালিক তিয়াশা তাজিম।সেকেন্ড খানিক আগে তীক্ষ্ণ গলায় সেই কথাটি বলেছে।তার কোলেই মাহিদ আবছায়া চেতনায় লুটিয়ে আছে।আবিরের কপালে চিন্তার রেশ!! তিয়াশাকে সে চিনতে পারলো।সেদিন আন্ডার ওয়াটার রেস্টুরেন্টের সে এরই পিছু নিয়েছিলো।আবিরকে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সামিরা মনে মনে কিছুটা অসন্তোষ হলো।কিন্তু তার চিন্তা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। আবিরের কোনো ক্ষতি হোক সে চাইবে না।লোকদের আশ্বাস দিতে কিছু বলতেই নিচ্ছিলো,তার পূর্বেই তিয়াশা বলে উঠলো,
— “এভরি ওয়ান! জাস্ট লিভ।হি ইজ মাই হাজবেন্ড।আই উইল ম্যানেজ।”
সামিরার মুখে বিস্ময়।মাহিদ বিবাহিত? কিন্তু কি করে?কবে থেকে? সে একটা বিবাহিত ছেলের সাথে সম্পর্কে ছিলো?নাকি মেয়েটা মিথ্যা বলছে।এমন সিচুয়েশনের জন্য একদমই তৈরি ছিলো না।কেবল ফ্যালফ্যাল করে মাহিদের রক্তমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।আশেপাশের কোনো শব্দই তার কানে ঢুকছে না।
অপরদিকে তিয়াশার কথায় একটা অদৃশ্য জোর ছিলো যার জন্য মানুষ যার যার মতো সটকে পড়লো।এছাড়া অযথা ঝামেলা সবাই এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে।অন্যের বোঝা নিজের কাঁধে নেওয়ার মতো মানুষ দুনিয়ায় কমই আছে।
আবির মনে মনে কিছু একটা ভেবে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলালো।তারপর ফোন বের করে কাউকে কল করলো। আর এক মিনিট অপেক্ষা করলো না।সামিরার হাত ধরে এক প্রকার টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।এতো সময় পর সামিরার টনক নড়লেও সে বিশেষ কিছু বললো।শুধু রোবটের ন্যায় চলতে লাগলো।
চলবে
#মধু_পিঁপড়া
পর্ব ২৪
#অত্রি আকাঙ্ক্ষা
—“হে রে নামু,সামু কল দিয়েছিলো তোকে?”
নাদিরা বেগম অসহায় গলায় ফিসফিসিয়ে বললেন।নামিরা বেশ আয়েশ করে বসে ফুচকা খাচ্ছিলো।প্রায় সময় ফুচকার এই টক আর ঝালের কম্বিনেশনরটা সে দারুণভাবে উপভোগ করে!মায়ের কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে কপাল কুঁচকে গেল।সে মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো। বিরক্তের সহিত বলল,
—“মনে হচ্ছে সামু আর আবির কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিশনে গিয়েছে।দৈনিক ফোন করে আপডেট জানতে হবে তোমাদের!ঠিকমতো হানিমুনও করতে দেবে না নাকি?দোহায় লাগে ওদের একটু এনজয় করতে দেও। ”
নাদিরা বেগম কিছুটা লজ্জা পেলেন।আসলে সেদিনের তাইজুল ইসলামের কথাগুলো তার মনে বেশ দাগ কেটেছে।মনে মনে তিনি অনুতাপের আগুনে জ্বলছেন।মেয়ের সাথে কথা না বলা অবদি শান্তি লাগবে না।তিনি নামিরার পাশে বসলেন।তার মাথায় আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে বললেন,
—“সামুর তো একটা গতি হয়ে গেছে। সাঈফও গানে মনোযোগ দিয়েছে।নতুন গান বেরিয়েছে তার।তুই কি করবি রে,মা?একা একা আর কতো?”
নামিরা নিরবিচ্ছিন্নতা বজায় রেখে একের পর এক ফুচকা মুখে ঠুসে নিচ্ছে।যেন পাত্তা দিতে চাইলো না।এবার নাদিরা বেগম কষ্ট পেলেন। গলা কেঁপে উঠলো তার। পুনরায় বললেন,
–“আটাশ বছর শেষ হতে চললো।এবার তো নতুনভাবে জীবনটা সাজিয়ে নে।তোর পাশে তো সারাজীবন আমরা থাকবো না।তখন তোর কি হবে? ভেবেছিস একবারও?এবার ধোঁকা খেয়েছিস বলে কি বারবার এমন হবে?”
নামিরা হাতের প্লেটটা নিচে নামিয়ে রাখলো।খাওয়া তখনও শেষ হয় নি!মায়ের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করলো।
—“উপরওয়ালার আছেন তো! আর কেউ না থাকলেও তিনি ঠিকই পাশে থাকবেন।বিয়ে ছাড়াও জীবন গোছানো যায়,মা!এর এজন্য একটা সঙ্গী থাকলেই চলে।সেটা যেকেউ হতে পারে।”
নামিরা নরম স্বরে বলে উঠলো।কথায় মন খারাপের রেশ। নাদিরা বেগম কিছু বলতে চাচ্ছিলেন,তাকে বাঁধা দিয়ে নামিরা আবার বললো,
–“সামনেই একটা কিডস কেয়ার সেন্টার আছে।ভেবেছি সেখানে জয়েন করবো।সারাদিন বাচ্চাদের নিয়ে থাকবো।আর কোনো বাচ্চা পছন্দ হলে এক্কেবারে তুলে নিয়ে আসবো।”
নামিরা হাসলো। নাদিরা বেগম মনে মনে কিছুটা ক্ষুদ্ধ হলেন।নামিরা আন্দাজ করতে পারলো।তাই বললো,
–“তোমরা প্লিজ বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করো না।তাহলে আমাকে হারাবে।”
নাদিরা বেগম থমকালেন। চোখ ছলছল করছে তার।নামিরাও কাঁদছে। সে পুনরায় বলল,
–“আমার দ্বারা আর সংসার হবে না।তোমার আর বাবার সাথে থাকবো।সবার খেয়াল রাখবো।দরকার পড়লে কোথা থেকে একটা বাচ্চা এডপ্ট করে আনবো।দয়া করে,আমার সিদ্ধান্তটাকে সম্মান করো।তোমাদের অমতে যেয়ে কষ্ট দিয়ে বিয়ে করেছিলাম।তার শাস্তি পেয়ে গেছি।এখন তোমাদের সাথে থেকে সেবা যত্ন করতে দেও।”
আমেনা বেগম দূরে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলেন।নাতনীর সিদ্ধান্ত তার পছন্দ হয় নি।কিন্তু নামিরার কান্নারত মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার মতো পেলেন না।নাদিরা বেগম বুঝে গেছেন।মেয়ে তার এক কথার মানুষ!!তার হাজারো বুঝানোতে কোনো কাজ হবে না।তাই তিনি মনে অভিমান নিয়ে উঠে গেলেন।মায়ের এমন নির্লিপ্ততায় নামিরার কিছুটা খারাপ লাগলেও সে তোয়াক্কা করলো।চোখ মুছে ফুচকার প্লেট হাতে তুলে নিলো। অতপর সমস্ত মন খারাপ এক পাশে ফেলে গোগ্রাসে গিলতে লাগলো। হঠাৎ করে খেয়াল করলো মনু মিয়া তাকিয়ে আছে তার দিকে এই প্রথম তিনি নামিরাকে নরম স্বরে কথা বলতে দেখলেন।চোখ জুড়ে বিস্ময় তার!নামিরা কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো। সিচুয়েশনে ঠিক করতে বলে উঠলো,
—“চাচা এভাবে আর কতো সময় তাকিয়ে থাকবেন?আসুন একসাথে ফুচকা খাই।আপনার মুখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো বলে।”
মনু মিয়া হুশে আসতে লজ্জা পেলেন।কিছু না বলেই সটকে পড়লেন।নামিরা সেদিকে তাকিয়ে হাসলো।সবাইকে অপ্রস্তুত করে সে আসলে মজা পায় না,কেবল সে ভালো আছে এটা দেখাতেই তার এতো আয়োজন।
————–
সে যে আমার অষ্টাদর্শী কিশোরী
সেই আদিবাসিনীর মাঝেতে আমি বাস করি
চোখ যখন চোখ রাখে হারিয়েছে অজান্তে
নয় সবটা দারপ্রান্তে,তবু মনের অনন্তে
যেন আজ আমি অতিথি
ও আমার______
মলিন মুখের মায়াবতী
কেনো বুঝলে না,এ মনের বায়না
তোমাকে যে চায়,তবু কেন পায় না
যেন আজ আমি অতিথি
ও আমার______
মলিন মুখের মায়াবতী…..
এক একটা বিটের বিষন্ন শব্দ হৃদয়ে ধাক্কা মারছে।গানের স্বরমাধুর্যে বিষাদের আনাগোণা।ভেতরটায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।কেনইবা এমন হবে না!!লিরিক্স গুলো যে তাকে ইনডিকেট করে লিখা।আদিবার সকল দ্বিধা আজ মিটে গেছে। সবটা পরিষ্কার!এই মূহুর্তে রাত দুইটা বাজে।সে চোখ বুজে টেবিলে মাথা রেখে শুইয়ে আছে।চোখের কার্ণিশে জল জমেছে।সে ফোন হাতে নিয়ে তিন ঘন্টা আগে সাঈফের পাঠানো ম্যাসেজটি দেখলো।রিসেন্ট পাবলিশ হওয়া গানের লিংক।নিচে লেখা,
—“আমার মায়াবতীর জন্য।”
আদিবার মনের ভেতরটা হু হু করে উঠলো।লোকটা কতো বড় পাগল!তাকে নিয়ে গান কম্পোজ করেছে।নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আদিবার।সে ভেবে চিন্তে সাঈফকে একটা ম্যাসেজ লিখলো।বহুত হয়েছে এবার আর লুকোচুরি নয়।
জীবনের গতিপথ বদলাতে একটু ঝড়ো হাওয়াই যথেষ্ট।পুরনো মানুষের নির্গমন আর নতুন মানুষের আগমনে সামিরার জীবনে আজ আমূল পরিবর্তন এসেছে।আবিরের মতো মানুষকে পেয়ে সে ভীষণ খুশি!!আবির তার জীবনে আবীর মাখিয়েছে।সব দুঃখের ভাগীদার হয়েছে।কষ্টগুলোর অবসান ঘটেছে।কিন্তু আজ মাহিদ বিবাহিত জানার পর থেকে তার মনে অশান্তি হচ্ছে। এমন নয় যে সে মাহিদকে ভালোবাসে!বা তার কষ্ট হচ্ছে।এতোদিন একটা বিবাহিত পুরুষের সাথে কমিটেড ছিলো ভাবতেই তার নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।এছাড়া অনেক প্রশ্ন জেগেছে মনে।মাহিদের তার মায়ের সাথে এই মূহুর্তে ইন্ডিয়া থাকার কথা ছিলো।কিন্তু সে এখানে কি করছে।সামিরা উত্তর পেলো না।
ঘড়ির দিকে তাকালো।মালদ্বীপের সময় অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন রাত দশটা।আবির সেই সকালে তাকে ভিলা দিয়ে,কোনো রকম কাপড় বদলিয়ে বেরিয়েছে, এরপর আর আসে নি।যাওয়ার সময় কপালে চুমু একে দিয়ে বলেছিলো,সময় মতো খেয়ে নিতে তার আসতে দেরি হবে।সামিরা খায় নি!!সে আবিরের অপেক্ষায় আছে।কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো,বরাবরই ফোন সুইচ ওফ।এবার তার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।সামিরা কিছু একটা ভেবে উঠে বসলো।ব্যাগ খুলে এক কোনায় একটা লাইট পিংকি কালারের ব্রাইডাল নাইটওয়ার খুঁজে পেল।সেটা নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলো।আজ সে নিজেকে আবিরের জন্য সাজাবে!!যতোটা সাজলে আবির আর তার মধ্যকার দূরত্ব মিটবে টিক ততোটাই।
———–
আবির চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।তার বলিষ্ঠ বুক দ্রুত উঠানামা করছে।সামনেই আছে মাহিদ।হসপিটালের বেডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে। আবিরের ক্রোধানল নজর থেকে নিজেকে বাঁচাতে সে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।সে আসলে সকালের ঘটনার পর ভয়েই আছে। আবির এগিয়ে গেল। মাহিদের মুখ বরাবর বসলো।একটা কার্ড এগিয়ে দিলো।সেদিকে তাকিয়ে মাহিদের চক্ষু চড়ক।তার সামনে এক জন্য গোয়েন্দা কর্মকর্তা বসে আছে।কাস্টমস গোয়েন্দা!মাহিদ তড়িঘড়ি করে উঠে বসল।আবির খানিটা শব্দহীন হাসলো।অতপর শক্ত গলায় ঠান্ডা স্বরে বলল,
—“তোমার ফেক ওয়াইফ তিয়াসা তাজিম আশেপাশে কোথাও নেই।যা জিজ্ঞেস করবো,তার সোজাসাপটা ও সত্যি উত্তর চাই।কোনো রকম চালাকি নয়।আশাকরি সকালের কথা মনে আছে।”
আবিরের কথা শুনে মাহিদের হাত সরাসরি নাকে চলে গেল।সকালের সেই শক্ত ঘুষি গুলো! সে শুকনো ঢোক গিললো।তারপর বিড়বিড় করে বলল,
—“স্যার!আপনি যা জানতে চান,সবই বলবো।প্লিজ আমাকে এখান থেকে মুক্ত করুন।”
মাহিদের সম্বোধনে আবির কিছুটা নরম হয়ে এলো। আস্তে করে বলল,
—“যদি নিদোর্ষ হও আগামী দুদিনের মধ্যে তোমাকে মুক্ত করে,সামিরাকে তোমার হাতে তুলে দিবো।দেশে পাঠিয়ে দিবো।তুমি কেবল এখন থেকে আমার সাথে কো-অপারেট করবে।”
চলবে
মধু_পিঁপড়া
পর্ব ২৫
#অত্রি আকাঙ্ক্ষা
চাঁদের আলো হারানো আকাশের কৃষ্ণপক্ষ চলছে।আগামী পনেরো দিন এই অন্ধকারাবৃত রাত অতিবাহিত হবে।এর পরই শুক্লপক্ষের চাঁদের আবির্ভাব ঘটবে।কিন্তু আবিরের জীবনের শুক্লপক্ষ হয়ত আজই শুরু।সারাদিনের ব্যস্ততায় ঠিকঠাক খাওয়ারও সুযোগ পায় নি সে!এরপর রিহাব শিকদারের ইনফরমেশন কালেক্ট করে সিনিয়রদের কাছে সাবমিট করতে হয়েছে।আবার মাহিদের সাথে হসপিটাল দেখা করে, অনেকটা পথ স্পিড বোটে পাড়ি দিতে হয়েছে। ফিরতে ফিরতে এখন রাত তিনটা।আবির ভেবেছিলো সামিরা হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে।তাই সে দরজায় নক করে নি।কার্ড দিয়ে চেক ইন করেছে।ভেতরে প্রবেশ করতে তার মনে হলো সময় যেন থেমে গেছে। চক্ষু চড়ক! মাথা যেন হালকা চক্কর মারলো।পিংক কালারের নাইট ওয়ারে সামিরাকে ভীষণ আবেদনময়ী লাগছে।পরিধেয় পোশাকের গলা অনেকটাই বড়।পায়ের ওপর পা তুলে বেডের কোণায় মোহময়ী ভঙ্গিতে বসে আসে সে।ফর্সা সরু পদ যুগল দৃশ্যমান।আবির আচমকা অস্থির অনুভব করতে লাগলো।এদিক ওদিক তাকালো।সামিরার হাতে ফোন।হয়ত স্ক্রল করছিলো!এদিকে আবিরকে দেখে সামিরার বুক ধকধক করছে।সে ফোন রেখে উঠে দাঁড়াল। মুখে তার লাজুক হাসি!এগিয়ে এসে বলল,
—-“আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।এতো দেরী করলে কেন?”
আবির নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো। অবাক হলো!আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে মেয়েটা!!এরপর আজকের এতো খোলামেলা সজ্জা। নিশ্চিত তাকে পরীক্ষা করার জন্য ফন্দি এঁটেছে।আবির তো সহজে ধরা দিবে না!তার যথেষ্ট ধৈর্য!স্ত্রীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া নরখাদক নয় সে।বিয়ে যখন হয়েছে শারীরিক সম্পর্ক এক সময় হবে।অপেক্ষা করতে তার সমস্যা নেই।এতো বছর অপেক্ষা যখন করেছে এখনও পারবে।আর সামিরার পরীক্ষাতে সে উত্তীর্ণ হয়ে দেখাবে।এছাড়া তার পরিস্থিতির ও জবের জন্য তাদের সংসারে যেকোনো বিপদ আসতে পারে।এই মূহুর্তে সাবধানে থাকতে চায় সে!!সামিরার কোনো ক্ষতি হতে দিবে না।
—-“কি হলো বলছো না কেন?কোথায় ছিলে?”
—-“মাহিদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
সামিরা থমকালো।অথচ মুখের হাসি মিইয়ে যেতে দিলো না।হালকা হাসি মুখে এনে পুনরায় প্রশ্ন করলো,
—“কেন গিয়েছিলে?”
—“আগে ফ্রেশ হয়ে নেই। তারপর সব কথার জবাব দিবো।”
আবির কাবার্ড থেকে তোয়ালে আর কাপড় বের করছিলো।পেছনে থেকে শোনা গেল।
—” একসাথে না হয়…..”
সমস্ত লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে সামিরা বলে উঠলো।পুরো কথা শেষ করতে পারলো না। চোখ বুজে এক নিশ্বাসে বলেছে।সামিরা আবিরকে চায় কিন্তু সাথে এটাও দেখাতে চায়, মাহিদের কোনো স্থান নেই তার জীবনে।তাই সে তাদের পবিত্র সম্পর্ককে পূর্ণতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আবির পেছনে ঘুরে আড়চোখে তাকালো।সামিরার চোখের পাতা তিরতির করছে।আবির এগিয়ে এসে ডান চোখে তারপর বাম চোখে চুমু খেলো। তারপর আস্তে আস্তে বলল,
—“সময় হোক।’
সামিরাকে তাৎক্ষণিকভাবে ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল।এক প্রকার রিজেকশন!এতো সময় সামিরা চোখ খিঁচে বন্ধ করে ছিলো।হুশ আসতেই চোখ খুলল। সে দৌড়ে আবিরকে পেছন থেকে আঁকড়ে ধরলো।আবির হতভম্ব। তাই মনের অস্থিরতা ক্রমশ বেড়েই চললো।এই মেয়ে আজ তাকে মেরে শান্তি হবে।সামিরা পিঠে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
—–“আমি তোমাকে চাই,আবির।”
—-“ভালোবেসে?”
—-“সব ভাবে চাই।”
সামিরার উত্তর শুনে আবিরের ঠোঁটের হাসি ফুটে উঠলো। তাৎক্ষণাত সে ঘুরে দাঁড়ালো।সম্মতি পাওয়ার পর না করার মানেই হয় না।এতো বছর পর আজ তার অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।চট করে সামিরাকে কোলে তু্লে নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলো।একে অপরের মাঝে হারিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে পূর্ণতা পেল তাদের মধুচন্দ্রিমা!
—————
সকাল সাতটা।সারারাত ঘুমাতে পারে নি সাঈফ।তবুও চোখে কোনো ঘুম নেই।আছে কেবল উদগ্রীবতা!গানের ভিউস বেশ হলোই হয়েছে।হয়ত আগামী পাঁচ ছয় দিনের মধ্যে আট মিলিয়ন ভিউস ছাড়তে পারে।রাতুল,হাসিব ভীষণ আশাবাদী্!গানের মাধ্যমে সাঈফ আদিবাকে প্রপোজ তো করে দিয়েছে।এবার জবাবের অপেক্ষা।এখন সে এসেছে আদিবার সাথে দেখা করতে।সরকারি কর্মকর্তাদের অভিবাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরই আদিবা এলো। সুতি জামরাঙা ওড়না দিয়ে মাথায় কাপড় দেওয়া।চোখে মুখে সাদা কাশফুলের স্নিগ্ধতা!সাঈফ আবার প্রেমে পড়লো।আদিবার শুকনো কাশির শব্দে ধ্যান ভাঙল।সে আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করলো,
—–“এতো সকালে আসতে বললে,কিছু হয়েছে কি?”
—–“কি যে কন সাঈফ ভাই।পিরিত করণের আলাদা টেম আছে আবার?”
আদিবার পেছনে চমকিও ছিলো।সাঈফ খেয়াল করে নি।তাই কিছুটা চমকে গেল।আদিবা চমকির দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করলো।চমকি চটজলদি ঠোঁট হাত দিয়ে এক কোণায় যেয়ে দাঁড়ালো।চমকি যেতে আদিবা বলল,
—-“আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি।আপনাকে ভালো লাগে।সত্যি বলতে ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু আমার প্রেম করার কোনো ইচ্ছে নেই।আমি সরাসরি বিয়ে করতে চাই।”
সাঈফের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।সে খুশিতে আত্মহারা! তার লম্বা চুলগুলো দু’হাতে চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো,
—-“ইয়েসসসসসসসস।কবুল,কবুল কবুল।”
তারপর আদিবাকে জড়িয়ে ধরলো। সাথে সাথেই আবার ছেড়ে দিলো। আদিবাও খুশি।সাঈফ জড়িয়ে ধরায় ভীষণ লজ্জা পেল।তারপর স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বলল,
—–“কিন্তু কিছু শর্ত আছে।”
সাঈফের মুখ চুপসে গেল। সে স্থির হয়ে দাড়িয়ে পড়লো।পরবর্তী কথা শোনার জন্য তার মনে আগ্রহ জেগেছে।আদিবা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। তারপর বলতে লাগলো,
—-“আমার স্বপ্ন আইএলস করে দেশের বাহিরে যাওয়া।পড়াশোনা করা।বাবা,মা,ভাই পুরো পরিবারের জন্য কিছু করা।আমার এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়া অবদি আমি বিয়ে করবো না।আপনি চাইলে আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবেন।কিন্তু আমার হতে বেশিকিছু আশা করবেন না।যদি আপনি রাজি থাকেন তাহ……
আদিবা সব কথা শেষ করতে পারলো না।তার আগেই সাঈফ কাতর স্বরে বলল,
—–“আমি রাজি,তোমার সমস্ত শর্ত আমার ভালোবাসার নিকট তুচ্ছ।কেবল প্রতিদিন তোমার নিশ্বাস টুকুর শব্দ শুনতে দিও তাতেই হবে।”
সাঈফের কথায় আদিবার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো। সে এগিয়ে এসে সাঈফের বুকে মাথা রাখলো।সাঈফও জড়িয়ে ধরলো তাকে।খানিকটা জোরেই বললো,
—–“ভালোবাসি,আমার মলিন মায়াবতী।”
আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা চমকি খুশিতে হাত তালি দিয়ে উঠলো।আদিবা লজ্জায় সাঈফের বুকে সাথে মিশে গেল।আর এই সমস্ত কিছু আড়ালে থেকে দেখলেন সেলিনা খাতুন। সকাল সকাল আদিবাকে বেরিয়ে যেতে দেখে তার পিছু নিয়েছিলেন তিনি।এমন কিছুর জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না।
————
চলবে
মধু_পিঁপড়া
পর্ব ২৬
#অত্রি আকাঙ্ক্ষা
সকালটা বেশ অন্যরকম লাগছে সামিরার নিকট।সতেজতায় ঘেরা এক অনবদ্য আভিজাত্য!নীলাভ সাগরের মিষ্টি সুবাসের ভীড়ে আপন মানুষের দেহের উষ্ণতায় লেপ্টে থাকার অনুভূতিই আলাদা।ঘুম চোখে সে আবিরের দিকে তাকালো।সামিরার মনে হলো আবির পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্পাপ শুদ্ধ পুরুষটি!ঘুমন্ত মুখের মায়ায় সে ডুবে গেল।উন্মুক্ত গায়ের সাথে চাদর ভালোভাবে জড়িয়ে আবিরের কাছাকাছি গেল।অতপর খড়খড়ে গালে দীর্ঘ এক চুম্বন!!ঘুমের মাঝে হালকা নড়ে আবির সামিরাকে জড়িয়ে নিলো।সেও পালটা চুমু খেলো সামিরার পেলব কন্ঠে।শিরশিরে উঠলো সামিরার দেহ।লাজে ও অনিন্দ্য ভালোলাগার জোয়ারে সে ভাসতে লাগলো।জগতের সবকিছু ভুলে সে আবিরের পৌরুষ্য কায়ার উষ্ণতায় ডুবে রইলো,একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।
—————-
ভাসা চোখ দু’টোয় নোনতা পানি উপচে পড়ছে।গাল বেয়ে গড়িয়ে চিবুকের কাছে জমা হয়েছে।বা’গালে হাত রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সে।একটু আগে সেই গালে চড় মেরেছেন সেলিনা খাতুন।আর কতো সহ্য করবেন তিনি!ভাই বোন হয়েছে এক কিসিমের!দুইজনের আভিজাত্যের আগুনে পা দিয়েছে।তারা মধ্যবিত্ত।তাদের সাথে কি শিল্পপতিদের যায়?সামিরার সাথে আবিরের বিয়ে ঠেকায় পড়ে দ্বায় স্বীকার করতে না হয় দিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম।আদিবার সাথে সাঈফের বিয়ে?অসম্ভব!আদিবা কি করে পারলো,তাইজুল ইসলামের ছেলের সাথে প্রণয় গড়ে তুলতে?ভেবেছিলেন মেয়েটা বুদ্ধিমান,আসলে হয়েছে বোকার হদ্দ!এর মধ্যে সাঈফের চলনবলন কেমন উদভ্রান্তের মতো।সব ভেবে সেলিনা খাতুনের মাথা ঝিমঝিময়ে উঠলো।হাত না থাকলেও নিজেকে কখনো অসহায় মনে হয় নি।কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে। তার দুই সন্তানই অবাধ্য।নিজেকে সামলে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
—–“আজ থেকে তোমার একা বাহিরে যাওয়া বন্ধ।হয়ত আমি,নাহয় তোমার বাবা সাথে থাকবে।আর মোবাইলও আমার কাছে থাকবে।”
আদিবা নিশ্চুপ।মনে মনে সে সাঈফের কথা ভাবছে।মায়ের কাঠিন্য ভরা মুখের দিকে তাকানোর সাহস তার নেই।সেই ক্রোধানল চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে পোড়ানোর কোনো মানে হয় না।কিন্তু সাঈফের কি হবে?লোকটা যে বড্ড পাগল।তাকে ফোনে না পেলে যদি পাগলামি করে বসে।সেদিন স্কুলের সামনে কতোই না পাগলামি করলো।ওফফ!চিন্তায় আদিবার মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম।চমকি হয়ত আদিবার শংকা বুঝতে পারলো। এগিয়ে এসেছে চোখ দিয়ে ইশারা করলো।আর ফিসফিসিয়ে বললো,
——“আফা!মুই আছি তো!নো পেনশন।”
কান্নার মাঝে আদিবার হাসি পেয়ে গেল। সে বিড়বিড় করে বলল,
—-“পেনশন না টেনশন হবে।”
চমকি কেবল বোকা বোকা হাসি দিলো।
———-
বেলা একটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট।এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে আবির।পাশেই দাঁড়িয়ে সামিরা।চোখে মুখে অসন্তোষ!জরুরি ভিত্তিতে আবির সামিরাকে দেশে পাঠাচ্ছে।এদিকে ভ্রমন অসম্পূর্ণ রেখে সামিরা দেশে ফিরতে নারাজ!সকালে সামিরাকে ঘুমে রেখে আবির বাহিরে গিয়েছিলো।ঘন্টা দেড়েক আগে ফিরে এসে বললো,সব প্যাক করতে।সামিরাকে দেশে পাঠানো হবে।আবিরের কিছু কাজ আছে,কিছুদিনের মধ্যে শেষ করে সেও দেশে ফিরবে।সামিরা কিছুতেই রাজি হয় নি প্রথম।সে আবিরকে একা ফেলে কোনোমতে দেশে ব্যাক করবে না। অতপর নামিরার কল দিয়ে তাকে অনেক বোঝানোর পর রাজি হয়েছে।তারপরও মন মানছে না।মনে হচ্ছে খারাপ কিছু ঘটতে চলছে।সামিরার চিন্তিত মুখাবয়বের দিকে তাকিয়ে আবিরের বুক মুচড়িয়ে উঠলো। পরন্তু সে চুপ!!আশেপাশের কয়েকজন লোক ঘুরেফিরে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।এরা সবই রিহাব শিকদারের ইনফরমার।আবিরের ঠোঁটের কোনে বাকানো হাসি ফুটে উঠলো।তাকে জব্দ করতে এসে এরা সকলেই ফাঁসবে।অপরদিকে একজনের ওপরে নজর পড়তেই সামিরা থমকালো।মাহিদ!এখানে কি করছে।নাকে,থুতনিতে ব্যান্ডেজ সমেত হেলেদুলে এগিয়ে আসছে।দুটি চোখে রাজ্যের ক্লান্তি।সামিরা নজর সরিয়ে আবিরের দিকে প্রশ্নবোধক চোখে তাকালো।আবির বরাবরের মতোই নির্লিপ্ত।মাহিদ তাদের সামনে দাঁড়াতেই,আবির সামিরার হাত মাহিদের হাতের ওপরে দিলো।শুকনো হেঁসে বললো,
—“যত্ন করে নিয়ে যেও।”
মূহুর্তে সামিরার চোখে মুখে বিদ্যুৎ খেলে গেল।নিজের মতো কিছু একটা বুঝে নিলো সে!চোখের কার্ণিশ লাল হয়ে,চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো।বুকের মাঝে অদৃশ্য দহন শুরু হলো।এক ঝটকায় মাহিদের হাতের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো।পর মূহুর্তে আবিরের বা’গালে সপাটে চড় মারলো।ঘটনার আকস্মিকতায় সকলেই হতভম্ব। ইনফরমার গুলো যেন সাময়িকের জন্য থমকালো।সামিরা আবিরের কলার দুহাতে খামচে ধরলো।পরক্ষণে রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
—-“আপনার মতো কাপুরুষরাই পারে নিজের স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দিতে।আমাকে ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো,এটা আগেই বলতে পারতেন।আমার অবাধ্য মন মানিয়ে নিতাম।আপনি আমার ভালোবাসার অপমান করেছেন।এই মুখ নিয়ে কখনো আমার সামনে আসবেন না।”
নিজের মতো এক তরফা কথা শুনিয়ে সামিরা আবিরকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো।কন্দনরত অবস্থায় ট্রলি ব্যাগ হাতে নিয়ে গটগট করে ভেতরে চলে গেল। এতো সময় আবির চোখ বুজে সমস্ত কথাই শুনছিলো।সামিরা প্রস্থান করতেই,সে চোখ মেললো।মনের নিদারুণ কষ্টে এক ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়লো।মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো,
—“ছেলেরাও বুঝি কাঁদে?”
সেকেন্ড বাদেই সে মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
—“শীঘ্রই যাও।বাংলাদেশ ল্যান্ড হতেই আমাকে ম্যাসেজ করবে।আর সামিরা না চাইলেও তাকে পৌঁছে দিবে।”
মাহিদ এতো সময় যেন ধ্যানে ছিলো।আবিরের কথায় সে মাথা নাড়ালো। দ্রুত পাসপোর্ট আর টিকিট হাতে ভেতরের দিকে চলে গেল।আবিরের বেশ কিছু সময় একইভাবে দাঁড়িয়ে রইল।ভেতরকার ঝড় থামবার অপেক্ষায় সে!অথচ মিনিট পনেরো পার হয়ে গেল,ঝড়ের গতি থামা বই বেড়ে গেল।মনোকষ্টে সে জর্জরিত।এই বুঝি সামিরা ছুটে এলো।তার বুকের বা পাশে মাথা রাখলো।ভুলিয়ে দিলো সমস্ত বেদনা।গতরাতের মতো নিজের মাঝে নিবদ্ধ করে নিলো।হঠাৎ ফোনের শব্দে তার জাগ্রত কল্পনা ভেঙে গেল।নিজেকে স্বাভাবিক করে কাঙ্ক্ষিত মিশনে মনোনিবেশ করলো।এখানকার ঝামেলা শেষ হলে,সামিরাকে সবটা বুঝিয়ে বলবে।ভালোবেসে ভুল ভাঙাবে।নিজেদের মধ্যকার ঝামেলা মিটিয়ে নিবে। আবার এক হবে তারা।
চলবে