মধু পিঁপড়া পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0
110

মধু_পিঁপড়া
পর্ব ২৭(শেষ পর্ব)
#অত্রি আকাঙ্ক্ষা
সুদীর্ঘ এক মাস।সু অর্থ ভালো,উত্তম কিংবা শুভ।কিন্তু সামিরার বিগত এক মাস ভয়াবহ কেটেছে। অতএব তার জন্য কুদীর্ঘ এক মাস।মালদ্বীপ থেকে আসার পর সে নিজ বাড়িতেই উঠেছে।সেদিন প্লেনে মাহিদ তার পাশে বসলেও,সে ফিরেও তাকাই নি।বাড়ি এসে জানিয়েছে সে আবিরকে ডিভোর্স দিবে।কারণ হিসেবে বলছে আবিরের সাথে তার স্ট্যাটাসের বেশ অমিল তাই।বাড়ির সকলে অবাক হলেও কেউ কিছু বলে নি!তাইজুল ইসলামের বারণ ছিলো।নামিরা কয়েকবার বোঝাতে এসেছিলো। কিন্তু সামিরা প্রতি বারই তাকে এড়িয়ে গেছে।অবশ্য আবিরের কাপুরুষতামির কথা কাউকে জানায় নি।যতোই হোক মানুষটাকে সে ভালোবাসে,ছোট করে কি করে!!মানুষটাকে নিয়ে মনে তার ভীষণ অভিযোগ।ক্ষোভে শশুড় বাড়ির কারো সাথেই যোগাযোগ করে নি সে।মোখলেস মিয়া আর সেলিনা খাতুনও ছেলের ওপরে রাগ। বউকে ফিরিয়ে নিতে দুইবার এসেছিলেন।তাদের সাথে যাওয়ার জন্য বারবার রিকোয়েস্ট করেছেন।ছেলের সাথেও যোগাযোগ করেছেন।আবির তাদের জানিয়েছে সে ওই দেশে একটা কাজে আঁটকে গেছে। কাজ শেষ করে সবাইকে নিয়ে সবটা ক্লিয়ার করবে। এদিকে সামিরা মনে মনে ভীষণ ভেঙে পড়েছে।আবির রীতিমতো তার ভালোবাসাকে অপমান করেছে।নিজের বউকে অন্য লোকের হাতে তুলে দিয়েছিলো সে। অভিমান,রাগ,কষ্ট সবটা মিলিয়ে বিগত এক মাস যাবৎ সামিরার দিনগুলো ভয়াবহ খারাপ কাটছে।আবিরের ফোন আর ম্যাসেজের অপেক্ষায় সময় গুনেছে সে।অথচ লোকটা যেন গায়েব।
কয়দিন হলো চুলে চিরুনি পড়ে নি? তিনদিন??চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। গায়ের ধবধবে ফর্সা রং কিছুটা মলিন হয়ে গেছে। পরনের টপটা কুঁচকে আছে।সব মিলিয়ে আয়নায় নিজের বিধ্বস্ত রূপ দেখেও সামিরা নিরুত্তাপ।সে ভেবেছে নিজেকে সে গুছিয়ে নিবে।আবিরকে সে কখনো ক্ষমা করবে না।তার দিকে ফিরেও তাকাবে।সামিরা সময় নিজেকে পরিপাটি করে নিচে নামল।সিদ্ধান্ত নিলো আজ সারাদিন সে ঘুরে বেড়াবে।নিচে নামতেই দেখলো সেলিনা খাতুন হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করছেন।আনুমানিক পনেরো দিন পর এসেছেন তিনি।তার চোখ জোড়া ভেজা।মুখে অবসাদ।তিনি তাড়া দিয়ে বললেন,
—-“তোমার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে।”
সামিরা কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়লো।সে কেবল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।তারপর নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল।
সেলিনা খাতুন সামিরার মুখোমুখি বসেছেন।সামিরার চোখে কৌতূহল। সেলিনা খাতুন শ্বাস ছাড়লেন তারপর বলা শুরু করলেন,

—“”তোমার বাবার আর আমি একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছি।আবিরের বাবা তখন তোমাদের গাড়ির ড্রাইভার।তোমার বাবার তার সাথে আসা যাওয়া করতো।একদিন ক্যাম্পাসের রাস্তায় আমি একা হাঁটছিলাম।আচমকা হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম।তোমার বাবা সেদিন ক্যাম্পাসে গাড়ি চালানো শিখছিলো।ড্রাইভিং সিটে সেই বসে ছিলো।সময় মতো ব্রেক কষতে না পারার কারণে আমার বা’ হাতের ওপর দিয়ে গাড়ি উঠে গেল।”
সামিরা খানিকটা চমকালো।এই ঘটনার কিছুই সে পুরোপুরি জানতো না।সেলিনা খাতুন নিজের মতো বলতে লাগলেন,

–“এরপর থেকে আমার জীবন দুঃসহ হয়ে পড়লো।পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে ঘরবন্দী হয়ে পড়লাম।ঘরেরও শান্তি ছিলো না,পরিবারের মানুষের কাছে বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম।উঠতে বসতে কথা শুনতে হতো।বছরখানেক পর একদিন তোমার বাবা এলেন সাথে আবিরের বাবা। আবিরের বাবার নাকি আমাকে পছন্দ,আমাকে বিয়ে করতে চায় সে।আমি তাৎক্ষণাত রাজি হয়ে গেলাম।পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এক কাপড়ে বেরিয়ে এলাম।তোমার বাবা নিজে দাড়িয়ে থেকে আমাদের বিয়ে দিলেন।থাকার জন্য ঘর দিলেন। বলতেন কিছু প্রয়োজন হলে তাকে যেন জানাই।বছরখানেক পর আমার কোল জুড়ে আবির এলো।আমাদের সুখের সংসার।তোমার বাবা যা করেছিলেন সবটাই দায়বদ্ধতা থেকে।কিন্তু আমি কখনো তোমার বাবাকে দোষী মনে করি নি।নিজের ভাগ্যকে আমি মেনে নিয়েছিলাম।সবকিছু ভালোই চলছিলো।এভাবে কয়েক বছর কেটে গেল।”

সেলিনা খাতুন সেকেন্ড খানেকের জন্য থামলেন।সামিরার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার বললেন,

–“আবিরের বাবা তখনও তোমাদের ড্রাইভার।আবির সবে মাত্র কলেজে উঠেছে।একদিন কলেজ শেষ করে তড়িঘড়ি করে বাসায় এলো।তার চোখে মুখে ভিন্নতা!আমার গম্ভীর ছেলেটা প্রাণ খুলে হাসছে।সেই আবিরকে প্রথম আবিষ্কার করলাম।রাতে দেখলাম হাতের এক কোণায় কালসিটে পড়ে আছে।জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে!! জবাবে বললো,”মধু_পিঁপড়া কামড়েছে।”আমি কিছুটা অবাক হলাম।আমাকে হাসিমুখে উত্তর দিলো, “বিষ পিঁপড়া কমড়ালে ব্যথা হয়,এই পিঁপড়া কামড় মধুর মতো মনে হয়েছে তাই মধু_পিঁপড়া নাম দিয়েছি।”আমি সেদিন কিছুই বুঝতে পারি নি।এরপর কিছুদিন সে বেশ হাসিখুশিই ছিলো।দিন যেতে লাগলো আবিরের মধ্যে আমি আবার অন্য পরিবর্তন দেখতে পেলাম।ছেলেটা আমার কিছুটা মিইয়ে গেছে।পড়াশোনায় তার মন নেই।কেমন উদভ্রান্তের মতো অবস্থা।কারণ উদঘাটন করার চেষ্টা করলাম।কিছুূদিন না জানিয়ে নজর রাখলাম।আবিরের এমন নির্লিপ্ততার কারণ বের করতে আমার সময় লাগে নি!!কলেজ শেষে তার বাবার প্রায় দেখা করতে সে তোমাদের বাড়ি এতো।তুমি তখন মাত্র এগারো বছরের।”
সেলিনা চুপ হয়ে গেলন।সামিরা বিস্মিত।সে যেন কিছু বুঝতে পেরেছে। পরবর্তী কথা শোনার জন্য তার বুক ধুকপুক করছে।সে আস্তে করে বলল,

—“তারপর?”

—-“আমার ছেলেটা সে সময় চট করে তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো।তোমার চঞ্চলতা তাকে কাবু করে নিয়েছিলো।”
সেলিনা খাতুনের সোজাসাপটা উত্তর।
—“আমার ছেলেটা আগের থেকেই বুঝদার ছিলো। তোমাদের সাথে আমাদের অবস্থার পার্থক্য ঠিকই বুঝতে পেতো।তার বাবা তোমাদের বাড়ির সামান্য ড্রাইভার, এই জিনিসটা তাকে বেশ কষ্ট দিতো।দিনদিন ছেলেটা ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।ছেলের মুখের দিকে শেষমেষ আবিরের বাবা তার কাজ থেকে অব্যাহতি দিলেন।আবির আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো।কিন্তু তোমাকে ভুলে পারলো না।দূর থেকে তোমাকে দেখেই শান্তি খুঁজে নিতো।তার একটামাত্র লক্ষ্য ছিল, যদি কোনোভাবে তোমাকে নিজের করতে পারে?আজকে সে যেই পজিশনে আছে সেখানে আসতে আমার ছেলে দিনরাত এক করে দিয়েছে।তোমার বিয়ের খবর শুনে প্রথমে ভেঙে পড়েছিলো।কিন্তু তোমাকে দূর থেকে শেষবার দেখবে সেই আশায় বিয়েতে এসেছিলো।কিন্তু ভাগ্য দেখো,তুমি আজ আমাদের বাড়ির বউ।আমার আবিরের স্ত্রী।”

সামিরার চোখের কার্ণিশ বেয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো,

—“তাহলে সেই দিন মালদ্বীপ থেকে আসার সময়…”

—“আমার ছেলেটা আজ দুদিন যাবৎ হসপিটালের এডমিট।মালদ্বীপে মিশনে থাকাকালীন পায়ে সিরিয়াস ইনজুরি হয়েছে।”

সামিরার কথা শেষ করার সুযোগ পেলো।সেলিনা খাতুন চট করে আবিরের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বলে উঠলেন।সামিরার মাথা ঘুরে উঠলো।সাথে সাথে বুক চিন চিন করতে লাগলো।সে দাঁড়িয়ে পড়লো।চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগলো।সেলিনা খাতুন এক পলক তাকিয়ে সামিরার অস্থিরতা বুঝতে পারলেন। আস্তে করে বললেন,

—“বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তুমি দেখা করতে চাইলে যেতে পারো।ড্রাইভারকে বলা আছে।”

সামিরা আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলো না হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল তার প্রাণ প্রিয় পুরুষের কাছে।

__________

রিহাব শিকদার জনসম্মুখে একজন নামকরা বিজনেসম্যান হলেও আড়ালে মারিজুয়ানা, ইয়াবা,ফেনসিডিলের মতো মাদকদ্রব্য সর্বাংশে চোরাচালানের মূল হোতা।এক দেশে থেকে অন্য দেশে এসব পণ্য আনা-নেয়া করার মূল কাজ সে করে থাকে।মূলত রিহাব শিকদারের এসিস্ট্যান্ট হলো তিয়াশা তাজিম।বিগত দুই বছর যাব ভারত থেকে বাংলাদেশে এসব পণ্য বিপুল পরিমাণে আনা হচ্ছে। পুলিশ উপর্যুক্ত প্রমাণের অভাবে কোনো সুরাহা করতে না পেরে এই কেস কাস্টমস গোয়েন্দাদের কাছে সাবমিট করেন।গোয়েন্দা বিভাগের চেয়ারম্যান নিজে আবিরকে এই কেসের হেড ইনচার্জ নিযুক্ত করেন।আবিরের ধারণা ছিলো সামান্য কিছু প্রমাণ জোগাড় করতে হয়ত তাকে মালদ্বীপ পাঠানো হচ্ছে।কিন্তু পরিস্থিতি তার প্রতি কূলে চলে যাবে সে ভাবতেও পারে নি।এমন কিছু হবে জানলে সে কখনো সামিরাকে সেখানে নিতো না।রিহাব শিকদারের লোকেরা তাকে আগেই আটক করে ফেলেছিলো। সেদিন সামিরাকে এয়ারপোর্টে দিয়ে হোটেলে যাওয়ার পথে তাকে ধরে নিয়ে যায়।দু’দিন বেশ টর্চারও করে।আবির কৌশলে নিজেকে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।এরপর এক মাস সেখানে দেখে তাদের অবৈধ কার্যকালাপের সবটা প্রমাণ জোগাড় করে।তারপর সবটা নিজের আয়ত্তে আসার পর,সিনিয়রের পারমিশনে দেশ থেকে আরো কয়েকজন সাব-অর্ডিনেটকে সেখানে পাঠানো হয়।তাদের আটক করার সময় দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়।তখনই আবিরের পায়ে আঘাত লাগে।ব্যথা পাওয়ার পরও আবির তার মিশন কমপ্লিট করে।আটককৃতদের তাৎক্ষণাত দেশে পাঠিয়ে পুলিশ কাস্টডিতে নেওয়া হয়। তিয়াশার জবানবন্দি অনুসারে, এসব নেশাক্ত দ্রব্য কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দেওয়া কাজ করতো তিয়াশা নিজে।তারা অপ্রকাশিত থেকে মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেদের টার্গেট করে,তাদের তাদের উইক পয়েন্টকে কাজে লাগিয়ে ব্যাক্লমেইল করতো।তারপর চাহিদারত কাস্টমারদের কাছে মাদক ডেলিভারি দিতো।মাহিদকেও তারা টার্গেট করেছিলো।তার মাকে খুন করার হুমকি দিয়েছিলো।আড়াল থেকে তাদের ওপর নজর রাখা হতো।এজন্য মাহিদ এ কাজ করতে রাজি হয়েছিলো। প্রায় তিন মাস লাগাতার মাহিদকে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করেছে।নিজের এমন এলোমেলো জীবনের সাথে সামিরাকে জড়াতে চায় নি বলে,মাহিদ সামিরাকে বিয়ে করে নি।
———–
বুকের ওপর ভারী কিছুর অস্তিত্ব টের পেতেই ঘুম ছুটে গেল আবিরের।সে এখন হসপিটালে।কেউ একজন জড়িয়ে ধরে আছে।কাঁদছে হয়ত!!গলার কাছে ফোঁটা ফোঁটা পানির উপস্থিতি কান্নারত এক প্রেয়সীর অভিমান জানান দিচ্ছে।আবির বোঝার চেষ্টা করলো।নাকের মধ্যে চিরচেনা মিষ্টি একটা ঘ্রাণ প্রবেশ করতেই সবটা পরিষ্কার হলো।সে হাল্কা হাসলো।আস্তে করে বলল,

—-“বেশি অনুশোচনা হলে,যে গালে চড় মেরেছ সেখানে দু’টো চুমু দিয়ে দেও।”

সামিরা গলার কাছ থেকে মুখ তুলে আবিরের মুখের দিকে তাকালো।অশ্রুভেজা চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এক মাস এই মানুষটার থেকে দূরে ছিলো সে।ভাবতেই কান্না পেয়ে গেল।আলতোভাবে আবিরের কপালে চুমু খেলো।আবির কিছু বলল না। কেবল শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

_______

তিন মাস পর……….

—-“আপা আজকে দিনেও তোকে কিড’স কেয়ার সেন্টারে যেতে হবে??”
সাঈফ করুণ স্বরে বলল। নামিরা ভ্রুক্ষেপহীন।সে ভাবলেশহীন গলায় বলল,
—-“বিয়েই তো করতে যাচ্ছিস।বিশ্ব তো জয় করছিস না।এছাড়া আমাকে ছাড়া বাচ্চাদের চলে না।তুই তো জানিসই,তাই আমি পরে যাব।তোরা চলে যা।”
নামিরা ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে পুনরায় বলল।
–“আর যতো তাড়াতাড়ি পারবি।বাচ্চা নিয়ে নিবি।ওদেরকেও সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিবো।এতে আমার প্রমোশনও হয়ে যাবে।”
নিজের মতো কথা বলে নামিরা বেরিয়ে গেল।আচমকাই ফিরে এসে,মুচকি হাসি দিয়ে ভাইয়ের মাথা হাত বুলিয়ে দিলো।বোনের হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে সাঈদ মনে মনে বেশ আস্বস্ত হলো।
———–
চমকি ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে।শাড়িতে আদিবাকে ভীষণ মায়াবী দেখাচ্ছে। চমকি মনে মনে বেশ কয়েকবার,”মাশাল্লাহ” বলল।তার ভীষণ কান্না পেয়ে গেল।সে আদিবাকে সবমসময় নিজের বোন ভেবে এসেছে।সারাক্ষণ তার আগে পিছনে ছুটে বেড়িয়েছে।আজকে মানুষটা অন্যের বাড়িতে চলে যাবে, এটা ভেবেই তার কষ্ট হচ্ছে।।সে আচমকা আপা বলে আদিবাকে জড়িয়ে ধরলো।এই প্রথম সে আফার পরিবর্তে আপা বলেছে। এদিকে আদিবা আয়নায় নিজেকে দেখছিলো।চমকি জড়িয়ে ধরায় সে কিছুটা অবাক হলেও,পর মূহুর্তে সেও জড়িয়ে ধরলো।আবির রুমে এসে দেখলো।দুইজন পাশাপাশি বসে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। সে কাছে এসে দু’জনের মাথা হাত বুলিয়ে দিলো।তার ভাবতে লাগলো,”মেয়ে মানুষ বুঝি খুব জলদি বড় হয়ে যায়!!”

সাঈফ আর আদিবার বিয়েতে প্রথমে সেলিনা খাতুন রাজি ছিলেন না।সাঈফের চলনবলন তার পছন্দ হয় না।তাই তিনি দ্বিমত পোষণ করেছিলেন।পরদিনই সাঈফ চুল কেটে,হাতের নেলপলিশ তুলে, ফরমাল ড্রেস আপ এর সাথে পুরো পরিবার নিয়ে হাজির।তাইজুল ইসলাম নিজে আদিবাকে ছেলের বউ করে নিতে চান।মোখলেস মিয়া এই মানুষটার কাছে বড়ই কৃতজ্ঞ তাই আর না করতে পারলো না।এছাড়া সাঈফ কথা দিয়েছে আদিবার জন্য নিজেকে পরিবর্তন করবে।নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবে।। অবশেষে সবার সম্মতিতে সাঈফ আর আদিবার আকদ হয়ে গেল।

সারাদিনের ব্যস্ততায় সামিরাকে দেখার সুযোগই পায় নি আবির।মনটা খালি খালি লাগছে। কিছু ভেবে কোথাও একটা গেল।
এখন রাত বাজে দুটো।সামিরা সবে গোসলে ঢুকেছে।আজ একসাথে বোন আর ভাবী হয়ে,উভয় দায়িত্ব পালন করেছে।সাঈফ আর আদিবার বিয়ের কথা শুনে সে প্রথমে বেশ অবাক হয়েছিলো।তবে এখন সে খুশি।
বেশ সময় নিয়ে শাওয়ার থেকে বেরিয়ে বেশ শান্তি অনুভব করলো সামিরা।আশপাশে তাকিয়ে আবিরের খোঁজ করলো।আজব!!কোথায় গেল লোকটা??আচমকা ফোন বেজে উঠলো।সামিরা ফোন রিসিভ করতে ওপাশ থেকে গম্ভীর গলার স্বর ভেসে আসলো,

—-“ছাঁদে আসো,বউ।”

সামিরা মুচকি হেসে ফোন রেখে দিলো।ছাঁদের দরজার কাছে আসতে দেখলো আবির দাঁড়িয়ে আছে। আবির কাছ এসে সামিরাকে কোলে তুলে নিলো।সামিরা দু’হাতে গলা জড়িয়ে ধরলো।বুকের কাছটায় মাথা ঠেকিয়ে রাখলো।বেশ প্রশান্তি অনুভব করলো।আবির সামিরাকে কোলে নিয়ে দোলনায় বসলো।খানিক সময় পর সামিরা আবিরের গালে হাত রাখলো। বিড়বিড় করে জিজ্ঞেস করলো,

—“আচ্ছা, সেই অল্পবয়সী আমার মধ্যে কি এমন দেখে প্রেমে পড়েছিলে?”
আবির মোহনীয় গলায় উত্তর দিলো,
—-“তোমাকে দেখার পর আর কিছুই দেখি নি।”

সামিরা কিছু বললো না।কেবল আবির্ভূত চোখে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইল।

সমাপ্ত……