মনের উঠোন জুড়ে পর্ব-০৯

0
260

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_০৯

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” রাতে ডিনার শেষ করে শিক্ষা নিজের রুমে বসে ফেসবুকিং করছে এমন সময় আবৃত্তি তার রুমে আসে। আবৃত্তি কে দেখে শিক্ষা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনি হঠাৎ আমার রুমে?কিছু লাগবে আবৃত্তি ম্যাম? কিছু লাগলে আমাকে কল করতে পারতেন।আমি দিয়ে আসতাম আপনার রুমে।আপনাকে শুধু শুধু কষ্ট করে এইখানে আসতে হতো না।”

-” আমি খুব খারাপ তাই না রে শিক্ষা?আমাকে তুই খুব ঘৃণা করিস তাই না?

-” বড় বোন হচ্ছে মায়ের মতো।মায়ের পরে কেউ যদি আপন হয়ে থাকে সেটা হচ্ছে বড় বোন।বড় বোন থাকা ভাগ্যের ব্যাপার।তারা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য,ঘৃণার নয়।”

-“তোর থেকে এমন উত্তর আমি কখনো আশা করি নি।শুনে অনেক ভালো লাগলো আমার। আগামীকাল আমার ফ্রেন্ড বর্ণের জন্মদিন।সব ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করেছে।তোকে ও নিয়ে যেতে বলেছে।যাবি তুই? চল গেলে তোর ভালো লাগবে।”

-” আপনার ফ্রেন্ডের জন্মদিন সেইখানে আমি গিয়ে কি করবো? তাছাড়া বড় আব্বু এমনিতেই আমার উপর রেগে আছে।আমাকে কি যেতে দিবে?”

-” পাপা কে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।এটা তুই আমার উপর ছেড়ে দে।আমি তোকে নিয়ে যেতে চাইলে পাপা অবশ্যই যেতে দিবে।”

-” ঠিক আছে।আপনি যখন এতো করে বলছেন অবশ্যই যাবো।”

-“আবৃত্তি শিক্ষার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললো , প্যাকেট খুলে দেখ তোর পছন্দ হয় নাকি?”

-” কি আছে প্যাকেটের মধ্যে?”

-” একটা শাড়ি।আমরা সবাই শাড়ি পরে যাবো।তাই তোর জন্যে ও একটা এনেছি। পছন্দ হয়েছে তোর?”

-” হ্যাঁ খুব পছন্দ হয়েছে। থ্যাংক ইউ সো মাচ। কিন্তু কখন যেতে হবে?”

-” রাত বারোটায় বর্ণের ফ্যামিলির সবাই মিলে একবার কেক কাটবে। দুপুরে পার্টির আয়োজন করেছে। তখন ফ্রেন্ডদের সাথে আবার কেক কাটবে। আমাদের একটু সকাল সকাল যেতে হবে।সব ফ্রেন্ড মিলে বর্ণের জন্য একটা সারপ্রাইজের প্লান করছি। তুই সকাল সকাল রেডি হয়ে থাকিস।”(লেখিকা নূন মাহবুব )

-” ঠিক আছে ‌।”

-” ওকে গুড নাইট বলে আবৃত্তি দরজার দিকে পা বাড়ানোর আগেই গাড়ির হর্ন শুনতে পেল। আবৃত্তি ফিরে এসে শিক্ষাকে বললো, মনে হয় ভাইয়া এসেছে।গিয়ে একটু দরজা খুলে খাবার টা দিয়ে আয় তো।”

-” আপনার ভাইয়ের সামনে যেতে আমার ভালো লাগে না। সবসময় আমাকে সন্দেহ করে। আমি যাচ্ছি না।বড় আম্মু বা সাথী দরজা খুলে খাবার দিবে তাকে।মাপ করবেন আমাকে।আমি আপনার কথা রাখতে পারলাম না।”

-” মম মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সাথীর নাকি শরীর খারাপ করছে ।তাই সাথী ও ঘুমিয়ে পড়েছে।আর তুই দেখতেই পাচ্ছিস আমি মুখে ব্লাক মাক্স লাগিয়েছি।এই অবস্থায় ভাইয়ার সামনে গেলে নিশ্চিত আমাকে দু চার ঘা দিয়ে দিবে। তুই যা না একটু।”

-” সরি ম্যাম ।”

-” আমি বুঝতে পারছি না ,তোর যেতে সমস্যা কোথায়? ভাইয়া বাঘ ,ভাল্লুক নয় যে তোকে খেয়ে ফেলবে। ঠিক আছে তোর যাওয়া লাগবে না।আমি ফ্রেশ হয়ে তারপর যাচ্ছি।”

-” আপনার মুখ ধুতে হবে না ম্যাম। আমি যাচ্ছি । শিক্ষা নিচে এসে দরজা খুলে দেখে সাহিত্য হাতে একটা গিফট বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কপালে মৃদু মৃদু ঘাম জমা হয়েছে। শিক্ষা কে দেখে সাহিত্য বললো, সবাই কি ঘুমিয়ে পড়েছে? তুই দরজা খুলে দিলি যে।”

-“হ্যাঁ সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।”

-” তুই বুঝি আমার ‌ফেরার অপেক্ষায় ছিলি।যেমন টা বাড়ির বউ বরের জন্য করে থাকে। তুই আবার মনে মনে আমাকে বর ভাবতে শুরু করিস নি তো শিক্ষা?”

-” আমার বয়েই গেছে আপনাকে আমার বর ভাবতে।”

-” দেখতেই তো পাচ্ছি না ঘুমিয়ে এতো রাত পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছিস। যায় হোক অপেক্ষা যখন করেছিস এখন বাড়ির ব‌উয়ের মতো তোর ওড়না দিয়ে আমার কপালের ঘাম মুছে দে।”

-” এসব আজাইরা কাজ করার সময় বা ইচ্ছা কোনটাই আমার নেই। আপনার যদি খাবার খেতে হয়,তাড়াতাড়ি খেতে হবে।আমার ঘুম পাচ্ছে।আমি ঘুমোতে যাবো।”

-” ঠিক আছে। আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি। তুই খাবার নিয়ে উপরে আয়।”

-” প্রায় বিশ মিনিট পরে শিক্ষা সাহিত্যের রুমে খাবার নিয়ে এসে দেখে সাহিত্য ল্যাপটপে কাজ করছে।শিক্ষা খাবার রেখে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর আগেই সাহিত্য বলে উঠলো, এতো দেরি হলো কেন? খাবারের মধ্যে আবার বিষ মিশিয়ে দিস নি তো? না মানে আমি তোর চরম শত্রু। শত্রু কে শেষ করার জন্য এমন টা করতে ও পারিস।”

-” শিক্ষা কোনো উত্তর না দিয়ে বেসিং থেকে হাত ধুয়ে এসে ভাত মেখে এক লোকমা খাবার খেয়ে বললো, এই যে দেখুন মিস্টার সাহিত্য আমি আপনার প্লেট থেকে খাবার খাচ্ছি।আমি যখন ম’রি নি ,তাহলে আপনি ও নিঃসন্দেহে এই খাবার খেতে পারেন। আমি শিওর আপনি ও ম’র’বেন না।”

-” তুই তো আমার খাবার খেয়ে এঁটো করে দিলি। আমি কি তোর এঁটো খাবো?”

-” না ,না । আপনি পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন। আমি এক্ষুনি আপনার জন্য নতুন করে খাবার নিয়ে আসছি।”

-” তার কোনো প্রয়োজন নেই। তুই খুব ভালো করে জানিস আমি খাবার নষ্ট করা এমনিতেই পছন্দ করি না।এক কাজ কর তুই যখন খাবার মেখেছিস তুই নিজেই আমাকে খাইয়ে দে।তাছাড়া এখন থেকে আমাকে রোজ খাইয়ে দিয়ে অভ্যাস করে নে। ভবিষ্যতে তোর কাজে লাগবে।”

-” বড় আব্বু আমাকে খুব ভালোবাসে। বড় আব্বু নিশ্চয় প্রথম বারের মতো দ্বিতীয় বার ও এক‌ই ভুল করবে না।”

-” মানে?”

-” ভবিষ্যতে নিশ্চয় আমি কোনো লুলা কে বিয়ে করবো না যে তাকে আমার খাইয়ে দিতে হবে।”

-” লুলা ও তোর কপালে জুটবে কি না সন্দেহ? সবশেষে এই সাহিত্য শিকদারের গলায় ঝুলতে হবে তোর। পরক্ষণে সাহিত্য মনে মনে বললো, তুই একটা ক্রি’মি’না’ল ,খু’নি। আর কোনো ছেলে চায়বে না একটা খু’নি কে তার জীবনসঙ্গী করতে। আমার ধারণা যদি সঠিক হয় এসব খু’নে’র পেছনে তোর হাত রয়েছে। এখন শুধুমাত্র প্রমাণ সংগ্রহ করার অপেক্ষায় আছি। প্রমাণ হাতে পাওয়া মাত্রই তোর খেলা শেষ হয়ে যাবে। আমি নিজে তোকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যাবো। একজন সিআইডি অফিসার হিসেবে ক্রি’মি’না’ল কে ধরিয়ে দেওয়া আমার কর্তব্য।সে হোক আমার পরিবার, আমার আপনজন বা একান্ত আমার নিজের কেউ।”

___________________________________

-” কিরে শিক্ষা হলো তোর? তোকে রাতে আমি বারবার করে বলেছিলাম একটু সকাল সকাল রেডি হোস।দশটা বেজে গেছে এখনো তুই রেডি হতে পারলি না?কি এতো সাজছিস বল তো?তোর জন্য এমনিতেই ছেলেরা পাগল।আজ আবার তাদের কে খু’ন করার সাধ জেগেছে নাকি তোর?”

-” খু’ ন করা আমার পেশা।খু’ন‌ তো করতেই হবে।”

-” হোয়াট?”

-” শিক্ষা আবৃত্তির পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বললো, মাশাআল্লাহ তোর জেল্লা আমায় ঘায়েল করছে।আপনি এমনিতেই সুন্দরী আর মেরুন রঙের শাড়িতে আরো সুন্দর লাগছে।আমি নিজেই আপনার উপর ক্রাশ খেয়েছি।না জানি আপনার ফ্রেন্ডদের কি হাল হবে আজকে।”

-” আবৃত্তি বিরবির করে বললো,যার জন্য সেজেছি সে তো আর আমার দিকে ভুলে ও তাকাবে না।তার নজর তো অন্য দিকে। তবু ও বেহায়া মন মানতে চাইলো না।তার জন্য নিজেকে সাজিয়ে তুললাম। ”

-” বিরবির করে কি বলছেন আপনি?”

-” তুই তো এখনো রেডি হোস নি। কিন্তু আমার তো এক্ষুনি প্রিয়ার বাসায় যেতে হবে।প্রিয়া ফোন করেছিলো।ওর মা বাবা নাকি গ্ৰামে গিয়েছে।ওর কোন চাচা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ।তাকে দেখতে ওর মা বাবা গিয়েছে।প্রিয়া শাড়ি পরতে পারে না।আন্টি ওকে শাড়ি পরিয়ে দেয়।এখন তো আন্টি ও নাই।তাই আমাকে যেতে হবে। তুই এক কাজ কর। তুই আস্তে আস্তে রেডি হ। আমি পাপা কে বলে যাচ্ছি ।আমি ফোন দিলে পাপা তোকে ভার্সিটির সামনে ড্রপ করে দিবে।আমি আর প্রিয়া ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো।”

-” ঠিক আছে । আপনি যা বলবেন তাই হবে।”

-” সাবধানে আসিস সুন্দরী।দেখিস আবার কেউ কিডন্যাপ করে না নিয়ে যায় বলে হো হো করে হেসে প্রিয়ার বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো আবৃত্তি।”

___________________________________

-” মন্ত্রীর বাড়ি জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয়েছে।তার একমাত্র ছেলে বর্ণ মির্জার জন্মদিন বলে কথা। কিছু দিন আগে ধুমধাম করে মেয়ের জন্মদিন পালন করছেন।তাই ছেলের জন্মদিনে ও কোনো ত্রুটি রাখতে চান না মন্ত্রী মশায়। ইতিমধ্যে সিআইডির পুরো টিম এসে উপস্থিত হয়েছে মন্ত্রীর বাড়িতে।বর্ণ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে তার কাঙ্খিত মানুষ কে খুঁজে চলেছে।যদিও ঠিক রাত ১২ টায় তার #মনের_উঠোন_জুড়ে থাকা ব্যক্তি তাকে উইশ করেছে। তবু ও তার মন মানতে চায়ছে না।বর্ণের চোখে তৃষ্ণা জেগেছে তার প্রেয়সীকে দেখার। মূলত তাকে ভালোবাসার কথা জানতে আর পরিবারের সবার সাথে তার ভালোবাসার মানুষ কে পরিচয় করে দেওয়ার জন্যই তার এই আয়োজন।বর্ণ সাহিত্য কে দেখে এগিয়ে এসে হ্যান্ডসেক করে আবৃত্তির কথা জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই সাহিত্যের ফোন বেজে ওঠে। সাহিত্য দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। সাহিত্য কল রিসিভ করার সাথেই ঐ পাশ থেকে বলে, আপনি কি সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদার বলছেন?”

-” হ্যাঁ । কিন্তু আপনি কে?”

-” আমি কে সেটা না জানলে ও চলবে। আপনার বোন আবৃত্তি কিডন্যাপ হয়েছে।কয়েকটা গুন্ডা তাকে গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছে।”

-” আবৃত্তি কিডন্যাপ হয়েছে শুনে সাহিত্যের ফোন নিচে পড়ে যায়।বোন কে সে নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসে।কখনো আবৃত্তির গায়ে একটা টোকা ও লাগতে ও দেয় নি সে। সাহিত্য হুঙ্কার দিয়ে বললো,
, কার এতো বড় কলিজা সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের বোন কে কিডন্যাপ করে? আমার জানা মতে আবৃত্তি কারো সাথে কোনো প্রকার শত্রুতা নেই। একমাত্র শিক্ষাকে আবৃত্তি দুচোখে সহ্য করতে পারে না। তবে কি শিক্ষা আবৃত্তির উপর প্রতিশোধ নিতে আবৃত্তি কে কিডন্যাপ করিয়েছে ??

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।